গোতাবায়া রাজপক্ষেকে আশ্রয় দেওয়া মলদ্বীপকে ১৯৮৮ সালে সশস্ত্র অভ্যুত্থান থেকে রক্ষা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২২ ১২:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
জনরোষ এড়াতে কলম্বো ছেড়ে পালিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। ভারত মহাসাগরের আর এক দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপে লুকিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুর হয়ে সৌদি আরবে গিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
০২১৮
ঘটনাচক্রে, ২৪ বছর আগে শ্রীলঙ্কা থেকে নৌপথে আসা সশস্ত্র হামলাকারীদের ভয়ে নিজের প্রাসাদ ছেড়ে লুকোতে হয়েছিল মলদ্বীপের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গায়ুমকে।
০৩১৮
১৯৮৮ সালের নভেম্বরের গোড়ায় ওই অভ্যুত্থানের ঘটনায় গায়ুম সরকারকে বাঁচিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সেই সামরিক অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ক্যাকটাস’।
০৪১৮
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী মলদ্বীপ সরকারের সহায়তায় সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই আকাশ ও জলপথে শুরু হয়েছিল সেনা অভিযান।
০৫১৮
প্রেসিডেন্ট গায়ুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মূল চক্রী ছিলেন মলদ্বীপের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আবদুল্লা লুতিফি। ভারতীয় সেনার অভিযানে বন্দি হয়েছিলেন তিনি।
০৬১৮
লুতিফির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আহমদ ইসমাইল মানিক সিক্কা শ্রীলঙ্কার তামিল জঙ্গিগোষ্ঠী ‘প্লট’ (পিপলস লিবারেশন অর্গানাজেশন অফ তামিল ইলম)-এর নেতা উমা মহেশ্বরণের সঙ্গে আলোচনা করে অভ্যুত্থানের নকশা তৈরি করেছিলেন।
০৭১৮
একদা আর এক তামিল জঙ্গিগোষ্ঠী এলটিটিইর সদস্য ছিলেন মহেশ্বরণ। কিন্তু এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ১৯৮০ সালে গড়েন নতুন গোষ্ঠী প্লট। মলদ্বীপ-কাণ্ডের কিছু দিন পরেই খুন হন তিনি।
০৮১৮
উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় এলটিটিইর প্রভাব বৃদ্ধির ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়া প্লট ভারত মহাসাগরে নতুন একটি নিরাপদ ঘাঁটির সন্ধান করছিল। তাই তারা হাত মেলায় লুতিফির সঙ্গে। অন্য দিকে লুতিফি চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হতে।
০৯১৮
লুতিফির আর এক সঙ্গী আহমদ নাসির দু’টি মাছ ধরার ট্রলারে শ’দেড়েক প্লট জঙ্গিকে সমুদ্রপথে রাজধানী মালেতে আনার ব্যবস্থা করেছিল। তাদের সাহায্য করার জন্য ছিল স্থানীয় বেশ কিছু সশস্ত্র যোদ্ধা।
১০১৮
১৯৮৮-র ৩ নভেম্বর ভোররাতে দু’টি দলে ভাগ হয়ে মালে পৌঁছে সেখানকার বন্দর এবং প্রেসিডেন্ট গায়ুমের ব্যবহৃত বিশেষ জেটির দখল নেয় অভ্যুত্থানকারীরা। কব্জা করে প্রেডিডেন্টের প্রাসাদ এবং রেডিও ও টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র।
১১১৮
মলদ্বীপের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী অতর্কিত আক্রমণে কার্যত ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দ্রুত গোপন ডেরায় পালিয়ে সাহায্যের জন্য আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ভারতকে বার্তা পাঠান গায়ুম।
১২১৮
খবর পেয়ে কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়ে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী রাজীব। সেখানে প্রাথমিক ভাবে এনএসজি কমান্ডোদের মালে পাঠানোর আলোচনা হলেও পরে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়।
১৩১৮
মলদ্বীপে অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আগরায় ‘৫০ ইনডিপেন্ডেন্ট প্যারাস্যুট ব্রিগেড’-কে। নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার ফারুক বালসারা এবং কর্নেল সুভাষ জোশী।
১৪১৮
দিল্লিতে সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে মলদ্বীপের পরিস্থিতি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় ব্যাখ্যা করেন মালের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এ কে বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযানের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের যুগ্মসচিব রণেন সেন।
১৫১৮
তত ক্ষণে মলদ্বীপের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদর দফতরের দখল নিয়েছে শ্রীলঙ্কার হামলকারীরা। লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন কয়েক জন নিরাপত্তা আধিকারিক। আহত উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইলিয়াস ইব্রাহিমও।
১৬১৮
৩ নভেম্বর রাতে ভারতীয় বায়ুসেনার তিনটি আইএল-৭৬ সামরিক পরিবহণ বিমান আগরা থেকে তিরুঅনন্তপুরম হয়ে রাতেই মলদ্বীপের হুলহুলে (বর্তমান ভেলানা) বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শুরু হয়ে ঝটিতি অভিযান।
১৭১৮
সমুদ্রপথে আরও হামলাকারী যাতে মালে না পৌঁছতে পারে সে জন্য কেরলের কোচি নৌঘাঁটি থেকে ভারতীয় নৌসেনার কয়েকটি জাহাজও মলদ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়।
১৮১৮
ভারতীয় প্যারাকমান্ডোরা ৪ নভেম্বর ভোর ৪টের সময় গায়ুমের গোপন ‘সেফ হাউসে’ পৌঁছে যান। স্যাটেলাইট ফোনে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান রাজীবকে। ‘অপারেশন ক্যাকটাসের’ ফল জানতে উদ্গ্রীব রাজীব সারা রাত জেগে ছিলেন। ভোরে গায়ুমের ফোন পেয়ে ঘুমোতে যান তিনি।