All you need to know about bollywood actor Sanjay Kapoor dgtl
Sanjay Kapoor
তব্বু, সুস্মিতার সঙ্গে প্রেম! জীবনযুদ্ধে পরিবারকে পাশে না পাওয়া সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়ান সলমন
‘ছুপা রুস্তম’, ‘কোই মেরে দিল সে পুছে’র মতো ছবিতে অভিনয় করে নিজের পরিচয় তৈরি করছিলেন সঞ্জয় কপূর। নেতিবাচক চরিত্রেও তাঁর অভিনয় বহুল প্রশংসিত ছিল।
সংবাদ সংস্থা
মুম্বইশেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৬:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
বাবা বলিপাড়ার নামী প্রযোজক। দুই দাদার মধ্যে এক জন বলিউডের খ্যাতনামী অভিনেতা। অন্য দাদা বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রযোজনায় নেমেছিলেন। কিন্তু নিজের কেরিয়ার তৈরি করার সময় যখন পরিবারের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, তখন সকলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কপূর পরিবারের সদস্য হয়েও সঞ্জয় কপূর সাফল্যের স্বাদ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলেন।
০২২৭
১৯৬৫ সালের ১৭ অক্টোবর মুম্বইয়ের চেম্বুরে জন্ম সঞ্জয়ের। তাঁর বাবা ছিলেন প্রযোজক সুরিন্দর কপূর। দাদা অনিল কপূর এবং বনি কপূরের সঙ্গে সদ্ভাব থাকলেও সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রাজ কপূরের পুত্র রাজীব কপূর।
০৩২৭
সুরিন্দরের প্রতিবেশী ছিলেন রাজ। সেই কারণে দু’জনের স্ত্রীর মধ্যেও বন্ধুত্ব গাঢ় ছিল। রাজীবের সঙ্গে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাতেন সঞ্জয়। কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে মুম্বই ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেন রাজীব। কাছের বন্ধু চলে যাওয়ায় সঞ্জয়ও বিদেশে গিয়ে পড়বেন বলে সুরিন্দরকে জানান। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভাল ফল করায় পুত্রকে বিদেশে পাঠাতে রাজি হয়ে যান সুরিন্দর।
০৪২৭
বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছাপূরণ করতে দশম শ্রেণিতে ভাল ফল করেন সঞ্জয়। কিন্তু পুত্রকে দেওয়া কথা রাখতে পারলেন না সুরিন্দর। তখন ছবি বানাতে গিয়ে নিজের প্রায় সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলেছিলেন সুরিন্দর। ছবি মুক্তি পাওয়ার পর ফ্লপ করার কারণে খরচ করা টাকার বিন্দুমাত্র ফিরে আসেনি সুরিন্দরের কাছে। সঞ্জয়কে বিদেশে পাঠানোর মতো আর্থিক পরিস্থিতি ছিল না সুরিন্দরের। তাই মুম্বইয়ে থেকেই পড়াশোনা করেন সঞ্জয়।
০৫২৭
১৯৮৭ সালের ২৫ মে। প্রেক্ষাগৃহে শেখর কপূর পরিচালিত ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ মুক্তি পাওয়ার পর সুরিন্দরের পুত্র অনিলের জনপ্রিয়তা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায়। সুরিন্দরের জ্যেষ্ঠ পুত্র বনিও তখন প্রযোজনার কাজে হাত পাকিয়েছেন। এ বার সঞ্জয়কেও ইন্ডাস্ট্রিতে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন সুরিন্দর।
০৬২৭
সুরিন্দর ভেবেছিলেন যে, শেখরের সঙ্গে সঞ্জয় যদি প্রথম কাজ করেন তা হলে সে ছবি হিট হবে। ইতিমধ্যেই ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। সুরিন্দরের কথায়, সঞ্জয়ের জন্য একটি রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি তৈরি করতে শুরু করলেন শেখর।
০৭২৭
এক দিকে সঞ্জয়ের সঙ্গে কাজ করবেন বলে শেখর ছবি তৈরি করছেন, অন্য দিকে বনির সঙ্গেও ‘রূপ কি রানি, চোরো কা রাজা’ ছবিতে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও অজানা কারণে বনির সঙ্গে শেখরের মতভেদ হওয়ায় কপূর পরিবারের সঙ্গে জড়িত সমস্ত কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন শেখর। সঞ্জয়ের সঙ্গেও কাজ করেননি তিনি।
০৮২৭
প্রথম ছবির কাজ হাতছাড়া হওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়েন সঞ্জয়। কিন্তু তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান সতীশ কৌশিক। একটি রোম্যান্টিক ঘরানার ছবিতে সঞ্জয়কে অভিনয়ের সুযোগ দেন তিনি। সঞ্জয়ের বিপরীতে নায়িকা হিসাবে তব্বুকে বেছে নেন ছবি নির্মাতারা।১৯৮৯ সালে ‘প্রেম’ ছবির প্রযোজনার কাজও শুরু হয়।
০৯২৭
‘প্রেম’ ছবির কাজ চলাকালীন তব্বুর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হয় সঞ্জয়ের। তাঁদের দু’জনকে একসঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে দেখা যেত। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, সঞ্জয় এবং তব্বু সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সম্পর্কের কথা গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। বহু দিন সম্পর্কে থাকার পর কোনও অজানা কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
১০২৭
কিন্তু সঞ্জয়ের কেরিয়ারে আবার বাধা আসে। ‘প্রেম’ ছবির কাজ শেষ হয়ে গেলেও মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যেতে থাকে। ২৫ বছর বয়সে এই ছবিতে কাজ করেছিলেন সঞ্জয়। কিন্তু যখন সেই ছবি মুক্তি পায়, তখন সঞ্জয়ের বয়স ৩১ বছর। কানাঘুষো শোনা যায় যে, শেখর ছেড়ে যাওয়ার পর ‘রূপ কি রানি, চোরো কা রাজা’ ছবির পরিচালনার দায়িত্ব নেন সতীশ। এই ছবির জন্য নিজের সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলেছিলেন পরিচালক। কিন্তু ছবিটি ফ্লপ হয়।
১১২৭
‘প্রেম’ ছবির জন্য সময় বার করতে পারছিলেন না সতীশ। ১৯৯৫ সালে ছবিটি মুক্তির পর ভাল সাড়া মেলেনি। কেরিয়ারের প্রথম ছবি। যার শুরু থেকেই বার বার বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন সঞ্জয়। ছবি মুক্তির পরেও সাফল্যের মুখ দেখলেন না অভিনেতা।
১২২৭
পরে মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে ‘রাজা’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সঞ্জয়কে। মুক্তির পর ছবিটি ভাল সাড়া পেয়েছিল। বলিপাড়ায় সকলে জানিয়েছিলেন, মাধুরী ছিলেন বলেই ছবিটি হিট করেছে। সঞ্জয়কে প্রায় একঘরে করে দিয়েছিলেন বলিপাড়ার তারকারা।
১৩২৭
১৯৯৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সোহেল খান পরিচালিত ছবি ‘অওজার’। এই ছবির জন্য সোহেলের দু’জন অভিনেতার প্রয়োজন ছিল। সোহেল তাঁর ভাই সলমন খানকে এই ছবির জন্য বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় দ্বিতীয় অভিনেতা খোঁজার সময়। সলমন তখন বড় মাপের অভিনেতা। সলমনের সঙ্গে কাজ করলে দর্শক শুধু সলমনকেই দেখবে, দ্বিতীয় অভিনেতা সলমনের পাশে গুরুত্ব পাবেন না। তাই সোহেলের প্রস্তাব বেশির ভাগ অভিনেতাই খারিজ করে দিচ্ছিলেন।
১৪২৭
শেষ পর্যন্ত সোহেলের প্রস্তাবে রাজি হন সঞ্জয়। শুটিং চলাকালীন খান পরিবারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় সঞ্জয়ের। এমনকি, সলমনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বও মজবুত হয়ে ওঠে। শুটিংয়ের ফাঁকে এক রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন সলমন এবং সঞ্জয়। সেই অভিজ্ঞতার কথা সঞ্জয় এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান। সলমন নাকি সঞ্জয়কে কথা দিয়েছিলেন যে, সঞ্জয় কোনও ছবির প্রযোজনা করলে সেই ছবিতে সলমন অভিনয় করবেন।
১৫২৭
‘অওজার’ ছবি মুক্তির সময় ছবি নির্মাতাদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন সলমন। প্রথমে শহর জুড়ে যে পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছিল সেখানে সঞ্জয়ের ছবির তুলনায় সলমনের ছবি বড় ছিল। তা দেখে সলমন রেগে যান। কারণ এই ছবিতে সলমনের চরিত্রের তুলনায় সঞ্জয়ের চরিত্রটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সলমন তাই ছবির পোস্টার পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। তার পর শহর জুড়ে আবার পোস্টার বদলে ফেলা হয়েছিল। নতুন পোস্টারে সলমন এবং সঞ্জয়ের একই আকারের ছবি ব্যবহার করা হয়।
১৬২৭
‘অওজার’ ফ্লপ করলেও সঞ্জয় তাঁর জীবনে ভাল বন্ধু পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার সুযোগ নিয়েছিলেন সঞ্জয়ের দাদা বনি। সঞ্জয়ের মাধ্যমে খান পরিবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছিলেন বনি। সঞ্জয় ভেবেছিলেন যে, বনির সঙ্গে এক ছবিতে কাজ করবেন। বনি সে রকম কথাও দিয়েছিলেন সঞ্জয়কে। কিন্তু শেষে পিছিয়ে যান বনি।
১৭২৭
বনি ছাড়া সঞ্জয়কে পথ দেখানোর মতো কেউ ছিল না। তাই অভিনয় ছেড়ে প্রযোজনার কাজে নামবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সির্ফ তুম’ ছবিটির সাফল্যের পর সঞ্জয় তাঁর সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। অভিনয় নিয়েই কেরিয়ারে এগোবেন বলে ভাবেন তিনি।
১৮২৭
‘সির্ফ তুম’ ছবির কাজ চলাকালীন সুস্মিতা সেনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। সুস্মিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মাহীপ সান্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে আসেন সঞ্জয়। ১৯৯৭ সালে মাহীপকে বিয়েও করেন তিনি।
১৯২৭
কিন্তু বিয়ের পর নাকি মাহীপকে ঠকিয়েছিলেন তিনি। ‘ফ্যাবুলাস লাইফস অফ বলিউড ওয়াইভস’ শোয়ে এসে মাহীপ এমনটাই দাবি করেছেন। তিনি জানান যে, বিয়ের পর অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সঞ্জয়। তা জানার পর নিজের সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মাহীপ। কিন্তু পরে সেই সমস্যা মিটেও গিয়েছিল বলে জানান মাহীপ।
২০২৭
‘ছুপা রুস্তম’, ‘কোই মেরে দিল সে পুছে’র মতো ছবিতে অভিনয় করে নিজের পরিচয় তৈরি করছিলেন সঞ্জয়। নেতিবাচক চরিত্রেও তাঁর অভিনয় বহুল প্রশংসিত ছিল। এমনকি রামগোপাল বর্মাও একটি দক্ষিণী ছবির হিন্দি অনুকরণ ছবিতে সঞ্জয়ের সঙ্গে কাজ করবেন বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ছবিটি ছিল ‘তেরে নাম’।
২১২৭
কিন্তু কোনও কারণে ‘তেরে নাম’ ছবির কাজ শুরু হতে দেরি হয়। অনুরাগ কশ্যপ সেই ছবির চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্বে ছিলেন। রামগোপালের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সেই সুযোগ নেন সতীশ কৌশিক। ছবির স্বত্ব কিনে ফেলেন তিনি। সঞ্জয়ের পরিবর্তে সলমনকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
২২২৭
‘তেরে নাম’ ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলে। সলমনের বদলে যদি এই ছবিতে সঞ্জয় অভিনয় করতেন, তা হলে সঞ্জয়ের কেরিয়ারে একটি মাইলফলক তৈরি হতে পারত। অভিনয় নিয়ে এগোলে কোনও ভবিষ্যৎ নেই ভেবে নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন সঞ্জয়।
২৩২৭
সঞ্জয় চেয়েছিলেন যে, তাঁর প্রযোজিত ছবিতে অনিল অভিনয় করুক। অনিল তাঁর প্রস্তাবে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু অভিনেতার শর্ত ছিল, অনিলের পছন্দমতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে হবে। দাদার কথা মতো সেই পরিচালককেও রাজি করান সঞ্জয়। কিন্তু চার বছর ধরে অনিল ফেরাতে থাকেন সঞ্জয়কে। সেই সময় সলমনের সঙ্গে ‘যুবরাজ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অনিল। অনিলের এমন আচরণ পছন্দ হয়নি তাঁর। তাই তিনি নিজের ছবি নিয়ে আলোচনা করতে অনিলের কাছে আর যাননি।
২৪২৭
২০০৩ সালে টেলিভিশনজগতে পা রাখেন সঞ্জয়। অভিনেত্রী করিশ্মা কপূরের সঙ্গে ‘করিশ্মা: দ্য মিরাকলস অফ ডেস্টিনি’ ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।
২৫২৭
২০১৫ সালে ‘তেভর’ ছবির প্রযোজনা করেন সঞ্জয়। এই ছবিতে অভিনেতা হিসাবে আর অনিলকে নয়, নিজের পরিবারের অন্য সদস্য অর্জুন কপূরকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কারণ, নিজের পরিবারের সকলে তাঁকে মানসিক আঘাত দিলেও অর্জুন তাঁর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।
২৬২৭
পরে অবশ্য প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন সঞ্জয়। ‘শানদার’, ‘মিশন মঙ্গল’, ‘দ্য জোয়া ফ্যাক্টর’ ছাড়াও বিভিন্ন হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ‘ফ্যাশন স্ট্রিট’, ‘দিল সামাল যা জারা’র মতো ছোট পর্দার ধারাবাহিক এবং ‘লাস্ট স্টোরিজ’, ‘দ্য লাস্ট আওয়ার’, ‘দ্য ফেম গেম’ প্রভৃতি ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২৭২৭
প্রযোজক হিসাবে বনি কপূর এবং অভিনেতা হিসাবে অনিল কপূর বলি ইন্ডাস্ট্রিতে যে সাফল্য পেয়েছেন, সে তুলনায় তাঁদের ভাই সঞ্জয় নিজের কেরিয়ারে অভিনয় বা প্রযোজনার কোনও কিছু নিয়ে এগোতে পারেননি। বর্তমানে টুকটাক অভিনয় করে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।