সুবিনয় রায়ের গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান ‘জলের ঢেউয়ের তরল তান তুলে’ মনের ‘ভিতরদেশটাকে’ ছুঁয়ে যায় বলে মনে করেন কবি শঙ্খ ঘোষ, “অন্য অনেকের গলায় অনেক রকম জাদু আছে হয়তো, কিন্তু নিখুঁত স্বরলিপির শুদ্ধ সঙ্গীত শুনতে চাইলে, তা শুনতে হবে কেবল সুবিনয় রায়েরই গানে।”
এই অবধি এসে যে কথাটা প্রথমেই সামনে আসে তা হল, রবীন্দ্রনাথের গান তার সুর, কথা ও ভাব মিলিয়ে সঙ্গীতের একটা ঘরানা তৈরি করে। তাকে তার স্বরূপে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব গিয়ে পড়ে গায়কের উপর। তাঁর গায়ন শ্রোতাকে দাঁড় করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের সামনে। সেই গায়ক হয়ে উঠতে পারাই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বিচারে, “স্বরলিপিসুদ্ধ রবীন্দ্রনাথের গান যদি শুধু পুঁথিবদ্ধ হয়ে থাকত, যদি তা সুবিনয় রায়দের মতো গায়কদের গলায় ধ্বনিত না হত, তা হলে আমাদের জীবনের অনেকটাই কি শূন্য হয়ে যেত না? রবি ঠাকুরের যোগ্য বাহন হওয়া কি কম ভাগ্যের কথা?”
কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ পাড়ায় (বিধান সরণির সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরের সংলগ্ন অঞ্চল) সুবিনয় রায়ের জন্ম ১৯২১ সালের ৮ নভেম্বর এক ব্রাহ্ম পরিবারে। আদতে এই বসুরায় পরিবারের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জের মালুচি গ্রামে। বাবা বিমলাংশুপ্রকাশ রায় ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ ও সাহিত্যিক। সে কালের বিখ্যাত আমেরিকান বহুজাতিক সংস্থা ‘বার্ড কোম্পানি’র কলকাতার অফিসের চিফ কেমিস্ট। সাহিত্যপ্রীতি থাকার জন্য সুকুমার রায়ের ‘নন্সেন্স ক্লাব’-এর সদস্য ছিলেন তিনি। মা সুখময়ীদেবী ছিলেন দার্শনিক পণ্ডিত সীতানাথ তত্ত্বভূষণের কনিষ্ঠা কন্যা। সীতানাথ ব্রাহ্ম আন্দোলনের একজন প্রধান স্থপতিও বটে। সুখময়ী ভাল গান গাইতেন। এস্রাজ বাজাতেন। মেডিক্যাল কলেজের মেয়েদের হস্টেলের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। পরে কিছু দিন শান্তিনিকেতনের মেয়েদের হস্টেল ‘শ্রীভবন’এর সুপার হিসেবেও যুক্ত হয়েছিলেন। সীতানাথের বড় কন্যা সুধাময়ী ছিলেন আবার রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী। তাঁরা থাকতেন শান্তিনিকেতনে। স্বাভাবিক ভাবেই সুবিনয়ের ছেলেবেলা কেটেছিল ব্রাহ্ম জীবনচর্যা, মূল্যবোধ, ব্রাহ্মসঙ্গীত ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবহাওয়ার মধ্যে। তাঁর মা-মাসিরা গান শিখেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গুণীজনের কাছে। মা ছিলেন সুবিনয়ের প্রাথমিক অনুপ্রেরণা।
শৈশব ও কৈশোরে ব্রাহ্মসমাজের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে সুবিনয়ের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। সেই সব অনুষ্ঠানে গাওয়া গানের সুর তাঁর কানে আপনা থেকেই এসে পৌঁছত। তবে ছেলেবেলায় তিনি গান গাইতেন না বলে জানিয়েছেন সঙ্গীতজ্ঞ সুভাষ চৌধুরী। সেই সময়ে তিনি মজে থাকতেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের ভাই বুলার (প্রফুল্ল) বাঁশি শুনে তাতেই সুর রপ্ত করার নেশায়। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা না বললেই নয়। সুবিনয়ের মাকে গান শেখাচ্ছেন সুরেন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাশের ঘরে বসে নিজের মনে বাঁশিতে সেই সুর তুলে নিচ্ছেন। হঠাৎ সুরেনবাবুর কানে বাঁশির সুর পৌঁছল। ডাক পড়ল সুবিনয়ের। লজ্জায় মাথা হেঁট করে গিয়ে দাঁড়ালেন। সুরেনবাবু কিন্তু খুব খুশি। তখনই তাঁকে একটা গৎ গেয়ে তুলে দিলেন। হয়তো এটাই ছিল তাঁর জীবনে সেই বিশেষ মুহূর্ত, যা তাঁকে সঙ্গীতের জগতে প্রবেশের ছাড়পত্র দিয়েছিল!
সুবিনয়ের পড়াশোনার শুরু মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে সিটি কলেজে ভর্তি হন আইএসসি পড়তে। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহের কারণে অভিভাবকেরা তাঁকে শান্তিনিকেতনের ‘শিক্ষাভবন’-এ পাঠান আইএসসি পড়তে। এই যোগাযোগ হয়তো নির্দিষ্টই ছিল। সময়টা ১৯৩৭/৩৮ সাল। তিনি যে ভাল গাইতেও পারেন, তা প্রথম আবিষ্কার করলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার। শৈলজারঞ্জন রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। রসায়ন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি সঙ্গীত ভবনে গান শেখাতেন। মজা করে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘কেমিক্যাল মিউজিশিয়ান’ বা ‘মিউজিক্যাল কেমিস্ট’ বলে ঠাট্টা করতেন। ফলে সুবিনয় ও শৈলজারঞ্জনের মধ্যে গুরুশিষ্যের সম্পর্কটা গান ও রসায়ন, দু’ধারাতেই বিস্তার লাভ করেছিল।
এ ছাড়া ইন্দিরা দেবীচৌধুরাণীর (বিবিদি) কাছেও গান শিখেছিলেন সুবিনয় রায়। “এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। ওঁর কাছে গানের তালিম যেমন পেয়েছি তেমনই পেয়েছি স্নেহ, প্রশ্রয় আর ঠিক উপদেশ। উনিই আমাকে বলেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথের যে সব গানে রাগরাগিণীর বেশ স্পষ্ট ছাপ আছে, সেগুলি চর্চা বেশি করে কোরো’... আর সত্যি কথা বলতে কী, পরবর্তী জীবনে দেখেছি আমার কণ্ঠে ওই ধরনের গানই শ্রোতারা বেশি শুনতে চেয়েছেন,” বলেছেন তিনি নিজেই।
শান্তিনিকেতনে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ (সুবিনয় রায়, বাঁ দিক থেকে তৃতীয়)
এঁরা ছাড়া শান্তিনিকেতনে আর যাঁর প্রভাব তাঁর উপর বেশি করে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন সুবিনয়, তিনি হলেন সঙ্গীত ভবনের একদা অধ্যক্ষ সমরেশ চৌধুরী। “ওঁর গানের শান্ত মার্জিত রুচিশীল ভঙ্গি আমাকে বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করত। ওঁর গান একেবারে মনে গেঁথে গিয়েছিল। তাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই যেন ওঁর গায়ন ভঙ্গি আমার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল।” আর একজন তাঁর খুব বন্ধু হয়ে ওঠেন। তিনি হলেন সঙ্গীতসাধক অশেষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। অশেষবাবুর কাছে সুবিনয় প্রথম ধ্রুপদ শিখতে শুরু করেন। তিনিই রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের হদিস দেন সুবিনয়কে।
শান্তিনিকেতনে সুবিনয় রায়কে রবীন্দ্রনাথের গানের দিকে বেশি করে টেনে আনেন আর যে মানুষটি, তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। একদিন শৈলজারঞ্জন তাঁকে বললেন, “তুমি তো ভালই গানটান করো। ‘বর্ষামঙ্গল’ অনুষ্ঠান হবে। সেখানকার রিহার্সালে তুমি ঢুকে পড়ো। গুরুদেব নিজে গান শেখাবেন উত্তরায়ণের ‘শ্যামলী’ আর ‘পুনশ্চ’য়।” সেই মহড়ায় সুবিনয় প্রথম দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে একেবারে সামনে থেকে। “একটা গেরুয়া রঙের জোব্বা পরে প্রথম যে দিন এলেন রবীন্দ্রনাথ, আমি মোহিত হয়ে যাই। বড়-বড় চোখ, দুধে আলতায় রং আর কী স্নিগ্ধ ব্যবহার। এক-একদিন গান লিখতেন আর
নিজেই সুর করে শেখাতেন। এখনও মনে আছে, তিনি শিখিয়েছিলেন, ‘মন যে কেমন করে হল দিশাহারা’, ‘সঘন গহন রাত্রি’, ‘ওগো সাঁওতালি ছেলে’, ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে’ ইত্যাদি ১৬টি গান।”
বর্ষামঙ্গলের পর ১৯৩৯ সালে বিএসসি পড়ার জন্য সুবিনয় কলকাতার সিটি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৩ সালে স্নাতক হন। ইতিমধ্যে ১৯৪১ সালে সিটি কলেজে অঙ্কের ক্লাস করতে করতে খবর পান, রবীন্দ্রনাথ নেই। সকলের সঙ্গে সে দিন সুবিনয়ও কলকাতার পথে হেঁটেছিলেন। যদিও সেই শোকযাত্রায় ভারাক্রান্ত মনে দেখেছিলেন কুৎসিত এক দৃশ্য। লিখেছেন, “কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের দাড়ি ছিঁড়ে, নখ কেটে নিয়েছিল। রুচির বিকার ছাড়া একে আর কী বলব!”
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পরে তাঁর গানকে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে শৈলজারঞ্জনের অনুরোধে ও শুভ গুহঠাকুরতা ও সুজিতরঞ্জন রায়ের উদ্যোগে ৮ ডিসেম্বর ১৯৪১, ভবানীপুরের একটি ভাড়াবাড়িতে প্রতিষ্ঠা হয় শান্তিনিকেতনের বাইরে প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার স্কুল ‘গীতবিতান’। অনাদি দস্তিদারের অনুরোধে এই প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলা হয় উত্তর কলকাতায় সুবিনয় রায়ের ১ ভুবন সরকার লেনের বাড়িতে। দায়িত্বভার নিতে হয়েছিল সুবিনয়কেই।
স্নাতক স্তরের পরীক্ষার ফল বেরোনোর আগেই ইন্দিরা দেবীচৌধুরাণীর কাছ থেকে সুবিনয় ডাক পান সঙ্গীত ভবনে শিক্ষকতা করার জন্য। এর কারণ সমরেশ চৌধুরীর সঙ্গীত ভবন ছেড়ে যাওয়া। এই পর্বের সুবিনয়কে দেখেছিলেন সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, “১৯৪৪ সালে শান্তিনিকেতনে দেখতাম এক সুপুরুষ গৌরাঙ্গ ভদ্রলোককে। শান্তিনিকেতনে তিনি ‘মনা’ বা মনাদা নামে জনপ্রিয় ছিলেন।”
জীবিকার সন্ধানে ১৯৪৫ সালে সুবিনয় শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। প্রথমে চাকরি নেন প্রেসিডেন্সি কলেজের ‘স্টাটিসটিক্যাল ল্যাবরেটরি’তে। যেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৩ সালে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট’ নামে পরিচিত হয়ে বরাহনগরের প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের বাড়ি ‘আম্রপালী’-তে চলে আসে। ১৯৪৫ সাল থেকে কলকাতায় তাঁর কর্মজীবনের পাশাপাশি সঙ্গীত শিক্ষার পরবর্তী পর্যায়েরও সূচনা হয়। রবীন্দ্রনাথের গান শুধু গলায় তোলা নয়, তাকে বোঝা ও আত্মস্থ করার শুরু এই সময় থেকেই। হয়তো রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একটা চেষ্টারও শুরু তখন থেকেই।
অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে তিনি ধ্রপদ শিখতে শুরু করেন বিষ্ণুপুর ঘরানার রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। খেয়াল, ঠুমরি শিখেছেন সুখেন্দু গোস্বামীর কাছে। সুখেন্দুবাবুই তাঁকে নিয়ে যান গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সঙ্গে আরও নিবিড় ভাবে পরিচিত হবেন বলে। সুবিনয় যে গান শেখেন, সে কথা গিরিজাশঙ্করের কাছে গোপন রাখতে বলা হয়েছিল। তাই প্রথম দিনের সাক্ষাতে গিরিজাশঙ্কর যখন জানতে চান সুবিনয় কখনও গান শিখেছেন কি না, তিনি সুখেন্দুবাবুর পরামর্শ মতো উত্তর দিয়েছিলেন ‘না’। কিন্তু তাঁর গান শুনে গিরিজাশঙ্কর বুঝে ফেলেন সুবিনয় যা বলেছেন তা সত্যি নয়। ফল হয়েছিল এই, প্রতি বৃহস্পতিবার শিক্ষা শুরু করার আগে সুবিনয়কে দু’টি রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে শোনাতে হত গিরিজাশঙ্করকে। চোখ বন্ধ করে তন্ময় হয়ে তিনি সে গান শুনতেন। তার পর শুরু হত শিক্ষা।
ওই বছরেই সুবিনয়কে কলকাতার রেডিয়ো স্টেশনে নিয়ে যান সুরেশ চক্রবর্তী। অডিশন দেওয়ার জন্য। সেই অডিশনে সুবিনয় গেয়েছিলেন ‘আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া’ গানটি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার প্রথম চেষ্টায় তিনি পাশ করতে পারেননি। এর পর তাঁকে শচীনদেব বর্মনের কোনও গান গাইতে বলা হয়। সুবিনয় তাঁর অক্ষমতার কথা জানালে তাঁকে একটি ‘হালকা চালের’ রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে বলা হয়। সুবিনয় গান ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’ এবং উত্তীর্ণ হন। তাঁকে দশ মিনিটের অনুষ্ঠানের জন্য গাইবার অনুমতি দেওয়া হয়। সুরেশ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় তিনি গেয়েছিলেন শচীনদেব বর্মনের একটি আধুনিক গান, ‘গোধূলির ছায়াপথে’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘ওই মালতীলতা দোলে’।
সুরঞ্জন, সুবিনয়, ইন্দিরা ও সুরজিৎ
চল্লিশের দশক থেকে রেডিয়োতে গাইতে শুরু করলেও একজন উচ্চ পর্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে সুবিনয় রায়কে আকাশবাণী ডেকেছিল অনেক পরে। এই আপগ্রেডেশনের অডিশন দেওয়া প্রসঙ্গে সুবিনয় জানিয়েছেন, “সে সময় বহু শিল্পী, যাঁদের সঙ্গীত পরিবেশনের মান যথার্থ ছিল না, তাঁরাও রেডিয়োতে গান গাইতেন। কিন্তু আমি তখন গায়ক হিসেবে ওঁদের কাছে যথার্থ স্বীকৃতি পাইনি।” তাই “ব্যক্তিগত কারণে প্রায় দশ বছর গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। আপগ্রেডেশনের অডিশন আমি দিইনি, আমার গানের অডিশন নেওয়ার কোনও যোগ্য ব্যক্তি অডিশন কমিটিতে ছিলেন না বলে আমি সন্দিহান ছিলাম।”
এই অভিমানের সমাধান করতে শুভ গুহঠাকুরতা বিশেষ উদ্যোগী হন। তাঁর অনুরোধে ও পরিকল্পনায় ঠিক হয়, “আপনি (সুবিনয়) শুধু একবার রেডিয়ো স্টেশনের সামনের গেট দিয়ে ঢুকবেন। বিমানবাবু থাকবেন, আমরা চা খাব তার পর আপনি বেরিয়ে আসবেন, ব্যস! আপনার অডিশন শেষ।” এই ভাবে শুভ গুহঠাকুরতা ‘বি-হাই’ শিল্পী হিসেবে সুবিনয় রায়কে আকাশবাণীর অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
১৯৪৫ সালেই সুবিনয়ের প্রথম রেকর্ড বেরোয় অনাদিকুমার দস্তিদারের পরিচালনায় কলম্বিয়া কোম্পানি থেকে। তিনি গেয়েছিলেন দু’টি গান, ‘এই করেছ ভালো’ ও ‘তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে’। পরের বছর ১৯৪৬-এ দ্বিতীয় রেকর্ড বেরোয় ‘এলেম নতুন দেশে’ ও ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে’। তাঁর প্রথম রেকর্ড শোনার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে অমিতাভ চৌধুরী লিখেছেন, “প্রথম রেকর্ড শুনে মোহিত হলাম। যেন শান্তিনিকেতন মন্দিরে বসে সকালে উপাসনায় গান শুনছি।” কিন্তু সুবিনয়ের সময়কাল সম্পর্কে সুধীর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “সত্যিকথা বলতে, সুবিনয়ের গান সে কালে সকলের মনে গভীর ভাবে ছাপ ফেলেছিল বলা যাবে না। আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে তখন আধুনিক গানের প্রতিপত্তি ও জনাদর ছিল অত্যন্ত বেশি। তা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের গানের শ্রদ্ধান্তঃপুর তখনও তেমন করে খোলেনি। ফলে সুবিনয়ের গানের আলাদা রূপবন্ধ, বিষয়গত বিভাজন কিংবা স্বরপ্রয়োগের স্বতন্ত্র চিন্তার সঙ্গে পরিচিত ছিল না কেউ। তখন ছিল পঙ্কজ মল্লিকের দাপুটে গান আর ট্রেমোলোবহুল সন্তোষ সেনগুপ্তর গানের যুগ।”
সুবিনয় রায় কেবলমাত্র একজন সুগায়ক ছিলেন না। তিনি ছিলেন দক্ষ শিক্ষকও। তাঁর এই দ্বৈত পরিচয় তাঁকে সমকালীন গায়কদের চেয়ে আলাদা করে দিয়েছিল। এর পিছনে সাঙ্গীতিক পরিবেশ ক্রিয়াশীল ছিল। তা না হলে সেই সময়ে রেডিয়ো ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গায়ক ৪১ বছরের পঙ্কজ মল্লিক নিভৃতে ২৫ বছর বয়সের মুখচোরা, স্বল্পবাক অখ্যাত একজন তরুণের কাছে রবীন্দ্রনাথের গানের তালিম নিতে আসতেন না। সুবিনয় জানিয়েছেন, “সুবিখ্যাত পঙ্কজকুমার মল্লিকও আমার কাছে কিছু দিন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় কোনও কোনও মহল থেকে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। ...বিখ্যাত পাকুড় মামলায় অভিযুক্ত ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্যের বাড়ি ছিল সুকিয়া স্ট্রিটে। সেখানেই প্রতি রবিবার পঙ্কজবাবু আসতেন, আমিও যেতাম। দুটো হারমোনিয়াম রাখা থাকত। খুবই শ্রদ্ধা নিয়ে উনি শিখতেন। আমাকে ডাকতেন ‘অধ্যাপক’ বলে। ...আমার প্রশিক্ষণে পঙ্কজবাবু ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’, ‘খরবায়ু বয় বেগে’, ‘আঁধার অম্বরে’ আর ‘নাই নাই ভয়’ রেকর্ড করেছিলেন। গানগুলি আমিই বেছে দিয়েছিলাম। কিন্তু কী কারণে জানি না রেকর্ডে ট্রেনার হিসেবে আমার নাম ছিল না।”
গোটা চল্লিশের দশক জুড়ে সুবিনয়কে প্রধানত শিক্ষক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে দেখা যায়। শান্তিনিকেতনের ‘সংগীত ভবন’, কলকাতার ‘গীতবিতান’, ‘দক্ষিণী’, ‘গীতবীথি’(নিজের স্কুল) প্রতিষ্ঠানে গান শিখিয়েছেন। পরবর্তীকালে রানি মহলানবীশের উদ্যোগে আইএসআই-তে যে গানের স্কুল খোলা হয়েছিল, সেখানে এবং পরে ওঁর ছাত্র সন্তোষ ঠাকুরের স্কুল ‘গান্ধর্বী’তেও তিনি শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, তার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর স্মৃতিচারণায়। যাঁদের মধ্যে মনীষা মজুমদার, রাজ্যেশ্বর মিত্র, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইলা ঘোষ, সঙ্ঘমিত্রা গুপ্ত, ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য, অভিরূপ গুহঠাকুরতার মতো শিল্পীরা রয়েছেন। ধ্রুপদ অঙ্গের একটি গান শেখানো নিয়ে তাঁর শ্যালিকা তথা ছাত্রী মনীষা মজুমদার একটি ঘটনার কথা জানালেন, “ক্লাসে একদিন যতদূর মনে পড়ে ‘বাণী তব ধায়’ গানটি শেখানোর কথা। তখনও ক্লাসে আসেননি। আমি দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে গল্প করছিলাম। ঘরে ঢুকে আমাকে দেখলেন। তার পর হারমোনিয়ামটা টেনে নিয়ে আমাদের সামনে বসে বললেন, “ধ্রুপদ শিখবে ঠেসান দিয়ে বসে?” সেই গুরুবাক্য আমি কখনও ভুলিনি। নিজে গাইতে এবং শেখাতে গিয়ে বুঝেছি, পিঠ সোজা রেখে ধ্রুপদ গান গাইতে যত আরাম তত আরাম আর কিছুতে নয়।”
স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের স্কুলে তাঁকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন সঙ্ঘমিত্রা গুপ্ত, “১৯৫৮ সালের কথা। ক্লাস সেভেনে পড়ি। বাবা ওখানে চাকরি করেন। আমাকে ওঁর কাছে পাঠালেন। প্রথম দিনই সম্পূর্ণ শান্তিনিকেতনের অনুকরণে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বসে ওঁর কাছে গান শেখার এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা হয়েছিল। উনি শিখিয়েছিলেন ‘হারমানা হার পরাব তোমার গলে’ গানটি। খুব কড়া মেজাজের মানুষ ছিলেন। বুঝেছিলাম, উনি যতটুকু দেবেন পরের দিনের ক্লাসে ঠিক ততটুকুই আদায় না করে ছাড়বেন না। তার মানে, খুব ভাল করে হোমওয়র্ক করে তবেই পরের দিন যেতে হবে। গান শিখতে বসে মুগ্ধ হয়ে ওঁর গান শুনেছি। কী সুন্দর করে সুর লাগাতেন। প্রত্যেকটি গানকে আলাদা করে ভালবাসতে শিখেছি ওঁর কাছ থেকেই।”
এক মঞ্চে সুবিনয় রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে
সুবিনয়ের ছোট ছেলে সুরঞ্জন জানিয়েছেন, “শিক্ষক হিসেবে বাবা ছিলেন বাঘের মতো। সাংঘাতিক কড়া শিক্ষক। উনি গান ঠিক শেখাতেন না। গান দিতেন। বলতেন তোমাকে কি এই গানটা দিয়েছি? এই দেওয়া মানে ধার দেওয়া। ছাত্রছাত্রীদের গান ধার দিয়ে আবার সেই গান সুদ সমেত মানে, উনি যেমন শিখিয়েছেন ঠিক সেই ভাবে ফেরত দিতে হবে। সে এক ভয়ঙ্কর এবং বিপজ্জনক ব্যাপার ছিল আমাদের কাছে। তবে এখন মনে হয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিনগুলো তখনই পেয়েছি।”
১৯৪৬ সালের ১১ অক্টোবর, সুবিনয় বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন শিশুসাহিত্যিক অমরেন্দ্রনাথ দত্তর কন্যা ইন্দিরার সঙ্গে। শ্যালিকা মনীষা জানাচ্ছেন, “তখন ওঁর বয়স ২৫, দিদির ১৯। আমরা হিন্দু। কিন্তু বিয়েটা হয়েছিল ব্রাহ্ম মতে। দাঙ্গা পরবর্তী সময় বলে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা ২৫ জনের বেশি করা যায়নি। আমরা তখন বালিগঞ্জে থাকি। আমাদের উল্টো দিকের এক প্রতিবেশীর (কাকিমা বলতাম) বসার ঘরে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল।” পারিবারিক সুবিনয়ের কথা বলতে গিয়ে মনীষা আরও জানালেন, “উনি ছিলেন একমাত্র সন্তান। আমি এবং আমার দুই ভাইকে খুব স্নেহ করতেন। প্রতি শনিবার আমি ওঁদের কাছে চলে আসতাম। রবিবার ওঁর কাছে গানের ক্লাস করে বিকেলে ফিরে আসতাম। আর যদি উত্তম-সুচিত্রার কোনও সিনেমা মুক্তি পেত, তা হলে আমি, দিদি আর সুবিনয়দা রবিবার নাইট শোয়ে সেই ছবি দেখে সোমবার সকালে ফিরতাম।
১৯৪৭ সালে ওদের প্রথম সন্তান সুরজিৎ (রানা) ও ১৯৫২ সালে সুরঞ্জনের (রঞ্জু) জন্ম হয়। ১৯৫২ সালেই তিনি যখন লাইব্রেরি সায়েন্স পড়তে ইংল্যান্ডে যান, জানতেন না দিদি অন্তঃসত্ত্বা। ফিরে আসেন দেড় বছর পর।”
পারিবারিক সুবিনয় ছিলেন খুবই ব্যস্ত মানুষ। সুরঞ্জনের কথায়, “সারা দিন অফিস করে, সন্ধেয় ক্লাস নিয়ে যখন বাড়ি ফিরতেন, আমরা হয়তো তখন ঘুমিয়েই পড়েছি। আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ রাখলেও আমরা ক্লাসে কে কেমন করছি, তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ওঁর ছিল না। পরীক্ষায় ভাল ফল করলে মাঝেমাঝে পার্কস্ট্রিটে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যেতেন। মা-ই ছিলেন সংসারের মাথা।”
সুবিনয় কখনওই শিক্ষক পরিচয় ছেড়ে জনপ্রিয় গায়কের ভূমিকায় এসে দাঁড়াতে চাননি। নিভৃত শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচয় সকলের কাছে মান্যতা পেলেও গায়ক সুবিনয়কে রবীন্দ্রসঙ্গীতের শ্রোতারা প্রথম পেয়েছিলেন ১৯৭২ সালে। ‘স্টুডেন্টস হেলথ হোম’-এর উদ্যোগে সেই গান শোনার অভিজ্ঞতা সকলকে অভিভূত করেছিল। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত জনসমক্ষে গান করেছেন। ১৯৪৬-এর পর ১৯৬১-তে তিনি আবার রেকর্ডের জন্য গান গেয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ উদ্্যাপনের পরে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বিপুল আগ্রহ তাঁকে বাধ্য করেছিল তাঁর সেই ভাবনাকে লিপিবদ্ধ করতে। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর অসামান্য বই ‘রবীন্দ্রসংগীতসাধনা’। যে বইতে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের জাতকে চিনিয়ে দিয়েছেন এই ভাবে, “যদিও রবীন্দ্রসংগীত ভারতীয় রাগসংগীতের ভিত্তির উপরেই গড়া তবুও সংগীত পরিবেশনের দিক থেকে এ একটি স্বতন্ত্র সংগীত বা সংগীতপদ্ধতি। তার গায়কি, বাচনভঙ্গি, স্বরপ্রয়োগরীতি ও অলংকরণপ্রণালী স্বতন্ত্র।”
ইন্দিরা, সুবিনয়, শান্তিদেব ও তাঁর স্ত্রী হাসি (বাঁ দিক থেকে)
রবীন্দ্রনাথের গানের এই স্বতন্ত্রতাকে বোঝার প্রক্রিয়াটি চলেছিল দীর্ঘ দিন ধরে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সঙ্গীত পরিবেশন ছাড়াও সুবিনয় রায় পৃথিবীর বহু দেশে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে। সঙ্গীতসহ বক্তৃতাও দিয়েছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি’ পুরস্কার, দক্ষিণীর ‘শুভ গুহঠাকুরতা পুরস্কার’, কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি ও বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’। সুভাষ চৌধুরীর করা তালিকা অনুযায়ী সুবিনয় রায়ের রেকর্ড ও ক্যাসেটের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। সুধীর চক্রবর্তীর মতে, “গীতশিল্পী হিসেবে সুবিনয় রায়ের সফলতা ও প্রতিষ্ঠা ক্রমারোহণের রেখা খুব সরল নয়। যৌবনে তাঁর গান, তাঁর গানের ধরন আমরা যথাযথ অনুধাবন করতে পারিনি। তাঁর প্রবল সমাদর ও একক উচ্চাবস্থান ঘটেছে...জীবনের প্রৌঢ়পর্বে। এর কারণ দু’টি। প্রথমত, রবীন্দ্রশতবর্ষ থেকে ব্যাপক ভাবে রবীন্দ্রগীতির প্রচারের ফলে নতুন শ্রোতার দল তৈরি হয়েছে। তাঁদের কাছে সুবিনয়ের গান অত্যন্ত উপভোগ্য ও ভালবাসার সামগ্রী। দ্বিতীয়ত, তিনি বিশেষ ভাবে এমন সব গান গাইতে পারেন, ঠিক লয়ে তালে উচ্চারণে এবং বন্দিশ বজায় রেখে, যার তুল্য সামর্থ্য ধারে কাছে কারুর নেই।”
এর এক বিস্ময়কর উদাহরণ শুনিয়েছেন সুরঞ্জন, “আমার দাদা সুরজিতের অকালপ্রয়াণ ঘটেছে। তাঁর শবদেহ ঘিরে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্মরীতি অনুযায়ী আমরা গাইছি ‘কত অজানারে’ গানটি। বাবাও মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন। গানটা শেষ হওয়ার পর বাবা বললেন আর একটা গান হবে। আমাকে চাপা স্বরে বললেন, ‘এ বার গানটা তুই ধর তো, আগের গানটার স্কেল ঠিক ছিল না’। আমি কেঁপে উঠেছিলাম। বুঝেছিলাম মৃত সন্তানের দেহের সামনে দাঁড়িয়েও উনি রবীন্দ্রনাথের গানের শুচিতাকে নষ্ট হতে দেবেন না! আমরা তার পর গাইলাম ‘জানি তুমি মঙ্গলময়’ গানটি। গাওয়া শেষ হলে বাবা বললেন, ‘রানা শান্তি পেল’। আমার দাদাও খুব ভাল গাইতেন।”
সুবিনয় রায় জনসমক্ষে জীবনে শেষবারের মতো মঞ্চে গেয়েছিলেন ২০০০ সালে ‘বিশ্ব সঙ্গীত দিবস’ উপলক্ষে, রবীন্দ্র সদনে। আগের বছর তাঁর প্রথম সন্তানের মৃত্যু তাঁকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। তাঁর স্বভাবেও বদল এসেছিল। আরও চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। ক্রমশ তাঁর নিজের শরীর ভাঙছিল। গান শেখানোর দিনগুলিও একদিন থেমে গেল। অবশেষে ৯ জানুয়ারি, ২০০৪ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার ঠিক ছ’দিন আগে হাসপাতালে শুয়ে সুরঞ্জনের কাছে খবর পান ৩ জানুয়ারি স্ত্রী ইন্দিরাও চলে গিয়েছেন হঠাৎই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy