Airbus C295 military transport aircraft project of Vadodra Gujarat is a game changer for India know experts opinion dgtl
Airbus C295
১০ টন হাতিয়ার, ৪০ প্যারাট্রুপার নিয়ে দাদাগিরি! গুজরাতের ফৌজি বিমান কারখানা কেন ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে?
গুজরাতের বরোদায় বিমানবাহিনীর জন্য মালবাহী ‘এয়ারবাস সি২৯৫’ উড়ান তৈরি করবে টাটা গোষ্ঠী। এই কারখানাকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলছেন তাবড় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ঘরের মাটিতে প্রথম বারের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি হবে ফৌজি মালবাহী বিমান (মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট)। গুজরাতের বরোদায় সেই কারখানার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো স্যাঞ্চেজ়। এই কারখানা ভবিষ্যতের ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।
০২১৮
বরোদার এই কারখানায় তৈরি হবে ‘এয়ারবাস সি২৯৫’ মালবাহী বিমান। এত দিন পর্যন্ত স্পেনীয় সংস্থা ‘সিএএসএ’ যা একচেটিয়া ভাবে তৈরি করে এসেছে। এ বার থেকে ভারতে এই বিমানগুলি নির্মাণ করবে ‘টাটা অ্যাডভান্স সিস্টেমস লিমিটেড’ (টিএএসএল)। সংস্থাটি ঐতিহ্যবাহী টাটা গোষ্ঠীর একটি শাখা সংগঠন।
০৩১৮
এয়ারবাস সি২৯৫-এর কারখানা উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘আত্মনির্ভরতার’ পথে আরও এক কদম এগোনো গেল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আগামী দিনে এই ধরনের সামরিক বিমান ভারত রফতানি করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
০৪১৮
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, ঘরের মাটিতে সি২৯৫ নির্মাণ ভারতীয় বায়ুসেনাকে শক্তিশালী করবে। এর নকশা তৈরিতে হাত রয়েছে ‘এয়ারবাস ডিফেন্স’-এর। যুদ্ধের সময়ে এই মালবাহী উড়ানগুলিকে কৌশলগত কাজে ব্যবহার করে ফৌজ। বাহিনীকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, মালপত্র, গোলা-বারুদ ও রসদ পরিবহণ, চিকিৎসার প্রয়োজনে এয়ারলিফ্ট এবং সামুদ্রিক টহলে সি২৯৫-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
০৫১৮
বায়ুসেনা সূত্রে খবর, সি২৯৫ বিমানগুলি হাতে এলে সোভিয়েত যুগের ‘এনটোনভ এন-৩২’ এবং হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেভের ‘অ্যাভ্রো ৭৪৮’ উড়ানগুলিকে বাতিল করা হবে। ‘‘মান্ধাতার আমলের এই দুই মালবাহী বিমানের থেকে এয়ারবাস সি২৯৫ অনেক বেশি উন্নত।’’ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কুণাল বিশ্বাস।
০৬১৮
এয়ারবাস সি২৯৫-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটি ছোট, কাঁচা বা অর্ধেক তৈরি রানওয়েতেও দিব্যি উড়তে পারে। লাদাখ বা কাশ্মীরের সুউচ্চ পাহাড়ি এলাকায় উড়ানটিকে অবতরণ করানো সহজ। ফলে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) এটিকে মোতায়েন করা যাবে।
০৭১৮
মালবাহী এই ফৌজি বিমানগুলি সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৪৮২ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। এর ১০ টন পর্যন্ত ওজন বহনের ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ, ৭১ জন সৈনিক বা ৪১ জন প্যারাট্রুপার নিয়ে রণাঙ্গনে উড়ে যেতে পারে এয়ারবাস সি২৯৫। এর পিছনের দিকে রয়েছে একটি দরজা। এত দিন ভারী ওজনের পরিবহণ বিমানে খুব উচ্চতায় অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সি২৯৫ সেই সমস্যা মেটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৮১৮
এই সামরিক বিমানে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহৃত দু’টি টার্বোরোপ। ইলেকট্রনিক সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের কাজেও এটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাথমিক ভাবে ৫৬টি এয়ারবাস সি২৯৫-কে বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে শামিল করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
০৯১৮
যুদ্ধে সৈন্য, গোলা-বারুদ পরিবহণের পাশাপাশি ‘ওয়াটার বম্বার’ হিসাবে অসাধারণ কার্যকর রয়েছে সি-২৯৫ বিমান। সি২৯৫ বিমান অরণ্যে আগুন নেভাতে দারুণ কাজ করে। প্রয়োজনে ছ’হাজার লিটার জ্বালানি নিয়ে অনায়াসে উড়তে সক্ষম এই মালবাহী বিমান।
১০১৮
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ৫৬টি সি২৯৫ বিমান কেনায় ছাড়পত্র দেয় কেন্দ্র। এর পরেই স্পেনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সেরে ফেলে ভারত। সেখানে বলা হয়েছে, ১৬টি বিমান সরাসরি স্পেন থেকে উড়িয়ে আনা হবে। এগুলি সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (রেডি টু ফ্লাই) হাতে পাবে বায়ুসেনা। বাকি ৪০টি বিমান বরোদার কারখানায় তৈরি এবং অ্যাসেম্বল করা হবে।
১১১৮
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর স্পেনীয় সংস্থার থেকে এই উড়ানের প্রথমটি হাতে পায় ভারতীয় বায়ুসেনা। পরবর্তী সময়ে ইউরোপের দেশটি থেকে উড়িয়ে আনা হয় আরও চারটি সি২৯৫। অন্য দিকে ২০২৬ সালের মধ্যে বরোদার কারখানা থেকে প্রথম বিমান সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থা।
১২১৮
ভারতে যে সি-২৯৫ বিমান তৈরি হবে তার মূল ইঞ্জিন, ল্যান্ডিং গিয়ার এবং অ্যাভিয়োনিক্স আসবে স্পেন থেকে। ২০৩১ সালের মধ্যে বরোদার কারখানাটির সমস্ত ইউনিট চালু হওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে টিএএসএল। তবে মোট ৪০টি বিমান তৈরিতে কত দিন সময় লাগবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
১৩১৮
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর কারখানাটির শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এতে ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে টাটা গোষ্ঠী। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কারখানাটিতে সরাসরি চাকরি পাচ্ছেন তিন হাজার জন। আর পরোক্ষ ভাবে এখানে ১৫ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে বলে জানা গিয়েছে।
১৪১৮
বরোদার এই কারখানায় সরাসরি ৬০০ জন উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি, ২৪০ জন ইঞ্জিনিয়ারকে স্পেনে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইউরোপের বাইরে প্রথম সি২৯৫ বিমান নির্মাণকারী দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারত।
১৫১৮
গুজরাতের সি২৯৫-এর কারখানাকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলার নেপথ্যে একাধিক কারণের উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রথমত, এর ফলে আগামী দিনে মালবাহী বিমানের জন্য অন্য দেশের দিকে দিল্লিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। ঘরের মাটিতে উড়ান নির্মাণ হওয়ায় দামে তা সস্তা হবে।
১৬১৮
দ্বিতীয়ত, এই কারখানাকে ভবিষ্যতে যুদ্ধবিমান বা বোমারু বিমান নির্মাণের জন্যেও ব্যবহার করতে পারে টাটা গোষ্ঠী। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানিটির লকহিড মার্টিন, বোয়িং বা দাশো অ্যাভিয়েশনের মতো সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার রাস্তা খুলে যাবে।
১৭১৮
আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, স্পেন বা ফ্রান্সের মতো উন্নত যুদ্ধবিমান বা বোমারু বিমান ঘরের মাটিতে তৈরি হলে, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবে ভারত। এতে বায়ুসেনার বিমানের ঘাটতি যেমন সহজেই মেটানো যাবে, তেমনই আবার এগুলি রফতানি করে মোটা অর্থ আয় করতে পারে কেন্দ্র। যাতে আখেরে লাভবান হবে নির্মাণকারী সংস্থা।
১৮১৮
ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রতিরক্ষা নির্মাণকারী সংস্থাগুলির অধিকাংশেই বেসরকারি মালিকানাধীন। সম্প্রতি সেই মডেলে জোর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেখানে বরোদার কারখানা মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আগামী দিনে টাটার দেখাদেখি আরও অনেক সংস্থা এই ধরনের কারখানা তৈরিতে আগ্রহ দেখাবে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।