All you need to know about Aruna Shanbaug Case amid RG Kar incident dgtl
Aruna Shanbaug Case
কুকুরের চেন বেঁধে ধর্ষণ, মৃত্যু চেয়েছিলেন বার বার! ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে ‘বেঁচেছিলেন’ নার্স অরুণা
অরুণার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর। রাতে বাড়ি ফেরার আগে কেইএম হাসপাতালের বেসমেন্টের একটি ঘরে জামাকাপড় বদলাচ্ছিলেন বছর পঁচিশের অরুণা। তখনই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হাসপাতালেরই অস্থায়ী জমাদার সোহনলাল বাল্মীকি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে উত্তাল সারা রাজ্য, দেশ। বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়েছে বিদেশেও। প্রতিবাদে নেমেছেন চিকিৎসকেরাও। ‘নির্যাতিতার বিচার চাই’— এই দাবি তুলে প্রতি দিন রাস্তায় নামছেন হাজারো মানুষ। লেখালিখি চলছে সমাজমাধ্যমে। কিছু সত্য, কিছু অসত্য খবর ছড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত।
০২২৩
তবে সেবাকর্মীদের উপর হামলা, অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনা এই প্রথম নয়। আগেও ঘটেছে। আগেও মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। আগেও ‘বিচার চাই’— রব উঠেছে। কিন্তু পরিস্থিতি কি খুব বদলেছে? এই প্রশ্নই তুলছেন অনেকে।
০৩২৩
ভারতে সেবাকর্মীদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে তাতে অবশ্যই থাকবে ৫০ বছর আগে অরুণা শানবাগের উপর হওয়া নারকীয় নির্যাতনের কথা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
০৪২৩
পেশায় নার্স অরুণা রামচন্দ্র শানবাগের জন্ম কর্নাটকের হলদিপুরে। ১৯৪৮ সালের ১ জুন এক কোঙ্কনি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম তাঁর।
০৫২৩
১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান অরুণা। কর্নাটকেই প্রাথমিক শিক্ষার পর দু’চোখে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে হলদিপুর থেকে মুম্বইয়ের পারেলে গিয়েছিলেন কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (কেইএম) হাসপাতালে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিতে।
০৬২৩
সেখানে হাসপাতালেরই এক চিকিৎসকের সঙ্গে পরিচয় হয় অরুণার। কিছু দিন পর ওই চিকিৎসকের সঙ্গে বিয়েও ঠিক হয়।
০৭২৩
কিন্তু অরুণার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর। রাতে বাড়ি ফেরার আগে কেইএম হাসপাতালের বেসমেন্টের একটি ঘরে জামাকাপড় বদলাচ্ছিলেন বছর পঁচিশের অরুণা। তখনই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হাসপাতালেরই অস্থায়ী জমাদার সোহনলাল বাল্মীকি।
০৮২৩
অরুণা যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্য কুকুর বাঁধার চেন তাঁর গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। অরুণাকে ধর্ষণ করতে গিয়ে দেখেন অরুণার ঋতুস্রাব হচ্ছে। সোহনলাল অবশ্য দমেননি। অরুণার সঙ্গে জোর করে পায়ুসঙ্গম করেন তিনি।
০৯২৩
এর পর ১১ ঘণ্টা হাসপাতালের বেসমেন্টে ওই অবস্থাতেই পড়েছিলেন অরুণা। পর দিন সকালে যত ক্ষণে চিকিৎসকরা তাঁকে খুঁজে পেয়েছিলেন, তত ক্ষণে অরুণার মস্তিষ্ক ও সুষুম্না কাণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই অরুণার মস্তিষ্ক আংশিক বিকল। দৃষ্টি ও বাক্শক্তিও চলে গিয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে কোমায় চলে যান।
১০২৩
অরুণার উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদে পথে নামেন মুম্বইয়ের নার্সেরা। উত্তাল হয়ে ওঠে মুম্বই। যেমনটা আরজি কর-কাণ্ডে কলকাতায় হয়েছে। অরুণার জন্য বিচার চেয়ে এবং নার্সদের নিরাপত্তার দাবিতে সেই সময় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন মুম্বইয়ের নার্সেরা।
১১২৩
আশির দশকে বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি) অরুণাকে কেইএম হাসপাতালের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, অরুণা সাত বছর ধরে হাসপাতালের একটি বেড দখল করে রেখেছেন, তাই তাঁকে সরতে হবে। এর প্রতিবাদে কেইএম হাসপাতালের নার্সরাই প্রতিবাদ শুরু করেন। পিছু হটে বিএমসি।
১২২৩
অন্য দিকে, ভারতীয় আইনে তখন পায়ুসঙ্গম অপরাধ হিসেবে গণ্য হত না। তাই অরুণার উপর হওয়া অত্যাচারের জন্য সোহনলাল অভিযুক্ত হন চুরি ও নির্যাতনের অভিযোগে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল না বলে ৭ বছর করে ২ বার জেল খেটে তিনি ছাড়া পেয়ে যান।
১৩২৩
দীর্ঘ ৪২ বছর কোমায় আক্রান্ত হয়ে জীবন্মৃত অবস্থাতেই পড়ে ছিলেন অরুণা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর ঠিকানা ছিল হাসপাতালেরই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেড।
১৪২৩
যদিও হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সেরা চার দশক ধরে বিশেষ যত্ন নিতেন অরুণার। তাঁকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো হত। নিয়মিত পরিষ্কার করানো হত। তবে অরুণার সঙ্গে যে চিকিৎসকের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তিনি বহু আগেই অরুণার পাশ থেকে সরে যান।
১৫২৩
অরুণাকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল টানা ৪২ বছর। জড় পদার্থের মতো পড়েছিলেন হাসপাতালের ওই বেডে। শেষ কয়েক বছর কষ্ট চোখে দেখা যেত না।
১৬২৩
২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে পরোক্ষে অরুণার স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানান সাংবাদিক ও সমাজকর্মী পিঙ্কি ভিরানি। তাঁর আর্জি ছিল, যে জীবনদায়ী ব্যবস্থায় অরুণাকে কৃত্রিম ভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, তা তুলে নিয়ে অরুণার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা হোক।
১৭২৩
কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সেরা পিঙ্কির সেই আর্জির তীব্র বিরোধিতা করেন। তার প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট পিঙ্কির আর্জি খারিজ করে দেয়। তবে শীর্ষ আদালত তখন এ-ও বলেছিল, পিঙ্কি যা চাইছেন, তার জন্য হাসপাতালের কর্মীদের রাজি হতে হবে। আর তাতে মুম্বই হাইকোর্টের অনুমোদন থাকতে হবে।
১৮২৩
তবে সেই প্রথম শীর্ষ আদালত স্বীকার করেছিল, পরোক্ষে স্বেচ্ছামৃত্যুরও আইনি স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। এর বেশ কয়েক বছর পর সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, মৃত্যুশয্যায় যাঁরা নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন, এ বার তাঁদের স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হবে।
১৯২৩
নিউমোনিয়ায় ভুগে ২০১৫-র ১৮ মে মৃত্যু হয় অরুণার। তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আত্মীয়েরা পাশে ছিলেন না। কে তাঁর শেষকৃত্য করবেন, তা নিয়ে অরুণার দুই আত্মীয়ের সঙ্গে নার্সদের তর্কাতর্কিও হয়। শেষমেশ মুখাগ্নি করেন হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক।
২০২৩
এ দিকে জেল থেকে মুক্তির পর গা-ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলেন সোহনলাল। কেইএম হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে কথা বলে সোহনলাল সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছিলেন অরুণার সাংবাদিক বন্ধু পিঙ্কি। পিঙ্কির দাবি ছিল, ওই ঘটনার পরে সোহনলাল দিল্লি চলে যান। নিজের পরিচয় বদলে অন্য হাসপাতালে কাজ নেন।
২১২৩
পরে মরাঠি কাগজের এক সাংবাদিক তাঁর খোঁজ পান গাজ়িয়াবাদের পারপা নামের এক গ্রামে। সোহনলাল নাকি সেই গ্রামে মজুরের কাজ করতেন। ওই সাংবাদিকের বক্তব্য অনুযায়ী, সাক্ষাৎকারের সময় সোহনলাল দাবি করেছিলেন যে, ‘ক্রোধের বশে’ তিনি আক্রমণ করেছিলেন অরুণাকে।
২২২৩
যদিও কখন কী ভাবে তিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন তা মনে করতে পারেননি সোহনলাল। ধর্ষণের কথাও অস্বীকার করেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘আপনারা ওই ঘটনাকে ধর্ষণ বলছেন কেন, সেটাই বুঝতে পারছি না!’’
২৩২৩
অরুণার উপর হওয়া নৃশংসতার ৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনার সাক্ষী অনেকে এখন আর বেঁচেও নেই। তবে আরজি কর-কাণ্ডের পর অরুণা প্রসঙ্গ অনেকের মুখেই উঠে এসেছে। অনেকে বলছেন, ডাক্তার-নার্সদের নিরাপত্তার অভাবেই শরীর-মন ভাঙা অত্যাচার হয় অরুণার উপর। জীবিত থেকেও তাঁর হাল ছিল মৃতের মতো। আর আরজি করের নির্যাতিতা খুন হয়েছেন। মারা গিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, ৫০ বছর পর কি পরিস্থিতি আদৌ বদলেছে?