All need to know about Tirupati Temple Laddu history and controversy dgtl
Tirupati Temple Laddu
দিনে তৈরি হয় সাড়ে তিন লাখ, মানতে হয় বহু নিয়ম, তিরুপতির লাড্ডু তৈরিতে লাগে লক্ষ লক্ষ কেজি ঘি!
ভারতের জনপ্রিয় তিরুপতি মন্দিরে সারা বছর লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয়। ভক্তদের মধ্যে রয়েছেন নামী তারকা থেকে শুরু করে তাবড় শিল্পপতিরাও। তিরুপতি মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভেঙ্কটেশ্বর।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডু বিতর্ক অব্যাহত। এ বার লাড্ডু তৈরির জন্য ভেজাল ঘি পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সরবরাহকারী সংস্থার বিরুদ্ধে। যদিও ওই খাদ্য সংস্থা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
০২২৩
তবে যে প্রসাদী লাড্ডু নিয়ে এত বিতর্ক, এত তরজা, এত অভিযোগ, তার ইতিহাসও কিন্তু খুবই আকর্ষণীয়। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস।
০৩২৩
ভারতের জনপ্রিয় তিরুপতি মন্দিরে সারা বছর লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয়। ভক্তদের মধ্যে রয়েছেন নামী তারকা থেকে শুরু করে তাবড় শিল্পপতিরাও। তিরুপতি মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভেঙ্কটেশ্বর। যিনি ভগবান বিষ্ণুর অবতার। বালাজি, গোবিন্দ, শ্রীনিবাস, একাধিক নামে ডাকা হয় এই দেবতাকে।
তিরুপতির প্রসাদী লাড্ডু ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে প্রথম নিবেদন করা হয় ৩০০ বছরেরও বেশি আগে, ১৭১৫ সালে। সেই বছর থেকে ভক্তদেরও পরিবেশন করা শুরু হয়।
০৬২৩
প্রসাদটি ‘পোটু’ নামক একটি বিশেষ রান্নাঘরে প্রস্তুত করা হয়। যেখানে একটি ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়ের দক্ষ কারিগরেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই প্রসাদ তৈরি করে আসছেন।
০৭২৩
‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে লেখা, মন্দিরের রীতি অনুযায়ী লাড্ডু প্রস্তুতকারক কারিগরদের মাথা কামিয়ে রাখা অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি তাঁদের পরিচ্ছন্ন একবস্ত্র পরে লাড্ডু তৈরি করতে হয়।
০৮২৩
প্রতি বার লাড্ডু তৈরির পর প্রথমে তা ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে নিবেদন করা হয়। পরে তা বিতরণ করা হয় ভক্তদের মধ্যে। প্রত্যেক দর্শনার্থীকে বিনামূল্যে একটি করে লাড্ডু দেওয়া হয়। এর থেকে বেশি লাড্ডু পেতে হলে প্রতিটি লাড্ডু ৫০ টাকা করে কিনতে হয়।
০৯২৩
সুস্বাদু প্রসাদী লাড্ডু তৈরি হয় বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে। ‘দিত্তম’ হল তিরুপতি লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের তালিকা এবং এর অনুপাত। লাড্ডুর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে মোট ছ’বার দিত্তমে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
১০২৩
বর্তমান উপকরণগুলির মধ্যে রয়েছে বেসন, কাজুবাদাম, এলাচ, ঘি, চিনি এবং কিশমিশ। লাড্ডু তৈরিতে প্রতি দিন প্রায় ১০ টন বেসন, ১০ টন চিনি, ৭০০ কেজি কাজুবাদাম, ১৫০ কেজি এলাচ, ৩০০ থেকে ৫০০ কেজি ঘি, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৫০০ কেজি কিশমিশ ব্যবহার করা হয়।
১১২৩
মন্দিরে যে লাড্ডুগুলি তৈরি হয়, সেগুলির এক একটির ওজন প্রায় ১৭৫ গ্রাম। প্রত্যেক লাড্ডুতে কাজু, কিশমিশ, চিনি এবং এলাচের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট।
১২২৩
তিরুপতি মন্দিরের পরিচালন পর্ষদ ‘তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম’ (টিটিডি) প্রতি বছর দরপত্রের ভিত্তিতে এই সমস্ত উপকরণ সংগ্রহ করে।
১৩২৩
‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্দিরের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর তিরুপতি মন্দিরে প্রায় পাঁচ লক্ষ কেজি ঘি প্রয়োজন হয়। প্রতি ছ’মাস অন্তর প্রয়োজন অনুযায়ী দরপত্র চাওয়া হয়। বরাত পেতে অনলাইনের মাধ্যমে বিডিং করে বিভিন্ন সংস্থা।
১৪২৩
বরাত দেওয়ার পর টিটিডির পক্ষ থেকে সংস্থার কারখানা ঘুরে দেখে আসা হয়। স্বাস্থ্যবিধি এবং গুণমান নিয়ে সংশয় থাকলে বরাত বাতিল করা হয়। টিটিডির এক কর্তার কথায়, “যদি ঘি আমাদের মনের মতো না হয়, তা হলে তা ফেরত পাঠানো হয়। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ’২৩-এর জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৪২ ট্রাক নিম্নমানের ঘি ফিরিয়ে দিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।’’
১৫২৩
মন্দিরের রান্নাঘর বা পোটুর মান নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সজাগ থাকেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। লাড্ডুর গুণমানও খাদ্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়।
১৬২৩
মন্দিরের রান্নাঘরের প্রধান আর শ্রীনিভাসুলুকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, রান্নাঘরে লাড্ডু তৈরির আগে সমস্ত উপকরণের মান পরীক্ষা করা হয়। ৬০০ বিশেষজ্ঞ রাঁধুনি দু’টি আলাদা শিফ্টে কাজ করেন। প্রতি দিন সাড়ে তিন লক্ষ লাড্ডু তৈরি করা হয়। বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় চার লক্ষ পর্যন্ত লাড্ডু তৈরি করা হয় প্রতি দিন।
১৭২৩
কালোবাজারির রমরমা রুখতে ২০০৯ সালে জিআই (জিয়োগ্র্যাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) ট্যাগের স্বীকৃতি পেয়েছে এই লাড্ডু। টিটিডিই একমাত্র এই লাড্ডু বানাতে ও বিক্রি করতে পারবে। সেই লাড্ডু নিয়েই তৈরি বিতর্কে তোলপাড় সারা দেশে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
১৮২৩
লাড্ডু বিতর্কের সূত্রপাত অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর একটি দাবিকে কেন্দ্র করে। তিনি গুজরাতের এক সরকারি ল্যাবের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনেন। রিপোর্টটি জুলাই মাসের।
১৯২৩
সেই রিপোর্টকে সামনে রেখে চন্দ্রবাবু দাবি করেন, তিরুপতির প্রসাদী লাড্ডুতে ব্যবহৃত ঘিয়ের সঙ্গে মেশানো হয়েছে পশুর চর্বি। এই ঘটনার জন্য চন্দ্রবাবু এবং তাঁর ডেপুটি জনসেনা পার্টির প্রধান পবন কল্যাণ দায়ী করেছেন তাঁদের পূর্বতন জগন্মোহন রেড্ডির সরকারকে।
২০২৩
বুধবার চন্দ্রবাবুর এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই শোরগোল পড়ে যায়। তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং জন সেনা পার্টি ছাড়া বিজেপিও বিষয়টি নিয়ে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জয় বান্দির দাবি, এ ভাবে মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডুতে পশুর চর্বি মিশিয়ে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরেই ওঠে আইনি পদক্ষেপের দাবি।
২১২৩
লাড্ডু বিতর্ক গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। শুক্রবার এক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, প্রসাদী লাড্ডুতে পশুর চর্বি মিশিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। আবেদনে দাবি করা হয়েছে, অগণিত ভক্ত, যাঁরা এই প্রসাদকে পবিত্র আশীর্বাদ হিসাবে মনে করেন, তাঁরা মানসিক ভাবে আহত হয়েছেন। আবেদনকারী জানিয়েছেন, লাড্ডু বিতর্ক মন্দির প্রশাসনের গাফিলতির প্রমাণ।
শনিবার এই বিতর্ক নয়া মোড় নেয়। ভেজাল ঘি সরবরাহের অভিযোগ ওঠে ওই সরবরাহকারী সংস্থার বিরুদ্ধে। তবে ঘি রফতানিকারক ওই সংস্থা জানিয়েছে, ‘গরুর বিশুদ্ধ দুধ’ থেকেই ঘি তৈরি করে তারা। বিশুদ্ধতার প্রমাণস্বরূপ তাদের কাছে ল্যাবরেটরির রিপোর্ট রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।