A review on Uniform Civil Code and The 22nd Law Commission dgtl
Uniform Civil Code
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পারিবারিক আইনে সমতা আনবে? না কি খর্ব হবে ধর্মীয় স্বাধিকার?
লোকসভা ভোটের আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে সক্রিয় কেন্দ্র এবং ২২তম আইন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিধি চালুর পক্ষে প্রকাশ্যে সওয়াল করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ১৬:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
লোকসভা ভোটের আগে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। গত ১৪ জুন কেন্দ্র-নিযুক্ত ২২তম আইন কমিশনের তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং আমজনতার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।
০২২১
সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির তরফেও দেখা গিয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সক্রিয়তা। নরেন্দ্র মোদী সরকার নিযুক্ত ২২তম আইন কমিশনের পাশাপাশি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের মতামত চাওয়া হয়েছে সংসদীয় কমিটির তরফে।
০৩২১
জল্পনা রয়েছে, সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনেই মোদী সরকার পাশ করাতে পারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল।
০৪২১
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাদল অধিবেশনের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীও প্রকাশ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছেন।
০৫২১
গত ২৭ জুন ভোপালে বিজেপির কর্মসূচিতে মোদী বলেন, ‘‘দেশের এক একটি সম্প্রদায়ের জন্য যদি এক এক রকম আইন থাকে, তা হলে দেশ এগোতে পারে না। সংবিধানেও সকলের জন্য সমান আইনের কথা বলা আছে।’’
০৬২১
ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। একাধিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টও বিধি চালু করার কথা ‘ভাবতে’ বলেছে কেন্দ্রকে। কিন্তু কোনও স্পষ্ট নির্দেশ দেয়নি।
০৭২১
‘এসেনশিয়াল রিলিজিয়াস প্র্যাক্টিসেস টেস্ট’-এর মাধ্যমে বিচার করা হয় যে, কোন ধর্মীয় আচরণ সুপ্রিম কোর্টের বিচারের এক্তিয়ারে পড়ে, আর কোনটি পড়ে না। তিন তালাক এবং শবরীমালা মন্দিরের মতো মামলা এই বিধিতেই ‘বিচার্য’ বলে চিহ্নিত হয়েছিল।
০৮২১
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানে, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন আচার-বিচারের মানুষের জন্য একটিই আইন। যা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব, পারিবারিক অংশীদারিত্ব ইত্যাদি বিষয়ের আইনি সীমারেখা নির্ধারণ করবে।
০৯২১
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখন প্রায় ১৫টি পারিবারিক আইন চালু রয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে সেগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। এতে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার খর্ব হবে বলে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
১০২১
স্বাধীনতার পরেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৪৮ সালের নভেম্বরে সংবিধান সভায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। অধিকাংশ মুসলিম সদস্য জানিয়েছিলেন, বিধির প্রয়োগ হলে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’ (পার্সোনাল ল) বিপন্ন হয়ে পড়বে।
১১২১
কিন্তু সভায় শেষ পর্যন্ত ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদটি গৃহীত হয়, তবে বিধির প্রণয়ন এবং প্রয়োগের দায়িত্ব ভবিষ্যতের সংসদ এবং সরকারের উপরে ন্যস্ত হয়। সঙ্ঘ পরিবারের দাবি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রণয়ন একটি সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি, যা এখনও পালিত হয়নি।
১২২১
দেশে অভিন্ন ফৌজদারি বিধি চালু থাকলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেন আপত্তি, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। এ প্রসঙ্গে, মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে পঞ্চাশের দশকে হিন্দু কোড বিলের আমূল সংস্কারের কথাও।
১৩২১
আবার সংবিধানের ২৬(বি) অনুচ্ছেদ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের পথে প্রশ্ন তুলছে। ওই অনুচ্ছেদে, ধর্মীয় বিধি অনুসরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ধর্মকে সম্পূর্ণ স্বাধিকার দেওয়া হয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোনও ধর্মের অন্তর্গত পারিবারিক আইন পালনে অন্তরায় হবে।
১৪২১
১৯৬২ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এনআর আয়েঙ্গার তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, সমতা প্রতিষ্ঠার নামে কোনও ধর্মকে তার অস্তিত্ব বা পরিচিতি থেকে বিচ্যুত করতে পারা যায় কি না, সংসদের তা পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।
১৫২১
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলবীর সিংহ চৌহানের নেতৃত্বাধীন ২১তম আইন কমিশন ২০১৮ সালে বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক সংগঠনের মতামত নিয়ে রিপোর্টে জানায়, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈনদের একই আইন চালু করার প্রয়োজন নেই।
১৬২১
২০১৭ সালে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পারিবারিক বিষয় সংক্রান্ত অভিন্ন আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, নানা পেশার এবং শ্রেণির মানুষকে নিয়ে একশোর বেশি আলোচনা সভার আয়োজন হয়েছিল সে সময়।
১৭২১
২০১৭ সালে পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছিল, ব্যক্তিগত আইন সংশোধন করে মেয়েদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সেই বৈষম্য দূর করতে ২১তম আইন কমিশনের সুপারিশ ছিল, সব ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য বিয়ের নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক হোক।
১৮২১
পাশাপাশি, সব ধর্মে বিয়ের ন্যূনতম বয়স এক করা, দম্পতির মধ্যে পুনর্মিলনের সম্ভাবনা না থাকাই বিবাহবিচ্ছেদের একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং ধর্ম বদলে দ্বিতীয় বা বহুবিবাহ করার সুযোগ দেওয়া বন্ধ করার সুপারিশ করেছিল ওই কমিশন।
১৯২১
বিরোধীদের বড় অংশের মতে, ২১তম আইন কমিশনের এই রিপোর্টের পরে নতুন করে ২২তম আইন কমিশনের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে নতুন করে শুরু হয়েছে তৎপরতা।
২০২১
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে শিখদের একাংশেরও আপত্তি রয়েছে। শিরোমণি অকালি দলের নেতা দলজিৎ সিংহ চিমার অভিযোগ, এটি দেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থের পরিপন্থী। এতে সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে। দেশে অস্থিরতা, উত্তেজনা বাড়বে।
২১২১
বিজেপি-আরএসএসের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ, সিএএ বিল পাশ করেছে মোদী সরকার। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা এখনও বাকি। লোকসভা ভোটের আগেই কি হয়ে যাবে ‘লক্ষ্যপূরণ’?