All about the helicopter that crashed while carrying Iranian President and Foreign Minister dgtl
Ebrahim Raisi Death
শত্রু দেশে তৈরি কপ্টারে কেন চড়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রইসি? জোরালো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব
যে কপ্টারে সওয়ার হয়েছিলেন রইসি, সেটি ‘বেল’ নামে পরিচিত। বর্তমানে অবশ্য এই কপ্টারগুলিকে অনেক আধুনিক এবং সময়োপযোগী করে তোলা হয়েছে। নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেল টেক্সট্রন’।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ১৩:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
কপ্টার ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির। মারা গিয়েছেন চপারে রইসির সহযাত্রী তথা সে দেশের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ানও।
০২২০
রবিবার উত্তর-পশ্চিম ইরানের পূর্ব আজ়ারবাইজান প্রদেশের পর্বতঘেরা অঞ্চলে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে রইসির কপ্টার। সেই সময় দুর্ঘটনাস্থলে ভারী বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা খুব কম ছিল বলেও জানা যায়।
০৩২০
তবে ওই দুর্ঘটনার পর থেকেই যে প্রশ্নগুলি উঠছে, সেগুলি হল, কী ধরনের কপ্টারে চেপে সফর করছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক নেতা? কারা এই কপ্টারের নির্মাতা? ইরান বাদে আর কোন দেশ এই কপ্টার ব্যবহার করেছে বা করে?
০৪২০
যে কপ্টারে সওয়ার হয়েছিলেন রইসি, সেটি ‘বেল’ নামেই পরিচিত। বর্তমানে অবশ্য এই কপ্টারগুলিকে অনেক আধুনিক এবং সময়োপযোগী করে তোলা হয়েছে। নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেল টেক্সট্রন’।
০৫২০
এই কপ্টারটি তৈরি করে টেক্সট্রন শিল্পগোষ্ঠী। সংস্থাটির সদর দফতর আমেরিকার রোড আইল্যান্ডে। ইউটিলিটি হেলিকপ্টার (ইউএইচ) হিসাবে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে এটির।
০৬২০
ষাটের দশকের শেষ দিকে ইউএইচ-১ গোষ্ঠীভুক্ত ইরোকুইস হেলিকপ্টারের মানোন্নয়ন করে তৈরি করা হয় বেল কপ্টার। প্রথমে কানাডার সেনাবাহিনী সামরিক কাজে ব্যবহার করত এটি। পরে আমেরিকাও এটির ব্যবহার শুরু করে।
০৭২০
অর্থাৎ, আমেরিকার সংস্থা এই কপ্টারের নির্মাতা হলেও এটি প্রথম ব্যবহৃত হয় কানাডায়। বর্তমানে এই কপ্টারটির যে গোত্র ব্যবহৃত হয়, তাতে একের পরিবর্তে রয়েছে দু’টি ইঞ্জিন। ফলে কপ্টারটির বহনক্ষমতা বেড়েছে।
০৮২০
যদিও ইরানে যে বেল ২১২ কপ্টারগুলি ব্যবহৃত হয়, সেগুলি বেশ পুরনো। ইরানের অধিকাংশ বিমান কিংবা হেলিকপ্টারই পুরনো আমলের। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি পশ্চিম এশিয়ার এই দেশের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় হেলিকপ্টার বা বিমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে অসুবিধায় পড়তে হয় ইরানকে।
০৯২০
এমনকি, ইরানের সেনা যে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে, সেগুলি ১৯৭৯ সালে সে দেশে ইসলামিক বিপ্লবের আগেও ব্যবহৃত হত। এখন প্রশ্ন হল, এই কপ্টারের ইতিবাচক দিক কোনগুলি?
১০২০
ইউটিলিটি হেলিকপ্টার হওয়ার দরুন বেল ২১২-কে যে কোনও প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। অস্ত্রবহন করতে যেমন এটি ব্যবহার করা যায়, তেমনই অসামরিক কাজে, যেমন যাতায়াত কিংবা মালবহনের জন্য এই কপ্টারকে ব্যবহার করা হয়।
১১২০
জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনী, আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থাগুলি বর্তমানে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। আবার তাইল্যান্ডের পুলিশ দ্রুত অকুস্থলে পৌঁছতে বেল ২১২ কপ্টার ব্যবহার করে।
১২২০
ইরান কতগুলি বেল ২১২ কপ্টার ব্যবহার করে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ইরানের নৌসেনা এবং বায়ুসেনা মোট ১০টি এই ধরনের কপ্টার ব্যবহার করে।
১৩২০
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অ্যাভিয়েশন সেফটি এজেন্সির মতে, এই কপ্টারে পাইলট, কর্মী-সহ মোট ১৫ জন চড়তে পারেন। বর্তমানে টেক্সট্রন শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে এসেছে কপ্টারটি আরও একটি অত্যাধুনিক মডেল। যার নাম দেওয়া হয়েছে সুবারু বেল ৪১২।
১৪২০
অত্যাধুনিক এই মডেলটিকে পুলিশ, চিকিৎসক, দমকল বাহিনী প্রায় সকলেই ব্যবহার করতে পারবে। ইরানে যে এই কপ্টারটির আলাদা কদর রয়েছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। আর সেই কারণেই স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এই কপ্টারটি ব্যবহার করতেন।
১৫২০
আমেরিকার সঙ্গে ইরানের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা সুবিদিত। পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান সঙ্কটে তা মধুরতর হয়েছে। কারণ পুরনো অবস্থান বজায় রেখে আমেরিকা যেমন ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে, তেমনই ইরান পাশে দাঁড়িয়েছে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের।
১৬২০
ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে সিরিয়া, লেবাননের মতো দেশকে ‘প্ররোচিত’ করার অভিযোগও রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওয়াশিংটন বিরোধিতা সত্ত্বেও বাইডেনের দেশে তৈরি কপ্টারকেই ভরসা করেছে তারা। তবে গত রবিবারের ঘটনার পর এই ভরসা কতটা থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
১৭২০
অতীতে অবশ্য এই কপ্টারটি নিয়ে তেমন বড় কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তবে গত সেপ্টেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সমুদ্র উপকূলে ভেঙে পড়েছিল একটি বেল ২১২ কপ্টার। সেটি ছিল ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি কপ্টার।
১৮২০
২০১৮ সালেও এই কপ্টার ভেঙে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই দু’টি ঘটনা বাদ দিলে আর কখনও বেল কপ্টার ভেঙে পড়ার কথা শোনা যায়নি।
১৯২০
তবে ইরানের প্রেসিডেন্টের কপ্টার ভেঙে পড়ার নেপথ্য কারণ কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি, না কি কোনও ষড়যন্ত্র বা অন্তর্ঘাত রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
২০২০
অনেকেরই সন্দেহ ইরানের শত্রু দেশ ইজ়রায়েল এবং তাদের গুপ্তচর সংগঠন মোসাদের উপর। রইসির কপ্টারের নির্মাতা আমেরিকা, এই কথা প্রকাশ্যে আসার পর ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত জল্পনা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।