বছর কুড়ি আগে অন্য ‘পরীক্ষা’য় বসেছিলেন বিসিসিআইয়ের মুখ্য নির্বাচক অজিত আগরকর। প্রেমিকা ভিন্ ধর্মের হওয়ায় তাঁকে পরিবারের সদস্য করতে নাকি নারাজ ছিলেন আগরকরের পরিবারের সদস্যরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মুম্বইশেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ১৫:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
রোগাপাতলা ছোটখাটো চেহারার হলেও প্রায়শই তাঁর বলের গতি উঠত ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। বিষাক্ত ইনসুইংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও বেশ কয়েক বার ভারতীয় ক্রিকেট দলের ত্রাতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। সেই প্রাক্তন অলরাউন্ডার অজিত আগরকরকেই চলতি মাসের গোড়ায় মুখ্য নির্বাচকের দায়িত্ব দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
০২১৯
দেশের মাটিতে আসন্ন আইসিসি বিশ্বকাপে বড় পরীক্ষায় বসবেন বিসিসিআইয়ের মুখ্য নির্বাচক আগরকর। এক দিনের বিশ্বকাপের জন্য সেরা ভারতীয় দল বাছাইয়ের গুরুদায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে।
০৩১৯
আজ থেকে বছর কুড়ি আগেও অবশ্য অন্য ‘পরীক্ষা’য় বসেছিলেন আগরকর। প্রেমিকা ভিন্ ধর্মের হওয়ায় তাঁকে পরিবারের সদস্য করতে না কি নারাজ ছিলেন আগরকরের পরিবারের সদস্যরা। তবে বাড়ির অমতেই প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর আবার শিরোনামে আগরকরের সেই কাহিনি।
০৪১৯
নব্বইয়ের দশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশের চার বছর পর ২০০২ সালে পরিবারের অমতে ফতিমা ঘড়িয়ালিকে বিয়ে করেন আগরকর। তবে সে সময় আগরকরের ওই সিদ্ধান্ত ততটা সহজ ছিল না।
০৫১৯
১৯৯৮ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয়েছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির উচ্চতার আগরকরের। কেরিয়ারের গোড়ায় বেশ কয়েকটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছিলেন তিনি। তার মধ্যে অন্যতম, অস্ট্রেলীয় পেসার ডেনিস লিলিকে টপকে এক দিনের আন্তর্জাতিকে দ্রুততম ৫০ উইকেট শিকার।
০৬১৯
এক দিনের আন্তর্জাতিকে দ্রুততম ৫০টি উইকেট নিয়েছিলেন লিলি। ২৪টি ম্যাচে সে নজির গড়েছিলেন তিনি। এক ম্যাচ কম খেলে লিলির রেকর্ড ভাঙেন আগরকর। স্বভাবতই কেরিয়ারের গোড়ায় ভারতীয় দলের পেস আক্রমণের অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন।
০৭১৯
আগরকরের রেকর্ড অবশ্য ১৯ ম্যাচে ভেঙে দেন শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিস। তবে ভারতীয় দলে এককালে প্রায় অপরিহার্য আগরকরকে নিয়ে কম হইচই হত না। ভারতের জার্সিতে এক দিনের আন্তর্জাতিকে তৃতীয় সেরা উইকেট শিকারি তিনি। শুধু কি বোলিং? ব্যাটেও যে দলে অন্য মাত্রা জুড়েছিলেন আগরকর।
০৮১৯
এক দিনের আন্তর্জাতিকে আগরকরের আর একটি রেকর্ড নিয়েও আলোচনা কম হত না। তাতে হাজার রান এবং ১০০ উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রেও কম তাড়া ছিল না তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলকের ওই নজির ভাঙতে ১৩৩ ম্যাচ নিয়েছিলেন আগরকর। তাঁর থেকে একটি ম্যাচ বেশি খেলে ওই রেকর্ড গড়েছিলেন পোলক।
০৯১৯
আগরকরের কেরিয়ারে লজ্জাজনক রেকর্ডও রয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ়ে ব্যাট করতে নেমে টানা পাঁচ বার শূন্য ঝুলিতে সাজঘরে ফিরেছিলেন। তার মধ্যে চার বার প্রথম বলেই উইকেট খুইয়েছিলেন। সে সময় অজ়িদের বিরুদ্ধে তাঁর নামের পাশে টানা সাত ইনিংসে শূন্য রান লেখা হয়েছিল।
১০১৯
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওই রেকর্ডের পর থেকেই মুম্বইয়ের বাসিন্দা আগরকরের ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘বম্বে ডাক’। তবে সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আগরকরের রেকর্ড হেলাফেলার নয়।
১১১৯
২৬টি টেস্টে ৫৮ উইকেট ছাড়াও একটি অপরাজিত শতরান রয়েছে তাঁর। অন্য দিকে, ১৯১ এক দিনের ম্যাচে ২৮৮ উইকেট শিকার করেছেন। সঙ্গে রয়েছে ৯৫ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস।
১২১৯
১৯৯৯, ২০০৩ এবং ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন আগরকর। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি।
১৩১৯
অলরাউন্ডার আগরকরের ব্যক্তিজীবনেও বেশ কয়েকটি গর্বের অধ্যায় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বোধ হয় পারিবারিক বাধা সত্ত্বেও ফতিমার সঙ্গে পথচলার সিদ্ধান্ত।
১৪১৯
ফতিমার সঙ্গে আগরকরের প্রেমকাহিনিও যেন সিনেমার মতো। নব্বইয়ের দশকে আগরকরের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতেন তাঁর বন্ধু মজ়হর ঘড়িয়ালি। সে সব ম্যাচ দেখতে হাজির থাকতেন মজ়হরের বোন ফতিমা। তবে তখনও আগরকরের সঙ্গে পরিচয় হয়নি তাঁর।
১৫১৯
২০০০ সালে মজ়হরের মাধ্যমেই ফতিমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আগরকরের। সে সময় মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় ম্যানেজ়েন্ট কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করতেন ফতিমা। শীঘ্রই ডেটিং শুরু হয় তাঁদের। পরের বছর থেকেই সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়েছিল আগরকর-ফতিমার প্রেমকাহিনি।
১৬১৯
ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনায়ও কম উৎসাহী ছিলেন না ফতিমা। মুম্বইয়ের একটি নামী কলেজ থেকে স্নাতকের ডিগ্রি হাসিল করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাড়ি দেন তিনি। বার্মিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজ়মেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে এমবিএ করেন। সঙ্গে রয়েছে বিএড এবং ইসিসিই ডিগ্রিও।
১৭১৯
এককালে বেসরকারির সংস্থার চাকরি ছেড়ে শিক্ষাবিদ হিসাবে নাম কামিয়েছেন ফতিমা। ২০২০ সালে একটি পত্রিকার বিচারে দেশের সেরা ৫০টি শিক্ষাবিদের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি। মুম্বইয়ের কচিকাঁচাদের জন্য স্পোর্টস এডুকেশন সংস্থাও গড়ে তুলেছেন ফতিমা।
১৮১৯
সংবাদমাধ্যমের দাবি, ভিন্ধর্মের হওয়ায় ছেলের প্রেমিকা হিসাবে ফতিমাকে মেনে নিতে পারেননি আগরকরের মরাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্যরা। তবে বাড়ির অমতেই ফতিমার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন আগরকর।
১৯১৯
২০০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একটি ছিমছাম অনুষ্ঠানে আগরকর এবং ফতিমার বিয়ে হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমস্ত সদস্যকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আগরকর। ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবেরাও। গত ২১ বছর ধরে ফতিমার সঙ্গে দাম্পত্যে রয়েছেন আগরকর। তাঁদের সংসারে এসেছে পুত্র রাজও।