Abdul Aziz Kozgar Srinagar resident believed to be the sole expert in Kashmir in the hand production of rose water dgtl
Rose Water
গোলাপজলের শেষ ‘শিল্পী’! ৪০০ বছর ধরে কোজ়গর পরিবারের হাতেগড়া ধারা বহন করছেন কাশ্মীরি
আজও শ্রীনগরের একচিলতে ঘুপচি দোকানে বসে নিজের হাতে গোলাপজল তৈরি করেন আব্দুল আজ়িজ় কোজ়গর। গত চারশো বছর ধরে যা করে চলেছেন তাঁর পূর্বপুরুষেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শ্রীনগরশেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ১৭:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হোক বা রূপচর্চার সাধন— এ দেশে গোলাপজলের ব্যবহার বহুল। সাধারণত মেশিনের মাধ্যমে তা তৈরি করা হয়। তবে কাশ্মীরের কোজ়গর পরিবারে সে প্রথা নেই। গত চারশো বছর ধরে হাতেগড়া গোলাপজল বিক্রি করছেন ওই পরিবারের সদস্যরা।
০২১৯
কালের নিয়মে হাতেগড়া গোলাপজল তৈরির কারিগরদের চাহিদা কমেছে। বাজারচলতি নানা ব্র্যান্ডের গোলাপজল তৈরির জন্য মেশিনের ব্যবহার জাঁকিয়ে বসেছে। তবে শ্রীনগরের কোজ়গর পরিবারের এক সদস্য যেন উল্টো পথে হাঁটা দিয়েছেন।
০৩১৯
আজও শ্রীনগরের একচিলতে ঘুপচি দোকানে বসে নিজের হাতে গোলাপজল তৈরি করেন আব্দুল আজ়িজ় কোজ়গর। ঠিক যেমনটা গত চারশো বছর ধরে করে চলেছেন তাঁর পূর্বপুরুষেরা।
০৪১৯
শ্রীনগরের দোকানটি কোজ়গরদের গোলাপজল তৈরিরও কারখানা। আবার আজও সেখানেই চলে গোলাপজলের বিক্রিবাটা। সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, কাশ্মীরে হাতেগড়া গোলাপজলের কারিগরদের মধ্যে আব্দুলই অন্যতম সেরা।
০৫১৯
কাশ্মীরের উপত্যকায় নয়, কোজ়গরদের গোলাপজল তৈরির কারিগরির সূত্রপাত নাকি হয়েছিল তুরস্কের মাটিতে। চারশো বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা সে দেশ থেকেই উপত্যকায় পা রেখেছিলেন। সঙ্গে গুটিয়ে এনেছিলেন পারিবারিক ব্যবসাটিও।
০৬১৯
অনেকের মতে, কোজ়গরদের হাত ধরেই উপত্যকায় গোলাপজল তৈরি করা শুরু হয়েছিল। আবার এ নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে।
০৭১৯
সে মত অনুযায়ী, প্রায় সাতশো বছর আগে কাশ্মীরে এ ব্যবসা গড়ে তোলেন ইরানের হমদান শহরের বাসিন্দা মির সৈয়দ আলি হমদান।
০৮১৯
হমদান নাকি কাশ্মীরে একা আসেননি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বহু সুফিসন্ত, ইসলাম ধর্ম প্রচারক, গালিচা এবং গোলাপজল তৈরির কারিগর। তাঁরা সকলে নাকি ঝিলম নদীর পাড়ে বসতি গড়েছিলেন।
০৯১৯
ঝিলমের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করা ছাড়াও নাকি গোলাপজল তৈরির খুঁটিনাটিও শেখাতে শুরু করেছিলেন হমদান।
১০১৯
কাশ্মীরে হমদানের ওই দলটি পরিচিতি ছড়িয়েছিল শাহ-ই-হমদান নামে। কথিত, সিল্ক রুট ধরে শাহ-ই-হমদান পা রাখেন উপত্যকায়।
১১১৯
গোলাপজল বা গালিচা তৈরির খুঁটিনাটি ছাড়াও স্থানীয়দের নানা হাতের কাজ শিখিয়েছিলেন হমদান। তাঁর কাছ থেকে নাকি কাঠের উপর খোদাই করা শিল্পসামগ্রী থেকে কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসপত্র গড়ার কাজে হাতেখড়ি হয়েছিল স্থানীয়দের। কাশ্মীর তো বটেই, দেশ-বিদেশেও এ সামগ্রীগুলির চাহিদা রয়েছে।
১২১৯
অনেকের মতে, হমদানের থেকেই গোলাপজল তৈরির গূঢ় পদ্ধতি শিখেছিলেন আব্দুল আজ়িজ়ের পূর্বপুরুষ। সেই স্মৃতিতেই নাকি আজও তাঁর দোকানটি রয়েছে শাহ-ই-হমদানের দরগার পাশে। যদিও এর সত্যাসত্য জানা যায় না।
১৩১৯
শ্রীনগরে আব্দুলের দোকানটি ৯০ বছরের বেশি পুরনো। দোকান জুড়ে কাঠের তাকে ঠাসা নানা আকারের কাচের বয়াম, শিশি-বোতল। তাতে রয়েছে রঙিন সুগন্ধি থেকে গোলাপজল বা আরক-ই-গুলাব তৈরির সামগ্রীও।
১৪১৯
গোলাপজল ছাড়া সুগন্ধিও তৈরি করেন আব্দুল আজ়িজ়। লোকে বলে, তিনিই কোজ়গর পরিবারের ঐতিহ্যের শেষ ধারক।
১৫১৯
আব্দুল আজ়িজ়ের আগে এ ব্যবসা সামলাতেন তাঁর বাবা হাবিবুল্লা। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ছেলে যাতে পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখেন।
১৬১৯
বাবার ইচ্ছা মেনেই ব্যবসার হাল ধরেছেন আব্দুল আজ়িজ়। তার আগে অবশ্য প্রথাগত উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন। স্নাতকের ডিগ্রিলাভের পর চিরাচরিত চিকিৎসার খুঁটিনাটি শিখেছেন। তবে সে সব শিখেও তা দিয়ে পসার জমানোর পথে যাননি আব্দুল আজ়িজ়।
১৭১৯
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ৫-৬ কিলো গোলাপ থেকে নামমাত্র গোলাপজল তৈরি করা যায়। এর পর চলে তার শোধনের প্রক্রিয়া। ফলে মেশিনের তুলনায় হাতেগড়া গোলাপজল তৈরির পদ্ধতি বেশ সময়সাপেক্ষ।
১৮১৯
এ ব্যবসায় লাভের রেখচিত্রও বেশ নিম্নমুখী হচ্ছে বলে দাবি। ফলে প্রায় একার হাতে আব্দুল আজ়িজ আর কত দিন পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।
১৯১৯
যাবতীয় বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আব্দুল আজ়িজ়ের হাতেগড়া গোলাপজলের দাম অনেকেরই সাধ্যের মধ্যে। ২০০ মিলিলিটারের এক বোতল গোলপজল কিনতে খরচ করতে হবে ৪০ টাকা।