All you need to know about bollywood singer Shabbir Kumar dgtl
Shabbir Kumar
রফির ‘নকল’ করে সুপারহিট! লতার সঙ্গে বচসা... ছ’হাজার গান গাওয়া শব্বির এখন বেকার
সম্প্রতি কপিল শর্মার অনুষ্ঠানে অতিথিশিল্পী হিসাবে এসেছিলেন শব্বির কুমার। তাঁর গান যেন আজও দর্শককে রফির কথা মনে করিয়ে দেয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
আশির দশকে বলিউডের সঙ্গীতজগতে পা রাখেন শব্বির শেখ। সঙ্গীতশিল্পী মহম্মদ রফির সঙ্গে তাঁর গলার এতটাই মিল ছিল যে সকলেই তাঁকে রফির ‘অনুকরণকারী’ হিসাবে চিনতেন। ১৯৮১ সালে কেরিয়ার শুরু করার পর ৬ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন তিনি।
০২২২
১৯৫৪ সালে ২৬ অক্টোবর গুজরাতের বরোদাতে জন্ম শব্বিরের। তিনি যে এলাকায় থাকতেন সেখানে মোট ৯টি বাড়ি ছিল। কোনও বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। শব্বিরের বাবা-মা চাইতেন তাঁদের ছেলে সরকারি চাকরি করুক। বোর্ডিংয়ে রেখে তাঁরা বড় করেছিলেন শব্বিরকে।
০৩২২
কিন্তু শব্বিরের মন সঙ্গীতসাধনার দিকেই পড়েছিল। ছোটবেলায় মায়ের মুখে প্রথম গান শোনা। তার পর থেকে মায়ের সঙ্গে গুনগুন করতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে শব্বির তাঁর ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা ভাগ করে বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিবেশীর বাড়িতে একটা রেডিয়ো ছিল। ওঁরা রেডিয়ো বাজালে আমি গান শোনার জন্য ওঁদের বাড়ির দেওয়ালে কান পেতে রাখতাম। এ ভাবে গানের প্রতি আরও আগ্রহ জন্মায় আমার।’’
০৪২২
শব্বিরের পাড়ার লোকেরা তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর গান শুনতেন। কিন্তু গানের প্রতি ঝোঁক যেন পড়াশোনা থেকে মন সরিয়ে না দেয়, তাই তাঁকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে, তাতে কোনও লাভ হয়নি।
০৫২২
১৪ বছর বয়সে বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও শহরের চাকচিক্য দেখে পড়াশোনা থেকে শব্বিরের মন সরে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে গান করতেন তিনি। তাঁর বন্ধুরাই তাঁকে প্রথম বলেন যে, শব্বিরের গলার আওয়াজ হুবহু মহম্মদ রফির মতো। গান নিয়েই কেরিয়ার গড়া উচিত শব্বিরের।
০৬২২
বন্ধুদের উৎসাহেই মাইকের সামনে প্রথম গান গেয়েছিলেন শব্বির। ১৯৬৫ সালে তাঁকে একটি বিখ্যাত অর্কেস্ট্রা দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন শব্বিরের বন্ধুরা। কিন্তু ওই অর্কেস্ট্রা দল তাঁকে বাতিল করে দেয়।
০৭২২
পরে শব্বির একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে প্রশংসা কুড়ানোর পর সেই অর্কেস্ট্রা দলেরই নজরে পড়েন। তারা দলের প্রধান সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে কাজ দেয় শব্বিরকে। তার পর বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চে রফির গান করতেন শব্বির।
০৮২২
রফির গান গেয়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শব্বির। সেই সময় নিজের পদবি পরিবর্তন করে কুমার রাখেন তিনি। শব্বির প্রমাণ করতে চাইতেন, কোনও শিল্পীর পরিচয় তাঁর কণ্ঠের মাধ্যমেই হয়। তাঁর জাতি পরিচয়ের উপর নির্ভর করে না। জাতপাত মানেন না তা প্রমাণ করতে এক ব্রাহ্মণ মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি।
০৯২২
কিন্তু ১৯৮০ সালে তাঁর জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। মহম্মদ রফির মৃত্যু হয়। সঙ্গীতশিল্পীকে সম্মান জানাতে ‘এক রাত রফি কে নাম’ নামের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে শব্বিরের। রফির গান গেয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শককে মুগ্ধ করেন তিনি। তার পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাসে ৫০টির বেশি শো করতেন শব্বির।
১০২২
এক বছর পর সঙ্গীত পরিচালক উষা খন্নার নজর পড়ে শব্বিরের প্রতি। উষার অফিসে ডাক পড়ে তাঁর। শব্বিরকে গান করতে বলায় একের পর এক রফির গান গাইতে থাকেন তিনি। শব্বির গান গাওয়া থামিয়ে দেখেন, উষার চোখে জল। তখনই শব্বিরকে একটি ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
১১২২
‘তজুরবা’ ছবিতে অমিত কুমার, সুরেশ ওয়াড়কর, হেম লতা এবং উষা খন্নার সঙ্গে গান গাওয়ার সুযোগ পান শব্বির। এই প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি সাধারণত খোলা মঞ্চে গান করতাম। এ ভাবে স্টুডিয়োতে গান করতে প্রথম দিকে অসুবিধা হত আমার। কিন্তু ছবি মুক্তি পাওয়ার পর গানটি বেশ হিট করেছিল।’’
১২২২
১৯৮১ সালে ‘সর্দার’ ছবিতে অভিনেতা রাজ কিরণের কণ্ঠে গান গেয়েছিলেন শব্বির। বরোদাতেও নিয়মিত মঞ্চে গান করতেন তিনি। সেই সময় তার পরিচয় হয় সুরকার লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের সঙ্গে। মুম্বইয়ে অডিশন দেওয়ার জন্য ডাক পান শব্বির।
১৩২২
‘কুলি’ ছবিতে শব্বিরকে গান গাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। সেই ছবির মূল গান গাওয়ার কথা ছিল কিশোর কুমারের। তখন কিশোর তাঁর কেরিয়ার নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। সহজে তাঁর কাছে তারিখ পাওয়া যেত না। তবুও ‘কুলি’ ছবির গানটি গেয়েছিলেন কিশোর।
১৪২২
কিন্তু গানটি স্টুডিয়োতে রেকর্ড করার পর কিশোর কুমারের গলায় ক্লান্তির ছাপ পেয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। তাই কিশোরের কাছ থেকে গানের প্রস্তাব যায় শব্বিরের কাছে। অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে গান গেয়ে বলিউডে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন শব্বির।
১৫২২
রাহুল দেব বর্মণ, চিত্রগুপ্ত, বাপ্পি লাহিড়ি, অনু মল্লিক, যতীন-ললিতের মতো সঙ্গীতজগতের নামকরা তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৩ সালে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গেও গান গেয়েছিলেন শব্বির।
১৬২২
২০১২ সালে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন শব্বির। লতার মন্তব্য, তিনি মহম্মদ রফির সঙ্গে গান করতে চাননি। পরে, রফি নাকি চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছিলেন লতার কাছে। তাতেই শুরু হয় বিতর্ক। শব্বির পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন লতাকে। তিনি জানিয়েছিলেন যে, যদি এমন কোনও চিঠি লেখা হয় তা হলে তা দেখানো প্রয়োজন। মিথ্যা কথা ছড়িয়ে রফির অনুরাগীদের কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গায়িকা নিজের সম্মানহানিও করছেন।
১৭২২
আশির দশকে শব্বির তাঁর কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকলেও ধীরে ধীরে তাঁর জনপ্রিয়তা কমে আসে। মহম্মদ আজিজ এবং আনওয়ার নামে দুই সঙ্গীতশিল্পী ‘রফি-কণ্ঠী’ হিসাবে প্রকাশ্যে আসেন। তখন থেকেই শব্বিরের কেরিয়ার ডুবতে শুরু করে।
১৮২২
ছবিতে বিশেষ গান না গাইতে পারলেও মঞ্চে গান করে শব্বিরের উপার্জন মন্দ হত না। আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, জার্মানি, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়েছেন শব্বির। তাই তাঁর কাজ পেতেও খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
১৯২২
হিন্দি, উর্দু, মরাঠি, বাংলা, পঞ্জাবি, রাজস্থানি, ভোজপুরি, গুজরাতি-সহ বিভিন্ন ভাষার গান গেয়েছিলেন শব্বির। ২০১১ সালে ‘হাউজফুল’ ছবিতে শেষ গান গাইতে দেখা যায় তাঁকে।
২০২২
বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি গানের রিয়্যালিটি শোতে অতিথিশিল্পী হিসাবে আসতে দেখা যায় শব্বিরকে। ২০২২ সালে প্রয়াগরাজে একটি মঞ্চে গান করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু মঞ্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি গাইতে পারেননি।
২১২২
দর্শকের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সুস্থ হয়ে তিনি আবার গান করবেন এবং তার জন্য কোনও রকম পারিশ্রমিক নেবেন না। সম্প্রতি কপিল শর্মার অনুষ্ঠানে অতিথিশিল্পী হিসাবে এসেছিলেন তিনি। তাঁর গান যেন আজও দর্শককে রফির কথা মনে করিয়ে দেয়।
২২২২
এক সাক্ষাৎকারে শব্বির বলেছিলেন, ‘‘রফির শেষকৃত্যের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কবর খোঁড়া শেষ। রফিকে কবর দেওয়া হচ্ছে এমন সময় আমার হাত থেকে ঘড়ি এবং কলম রফির কবরের উপর পড়ে যায়। ঘটনাটি কাকতালীয় হলেও আমি মানি যে, সে দিন থেকেই রফির ঘরানা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বভার আমার উপর এসে পড়েছে।’’ শব্বিরের এক পুত্র এবং দুই কন্যা রয়েছেন। তাঁরা তিন জনেই সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত।