All controversy of Minister for Home Affairs of Madhya Pradesh Narottam Mishra, who called for a boycott of movie Pathan dgtl
Narottam Mishra
পাঠান ‘অশ্লীল’, নাসিরউদ্দিনরা স্লিপার সেলের সদস্য! বহু কোটির দুর্নীতিতে নাম নরোত্তমের
শাহরুখ-দীপিকা অভিনীত ‘পাঠান’ ছবিটিকে ‘অশ্লীল’ বলা থেকে প্রকাশ ঝা-র বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার ডাক। বহু বিতর্কে জড়িয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
শাহরুখ খান-দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘পাঠান’ সিনেমা ‘অশ্লীল’! এমনটাই দাবি করে এই সিনেমা বয়কটের ডাক দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র।
০২২৬
নরোত্তমের দাবি, ভারতের ‘সনাতন সংস্কৃতি’কে অবমাননা করছে ‘পাঠান’। তাই এই সিনেমা ভারতে কিছুতেই চলতে দেওয়া যাবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। এর আগেও অনেক দাবি নিয়ে সরব হতে দেখা দিয়েছে নরোত্তমকে। বলিপাড়ার পরিচিত মুখেরাও বার বার তাঁর ‘নেকনজরে’ পড়েছেন।
০৩২৬
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ‘সাজার মেয়াদ শেষের আগে’ মুক্তি দেওয়াকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সরব হয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিলেন জাভেদ আখতার এবং শাবানা আজমিও। ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে প্রকাশ্যে চোখের জলও ফেলেছিলেন শাবানা।
০৪২৬
জাভেদ বলেছিলেন, ‘‘আমাদের সমাজের নিশ্চয়ই কোনও অসুখ হয়েছে। যে কারণে দোষীদের মুক্তি দেওয়া হল।’’ নাসিরুদ্দিনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে, যা অবস্থা তাতে তাঁর ভয় হয়। কিন্তু এ সব কিছুই ভাল চোখে দেখেননি নরোত্তম।
০৫২৬
নরোত্তমের দাবি ছিল, শাবানা, জাভেদ এবং নাসিরুদ্দিন সকলে ‘টুকড়ে-টুকড়ে গ্যাং’-এর সদস্য। তাঁরা এই গ্যাংয়ের ‘স্লিপার সেল’ হিসাবে কাজ করেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন নরোত্তম। তাঁর এই মন্তব্যে বিস্তর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
০৬২৬
২০০৮-এর নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে, বেশ কয়েকটি স্থানীয় সংবাদপত্রে একই দিনে নরোত্তমের নামে প্রশংসা করে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। এমনকি ভোটের দিন অর্থাৎ, ২৭ নভেম্বরও একাধিক দৈনিকে একই ধরনের লেখা বেরিয়েছিল। তবে পরে অভিযোগ ওঠে, নরোত্তমই নাকি টাকা দিয়ে এই খবরগুলি ছাপানোর ব্যবস্থা করেন।
০৭২৬
নিউজলন্ড্রির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়ম লঙ্ঘন করে ৮ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে তার জন্য খবর এবং প্রচার চালানোর জন্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে টাকা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, তিনি কমিশন প্যানেলের কাছে নির্বাচনী খরচ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
০৮২৬
২০১৭ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের তরফে মিশ্রকে তিন বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। যদিও বিজেপি নেতাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। কমিশন এর পর নরোত্তমের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে সেখানেও দিল্লি হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। এর পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন নরোত্তম। যদিও বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
০৯২৬
নরোত্তমের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে। নগর উন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে, তিনি হায়দরাবাদের একটি নির্মাণ সংস্থাকে ২৬৭ কোটি টাকার টেন্ডার ‘পাইয়ে’ দেওয়ার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ছিল, ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে নরোত্তম-ঘনিষ্ঠ মুকেশ শর্মা এবং ১৪ জন কৃষকের ব্যাঙ্কে খেপে খেপে মোট ৯.৫ কোটি পাঠানো হয়েছিল। যার মধ্যে ৫ কোটি দিয়ে একটি জমি কেনা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। জমিও কেনা হয়ছিল ওই কৃষকদের নামেই।
১০২৬
আয়কর বিভাগের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুকেশ শর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু নথিতে আর্থিক গরমিলের প্রমাণ উঠে আসে।
১১২৬
এর পর নরোত্তম আয়কর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। বেহিসাবি আয়ের জন্য নরোত্তমকে কর দেওয়ার নির্দেশ দেয় আয়কর দফতর। এর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলে নরোত্তমের পক্ষেই রায় দেয় মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট।
১২২৬
২০১৯ সালে ৮০ হাজার কোটির ই-টেন্ডারিং কেলেঙ্কারিতেও নরোত্তমের নাম উঠে আসে। এই দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে নরোত্তমের ব্যক্তিগত সচিব বীরেন্দ্র পাণ্ডে, নির্মল অবস্থি এবং মুকেশ শর্মাকে গ্রেফতার করে অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা। যদিও নরোত্তমের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি।
১৩২৬
‘ব্যাপম কেলেঙ্কারি’র পর্দা ফাঁস করা আনন্দ রায় মিশ্র, একটি স্টিং অপারশনের ভিডিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে দাবি করেন, দিগ্বিজয় সিংহের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের পতনের আগে নরোত্তম কংগ্রেস বিধায়কদের নিয়ে ‘ঘোড়া কেনাবেচা’ করেছেন। আনন্দ দাবি করেছেন যে, নরোত্তম খোলাখুলি ভাবে ‘ঘোড়া কেনাবেচা’র কথা স্বীকার করেছিলেন। এই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে তোলপাড় ফেলে দেয়।
১৪২৬
যদিও মধ্যপ্রদেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দাবি করে, ভিডিয়োটি ভুয়ো এবং নরোত্তমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এই ভিডিয়ো বানানো হয়েছে।
১৫২৬
২০২০ সালে, গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ সম্পর্কে টুইট করার সময় আনন্দ একটি ভুল চিত্র ব্যবহার করেছিলেন। যার ফলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। আনন্দ আদালতে জানান, নরোত্তমের নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
১৬২৬
নরোত্তমের নির্বাচনী এলাকা দাতিয়ার কংগ্রেস কর্মীরা অভিযোগ এনেছিলেন যে, পুলিশকে ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন নরোত্তম। কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মিথ্যা অভিযোগ এনে গ্রেফতার করানো হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।
১৭২৬
২০১৩ সালে, স্থানীয় পত্রিকা ‘জগৎ ভিশন’ নরোত্তমকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নরোত্তম ইয়া নরাধম’। এতে মিশ্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তোলাবাজি, জোরপূর্বক দখল, শোষণ, অপহরণ, মুক্তিপণ ও খুনের বিশদ অভিযোগ ছিল।
১৮২৬
‘জগৎ ভিশন’-এর সম্পাদক বিজয়া পাঠক নিউজলন্ড্রিকে বলেন, “আমি প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করেছি। নরোত্তম মিশ্র বেশ বিতর্কিত চরিত্র। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা ছিল, তাই আমরা ভেবেছিলাম তাকে নিয়ে খবর করা উচিত। তবে এর পরও উনি আমার বিরুদ্ধে কোনও মানহানির মামলা করেননি।”
১৯২৬
এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে নরোত্তম বলেন “আমি যা সঠিক মনে করি শুধু তাই বলি। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও মামলা নেই। আমার মতে, টাকা দিয়ে খবর করানো দুর্নীতি নয় এবং সুপ্রিম কোর্টও আমাকে ছাড় দিয়েছে। কংগ্রেসকর্মীদের উৎপীড়ন করার অভিযোগও মিথ্যা।’’
২০২৬
গত কয়েক মাস ধরে, মন্ত্রী প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক অবস্থানের জন্য শিরোনামে রয়েছেন। ইনদৌরে পরিচয় ‘জাল’ করার অভিযোগে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা একজন চুড়ি বিক্রেতাকে ব্যাপক মারধর করে। পরে ওই চুড়ি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পিছনে নরোত্তমের হাত ছিল বলেই অনেকে দাবি করেন।
২১২৬
পোশাক শিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের একটি মঙ্গলসূত্র বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্কের পর, নরোত্তম হুমকি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে এ রকম কিছু হলে তিনি ‘সরাসরি পদক্ষেপ’ করবেন। এর পর ওই বিজ্ঞাপন দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়।
২২২৬
সমকামিতা নিয়ে ‘ডাবর’ কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছিলেন নরোত্তম। সম্প্রতি পুলিশের নথি থেকে উর্দু শব্দগুলিকে ‘অপ্রচলিত’ বলে বাদ দেওয়ার ডাক দিয়েছেন।
২৩২৬
বজরং দলের কর্মীরা প্রকাশ ঝা-র ওয়েব সিরিজ় ‘আশ্রম-৩’-এর সেট ভাঙচুর করার পর নরোত্তম ওই কর্মীদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলে অভিহিত করেন। প্রকাশ্যে প্রকাশের উপর ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথাও তিনি বলেছিলেন।
২৪২৬
সানি লিওনের ‘মধুবন মে রাধিকা’ মিউজিক ভিডিয়ো নিয়েও গলা চড়িয়েছিলেন নরোত্তম। তিনি সানিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেন এবং তিন দিনের মধ্যে ভিডিওটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে না নিলে সানি এবং গানের সুরকার সাকিব তোশির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
২৫২৬
বলা হয়, প্রতিদিন সকাল ১০টা নাগাদ নরোত্তম মিশ্রের বাংলোর বাইরে ভিড় জমান সাংবাদিকরা। কারণ সে রাজ্যের সাংবাদিকদের কাছে নাকি নরোত্তম একটি সংবাদের ভান্ডার। কারণ তাঁর ‘মুখনিঃসৃত বাণী’ নাকি খবরের জন্ম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
২৬২৬
কেউ কেউ দাবি করেন, নরোত্তম প্রচার-ক্ষুধার্ত এক জন রাজনীতিবিদ। অনেকের মতে আবার তিনি ‘দোস্তন কা দোস্ত’। হাজারো বিতর্কের মধ্যেও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের মন্ত্রিসভার এক জন ‘গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়’ হিসাবেই বিবেচিত হন নরোত্তম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ঘনিষ্ঠ বলেও নাম আছে নরোত্তমের।