ছিলেন হোটেলের ওয়েটার, কাজ করতে হয়েছে শপিং মলেও, এই অভিনেতাই এখন ওটিটি কাঁপাচ্ছেন
ডার্ক কমেডিতে অভিনয় হোক অথবা গুরুগম্ভীর চরিত্র— ওটিটি প্ল্যাটফর্মের একের পর এক ওয়েব সিরিজে দুর্দান্ত অভিনয় করে চলেছেন আসিফ খান।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজের ‘বাবর’ চরিত্রটির কথা মনে পড়ে? অথবা ‘পাতাললোক’-এর ‘কবীর’? ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজের প্রথম সিজনে ‘দুলহে রাজা’র বেশে ‘গণেশ’ চরিত্রে অভিনয় করা এই অভিনেতা এক লহমায় দর্শক মহলের মন জিতে নিয়েছিলেন। আসিফ খান। ডার্ক কমেডিতে অভিনয় হোক অথবা গুরুগম্ভীর চরিত্র— ওটিটি প্ল্যাটফর্মের একের পর এক ওয়েব সিরিজে দুর্দান্ত অভিনয় করে চলেছেন তিনি।
০২১৮
১৯৯১ সালে রাজস্থানের চিতোরগড় জেলার নিমবহেরা নামের ছোট্ট শহরে জন্ম আসিফের। নিমবহেরা শহরটি সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এখানেই একটি সিমেন্ট তৈরির কারখানায় কাজ করতেন আসিফের বাবা।
০৩১৮
ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক না থাকলেও অভিনয় নিয়ে ভীষণ আগ্রহ ছিল আসিফের। পাড়ায় কোনও অনুষ্ঠান হলে তিনি সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকতেন। এমনকি, স্কুলেও কোনও নাটক হলে আসিফ তাতে অংশগ্রহণ করতেন।
০৪১৮
এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেছেন, ‘‘ছোটবেলায় স্কুলে একটি নাটক হয়েছিল। স্কুলের প্রার্থনার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন একটি বাচ্চার প্যান্ট খুলে যাবে— নাটকে এমন দৃশ্যই মঞ্চস্থ করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কেউই এই দৃশ্যে অভিনয় করতে রাজি ছিল না। আমি নির্দ্বিধায় এই দৃশ্যে অভিনয় করেছিলাম। ছোটবেলা থেকেই দর্শকের মুখে হাসি ফোটাতে ভালবাসতাম।’’
০৫১৮
স্কুলে পড়তেই ছোট পর্দায় রাজু শ্রীবাস্তবের পারফর্ম্যান্স দেখে অভিভূত হয়েছিলেন আসিফ। ভবিষ্যতে কোনও চাকরি নয়, অভিনয়ই করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তখনই।
০৬১৮
সেই সময়েই আসিফের বাবা মারা যান। মায়ের দেখাশোনা এবং দুই ভাইবোনকে বড় করতে তিনি শহরেই বিভিন্ন কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর মন থাকত অভিনয়ের দিকে। আসিফের পরিবারের সকলেই চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার। অভিনয়জগতের সঙ্গে কেউই যুক্ত নন। মুম্বইয়ে যাবেন বলে এক দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান আসিফ।
০৭১৮
একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে মুম্বইয়ের মতো শহরে কোনও ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আসিফ কখনও হোটেলের ওয়েটার, কখনও শপিং মলে কাজ করেছেন। কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিভিন্ন জায়গায় অডিশনও দিতেন।
০৮১৮
মুম্বইয়ে একটি ঘরে আরও ন’জন বন্ধুর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ঠিকানা পেয়ে আসিফের মা সেখানে পৌঁছন। আসিফকে অভিনয়ে নামার জন্য অনুপ্রাণিতও করেন তিনি।
০৯১৮
মুম্বই থেকে জয়পুর ফিরে আসিফ একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ভেবেছিলেন, ছ’মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি আবার মুম্বইয়ে ফিরে যাবেন।
১০১৮
কিন্তু ছ’মাস নয়, ছ’বছর থিয়েটার করে গিয়েছিলেন আসিফ। একই সঙ্গে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হন তিনি। দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন তিনি আবার মুম্বই ফিরে আসেন।
১১১৮
অডিশন দেওয়ার পর টেলিভিশনের ধারাবাহিকে স্বল্প সময়ের দৃশ্যে অভিনয় করার সুযোগ পান আসিফ। ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর মতো জনপ্রিয় শো’তে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এর পর ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’, ‘পরী’ ছবিতে খুব কম সময়ের জন্য অভিনয় করেন আসিফ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দু’টি ছবি থেকেই তাঁর দৃশ্যগুলি বাদ দেওয়া হয়।
১২১৮
সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘‘আমি সব বন্ধুদের জোর করে ‘পরী’ ছবিটি দেখতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউই আমাকে জানায়নি, যে দৃশ্যগুলিতে আমি অভিনয় করেছিলাম সেগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। হয়তো জানার পর আমি ভেঙে পড়তাম, তাই কিছু জানায়নি।’’
১৩১৮
২০১৫ সাল নাগাদ তিনি একটি রাজস্থানি নাটকে অভিনয় করেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নাটকটি বানানো হয়েছিল। সকলে আসিফের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।
১৪১৮
এর পরেই তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনমোল অহুজার সঙ্গে একটি প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে এক বছর যুক্ত ছিলেন। বহু চেষ্টার পর ‘ইন্ডিয়া’জ মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছবিতে অর্জুন কপূরের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান আসিফ।
১৫১৮
‘সেক্রেড গেমস’, ‘নার্কোস মেক্সিকো’ ওয়েব সিরিজের প্রচারের ভিডিয়োতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
১৬১৮
‘পাতাললোক’, ‘মির্জাপুর’, ‘জামতারা’, ‘পঞ্চায়েত’-এর মতো জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন আসিফ। ‘পাগলাইত’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
১৭১৮
আসিফ জানান, তিনি নাকি প্রথমে ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে চাননি। এই ওয়েব সিরিজে তাঁর দৃশ্য কম, অন্য দিকে তিনি তখন ‘পাতাললোক’ ওয়েব সিরিজের কাজ করছেন। ‘পাতাললোক’-এ তাঁর চরিত্র বেশ গুরুগম্ভীর। তাই তিনি ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজে বেশ মজার ছলেই অভিনয় করেছিলেন।
১৮১৮
আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার মা ‘পঞ্চায়েত’ বা ‘পাতাললোক’ সিরিজ দু’টি দেখেননি। কিন্তু ‘পাগলাইত’ ছবিতে আমার অভিনয় দেখেছেন। তিনি কখনওই সামনাসামনি আমার প্রশংসা করেন না। এখনও বাড়ি গেলে মা আমাকে দিয়ে বাড়ির কাজ করান। আমাকে এক জন অভিনেতা হিসাবে মনেই করেননি তিনি।’’