Abhijit Ganguly has become one of the most discussed characters in Bengal Politics dgtl
Abhijit Ganguly
নাটকের মঞ্চ থেকে আদালত, বহু বিতর্কিত নির্দেশ! ‘এক্স’ বিচারপতির ‘ওয়াই-জ়েড’ আনন্দবাজার অনলাইনে
কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তমলুক থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ভোটের ময়দানে তিনি চর্চার কেন্দ্রে।
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ১০:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৮
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে অন্যতম চর্চিত নাম। হাই কোর্ট সংক্রান্ত খবরের শিরোনামে তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর আলাদা তাৎপর্য তৈরি হয়েছে বঙ্গে।
০২২৮
দীর্ঘ দিন ধরে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন অভিজিৎ। বিভিন্ন মামলায় একের পর এক নির্দেশ দিয়ে চমকে দিয়েছেন সকলকে। তাঁর একাধিক নির্দেশে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
০৩২৮
শুধু তো নির্দেশ নয়, অভিজিতের নানা মন্তব্যেও বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কখনও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, কখনও বেআইনি নির্মাণ, বিবিধ মন্তব্যে বার বার শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি।
০৪২৮
বিচারপতি হিসাবে জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে আচমকা পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিজিৎ। সরাসরি জানিয়েই দেন, ‘বৃহত্তর ময়দান’ রাজনীতিতে অবতীর্ণ হতে চলেছেন।
০৫২৮
গত ৭ মার্চ বিজেপির হাত ধরে রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। তার পর যাবতীয় জল্পনা সত্যি করে তমলুকের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের শাসকদল।
০৬২৮
এ হেন অভিজিতের সঙ্গে কেরিয়ারের শুরুতে কিন্তু রাজনীতির কোনও যোগ ছিল না। ডব্লিউবিসিএস অফিসার হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। কর্মক্ষেত্র ছিল উত্তর দিনাজপুর।
০৭২৮
কয়েক বছর ওই চাকরি করার পর অভিজিৎ হাই কোর্টে চলে আসেন। আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে শুরু করেন ওকালতি। হাই কোর্টেই প্র্যাকটিস করতেন প্রথম থেকে।
০৮২৮
হাজরা ল কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন অভিজিৎ। তাঁর বাবাও পেশায় উকিল ছিলেন। ফলে আইনসমৃদ্ধ পরিবেশেই কেটেছিল তাঁর ছোটবেলা।
০৯২৮
পড়াশোনার পাশাপাশি অভিজিতের অন্য একটি শখও ছিল। তিনি নাট্যাভিনয় করতেন। অমৃতাচ্ছন্দ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। নিয়মিত থিয়েটারের মঞ্চে দেখা যেত তাঁকে। ১৯৮৬ সালে শেষ বার মঞ্চে উঠেছিলেন। তার পর অভিনয় ছেড়ে দেন।
১০২৮
হাই কোর্টে আইনজীবী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন অভিজিৎ। যোগ্যতার ভিত্তিতেই ২০১৮ সালে তাঁকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দু’বছর পর তিনি হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।
১১২৮
২০২১ সাল থেকে নিজের একাধিক নির্দেশের জন্য শিরোনামে উঠে আসতে শুরু করেন অভিজিৎ। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগের মামলাগুলি শুনছিলেন তিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।
১২২৮
রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগে দুর্নীতির মামলাগুলি অভিজিতের এজলাসে উঠেছিল। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ, একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় কড়া এবং দৃষ্টান্তমূলক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
১৩২৮
এসএসসির গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের মামলাতেই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ। পরে সেই সূত্রেই পার্থকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এখনও তিনি জেলে।
১৪২৮
নবম-দশম শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ। এসএসসি নিযুক্ত ৯৫২ জন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র বিকৃত করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁদের মধ্যে ৮০৫ জনের চাকরি বাতিল হয়। কমিশনও স্বীকার করে নেয়, তাঁদের উত্তরপত্র বিকৃত করা হয়েছিল।
১৫২৮
একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় অভিজিতের নির্দেশগুলি মনে থেকে যাবে। কারণ, তার সঙ্গে জুড়ে ছিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি নিজের কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে বেআইনি ভাবে চাকরি দিয়েছেন। অভিজিতের এজলাসেই সেই মামলা উঠেছিল।
১৬২৮
অঙ্কিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে দীর্ঘ সময়ের বেতনও ফেরত দিতে বলা হয়। সেই চাকরি এবং বেতন পান ববিতা সরকার। পরে অবশ্য তাঁর চাকরিও বাতিল হয়।
১৭২৮
দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে ববিতার চাকরি বাতিল করে বেতন এবং নিয়োগ শিলিগুড়ির প্রার্থী অনামিকা রায়কে দেন অভিজিৎ। গত সেপ্টেম্বর থেকে শিলিগুড়ির আমবাড়ির হরিহর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন তিনি।
১৮২৮
এসএসসি মামলায় সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার চাকরি দিয়েছিলেন অভিজিৎ। তাঁর নির্দেশেই নিয়োগপত্র হাতে পান একাধিক প্রার্থী, যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চনার অভিযোগ করে এসেছেন।
১৯২৮
এসএসসির পাশাপাশি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র মামলাও গিয়েছিল অভিজিতের এজলাসে। সেই মামলাতেই বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে হাজিরা দিতে বলেছিলেন তিনি। বর্তমানে যিনি গরু পাচার মামলায় জেল খাটছেন।
২০২৮
প্রাথমিক মামলায় ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দেন তিনি। পরে ইডি তাঁকে গ্রেফতার করে।
২১২৮
শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি পুরসভায় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র মামলাও গিয়েছিল অভিজিতের এজলাসে। তাতেও সিবিআই এবং ইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি।
২২২৮
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চের অধিকাংশ নির্দেশের বিরুদ্ধেই ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য। দেখা গিয়েছে, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও নির্দেশগুলি খারিজ হয়নি।
২৩২৮
নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা সরে যাওয়ার পর বেআইনি নির্মাণের মামলা ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। একাধিক বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রে বেঁধে দিয়েছিলেন সময়ও।
২৪২৮
বেআইনি নির্মাণের মামলাতেই অভিজিতের গলায় শোনা গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রসঙ্গ। ওই রাজ্যে বুলডোজ়ার দিয়ে নির্মাণ ভেঙে ফেলার একাধিক নির্দেশ কার্যকর করা হয়। নির্দেশ দেওয়ার সময়ে সেই উল্লেখ করেছিলেন অভিজিৎ।
২৫২৮
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির মামলায় তাঁর নির্দেশে স্থগিতাদেশের প্রসঙ্গে এক বার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়েছিলেন অভিজিৎ। বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি লেখেন তিনি।
২৬২৮
বিচারপতি সেন ওই মামলায় সিবিআই তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চের ঊর্ধ্বে গিয়ে অভিজিৎ সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেন। তিনি তাঁর নির্দেশনামায় বিচারপতি সেন সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ তোলেন।
২৭২৮
দুই বিচারপতির এই নজিরবিহীন সংঘাতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে শীর্ষ আদালত। পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ মেডিক্যাল মামলা কলকাতা হাই কোর্ট থেকে নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।
২৮২৮
বিবিধ বিতর্কে মোড়া বিচারপতি-জীবন পেরিয়ে অভিজিৎ এখন রাজনীতির আঙিনায়। তমলুক থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তমলুকে এ বার তাই জমজমাট লড়াই দেখার আশায় গোটা বাংলা।