Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Cultural Programme

কবিতা-গানে সন্ধ্যাযাপন

মূল অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ‘হৃদয় পানে হৃদয় টানে নয়ন পানে নয়ন ছোটে’ কবিতা দিয়ে। সেই কবিতার ভাবনা দিয়ে ইমন চক্রবর্তী পরিবেশন করলেন ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’।

মঞ্চে ইমন ও শৌভিক।

মঞ্চে ইমন ও শৌভিক।

সৌম্যেন সরকার
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৫
Share: Save:

সম্প্রতি মহাজাতি সদনে গানে ও কবিতায় এক সন্ধ্যা যাপন করলেন ইমন চক্রবর্তী ও শৌভিক ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র, ক্যাকটাস-খ্যাত সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় (সিধু) এবং অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘হিয়ার মাঝে’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটি একটি বিশেষ ভাবনা নিয়ে কবিতা ও গান দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিল। অনুষ্ঠানের বিন্যাসেও ছিল অভিনবত্ব। ইমনের গানের সঙ্গে কবিতা সংযোজন করলেন শৌভিক ভট্টাচার্য। শৌভিকের পরিবেশনা কিছু কিছু অংশে দুর্বল বলে মনে হলেও মোটামুটি ভাবে সফল।

মূল অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ‘হৃদয় পানে হৃদয় টানে নয়ন পানে নয়ন ছোটে’ কবিতা দিয়ে। সেই কবিতার ভাবনা দিয়ে ইমন চক্রবর্তী পরিবেশন করলেন ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’। চমৎকার পরিবেশনা। এর পরের কবিতা ছিল, শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘তুমি জাগাও আমাকে’। ইমন গাইলেন আঠারো শতাব্দীতে নৈমত খান রচিত ভীমপলশ্রী রাগে একটি বন্দিশ ‘যাযা যারে অপনে মন্দির বা’। অপূর্ব পরিবেশনা। সেই গানের শেষে ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ গানটি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

শৌভিকের কণ্ঠে ‘হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ নয়/সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়’ শুনতে ভাল লাগে। ইমনের কণ্ঠে ‘যে ক’টা দিন তুমি ছিলে পাশে/কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে’ সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হল। ইমনের কণ্ঠে কবিতা পাঠ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘মোরা দুই সহোদর ভাই’ এবং সেই সঙ্গে বাংলা কাওয়ালি ‘আয় বড় পীর আবদুল কাজী, জিলানের জিলানী তোমারই নামের গুণে আগুন হয়ে যায় পানি’ অনুষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থাপনা।

এ ছাড়া অন্যান্য কবিতার মধ্যে ছিল ‘তিন পাহাড়ের গান- পাহাড়িয়া মধুপুর মেঠো ধূলিপথ’, সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘আপনি সাবিনা কপূরকে চেনেন?’, ‘আমি থানা থেকে বলছি’। ইমনের গাওয়া ‘আশ্বিন ফাগুন মাসে পরান ঘাসে নতুন বিয়ের ফুল ফুটেছে’ গানটি দর্শক-শ্রোতার মন মাতিয়ে তুলেছিল শিল্পীর অনবদ্য পরিবেশনায়।

বিভিন্ন ধরনের গানে ইমনের পারদর্শিতা প্রমাণ করল এই দু’টি গান— ‘দেয়ার ইজ় অ্যান ওল্ড ম্যান রিভার’ এবং সেই সঙ্গে ‘বিস্তীর্ণ দু’পারের অসংখ্য মানুষের’। বাংলা গানটি অহমিয়াতেও সমান দক্ষতায় উপস্থাপিত করলেন শিল্পী। এই পরিবেশনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিল। এর পরেই ইমন শোনালেন একটি স্বরচিত কবিতা— ‘তোমায় নিয়ে গল্পগুলো সত্যি যদি অলীক হয়’। অনুপম রায়ের সুরে ‘তোমার দুঃখে আমি/আমার দুঃখে তুমি, আমাদের এই বেঁচে থাকা’ এবং ‘আমি আবার ক্লান্ত পথচারী/এই কাঁটার মুকুট লাগে ভারী’ পরিবেশিত হল। দু’টি গানই সুগীত।

ইমনের কণ্ঠে কীর্তন গান ‘ও সে কোথা থেকে এল নদীয়ায়’ গানটি সুগীত হলেও একাত্ম হওয়ার আন্তরিকতার অভাব দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে গানটির ভাব নষ্ট করেছে।

অনুষ্ঠান-শেষে ইমন শোনালেন তাঁর বিখ্যাত গান ‘তুমি যাকে ভালবাসো স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো’ এককথায় অনবদ্য। এই গানের সঙ্গে দর্শক-শ্রোতার সক্রিয় অংশগ্রহণ মনে রাখার মতো। মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোজেকশন ছিল চমৎকার। গানের সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এর ব্যবহার মঞ্চসজ্জায় একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করেছিল।

যন্ত্রসঙ্গীতে অয়ন মুখোপাধ্যায় (কীবোর্ড), রামকৃষ্ণ দাস (পার্কাশন), সোহম মুখোপাধ্যায় (বেস গিটার), বেদান্তরাজ বেরিলী (গিটার), অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় (ড্রামস), বিভাস চক্রবর্তী (গিটার ও ব্যাঞ্জো) সকলেই চমৎকার সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে কীবোর্ডে অয়ন মুখোপাধ্যায় অসাধারণ। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো একটি সন্ধ্যা উপহার দিলেন শিল্পীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iman Chakraborty Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE