প্রতীকী ছবি।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত দীর্ঘ অনিশ্চয়তার ছোবলে বিশ্বের অর্থনীতি এই ভাবে চাপে থাকেনি। মার্কিন নির্বাচন, আফগানিস্তান পরিস্থিতি, কোভিড আর তার পরে রাশিয়া-ইউক্রেন হানাহানি। বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতিই এর অভিঘাতে জর্জরিত। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। আর তার প্রতিফলন আমরা দেখছি সূচকের প্রায় পাগলের মতো ওঠানামায়।
এই পরিস্থিতিতে আমরা সবাই আমাদের সঞ্চয় নিয়ে চিন্তিত। কেউ ভাবছেন ঘাড়ে যুদ্ধ তার বিষ নিঃশ্বাস ফেলছে তাই সব টাকা সোনাতে গচ্ছিত রাখি। আর যাই হোক সোনা তো সবাই নেবে! আবার কেউ অপেক্ষা করছেন সুদের হার আরও বাড়ার জন্য। অনিশ্চয়তার বাজারে সুদের হার বাড়বে। কিন্তু একই সঙ্গে তো টাকার দামও কমবে!
‘ডাম্ববেল’ বা ‘বারবেল’ কৌশল
অতঃকিম? তাই ভাবতে পারেন বিনিয়োগের “ডাম্ববেল” বা “বারবেল” কৌশলের কথা। সাধারণ আয়ের মানুষের জন্য এই মুহূর্তে শেয়ার বাজার হয়ত একটু বেশি ঝুঁকির হয়ে যাবে। বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত বাজারের খবর রাখেন না। তার মানে এই নয় যে শেয়ার বাজারকে সঞ্চয়ের ঝোলা থেকে বার করে দেবেন। একেবারেই নয়। কারণ, এই অনিশ্চয়তাকে অনেকেই বিনিয়োগের সুযোগ হিসাবে দেখছেন। তবে কোভিডের সময়ের মতোই নজরে রাখুন সেই সব সংস্থার উপর যাদের কোষাগারে খারাপ সময়েও টিঁকে থাকার সঞ্চয় রয়েছে।
কিন্তু এই সময়ে যদি ঋণপত্রের দিকে ঝুঁকতে চান তাহলে ভাবতে পারেন “ডাম্ববেল” বা “বারবেল” কৌশলের কথাও। আমরা অনেক সময়েই ভুলে যাই বিনিয়োগের মূল কৌশল কিন্তু সাধারণ বুদ্ধি। বহু টাকা রোজগার করেও দেখা যায় অবসরের পরে হাত কামড়াচ্ছেন অনেকেই। কারণ, সাধারণ গার্হস্থ্য বোধের অভাব। বহু মানুষ চরিয়ে, সংস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করার পরেও সেই মানুষটিই দেখা যায় যে নিজের পরিবারের ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা কাজে তো লাগাতেই পারেননি, উল্টে অবসরের পরে ল্যাজে গোবরে হয়ে রয়েছেন।
পাশাপাশি হয়ত দেখা যাবে যে তাঁরই অধীনস্থ কেউ তাঁর থেকে অনেক কম আয় করেও শুধু গার্হস্থ্য পরিচালনার দক্ষতাতে সাধারণ বুদ্ধি ব্যবহার করেই অবসরের সুচারু ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
তাই আসুন সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে দেখে নেওয়া যাক ‘ডাম্ববেল’ বা ‘বারবেল’ কৌশলের মূল কথাটি। এই কৌশল বলে, বাজার যখন অনিশ্চয়তা এতটাই যে নিশ্চয়তায় কবে ফিরবে তাই নিয়েই রয়েছে অনিশ্চয়তা তখন নজর দিন চোখে দেখতে পাওয়া ভবিষ্যতের দিকে। যাকে বিনিয়োগের পরিভাষায় বলে “শর্ট টার্ম”।
কাকে বলে শর্ট টার্ম কাকেই বা লঙ
মাঝখানে চট করে দেখে নেওয়া যায় বাজারে সময়ের পরিভাষার অর্থ:
ইমিডিয়েট টার্ম: এক বছরের কম
শর্ট টার্ম: এক থেকে তিন বছর
মিডিয়াম টার্ম: তিনের বেশি আটের কম
লঙ টার্ম: আট বছরের বেশি
কেন শর্ট টার্ম
বাজারে যখন অনিশ্চয়তার চাপ তখন একদম ছোঁয়া যায় এমন সময়ের কথাই প্রথমে ভাবতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে তা হলে এক বছর মেয়াদি নয় কেন? আসলে বিনিয়োগের ফল এক বছরের কমে সে ভাবে পাকে না। আর বিনিয়োগ যখন করছেন তখন তো লাভের কথাও ভাবতে হবে, তাই না? আর এই যুক্তিতেই এক থেকে তিন বছরের মেয়াদী বিনিয়োগের কথা ভাবতে হবে। এ তো গেল বারবেলের বা ডাম্ববেলের একদিকের ওজন।
এবার তো অন্যদিকের ওজনের কথাও ভাবতে হয়।
কেন লঙ টার্ম
আর অন্যদিকের ওজনটা কিন্তু ভাবতে হবে আট বছরের বেশি বিনিয়োগে। তার তলায় নয় কেন? এটা জটিল ভাবে না ভেবে আসুন দেখি সাধারণ বুদ্ধি কী বলে। তিন থেকে আট বছরের মধ্যবর্তী সময়কে বলে মিডিয়াম টার্ম। একটা কথা এখানে বলে রাখা ভাল। সময়ের এই বিভাজন কিন্তু একেবারেই কঠিন সীমানায় নির্ধারিত নয়। এই বিভাজনের যুক্তিটা বাজারের ঐতিহাসিক বিবর্তনের অঙ্কে কষা। বাজারের ওঠাপড়ার অঙ্কে আপনি যদি আট বছরের উপর বিনিয়োগ করেন, তাহলে মোটামুটি এই সময়কালে যাবতীয় ওঠানামার ক্ষতি ও লাভ মিলিয়ে আপনার আয়ের ঘরে লাভের পাল্লাটাই ভারি থাকে। মিডিয়াম টার্ম মানে ওই তিন থেকে আট বছরের মধ্যে বাজারের ওঠাপড়ার অঙ্কে ক্ষতির দিকে চলে যেতে পারেন বলেই লঙ টার্মের কথা বলা হচ্ছে।
মাথায় রাখবেন এই গোটা আলোচনাটাই কিন্তু আজকের অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে। বাজারের এই দোলাচল থিতু হতে, মার সামলে উঠে দাঁড়িয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সময়ের হিসাবেই তাই মিড টার্ম বিনিয়োগকে এই কৌশলে বাদ রাখা হয়।
নিজের জীবনের অঙ্কে মিলিয়ে নিলে কিন্তু অঙ্কটা বুঝতে সুবিধা। কথায় বলে সুখ আর দুঃখ জীবনে চক্রাকারে আসে যায়। খারাপ সময় বা ভাল, কোনটাই চিরকাল থাকে না। তাই খুব খারাপ সময়ের মধ্যে আমরা খড়কুটো যাই পাই তাই আঁকড়ে পেরতে চাই সময়টা। কিন্তু একই সঙ্গে ভাবি ভবিষ্যতটার কথাও। ডাম্ববেল কৌশলও একই কথা বলে। চলতি সময়টা কাটানোর সংস্থান করে,ভবিষ্যত সামলানোটাই মূল কৌশল বিপদ যখন গভীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy