সম্প্রতি কেভ ৩১-এ শিল্পী সুদীপ্ত অধিকারীর একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে তাঁর ১০টি একক প্রদর্শনী হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। এ ছাড়াও পুণে, দিল্লি, আমদাবাদ এবং মুম্বই শহরে তাঁর অংশ নেওয়া দলীয় প্রদর্শনীর সংখ্যাও অনেক। এর আগে তাঁর কিছুটা স্কেচধর্মী কাজ, তুলনামূলক ভাবে ছোট কাজ এবং কিছু বড় কাজও দেখেছেন দর্শক।
হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা সুদীপ্ত। ছোটবেলা থেকেই গান, নাচ, নাটক এবং ছবি আঁকার পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। বাবা-মা দু’জনেই খুব ভাল ছবি আঁকতে পারতেন, কিন্তু পেশাদার শিল্পী ছিলেন না কেউই। শিবপুরের বটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁদের। প্রকৃতির সঙ্গ করা ছাড়াও, প্রধানত স্কেচ করার উদ্দেশ্যে। বিদেশি শিল্পীদের মধ্যে ইংরেজ শিল্পী টার্নার এবং কনস্টেবলের ছবি দেখে বড় হওয়া সুদীপ্তর। ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যেও অনেকেই তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
নানা কারণে আর্ট কলেজে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পড়াশোনা করেছেন অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে। পরে এক সংস্থায় মার্কেটিং বিভাগে চাকরিরত অবস্থায় রঙের বিভাগে কাজ করতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে বহু আর্ট মেটিরিয়ালের সঙ্গে পরিচিতি হয় এবং কাজের ফাঁকে ছবি আঁকা চলতে থাকে। যদিও তাঁর স্কেচ করার অভ্যেস ছোটবেলা থেকেই। তার পরে চাকরি ছাড়লেন। সেই সময়ে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে সুদীপ্তর প্রথম একক প্রদর্শনী হয়, ২০২০ সালে। সারা জীবনের স্বপ্ন সফল হল তাঁর। এর পরে আর কাজ থেমে থাকেনি। কেভ ৩১-এ তাঁর ১১তম একক প্রদর্শনী হল, যার নাম ‘আর্থ অ্যান্ড ওয়াটার’।
রাতের তারাভরা আকাশ বা হিমালয়ের বিপুল ব্যাপ্তি দেখে প্রথমে শিল্পীর মনে জন্মেছিল একটা সশ্রদ্ধ ভয়। তার পরে যখন উপলব্ধি হয় যে তিনি নিজেও ওই বিশাল ব্যাপ্তিরই এক অংশ, তখন আবার সেই অনুভূতি থেকে জন্মায় প্রকৃতিপ্রেম এবং আদিশক্তির প্রতি চরম আকর্ষণ। প্রকৃতির নানা শক্তির যে প্রকাশ, যেমন বজ্র-বিদ্যুৎ, বন্যা, অগ্নি ইত্যাদি, মানুষ যুগে যুগে তাকেই রূপ দিয়েছে এবং তাদের ছায়াতেই তৈরি আমাদের আরাধ্য দেবদেবী। সেই ‘এক আদি অনন্ত’কে ধরার চেষ্টাই দেখা গেল সুদীপ্তর ছবিগুলিতে। সে কারণেই প্রদর্শনীর নাম, ‘আর্থ অ্যান্ড ওয়াটার’। এখানে যে ছবিগুলি দর্শক দেখতে পেলেন, সে সবই ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের কাজ। বেশ কিছু বড় কাজও ছিল প্রদর্শনীতে। একটি ছবির নাম ‘সেন্স অব দ্য সান’। হলুদের নানা টোনে প্রাকৃতিক দৃশ্য, ডুবন্ত সূর্যের আলো বেশ মজার।
অন্য দিকে, আর একটি ছবির নাম ‘স্টার্ট অফ আ ডন’। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের কাজ। এটায় সম্পূর্ণ অন্য এক মেজাজ ধরা পড়ে। পাহাড়ের আড়াল থেকে সূর্যোদয় হতে চলেছে। এই ছবিতে অ্যাকোয়ামেরিন এবং হালকা নীলের ব্যবহার। আকাশের আলোটা বেশ ধরেছেন শিল্পী।
অপর একটি ছবির নাম ‘আ স্ট্রিম অব লাইট’। এখানেও সেই আকাশের একটা বিশেষ আলোই দেখিয়েছেন তিনি। আরও একটি ছবির নাম ‘ব্লেসিংস’। এই ছবিটিতে প্রকৃতির অসীম একটা ভাব ভাল ভাবে ফুটিয়েছেন সুদীপ্ত। আলোটা যেন নেমে আসছে দৈবিক আশীর্বাদের মতো। তবে তরুণ শিল্পী সুদীপ্ত অধিকারীকে হয়তো ক্রমে অন্য কিছু বিষয়ও নিজের ছবিতে ধরতে হবে। না হলে এক সময়ে সীমাবদ্ধতায় বাঁধা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy