তবে জ়েলেনস্কি-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে যখন এত আলোচনা, এত বিতর্ক, মনে করা হচ্ছে সেই সময় উত্থান হচ্ছে ‘অবসরে যাওয়া’ এক রাষ্ট্রনেতার। তাঁকে ট্রাম্পের ‘রাজনীতির শিকার’ বলে মনে করেন অনেকে। তিনি আর কেউ নন, কানাডার ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এমনকি এ-ও মনে করা হচ্ছে যে, কানাডার আসন্ন নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি। আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন ট্রুডো।
হোয়াইট হাউস-কাণ্ডের পর সোজা ব্রিটেনে চলে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাদানুবাদের এক দিনের মাথায় তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানায় ব্রিটেন। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার জ়েলেনস্কিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে জড়ো হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেকে। অভ্যর্থনা জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে।
লন্ডনে ইউরোপীয় রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন জ়েলেনস্কি। রাশিয়ার সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আমেরিকার কটাক্ষের মুখে পড়লেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমর্থন পান তিনি। সেই সম্মেলনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ-সহ অনেক রাষ্ট্রনেতার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন নর্থ আমেরিকার দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। লন্ডন থেকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, জ়েলেনস্কির প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বার বার তাঁর কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে ট্রুডোকে। ক্ষমতায় ফেরার পর কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল ট্রাম্পের গলায়। দাবি উঠেছিল, ট্রুডোকে আমেরিকার ৫১তম রাজ্যের গর্ভনর বানানোর। যদিও অটোয়ার শীর্ষকর্তারা একে ‘ট্রাম্পসুলভ রসিকতা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ক্ষমতায় আসার পরেই কানাডার পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এর পর একটি বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, ‘‘মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তিকে লঙ্ঘন করে যে কোনও প্রকার শুল্ক। কানাডার উপর যে শুল্ক চাপানো হয়েছে, তা আমেরিকার জনগণের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। মঙ্গলবার থেকে তিন হাজার কোটি কানাডিয়ান ডলারের পণ্যের উপর শুল্ক প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা আমেরিকার ১২ হাজার ৫০০ কোটি কানাডিয়ান ডলারের পণ্যে পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক নেব।’’
কিন্তু নতুন একটি সমীক্ষা প্রকাশ্যে আসতে দেখা গিয়েছে, পুরনো সমীকরণ একেবারে বদলে গিয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘ইপসোস’ সমীক্ষা প্রকাশের পর দেখা যায়, কানাডার ৩৮ শতাংশ মানুষ সমর্থন করছেন লিবারেলদের। ডানপন্থী কনজ়ারভেটিভ সমর্থন পাচ্ছেন ৩৬ শতাংশ সমর্থন। আরও বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় যেখানে আগে লিবারেল পার্টি পিছিয়ে ছিল, সেখানে দেখা যাচ্ছে কনজ়ারভেটিভের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে ট্রুডোর দল।
ফলে মনে করা হচ্ছে, বিগত কয়েক মাসে ট্রুডোর নেতৃত্ব এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে তাঁর ‘ফ্রন্টফুটে’ খেলার কারণেই আবার জনগণের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে লিবারেল পার্টির। এর অন্যতম কারণ, আমেরিকার পণ্যের উপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে কানাডা। আগামী দিনে আরও কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
ট্রুডো জানিয়েছেন, আমেরিকা থেকে যে বিপুল পরিমাণ পণ্য কানাডা আমদানি করে, তার আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার ৫০০ কোটি কানাডিয়ান ডলার। এই পরিমাণ পণ্যের উপর কানাডা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে। শীঘ্রই এই শুল্ক কার্যকর করা হবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলেই এই শুল্ক আরোপ করা হল বলেও জানিয়েছেন ট্রুডো।
অন্য দিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আইনসভায় কনজ়ারভেটিভ দলের নেতা পিয়ে পলিয়েব্রাকেও নাস্তানবুদ করেছেন তিনি। বরাবর ইউক্রেনের সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন ট্রুডো। অন্য দিকে পলিয়েব্রার মতে, দুই দেশের টক্করে মাথা গলানোর দরকার নেই কানাডার। তাই ট্রুডোর দাবি, ট্রাম্পের ভাষাতেই কথা বলেন পলিয়েব্রা। তাঁদের দু’জনের একাধিক মিল রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy