Advertisement
E-Paper

Art Exhibition: ‘এ চোখ যা দেখেছিল, তা এর দেখার কথা নয়...’

ওই প্রিন্টের উপরেই আবার চারকোল, প্যাস্টেল, পেনসিল ব্যবহারের পরে ফাইনাল প্রিন্ট নেওয়া হয়।

চিত্ররহস্য: রৌণক পাত্রর ‘কোহেন’স হুৎস্পা’ প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম

চিত্ররহস্য: রৌণক পাত্রর ‘কোহেন’স হুৎস্পা’ প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫২
Share
Save

সম্প্রতি শিল্পী রৌণক পাত্রর প্রদর্শনী ‘কোহেন’স হুৎস্পা’ সম্পন্ন হল এ এম আর্ট মাল্টিডিসিপ্লিনস গ্যালারিতে। ‘হুৎস্পা’ হিব্রু থেকে আসা একটি শব্দ, এক চূড়ান্ত দুঃসাহস বা স্পর্ধা হিসেবে বোঝানো হয়। এখানে ‘কোহেন’ একটি চরিত্র বা সত্তা। শিল্পী গ্রাফিক নভেলের একটি ভিসুয়াল রিপ্রেজেন্টেশনের সাহায্যে তাঁর মিশ্র মাধ্যমের ছবিগুলি দেখিয়েছেন। এই মিশ্র মাধ্যমে প্রযুক্তির একটি প্রধান ভূমিকাও আছে। পেন-ইঙ্ক, চারকোল, কফি টিন্ট, স্মোক, অ্যাক্রিলিক, গ্রাফাইট, ডিজিটাল ড্রয়িং... সবই ব্যবহার করে, শেষ পর্যন্ত রৌণক আর্কাইভাল কাগজে ইনজেক্ট প্রিন্টের মাধ্যমে তাঁর এই নিরীক্ষাগত, আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট কাজগুলি করেছেন। প্রতিটি কাজেই গ্রাফিক ও পেন্টিং কোয়ালিটি মিলেমিশে একাকার হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়েছে। এই কাজগুলিই তিনি অয়েল বা অ্যাক্রিলিকে ক্যানভাসেও করতে পারতেন, তাতে এমন সূক্ষ্মতা ও টেকনিক রাখা যেত না। এই মাধ্যমটি যতটা আকর্ষক ভাবে প্রতিভাত, ক্যানভাসে ঠিক তেমনটা করা যেত না। আংশিক বা অনেকটা করা গেলেও, প্রযুক্তির ওই টেকনিকের অনেকটাই মার খেয়ে যেত। আসলে ফ্লুরোসেন্ট ফোটোশপ কালার কম্পিউটারের এখানে একটি বড় ভূমিকা আছে।

ইঙ্ক বা অন্যান্য মাধ্যমে ছবিটি আঁকার পরে সেটি ফোটোশপে ট্রান্সফার করে, আবার কিছু রং করে বা প্রত্যক্ষ ফোটোশপে এঁকে, সেখানেই রং করে ফেলা। শেষ হলে আর্কাইভাল কাগজে প্রিন্ট করা হয়। ওই প্রিন্টের উপরেই আবার চারকোল, প্যাস্টেল, পেনসিল ব্যবহারের পরে ফাইনাল প্রিন্ট নেওয়া হয়। এই কোহেনের যে সত্তা, যা এক ভয়ডরহীন দুঃসাহস, ছবিগুলিতে এক ধরনের প্রতিবাদের ভাষাও সেই স্পর্ধার মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়েছে। শিল্পী এক ধরনের নৈঃশব্দ্যের মধ্যেও ভাষা খুঁজে নিয়েছেন ছবিতে।

কার্টুনিস্ট, ইলাস্ট্রেটর রৌণকের কাজে বরাবর একটি বার্তা থাকত। প্রধানত পেন্টিংয়ের ছাত্র হিসেবে বর্তমান কাজগুলিতে তিনি বুদ্ধি করে প্রয়োজনীয় ব্যঙ্গচিত্র ও সচিত্রকরণের আলগা আভাস রেখেও, পেন্টিংয়ের গুণাগুণকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছেন। স্পেস ছোট হলেও কম্পোজ়িশনের ক্ষেত্রে কোথায় কতটা কাজ করতে হবে, ছাড়তে হবে, ছবিগুলিতে তা সুস্পষ্ট। কিছু জায়গায় ইংরেজি বর্ণের ব্যবহার ছবিকে পোস্টারের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। সেখানে পেন্টিংয়ের গুণ কিছুটা হলেও নষ্ট হচ্ছে। এখানেই তাঁকে ভাবতে হবে।

তবে তাঁর ছবির কিছু অনুপুঙ্খময়তা ও নানাবিধ সূক্ষ্মতা, যা যথেষ্ট আকর্ষক, তার সুবিধেগুলো কিন্তু সব ওই প্রযুক্তির জন্যই, বলা বাহুল্য। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট কিছু বর্ণ ছবির চরিত্র অনুযায়ী ব্যবহার করেছেন। ক্ষত, যন্ত্রণা, আর্তনাদ, অলৌকিকত্ব, অনিশ্চয়তা, ভয়, বিহ্বলতা, আঘাতকে তিনি বুঝেছেন, বুঝিয়েছেনও ছবির মাধ্যমে। যেন এক নৈঃশব্দ্যের কবিতা, যেন মৃত্যু অপেক্ষমান, আধিভৌতিক আবহ... মহাকাশেও যেন কোথাও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা... কিন্তু কোথাও সচিত্রকরণের গূঢ় রঙিন বাস্তবতাকে ভেঙেচুরে চিত্ররহস্যের একটি প্যাটার্ন তৈরি করেছেন, প্যাশনও যেখানে উপলব্ধি করা যায়। তাঁর এই কাজগুলি কোথাও যেন সৌমিক চক্রবর্তীর কাজকেও স্মরণ করায়। আসলে পেন্টিং, গ্রাফিক্স গুণ মিলে প্রযুক্তির সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে স্বকীয় একটা কমপ্লিট পেন্টিংয়ের চেহারাই নিয়েছে রৌণকের ছবি।

কিছু কম্পার্টমেন্টে ভাগ করে কম্পোজ়িশনকে তিনি একটি বৈচিত্র ও জ্যামিতির মধ্যে আবদ্ধ করেছেন কোনও কোনও স্থানে, যা অনেক মৌলিক ও মারাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে দর্শককে। গাঢ় অন্ধকার ভেদ করা টকটকে কিছু বর্ণের সার্চলাইট যেন হঠাৎ চমকে দিচ্ছে ছবিতে কোথাও।
ছবির অভ্যন্তরীণ কিছু সাংকেতিক রূপ ও রূপবন্ধ, যা একইসঙ্গে আর্তনাদ ও প্রতিবাদের ভাষায় উচ্চকিত। পটের চতুর্দিক থেকে জ্যামিতি তৈরি করেছেন নিজের মতো করে। কম্পোজ়িশনের নির্দিষ্টতাকে বজায় রেখে, সেখানে ওই সব রূপবন্ধ, প্রত্যঙ্গ, অবয়ব ও প্রতিকৃতির অংশ সাংকেতিক দৃশ্যের মতো। বড় বেশি সিম্বলিক। এই অন্বেষণের আড়ালের যাবতীয় শোষণ ও আর্তনাদ, যন্ত্রণা ও বিহ্বলতা, বিপন্নতা ও মৃত্যুচেতনা দর্শককে উদ্বেল করে, আঘাতও করে। রৌণকের এই প্রতিবাদী সত্তা ও ছবির এমন ভাষ্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। নীরব হয়ে থাকা মানুষকেও তীব্র প্রতিবাদী হতে শেখায়। সংকেত, রূপবন্ধ, সিম্বল, বিভিন্ন অভিব্যক্তি, সমগ্র আবহ, প্রয়োজনীয় বর্ণসংশ্লেষ নিয়ে করা কাজগুলি চমকে দেয়।

Art and Culture Art exhibition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।