According to ILO data Indians do work very hard every week dgtl
ILO data
নারায়ণ মূর্তির ৭০ ঘণ্টা না হলেও প্রচুর কাজ করেন ভারতীয়েরা! বলছে আইএলও
রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশন (আইএলও)’-এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয়েরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের কর্মীদের তুলনায় বেশি কাজ করেন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
দেশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তরুণদের সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এনআর নারায়ণ মূর্তি। সম্প্রতি ইনফোসিসের প্রাক্তন সহযোগী মোহনদাস পাইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই ‘দাওয়াই’ দেন নারায়ণ মূর্তি।
০২১৬
সম্প্রতি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের পক্ষে সওয়াল করে নারায়ণ মূর্তি বলেছিলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এবং জাপানের মানুষেরা দেশের উন্নতি করতে অতিরিক্ত সময় কাজ করেছিলেন। ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তরুণ প্রজন্মের আরও কঠিন পরিশ্রম করা উচিত।” নারায়ণ মূর্তির এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়। কেউ কেউ তাঁকে উপদেশ দেওয়ার ভঙ্গিতে জানান, বেশি সময় কাজ করলেই উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না।
০৩১৬
নারায়ণ মূর্তির এই মন্তব্য নিয়ে বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। নেটাগরিকদের একাংশ প্রবীণ শিল্পপতির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সমালোচনা এসেছে একাধিক শ্রমিক সংগঠনের তরফেও।
০৪১৬
নারায়ণ মূর্তির নিদান শ্রমনীতির পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করার কথা নয় কর্মীদের। কিন্তু নারায়ণ মূর্তির কথা যদি মেনে নিতে হয়, তবে সপ্তাহে ছ’দিনের হিসাবে প্রতি দিন ১১ ঘণ্টারও বেশি কাজ করতে হবে।
০৫১৬
নারায়ণ মূর্তি যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা নিয়ে তো বিতর্ক চলছেই। কিন্তু কী বলছে ভারতের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কর্মীদের কাজের হিসাব?
০৬১৬
রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশন (আইএলও)’-এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয়েরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের কর্মীদের তুলনায় বেশি কাজ করেন।
০৭১৬
আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪৭.৭ ঘণ্টা কাজ করেন।
০৮১৬
যদি ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে তুলনা করা হয়, তা হলে ভারতীয়রাই প্রতি সপ্তাহে গড়ে সবচেয়ে বেশি ঘণ্টা কাজ করেন।
০৯১৬
কাতার, কঙ্গো, লেসোথো, ভুটান, গাম্বিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কর্মীরা অবশ্য বেশি ক্ষণ কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বব্যাপী র্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
১০১৬
ভারতীয় কর্মীদের কাজ করার সময় এতটাই বেশি যে, আইএলও শুধুমাত্র ভারতের শ্রমঘণ্টা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে।
১১১৬
আইএলও-এর তথ্য এবং মাথাপিছু আয় বিশ্লেষণ করে আইএলও যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, সেখানে দেখা গিয়েছে ভারতীয়দের আয় এবং সাপ্তাহিক গড় কাজের সময়ের মধ্যে ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, ভারতীয় কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে যত ক্ষণ কাজ করেন, সেই তুলনায় বেতন পান না। অন্যান্য দেশের কর্মীরা সেই তুলনায় বেশি বেতন পান।
১২১৬
উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে, ভারতে সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা সর্বোচ্চ এবং মাথাপিছু আয় সর্বনিম্ন। ফ্রান্সের কর্মীরা সপ্তাহে ৩০.১ ঘণ্টা কাজ করে মাথাপিছু ৪৬ লক্ষের বেশি করেন। ভারতে সে জায়গায় ৪৭.৭ ঘণ্টা করে কাজ করে মাথাপিছু আয় সাত লক্ষের কাছাকাছি।
১৩১৬
আমেরিকার কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ৩৬.৪ ঘণ্টা কাজ করেন। জার্মানির বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা কাজ করেন গড়ে ৩৪.৩ ঘণ্টা। ইটালিতে সপ্তাহে গ়ড়ে ৩৬.১ ঘণ্টা এবং কানাডায় গড়ে ৩২.১ ঘণ্টা কাজ করেন কর্মীরা।
১৪১৬
প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ নিয়ে ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন শিল্পপতি সজ্জন জিন্দল। নারায়ণ মূর্তিকে সমর্থন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন জিন্দল।
১৫১৬
জিন্দল স্টিল ওয়ার্কস শিল্প সংস্থার প্রধান জিন্দল বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতি দিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। আমার বাবা সপ্তাহে সাত দিনই ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতেন। আমি নিজেও প্রতি দিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করি।”
১৬১৬
জিন্দল এ-ও জানান যে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি অনেক বেশি প্রতিকূল। তাঁর কথায়, “উন্নত দেশগুলিতে সবাই সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করেন। কারণ তাঁদের আগের প্রজন্ম দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছে। আমরা আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে কাজের পরিমাণ কমাতে পারি না।” ওলা ক্যাবসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভবিশ আগরওয়ালও সমর্থন জানিয়েছেন নারায়ণ মূর্তিকে।