21-Year-old Chloe Zhu quits university to start her own Business, earns Rupees 8 Lakh per day dgtl
Women Entrepreneur
লকডাউনে কলেজ ছেড়ে ব্যবসায় পা, এক কামরার ফ্ল্যাট থেকে একুশের কন্যার আয় দিনে আট লক্ষ
ব্যবসার কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রথম দিন থেকেই ভালই বিক্রিবাটা হয়েছিল ‘গ্লোয়ি’র। ব্র্যান্ডের জন্য যে টিকটক ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন, তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
সিডনিশেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ১৩:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
স্নাতকের পড়াশোনার পাশাপাশি এক কামরার ফ্ল্যটে পড়ুয়াদের কোচিং করিয়ে রোজগার করতেন। তবে বছর দুয়েক আগে লকডাউন চলাকালীন নিজের পড়াশোনা থেকে কোচিংয়ের ক্লাস, সবই ছেড়েছুড়ে ব্যবসায় পা রাখেন উনিশের কন্যা। গড়ে তোলেন নখসজ্জার নিজস্ব ব্র্যান্ড— গ্লোয়ি।
০২১৯
আজকাল সেই ছোট্ট ফ্ল্যাট থেকেই দিনে ৮ লক্ষ টাকা আয় করেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাসিন্দা ক্লোয়ি ঝু। এমনই জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘৭নিউজ়’। ক্লোয়ির কাহিনি প্রকাশ্যে আসামাত্রই তা নানা সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে।
০৩১৯
ব্যবসা শুরু করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছাড়ার কথা গোড়ায় মা-বাবাকে জানাননি ক্লোয়ি। এক রাতে বাড়ির সকলে মিলে খাওয়াদাওয়ার সময় সে কথা ফাঁস করে দেন তাঁর ভাই।
০৪১৯
‘৭নিউজ়’-এর বিনোদন এবং জীবনধারা বিভাগ ‘৭লাইফ’-এর কাছে ক্লোয়ি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা যে ছেড়ে দিয়েছি, তা প্রায় আট মাস ধরে জানত না মা-বাবা। এক রাতে খাওয়ার টেবিলে সে কথাটা পেড়েছিল ভাই। বলেছিল, ‘এখনও মা-বাবাকে বলোনি যে তুমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছ!’ সে সময় ঘরে যেন বোমা ফেটেছিল।’’
০৫১৯
ব্যবসার ঝুঁকি অবশ্য পুরোপুরি নিজের তাগিদে নিয়েছিলেন ক্লোয়ি। কোভিডের জেরে দেশে লকডাউন চলছিল। স্কুল-কলেজ দোকানপাট থেকে তালা ঝুলছিল পার্লারেও। তবে ম্যানিকিয়োর করানোর প্রয়োজন ছিল ক্লোয়ির। কিন্তু সব পার্লারেই তো ঝাঁপ ফেলা রয়েছে। কী করবেন?
০৬১৯
সাতপাঁচ ভেবে নখসজ্জার নিজের ব্র্যান্ড গড়ে ফেলেন তিনি। তার আগে অবশ্য এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন ক্লোয়ি।
০৭১৯
নিউ সাউথ ওয়েলসের হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই মেধাবী বলে নামডাক ছিল ক্লোয়ির। হাইস্কুলের পরীক্ষায় অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ান টেরিটরি অ্যাডমিশন র্যাঙ্ক (এটিএআর)-এ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৯৯.৫। সেই নম্বরের ভিত্তিতেই স্নাতকস্তরে ফাইনান্স এবং কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
০৮১৯
উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলেও কেরিয়ারে দিশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না ক্লোয়ি। তিনি বলেন, ‘‘কোন পথে এগোচ্ছিলাম, তা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণাই ছিল না আমার।’’ তবে বেশ বুঝতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যতে ফাইনান্স বা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন না।
০৯১৯
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই অবশ্য ঘরে বসে কোচিংয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। ইংরেজি ভাষাশিক্ষার জন্য সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার বেশি কোচিং করাতেন ক্লোয়ি। তিনি বলেন, ‘‘স্নাতকের বিষয়ে দু’বার বদল করলেও বেশ বুঝতে পারছিলাম, ঠিক পথে এগোচ্ছি না আমি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’
১০১৯
লকডাউনে নখসজ্জার জন্য পার্লার খুঁজে না পেয়ে তা নিয়েই ব্যবসা শুরুর কথা মনে হয়েছিল ক্লোয়ির। নখের উপর রংবেরঙের কৃত্রিম নখ লাগানো বা ‘প্রেস-অন নেলস’-এর বাজারচলতি ব্র্যান্ডগুলি তাঁর মনের মতো হচ্ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের নখগুলি হয় বেশ বড়সড়, নয়তো ঝুটো বলে মনে হয়। মনে হয়েছিল, ওগুলো আমার জন্য ঠিকঠাক নয়।’’
১১১৯
নখসজ্জার নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়তে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে দিনরাত গবেষণায় লেগে পড়েছিলেন ক্লোয়ি। তিনি বলেন, ‘‘ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছিলাম। বাজারে কী কী প্রোডাক্ট রয়েছে? কারা সে সব তৈরি করছে বা কোন জিনিসের কেমন চাহিদা— খুঁটিনাটি সব খুঁজে বার করতে শুরু করেছিলাম।’’
১২১৯
নখসজ্জার বাজার সম্পর্কে বিস্তর অনুসন্ধানের পর জন্ম নেয় ‘গ্লোয়ি’। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে ক্লোয়ির নিজস্ব ব্র্যান্ড।
১৩১৯
কোচিং করিয়ে যে সঞ্চয় করেছিলেন, তা থেকে নিজের ব্যবসায় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা ঢেলেছিলেন। ক্লোয়ি বলেন, ‘‘ব্যবসার সব কিছুই শুরু হয়েছিল কোভিডের সময়.... আমার বেডরুম থেকে।’’
১৪১৯
‘গ্লোয়ি’র ওয়েবসাইট তৈরি করা, তার কনটেন্ট লেখা থেকে শুরু করে নখসজ্জার জিনিসপত্র বাক্সবন্দি করে ফেলা— এ সবই একার হাতে করেছেন বলে জানিয়েছেন ক্লোয়ি।
১৫১৯
ব্যবসার কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রথম দিন থেকেই ভালই বিক্রিবাটা হয়েছিল ‘গ্লোয়ি’র। ব্র্যান্ডের জন্য যে টিকটক ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন, তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়।
১৬১৯
নতুন ব্যবসা দৌড়তে শুরু করলে কোচিং করানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন ক্লোয়ি। সে সময়ও তাঁর কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ৫০ জনের বেশি আবেদনকারী ছিলেন। তবে সে ব্যবসা গুটিয়ে নতুন ব্র্যান্ড গড়ায় মন দেন ক্লোয়ি।
১৭১৯
পুঁথিগত বিদ্যায় ব্যবসা দাঁড় করানো যায় না বলে মনে করেন ক্লোয়ি। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যবসার প্রস্তুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাজে আসেনি। বরং ইন্টারনেটে খুঁটিনাটি সুলুকসন্ধান করা বা ই-কমার্সের ক্ষেত্রের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে এ ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি।’’
১৮১৯
১৯ বছর থেকে ২১— এই স্বল্প সময়েই যে ব্যবসায় সাফল্যের মুখে দেখেছেন তা যে এখনও বিশ্বাস হয় না ক্লোয়ির। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত এক দিনে ১০,০০০ ডলার বা ৮ লক্ষ টাকার বিক্রিবাটা হয়। তিনি জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা আয় করেছেন।
১৯১৯
ব্যবসার মতো অনিশ্চিত ক্ষেত্রে পা বাড়াতে আগ্রহীদের জন্য ক্লোয়ি বলেন, ‘‘এ বার শুরু করে দিন। ধীরে ধীরে যত এগোবেন, সব কিছু বুঝতে পারবেন। প্রথম বার ব্যবসা করতে নেমে আমার কোনও ধারণাই ছিল না, কী করছি। তবে ব্যবসা সম্পর্কিত যা কিছু শিখতাম, স্পঞ্জের মতো সে সব কিছু শুষে নিতাম।’’