All you need to know about Bhanwari Devi murder case dgtl
Crime
অর্থ, রাজনীতি আর যৌনতার ককটেল! কী ভাবে সমাধান হয় দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া এই হত্যাকাণ্ডের
ভঁওরী দেবী নামের রাজস্থানের এক স্বাস্থ্যকর্মী নিখোঁজ হওয়ায় তোলপাড় হয়ে যায় রাজনীতি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
সালটা ২০১১। নিখোঁজ রাজস্থানের এক স্বাস্থ্যকর্মী। কিন্তু সময় যত এগোতে থাকে, একের পর এক জট খুলতে থাকে। অর্থলোভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, রাজনীতি, যৌনতা, কূটনীতি— সব কিছু একই সুতোয় বাধা পড়তে শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে তদন্তে জুড়ে যায় সিবিআই এবং এফবিআই-ও।
০২১৬
ভঁওরী দেবী। রাজস্থানের অজমের জেলার কিষানগঢ় ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ছোট থেকেই অর্থাভাবে দিন কাটিয়েছেন ভঁওরী। বাবা-মা দু’জনেই দিনমজুরি করতেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর বিয়ে করেন তিনি।
০৩১৬
তাঁর স্বামী অমরচাঁদ পেশায় ছিলেন গাড়িচালক। বিয়ের পর জোধপুর জেলার অন্তর্গত জালিওয়াড়া গ্রামে থাকতে শুরু করেন ভঁওরী। অমরচাঁদের স্বল্প বেতনে সংসার চলত না। পেটের দায়ে স্বাস্থ্যকর্মীর পেশায় যুক্ত হন ভঁওরী। কিন্তু নিয়মিত কাজে না আসার কারণে চাকরি হারাতে হয় তাঁকে।
০৪১৬
ঠিক তখনই তাঁর জীবন অন্য পথে মোড় নেয়। রাজস্থানের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভঁওরী। তিনি অনুরোধ করেন, তাঁকে যেন চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে ক্ষমতার মারপ্যাঁচ বুঝে যান তিনি।
০৫১৬
মন্ত্রীদের সান্নিধ্যে ভঁওরী নিজের পছন্দমতো জায়গায় তাঁর কাজ ফিরে পান। শুধু তা-ই নয়, আরও অনেককে কাজ পাইয়েও দিয়েছিলেন তিনি। চাকরি পাওয়ার পর ভঁওরীর জীবনধারায় পরিবর্তন আসায় তা অমরচাঁদের নজরে পড়ে।
০৬১৬
প্রচুর সোনার গয়না, বাড়ি, গাড়ি কিনতে শুরু করেন তিনি। তাঁরা দু’জন যে বেতন পান, তা মিলিয়ে এত খরচ করা সম্ভব নয়। অমরচাঁদ তাঁর স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান ভঁওরী।
০৭১৬
তাঁর স্বামী রাজস্থানের দুই নেতা মহীপাল মাদের্না এবং মলখন সিংহ বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অমরচাঁদ নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে এই দুই মন্ত্রীই দায়ী। রাজ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় রাজ্য পুলিশ তদন্তের দায়িত্বভার দেয় সিবিআইকে।
০৮১৬
সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে জানা যায়, ভনওয়ারি ২০১৩ সালে ভোপালগড় কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়াতে চাইছিলেন। তাঁর জন্য মন্ত্রীদের ভয়ও দেখাচ্ছিলেন তিনি। দুই মন্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর শারীরিক সম্পর্ক ছিল।
০৯১৬
হুমকি দেন, তাঁকে যদি ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া না হয়, তা হলে ভঁওরী এই সম্পর্কের কথা ফাঁস করে দেবেন। শুধু তা-ই নয়, কেঁচো খুঁড়তে কেউটেও বের করে আনলেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
১০১৬
ভঁওরীর সঙ্গে নেতা মলখনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। ভঁওরীর ছোট মেয়ের বাবা ছিলেন মলখন। সে কথা তত দিন গোপন করে রেখেছিলেন দু’জনেই। কিন্তু ভঁওরী তাঁর কাছে দাবি করেন, মলখন যেন তাঁদের সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে স্বীকার করেন। এমনকি, তাঁদের মেয়ের বিয়ের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা এবং ২০ কেজি সোনার গয়না দিতে হবে বলে দাবি করেন।
১১১৬
কথাবার্তা রেকর্ড করে এক টিভি চ্যানেলকে ভঁওরী তাঁর নিজের কাছে থাকা একটি সিডি থেকে ভিডিয়ো ফুটেজ পাঠান। স্পষ্ট করে মুখ দেখা না গেলেও চিনতে অসুবিধা হয় না ছবিতে ভঁওরীর সঙ্গে উপস্থিত ব্যক্তিটি মলখন।
১২১৬
পরে ভঁওরীর সঙ্গে চুক্তি করা হয়, সিডি ফেরত দিলে তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকা বাবদ একটি সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের গাড়ি দেওয়া হবে।
১৩১৬
ভঁওরী মন্ত্রীদের শাগরেদের কাছ থেকে টাকা নিতে গেলে তখনই তাঁকে খুন করেন মলখন-মহীপালের লোক।
১৪১৬
জানা যায়, প্রমাণ লোপাট করার জন্য খালের কাছে ভঁওরীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ মৃতদেহের তল্লাশি চালালে রাজীব গাঁধী খালের সামনে কিছু সোনার গয়না, হাতঘড়ি, জামার ছেঁড়া টুকরো, মাথার খুলি, ভাঙা দাঁতের টুকরোর সঙ্গে একটি ক্রিকেট ব্যাট এবং পিস্তলও পড়ে থাকতে দেখা যায়।
১৫১৬
ভঁওরীর মেয়ে জামা এবং গয়না দেখে নিশ্চিত করে যে এগুলি তাঁর মায়ের। পুলিশ, সিবিআই-এর মিলিত প্রয়াসে ভঁওরীর খুনের সঙ্গে জড়িত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
১৬১৬
সেই সময় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অশোক গহলৌত। ভঁওরী দেবীর হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ানোয় মলখন এবং মহীপাল দু’জনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেন। ভঁওরীর তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা-সহ সব খরচ চালানোরও দায়িত্ব নেন মুখ্যমন্ত্রী।