Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
US

ইলেকট্রিক চেয়ারে ঝলসে মারা হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে, ছটফট করেছিল টানা আট মিনিট

১৪ বছরের এই কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মারা হয়েছিল তাকে। আট মিনিট ধরে ছটফট করেছিল সে। আমেরিকার ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে।

সংবাদ সংস্থা
দক্ষিণ ক্যারোলিনা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৩৯
Share: Save:
০১ ১৮
আট মিনিট। ৪৮০ সেকেন্ড। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসে ছটফট করেছিল ১৪ বছরের কিশোর। প্রতি সেকেন্ডে তার প্রত্যেক কোষে দাপিয়ে উঠেছিল মৃত্যুর বিভীষিকা। আট মিনিট পর অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জর্জ। চিরঘুম নেমে আসে তার দু’চোখে।

আট মিনিট। ৪৮০ সেকেন্ড। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসে ছটফট করেছিল ১৪ বছরের কিশোর। প্রতি সেকেন্ডে তার প্রত্যেক কোষে দাপিয়ে উঠেছিল মৃত্যুর বিভীষিকা। আট মিনিট পর অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জর্জ। চিরঘুম নেমে আসে তার দু’চোখে।

০২ ১৮
জর্জের পুরো নাম জর্জ জুনিস স্টিনি জুনিয়র। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছিল তার। অনেকে বলেন, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতি বৈষম্য, নিপীড়নের চরম নিদর্শন হয়ে আছে জর্জের কাহিনি।

জর্জের পুরো নাম জর্জ জুনিস স্টিনি জুনিয়র। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছিল তার। অনেকে বলেন, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতি বৈষম্য, নিপীড়নের চরম নিদর্শন হয়ে আছে জর্জের কাহিনি।

০৩ ১৮
১৯৪৪ সালে সারা পৃথিবী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢেউয়ে উত্তাল, সেই সময় আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনায় জর্জ জুনিস স্টিনি জুনিয়রের মৃত্যুদণ্ড হয়। ১৬ জুন মৃত্যু হয় তার।

১৯৪৪ সালে সারা পৃথিবী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢেউয়ে উত্তাল, সেই সময় আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনায় জর্জ জুনিস স্টিনি জুনিয়রের মৃত্যুদণ্ড হয়। ১৬ জুন মৃত্যু হয় তার।

০৪ ১৮
জর্জের বিরুদ্ধে তথাকথিত শ্বেতাঙ্গ দু’জন বালিকাকে খুন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এক জনের বয়স সাত এবং অন্য জনের ১১। ১৯৪৪-এর ২৪ মার্চ তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দু’জনের মাথার খুলি ফাটিয়ে দু’ভাগ করে দিয়েছিল খুনি।

জর্জের বিরুদ্ধে তথাকথিত শ্বেতাঙ্গ দু’জন বালিকাকে খুন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এক জনের বয়স সাত এবং অন্য জনের ১১। ১৯৪৪-এর ২৪ মার্চ তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দু’জনের মাথার খুলি ফাটিয়ে দু’ভাগ করে দিয়েছিল খুনি।

০৫ ১৮
নৃশংস এই দুই খুনের তদন্ত যখন চলছে, খেলতে খেলতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় জর্জ আর তার দাদা জনি।

নৃশংস এই দুই খুনের তদন্ত যখন চলছে, খেলতে খেলতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় জর্জ আর তার দাদা জনি।

০৬ ১৮
পুলিশের তালিকায় কোনও সন্দেহভাজন ছিলেন না। এ দিকে উপর মহল থেকে দ্রুত খুনের কিনারা করার চাপ ছিল তাদের উপর। ফলে জর্জ আর জনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, তাদের বাবা-মাকে কিছু না জানিয়েই।

পুলিশের তালিকায় কোনও সন্দেহভাজন ছিলেন না। এ দিকে উপর মহল থেকে দ্রুত খুনের কিনারা করার চাপ ছিল তাদের উপর। ফলে জর্জ আর জনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, তাদের বাবা-মাকে কিছু না জানিয়েই।

০৭ ১৮
যে পুলিশ কর্তা খুনি সন্দেহে দুই ভাইকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর নাম এইচএস নিউম্যান। জর্জের দাদাকে কিছু দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ধরে রাখা হয় ১৪ বছরের কিশোরকে।

যে পুলিশ কর্তা খুনি সন্দেহে দুই ভাইকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর নাম এইচএস নিউম্যান। জর্জের দাদাকে কিছু দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ধরে রাখা হয় ১৪ বছরের কিশোরকে।

০৮ ১৮
দক্ষিণ ক্যারোলিনা পুলিশ জানায়, খুনের কথা ‘স্বীকার’ করে নিয়েছে জর্জ। তাকে শাস্তি পেতে হবে। যদিও পরে তদন্ত করে উঠে আসে নতুন তথ্য।

দক্ষিণ ক্যারোলিনা পুলিশ জানায়, খুনের কথা ‘স্বীকার’ করে নিয়েছে জর্জ। তাকে শাস্তি পেতে হবে। যদিও পরে তদন্ত করে উঠে আসে নতুন তথ্য।

০৯ ১৮
২০১২ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনার এক দল আইনজীবী জর্জের মৃত্যুর তদন্তে নামেন। তাঁরা জানতে পারেন, নিউম্যান ধৃত কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখেছিলেন। এমনকি বাথরুমেও যেতে দেননি। তার পর তাকে বলা হয়েছিল, খুনের কথা স্বীকার করে নিলে সে খাবার পাবে। খাবারের লোভে অভুক্ত নাবালক তাই মিথ্যা দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়েছিল।

২০১২ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনার এক দল আইনজীবী জর্জের মৃত্যুর তদন্তে নামেন। তাঁরা জানতে পারেন, নিউম্যান ধৃত কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখেছিলেন। এমনকি বাথরুমেও যেতে দেননি। তার পর তাকে বলা হয়েছিল, খুনের কথা স্বীকার করে নিলে সে খাবার পাবে। খাবারের লোভে অভুক্ত নাবালক তাই মিথ্যা দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়েছিল।

১০ ১৮
এর পরের অধ্যায় আরও মর্মান্তিক। জর্জের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এক বারের জন্যও তার মা-বাবার সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু স্টিনি পরিবারের উপর নেমে এসেছিল অভিশাপ। তাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছিল তাঁদের।

এর পরের অধ্যায় আরও মর্মান্তিক। জর্জের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এক বারের জন্যও তার মা-বাবার সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু স্টিনি পরিবারের উপর নেমে এসেছিল অভিশাপ। তাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছিল তাঁদের।

১১ ১৮
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় তার সঙ্গে অভিভাবক থাকা আবশ্যিক। জর্জের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় তার সঙ্গে অভিভাবক থাকা আবশ্যিক। জর্জের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়।

১২ ১৮
যাঁরা এই বিচারব্যবস্থার মাথায় ছিলেন, তাঁরা সকলেই তথাকথিত সাদা চামড়ার মানুষ। বিচারে বর্ণবৈষম্যই তাঁদের চালিত করেছিল বলে অভিযোগ। সে সময় আমেরিকায় কোনও কালো চামড়ার মানুষ বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতেই পারতেন না। কোর্টরুমেও প্রবেশাধিকার ছিল না তাঁদের।

যাঁরা এই বিচারব্যবস্থার মাথায় ছিলেন, তাঁরা সকলেই তথাকথিত সাদা চামড়ার মানুষ। বিচারে বর্ণবৈষম্যই তাঁদের চালিত করেছিল বলে অভিযোগ। সে সময় আমেরিকায় কোনও কালো চামড়ার মানুষ বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতেই পারতেন না। কোর্টরুমেও প্রবেশাধিকার ছিল না তাঁদের।

১৩ ১৮
মাত্র ১০ মিনিটে  জর্জ-মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের লোকজন এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কথা কানেই তোলেননি কেউ।

মাত্র ১০ মিনিটে জর্জ-মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের লোকজন এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কথা কানেই তোলেননি কেউ।

১৪ ১৮
কলম্বিয়ার সেন্ট্রাল কারেকশনাল ইন্সটিটিউশনে ১৬ জুন সন্ধ্যা ৭.২৫-এ জর্জের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার জন্য আনা হয়েছিল বিশেষ চেয়ার।

কলম্বিয়ার সেন্ট্রাল কারেকশনাল ইন্সটিটিউশনে ১৬ জুন সন্ধ্যা ৭.২৫-এ জর্জের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার জন্য আনা হয়েছিল বিশেষ চেয়ার।

১৫ ১৮
জর্জের বাবা-মা শেষ বারের মতো ছেলের সামনে এসেছিলেন। কেঁদে ফেলেছিল কিশোর। তার কান্না ঢাকতে মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভারী ব্যাগ।

জর্জের বাবা-মা শেষ বারের মতো ছেলের সামনে এসেছিলেন। কেঁদে ফেলেছিল কিশোর। তার কান্না ঢাকতে মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভারী ব্যাগ।

১৬ ১৮
আট মিনিট ধরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল জর্জ। চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় ছটফট করেছিল। কেউ কেউ বলেন, তার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক অফিসার সময়ের আগেই ছেলেটির মাথায় গুলি করেছিলেন।

আট মিনিট ধরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল জর্জ। চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় ছটফট করেছিল। কেউ কেউ বলেন, তার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক অফিসার সময়ের আগেই ছেলেটির মাথায় গুলি করেছিলেন।

১৭ ১৮
২০১৪ সালে পুনরায় এই মামালাটির তদন্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, আমেরিকার বর্ণবৈষম্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চূড়ান্ত নিদর্শন হয়ে রয়েছে জর্জ-হত্যা।

২০১৪ সালে পুনরায় এই মামালাটির তদন্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, আমেরিকার বর্ণবৈষম্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চূড়ান্ত নিদর্শন হয়ে রয়েছে জর্জ-হত্যা।

১৮ ১৮
জর্জের কাহিনির উপর ভিত্তি করে ১৯৯৯ সালে একটি সিনেমা তৈরি করা হয়। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাইকেল ক্লার্ক ডানকান। নানা মহলে ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

জর্জের কাহিনির উপর ভিত্তি করে ১৯৯৯ সালে একটি সিনেমা তৈরি করা হয়। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাইকেল ক্লার্ক ডানকান। নানা মহলে ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy