All you need to know about Bihar Kidnapper Puja Pathak and her story dgtl
Puja Pathak
জেলেই বিয়ে, জেলেই অন্তঃসত্ত্বা! জেলে থেকে অপহরণও করতেন বিহারের ‘কিডন্যাপিং কুইন’
পটনায় থাকাকালীন স্থানীয় এক পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন পূজা। সেখানে পড়তে পড়তেই অপরাধ জগতে তাঁর হাতেখড়ি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
উত্তরপ্রদেশে এবং বিহারে এমন অনেক অপরাধী আছেন, যাঁদের নাম কেবল সাধারণ মানুষকে নয়, পুলিশকেও অস্বস্তিতে ফেলে। এই তালিকায় মহিলা গ্যাংস্টারের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। তবে যাঁরা আছেন বা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবার কয়েক জন পুরুষ গ্যাংস্টারদের থেকেও এককাঠি উপরে। এঁদের মধ্যে অন্যতম পূজা পাঠক।
০২২৪
পূজা পরিচিত বিহারের ‘কিডন্যাপিং কুইন’ নামে। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ, তোলাবাজি থেকে শুরু করে একাধিক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালতের নির্দেশে বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি ভোগ করছেন পূজা।
০৩২৪
বিহারের কুখ্যাত অপহরণকারীদের তালিকায় পূজার নাম রয়েছে প্রথমের দিকেই। বিহারে তাঁর নামে মানুষ এখনও আতঙ্কে কাঁপে।
০৪২৪
পটনায় থাকাকালীন স্থানীয় এক পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন পূজা। সেখানে পড়তে পড়তেই অপরাধ জগতে তাঁর হাতেখড়ি। কলেজে কৈলাস ফৌজি নামে এক গ্যাংস্টার এবং তাঁর এক সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ হয় পূজার। এর পর তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়।
০৫২৪
কৈলাস এবং তাঁর সহযোগীর সঙ্গে যোগসাজশ করে অপহরণ শুরু করেন পূজা। ২০১৩ সালে কৈলাসের সঙ্গে দু’জনকে অপহরণ করার পর পূজার নাম শিরোনামে উঠে আসে।
০৬২৪
ঘটনাটি ২০১৩ সালের ১৬ জুলাইয়ের। বিহারের মুজফ্ফরপুর জেলার হাথোরি থানার অন্তর্গত আমওয়া গ্রামের বাসিন্দা নীরজ কুমার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। কোম্পানির লেনদেনের সব হিসাব থাকত নীরজের কাছেই।
০৭২৪
ঘটনার দিন নীরজ যখন তাঁর অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন একটি স্করপিও গাড়ি তাঁকে ধাওয়া করতে শুরু করে। কিছু ক্ষণ যাওয়ার পর ফাঁকা জায়গা দেখে নীরজের রাস্তা আটকে অস্ত্রের জোরে তাঁকে অপহরণ করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় নির্জন একটি জায়গায়।
০৮২৪
নীরজকে আটকে রেখে তাঁর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। নীরজের শ্যালক এক জন নিরাপত্তারক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে চেপে অপহরণকারীদের টাকা দিতে পৌঁছন।
০৯২৪
নিরাপত্তারক্ষীকে দেখে গাড়িতে বসা দুষ্কৃতীরা তাঁর দিকে গুলি চালান। নিরাপত্তারক্ষী গুলিবিদ্ধ হন। নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে আসার শাস্তিস্বরূপ নীরজের শ্যালককেও আটকে রেখে পরিবারের সদস্যদের আরও ৫০ হাজার দিতে বলেন অপহরণকারীরা।
১০২৪
আর কোনও নিরাপত্তারক্ষীকে পাঠানোর সাহস পায়নি নীরজের পরিবার। টাকা নিয়ে দুষ্কৃতীদের দেওয়া ঠিকানায় একাই পৌঁছন নীরজের মামা। টাকা দেওয়ার পর নীরজ এবং তাঁর শ্যালককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১১২৪
অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর নীরজ পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানান। এ ব্যাপারে পুলিশ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তদন্তে নেমে পুলিশ বুঝতে পারে পুরো ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন পূজা।
১২২৪
পূজার নাম প্রকাশ্যে আসার পর বিহারে তাঁর নামে আতঙ্ক তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে তাঁর নাম শুনলেই মানুষ থরথর করে কাঁপতে শুরু করত।
১৩২৪
বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দেওয়ার পর মজফ্ফরপুরের সেই অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হন পূজা। নীরজকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এর পরই পূজাকে জেলে পাঠানো হয়।
১৪২৪
পূজা জেলে যাওয়ার পর তাঁর আরও অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। আদালতের তরফে তাঁর জামিনের আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়।
১৫২৪
গ্রেফতারের পর বিহারের শিবহার মণ্ডলকারা জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে বিহারের অন্য এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার মুকেশ পাঠকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। জেলবন্দি থাকাকালীন একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসেন মুকেশ-পূজা। একে অপরের প্রেমেও পড়েন।
১৬২৪
জেলের মধ্যেই এক মাস চুটিয়ে প্রেম করার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুকেশ-পূজা। জেলবন্দি থাকা অবস্থাতেই ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর প্রেমিক মুকেশকে বিয়ে করেন পূজা।
১৭২৪
মজফ্ফরপুরের তৎকালীন এসপি হিমাংশু ত্রিবেদী এবং অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা এই গ্যাংস্টার দম্পতির বিয়ের সাক্ষী ছিলেন। পূজার কন্যাদান করেছিলেন তৎকালীন জেলসুপার রামচন্দ্র সাফি।
১৮২৪
বিয়ে হলেও মুকেশ এবং পূজার মিলনের উপায় ছিল না। তাঁরা জেলে দেখা করার সুযোগও পেতেন খুব কম। প্রায় দু’বছর পর জেলের কয়েক জন কর্মীকে হাত করে সহকারী জেলসুপারের অফিসে দেখা করার সুযোগ পান মুকেশ এবং পূজা। দু’জনের মধ্যে সঙ্গমও হয়।
১৯২৪
২০১৫-এর জুলাইয়ে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে শিবহার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন মুকেশ। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন পুলিশ কর্মীদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তিনি চম্পট দেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন পূজা।
২০২৪
চিকিৎসার জন্য পূজাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানান পূজা ১২ সপ্তাহের গর্ভবতী। এই খবর শুনে জেল কর্তৃপক্ষ হতবাক হয়ে যান। প্রশ্ন উঠেছিল, কী ভাবে এক জন বন্দি কারাগারে গর্ভবতী হতে পারেন!
২১২৪
তদন্তে জানা যায়, শিবহার জেলেই গর্ভবতী হন পূজা। এই খবরের পর শিবহারের জেল সুপারকে সাসপেন্ড করা হয়।
২২২৪
পূজার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাঁকে মজফ্ফরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই ২০১৬ সালের ১ মার্চ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। সুস্থ হয়েই পূজাকে আবার জেলে ফিরে যেতে হয়।
২৩২৪
পুলিশ তাঁর কুখ্যাত গ্যাংস্টার স্বামী মুকেশকে খুঁজতে শুরু করে। দরভাঙ্গায় ইঞ্জিনিয়ার খুনের ঘটনায়ও তিনি মূল অভিযুক্ত ছিলেন।
২৪২৪
কারাগারে থাকাকালীনই আরও বেশ কয়েকটি অপহরণ, তোলাবাজি এবং ডাকাতির মামলায় শুনানি চলাকালীন আদালত পূজাকে দোষী সাব্যস্ত করে। জেলে বসে অপহরণ করানোর অভিযোগও রয়েছে পূজার বিরুদ্ধে।