A brief timeline of Kamduni rape and murder case from 2013 to present day dgtl
Kamduni Rape and Murder Case
দশ বছর আগে কামদুনিতে সেই ভরা বর্ষার মেঘলা বিকেলে কী হয়েছিল?
হাই কোর্টে কামদুনি-রায় ঘোষণা হতেই হতাশায় ভেঙে পড়লেন আন্দোলনকারী মৌসুমী এবং টুম্পারা। বিচারপতিদের এজলাসে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই বসে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তাঁরা।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত দু’জনের সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
০২২৫
নিম্ন আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অন্য দিকে, নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেয়েছেন হাই কোর্ট থেকে।
০৩২৫
ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামদুনি সফরের সময় তাঁর সামনে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল। শুক্রবার রায় ঘোষণার পরে মৌসুমী বলেন, ‘‘আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাব। নির্ভয়া-কাণ্ডের আইনজীবীর সাহায্য নেব।’’
০৪২৫
হাই কোর্টে কামদুনি-রায় ঘোষণা হতেই হতাশায় ভেঙে পড়লেন কামদুনির সুবিচার চেয়ে আন্দোলনকারী মৌসুমী এবং টুম্পারা। বিচারপতিদের এজলাসে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই বসে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তাঁরা। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানও হয়ে যান মৌসুমী!
০৫২৫
উচ্চ আদালতের রায়ে অনাস্থা প্রকাশ করে টুম্পা বলেন, “আমাদের বন্ধুর জন্য আমরা সেই ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করছি। আমাদের উপর কম অত্যাচার হয়নি। আমরা সব সহ্য করেছি। কিন্তু এত বছর অপেক্ষার পর এই হল! কিন্তু আমরা থেমে থাকব না।’’
০৬২৫
২০১৩ সালে কামদুনিকাণ্ডের সময়ে গ্রামবাসীদের যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে নেতৃত্ব দেন শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার হাইকোর্টের রায় শোনার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে নিজের বক্তব্য জানান তিনিও।
০৭২৫
তিনি বলেন, “এই রায়ে একেবারেই খুশি নই। সুপ্রিম কোর্টে তো যাবই। তার আগে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছি। ঠিক কী কী আমরা করব, তা খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা হবে।’’
০৮২৫
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী দিল্লির বুকে ঘটে যাওয়া নির্ভয়াকাণ্ড তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল দেশ জুড়ে। ঠিক তেমনই উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রামে বছর দশেক আগে ঘটে যাওয়া একটি ধর্ষণের ঘটনা ঝড় তুলেছিল রাজ্যে।
০৯২৫
২০১৩ সালের ৭ জুন। দিনটা ছিল বুধবার। বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই দিন বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। কামদুনি বাস স্ট্যান্ডে তাঁর ভাইয়ের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে দেরি করায় ওই তরুণী একাই রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু নিজের এলাকাতেও নিরাপদ ছিলেন না তিনি।
১০২৫
হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে পাঁচিলঘেরা পরিত্যক্ত একটি জায়গায় নিয়ে যান ৯ দুষ্কৃতী। সেখানে দুষ্কৃতীরা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন।
১১২৫
এর পর গভীর রাতে ওই জায়গায় পাওয়া যায় তরুণীর ব্যাগ। পাওয়া যায় ওই তরুণীর ছিন্নভিন্ন দেহও।
১২২৫
ওই ঘটনার নৃশংসতা ছিল শিউরে ওঠার মতো। নিহত তরুণীর পরিবারের দাবি, তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর দুষ্কৃতীরা তাঁর দেহ চিরে দেয় নাভি পর্যন্ত।
১৩২৫
ওই বছরেরই ৯ জুন প্রাথমিক ভাবে কামদুনিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আনসার আলি মোল্লা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১৪২৫
ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের একাংশ দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন নিহত তরুণীর সহপাঠী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়াল। ওই আন্দোলনে শামিল হন রাজ্যের বিদ্বজ্জনেদের একাংশও। কামদুনিকাণ্ড নিয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভাও।
১৫২৫
এর পর কামদুনিতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বসিরহাটের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম।
১৬২৫
ওই বছরের ১০ জুন কামদুনিকাণ্ডের তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। ওই কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় মোট ৯জনকে।
১৭২৫
ওই বছরেরই ১৭ জুন কামদুনিতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ১৫ দিনের মধ্যে ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ। সরকার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করবে বলেও জানান তিনি। নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন টুম্পা এবং মৌসুমী।
১৮২৫
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পর কামদুনির প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে সরে যায় নির্যাতিতা তরুণীর পরিবার। তবে আন্দোলন তখনও চালিয়ে যায় ওই মঞ্চ।
১৯২৫
কামদুনিকাণ্ডের ২২ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২৯ জুন জেলা আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়। এর পর দিন দশেকের মাথায় দেওয়া হয় অতিরিক্ত চার্জশিটও।
২০২৫
কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে জেলা আদালতের বাইরেও। এর ফলে ওই বছরেরই ১২ অগস্ট কামদুনি মামলা বারাসত থেকে নগর ও দায়রা আদালতে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট।
২১২৫
কামদুনির ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, গোপাল নস্কর, ভোলা নস্কর, আমিনুর ইসলাম, রফিক গাজি এবং নুর আলিকে। এর মধ্যে হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় গোপাল নস্করের। যে পাঁচিলঘেরা জায়গায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল, সেখানকার কেয়ারটেকার ছিলেন গোপাল।
২২২৫
২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর শেষ হয়েছিল কামদুনিকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া। ভয়াবহ ওই ঘটনায় আড়াই বছর পর ২৮ জানুয়ারি রায় ঘোষণা হয় কামদুনি মামলায়।
২৩২৫
দোষীদের মধ্যে আনসার আলি মোল্লা, সইফুল আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় শেখ ইনামুল ইসলাম, ভোলানাথ নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকে।
২৪২৫
কামদুনি মামলার রায় ঘোষণা করেন নগর দায়রা আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সঞ্চিতা সরকার। ওই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়, সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, ভোলা নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকে। বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয় রফিক গাজি এবং নুর আলিকে।
২৫২৫
২০২২ সালে হঠাৎই আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে সেই নৃশংস ঘটনা। কারণ হাই কোর্টে কামদুনিকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবীরা আবেদন করেন, দোষীদের মধ্যে ৫ জনের সাজা মকুব করা হোক অথবা সাজা কমানো হোক। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ওই ঘটনায় মূল ভূমিকা ছিল আনসার আলি মোল্লা নয়, সইফুল আলি মোল্লার। এই যুক্তিকে সামনে রেখেই হাই কোর্টে ৫ জনের সাজা মকুব করার আবেদন জানান আইনজীবীরা। পাশাপাশি, সইফুলের প্রাণভিক্ষার আবেদনও করা হয়। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনের ফাঁসির সাজা মকুব করল। অন্য তিন জনের যাবজ্জীবনের সাজা মকুব করল। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে যাবজ্জীবন সাজার কথা শোনায় আদালত। বাকিদের খালাস করার কথা জানানো হয়।