বয়স আট থেকে বারো। তা বলে কি ওদের সমস্যা নেই? প্রি-টিন ছেলেমেয়েদেরও অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। বন্ধুদের সঙ্গে বনিবনার অভাব, বাবা-মায়ের কথা না শোনা, শারীরিক পরিবর্তন, বড়দের বিষয়ে কৌতূহল.... এমন নানাবিধ প্রশ্ন ও সমস্যার মুখে ‘এটা করবে না’, ‘খুব বকুনি খাবে’-এর মতো অস্ত্র অনেক ক্ষেত্রে অকেজো হয়ে যায়। কারণ দশ-বারো বছরের ছেলেমেয়েদের বোধবুদ্ধি ক্রমশ পাকা হতে থাকে, পাল্টা প্রশ্ন করার জায়গাও তৈরি হয়ে যায়। তাই চুপ করিয়ে দেওয়ার চেয়ে ওদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে বাবা-মায়েদের। কিন্তু সমাধান মানে হাতেনাতে করে দেওয়া নয়। এখনকার পেরেন্টিংয়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করার পথে ছেলেমেয়েদের ধীরে ধীরে এগিয়ে দেওয়া।
ছোট বয়সে সব কিছুর সমাধান সন্তান একা হাতে করতে পারবে না। সেটা আশা করাও উচিত নয়। কিন্তু সব সমস্যায় যে বাবা-মায়েরা উদ্ধারকর্তা, এই আশ্বাস না দেওয়াই ভাল। কারণ এতে সন্তানের মধ্যেও আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যায়। উল্টো দিকে, বাবা-মায়েরাও সন্তানকে একা ছাড়তে ভরসা পান না। সব জট ছাড়িয়ে দেওয়ার মনোবৃত্তি অভিভাবকদের মধ্যেও ‘ওভার-প্রটেক্টিভ’ পেরেন্টিংয়ের জন্ম দেয়।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিনএজে পা রাখার আগেই ছেলেমেয়েরা যেন নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হয়, তার জন্য কয়েকটি সহজ পরামর্শ রইল।
স্কুলে বুলিং ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সমস্যা
প্রি-টিনের পড়ুয়াদের মধ্যে এটি খুব বেশি দেখা যায়। বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হলেই তার সমাধানে দু’পক্ষের বাবা-মায়েরা ময়দানে নেমে পড়েন। সেটা কখনও কাম্য নয়। আদতে সমস্যার সমাধান হয় না। মর্ডান হাই স্কুল ফর গার্লস এর ডিরেক্টর দেবী কর বললেন, ‘‘ওদের সময় দিতে হয়। বাবা-মায়েরা এগিয়ে না এসে ওদের নিজেদের মতো ছেড়ে দিলে, ওরা ঠিক বন্ধুত্ব করে নেবে। তবে সমস্যা বাড়লে বড়রা হস্তক্ষেপ করবেন, সেটা পরের ঘটনা।’’
শারীরিক বা মৌখিক বুলিংয়ের সমস্যা ছোটরা অনেক সময়ে বুঝিয়ে বলতে পারে না। নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে বা বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের মতে, বাড়িতে রোল-প্লে-এর মাধ্যমে বাবা-মায়েরা শিখিয়ে দিতে পারেন যে, কেউ ধাক্কা দিলে বা কড়া কথা বললে, চোখের ইশারায় বা পাল্টা কথা শুনিয়ে দিয়ে প্রাথমিক ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। অর্থাৎ হেনস্থা যে সে মুখ বুজে মেনে নেবে না, সেটা বন্ধুকে বুঝিয়ে দেওয়া।
সিবলিং রাইভালরি
দুই ভাই, দুই বোন বা ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া-মারপিট হতেই পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবা সন্তানদের পক্ষ নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। বা বড় সন্তানকে বলা হয়, ‘তুমি বড়, অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে বড় সন্তান অসহায়বোধ করতে পারে, হতাশায় ভুগতে পারে। তাই বাবা-মায়েরা এর মধ্যে না ঢুকে দু’জনকে পারস্পরিক সমঝোতার রাস্তায় যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অভিভাবকেরা বলতে পারেন, ‘তোমরা বাড়িতে অশান্তি করছ, তাই যে খেলনা বা যা নিয়ে তোমাদের মনোমালিন্য তা কাউকেই দেওয়া হবে না।’ বাবা-মায়ের গুটিয়ে যাওয়া দেখে তারা নিজেরাই হয়তো সমস্যার পথ খুঁজে বার করতে পারে।
দায়িত্ব দেওয়া
আট থেকে বারো বছর বয়সিদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দের জায়গা তৈরি হয়ে যায়। তাই কোন বিষয় ওর পড়তে ভাল লাগছে, সেটা ওরা নিজেরা বুঝতে পারে। অনলাইন ক্লাসে ছেলেমেয়েরা মনোযোগী নয়, এমন অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। সে ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি সন্তানের পছন্দের, তার দায়িত্ব ওর উপরেই ছেড়ে দিন। অর্থাৎ স্কুলের সাহায্যটুকু নিয়ে ও নিজেই সেই বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করবে। আর কোনও মনিটরিং বা বাড়তি সাহায্য সেই সাবজেক্টে ওকে দেওয়া হবে না। দেখবেন, নিজে দায়িত্ব নিতে শিখলে ওই বিষয়টিকে আরও ভাল করে আয়ত্তে আনার কৌশল ও নিজেই বার করবে।
স্কুলের কাজ শুধু নয়, দোকানে কিছু জিনিস আনতে দেওয়া বা বাজারে পাঠানোর মতো দায়িত্বও এই বয়সে দিতে পারেন। বাজারে গিয়ে খুচরো না থাকায় কিছু কিনতে না পারার মতো সমস্যায় পড়লে, পরের বার ওই বাস্তববোধ কাজে লাগিয়ে ও তৈরি হয়েই বেরোবে।
সামাজিকতা বোধ গড়ে তোলা
নিউক্লিয়ার পরিবারে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার অভ্যেস অনেক ক্ষেত্রে তৈরি করা হয় না। এটা খুব দরকারি। এই বয়স থেকেই ওদের বুঝিয়ে দিন, ‘এটা একটা দায়িত্ব বা কর্তব্যের মতো। কে করছে বা না করছে সেটা দিয়ে বিবেচ্য নয়। তোমাকে নিয়মিত বড়দের ও ছোটদের কুশল সংবাদ রাখতে হবে।’ দেবী করও এর গুরুত্ব বোঝালেন, ‘‘সব সময়ে বাবা-মাকে সব কথা বলা যায় না। তাঁরা বুঝতেও পারবেন না। তাই পরিবারের এমন কোনও বড় কেউ (ঠাকুরদা-ঠাকুমা বা পিসি-কাকা) থাকতে পারেন, যাঁর সঙ্গে এই ছেলেমেয়েরা নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারবে।’’
এই বয়সটা আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার সময়। সমস্যা আসবে, কিন্তু তার সমাধানও হবে—এই আশ্বাস যেমন সন্তানকে দেবেন, তেমনই সে-ই তার পথ খুঁজে নিতে পারে, তেমন সাহস-ভরসাটুকুও ওদের জোগাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy