ভারতের এক প্রতিবেশী দেশের মুদ্রার দাম টাকার চেয়ে বেশি। বর্তমানে এক আমেরিকান ডলার ভারতের প্রায় ৮৩ টাকার সমান। সেখানে ডলারের সাপেক্ষে ওই দেশের মুদ্রার মূল্য ৭৫ টাকার সামান্য বেশি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
২০২১ সালের ১৫ অগস্ট। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবান। আমেরিকার সেনা সে দেশ ছেড়ে চলে যায়। ভারতের উত্তর-পশ্চিমের পড়শি রাষ্ট্রে গঠিত হয় তালিবান সরকার।
০২২৫
সেই থেকে আফগানিস্তানের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করছে জঙ্গি সংগঠনটি। তারা দেশের নাগরিকদের উপর নানারকম নিয়মকানুন, বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিয়েছে।
০৩২৫
কট্টর ইসলামপন্থী তালিবান দেশে মহিলাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে মহিলারা বেশি দূর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন না। তাদের বাড়ি থেকেও একা বেরোনো নিষিদ্ধ।
০৪২৫
পার্ক, সিনেমাহল, রেস্তরাঁয় মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তালিবান সরকার। আফগান মহিলাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে হলে হিজাব এবং বোরখায় আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হয়।
০৫২৫
তালিবানি রাজত্বে নাগরিক হিসাবে মহিলাদের মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের জীবনে কোনও বিনোদন স্বীকৃত নয়। উচ্চশিক্ষা বা চাকরিতেও মহিলাদের অধিকার নিয়ন্ত্রিত।
০৬২৫
এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে গত দু’বছরে অর্থনীতি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করেছে অনেক দেশ।
০৭২৫
আফগানিস্তানের তালিবানি শাসককে সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি অধিকাংশ রাষ্ট্র। আনুষ্ঠানিক ভাবে কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সমর্থন পেয়েছে তালিবান সরকার।
০৮২৫
এ ছাড়া চিন, রাশিয়া, ইরান, মায়ানমার, কাতার, বেলারুস, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়ার মতো দেশ সরকারি ভাবে না বললেও তালিবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভাল।
০৯২৫
ভারতের অর্থনীতি আফগানিস্তানের চেয়ে অনেক বড়। তবে দুই দেশের মুদ্রার মূল্যে ফারাক সামান্যই। এমনকি, এ ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়েই আছে তালিবানশাসিত পড়শি দেশ।
১০২৫
২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় মুদ্রার সঙ্গে আফগান মুদ্রা আফগানির বিনিময় হার ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ, ভারতের এক টাকা আফগানিস্তানের ৮৯ পয়সার সমান।
১১২৫
শুধু ভারত নয়, আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইরানের মুদ্রার চেয়েও শক্তিশালী। ডলারের নিরিখে আফগানির মূল্য অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম।
১২২৫
বর্তমানে এক আমেরিকান ডলার মোটামুটি ভাবে ভারতের ৮৩ টাকার সমান। সেখানে ডলারের সাপেক্ষে আফগানিস্তানের মুদ্রার মূল্য মাত্র ৭৫.৭২ আফগানি।
১৩২৫
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের উপর আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিদেশি সাহায্য হিসাবে আফগানিস্তানের ৮০০ কোটি ডলার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১৪২৫
আফগান মুদ্রার দর কেন বেশি? কী ভাবে ভারতের টাকার চেয়ে এগিয়ে গেল আফগানি? বিশেষজ্ঞেরা জানান, এর নেপথ্যে রয়েছে আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক কাঠামো।
১৫২৫
আফগানিস্তান এমন একটি দেশ, যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ফল এবং অন্য জিনিসপত্র রফতানি করা হয়। তুলনায় খুব কম পণ্যই বাইরে থেকে কেনে তালিবান সরকার।
১৬২৫
এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মুখপাত্র হাসিবুল্লাহ্ নুরি বলেন, ‘‘দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সূচনা, বিদেশি মুদ্রার পাচার রোধ, রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি আফগানির স্থায়িত্ব এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।’’
১৭২৫
ক্ষমতায় আসার পর আমদানিতে চোরাচালান, দুর্নীতি কঠোর ভাবে রোধ করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের লেনদেনের উপরেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান।
১৮২৫
আকরিক লোহা, মার্বেল, তামা, দস্তা, সোনা এবং বেশ কিছু বিরল খনিজ পদার্থকে কাজে লাগিয়ে অর্থ রোজগার করেছে তালিবান। দেশের কর ব্যবস্থাও তাদের ভান্ডার পূর্ণ করেছে।
১৯২৫
খনিই আফগানদের সম্পদের মূল ভিত্তি। দেশে ১৪০০-র বেশি খনি রয়েছে। কয়লা, তামা, সোনা, লোহা, সীসা, ক্রোমাইটের মতো ধাতু এখানে পাওয়া যায়।
২০২৫
লিথিয়াম আফগানিস্তানের কাছে তুরুপের তাস হয়ে উঠছে। কারণ এই ধাতুর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল। লিথিয়ামের খনি থাকায় চিন আফগানিস্তানে অনেক টাকা ঢালে।
২১২৫
আফগানিস্তানে খনিজ তেলও মেলে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পাথর, সালফার, লিথিয়ামের খনি আফগানিস্তানে রয়েছে। এগুলি থেকেই দেশটির অনেক রোজগার।
২২২৫
আফগানিস্তানের রোজগারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস বিদেশি অনুদান। তালিবান সরকারকে পছন্দ না করলেও দেশের সাধারণ মানুষের হিতার্থে বহু বিদেশি সংগঠন আফগানিস্তানে অর্থসাহায্য পাঠায়। ব্যক্তিগত ভাবেও সাহায্য করেন অনেকে।
২৩২৫
আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতি বছর বিদেশ থেকে ১৫ থেকে ২০ কোটি ডলার নগদ অর্থসাহায্য লাভ করে। সরাসরি তালিবানের হাতে না গেলেও সেই কাঁচা টাকা আফগানিস্তানের বাজারকে সচল রাখে।
২৪২৫
তালিবান আমলে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক থেকে কোনও টাকা ছাপানো হয়নি। নতুন টাকা ছাপালে ডলারের সাপেক্ষে তার দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
২৫২৫
বাজারে মুদ্রার অভাব দেখা দিলে তালিবান পুরনো মুদ্রা ব্যবহারে সম্মতি দেয়। বাজারে ঘুরতে থাকা টাকা দিয়েই তারা অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। তালিবানের মুদ্রার স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সরকারের এই অর্থনৈতিক নীতি।