মডেল: নাইসা গোমস, অর্ণেশ চক্রবর্তী, ধ্রুব দ্বিবেদী
অনেক সময়েই দেখা যায়, বাইরের লোকের সামনে সন্তান গুটিয়ে যাচ্ছে। হয়তো বাড়িতে সে নেচে-গেয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বাইরের কারও সামনে তার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বার হয় না। এমনকি পাশের বাড়ির খুদে সদস্য আপনার বাড়িতে এলেও সে তার সঙ্গে খেলতে নারাজ। বরং নিজের খেলনা নিয়ে একাই মত্ত। এ সমস্যা কিন্তু খুব সাধারণ। এখন বেশির ভাগ বাড়িতেই মা-বাবা কর্মরত। সন্তান থাকে দাদু-দিদিমা বা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার জিম্মায়। বাচ্চার নিরাপত্তার জন্যই হয়তো তার বাড়ি থেকে বেরোনো বারণ। ফলে বারান্দার গ্রিলে বন্দি সে। তার বন্ধু বলতে টেডি বিয়ার, আইসক্রিমের গন্ধওয়ালা পুতুল বা বাড়ির দু’-একজন। এর বাইরের জগতের সঙ্গে সে সম্পূর্ণ অপরিচিত। সেই জগৎকেই তার সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব কিন্তু মা-বাবার। সন্তানের স্কুলজীবন শুরু হলে সে আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে মিশে বন্ধুত্ব করতে না পারলে পরবর্তী জীবনে একাকিত্বের শিকার হতে পারে। তাই গোড়াতেই অভিভাবককে দায়িত্ব নিয়ে তাকে সামাজিক করে তুলতে হবে।
নেতিবাচক মন্তব্য নয়
অনেক সময়েই দেখা যায় সন্তান লাজুক। বাইরের কারও প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। চারটে বাচ্চা একসঙ্গে খেললেও সে আলাদা এক পাশে বসে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মা-বাবার দায়িত্ব তাকে বাকিদের দিকে এগিয়ে দেওয়া। সেই সময়ে ‘ও কিছুতেই মিশতে পারে না’, ‘দ্যাখো, কেমন একা বসে রয়েছে’... এই ধরনের নেগেটিভ মন্তব্য সন্তানের সামনে করবেন না। বরং তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন, সে কি তাদের সঙ্গে খেলতে চায়? তাকে নিয়ে গিয়ে বাকি বাচ্চাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিন। এখানে নিজেকে সেতুর কাজ করতে হবে। আপনাকেই ওদের আর এক জন বন্ধু হিসেবে মধ্যবর্তী হতে হবে।
পারফর্ম করার চাপ দেবেন না
বাড়িতে সন্তান যতই ভাল গান, নাচ বা আবৃত্তি করুক, বাইরের লোকের সামনে তারা বেশির ভাগ সময়েই গুটিয়ে যায়। তখন তাদের জোর করা ঠিক নয়। বাড়িতে কেউ এলে বা সন্তানকে কারও বাড়িতে নিয়ে গেলেই তাকে নাচ বা গান করে দেখানোর চাপ দেবেন না। ওকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, সে নাচতে বা গাইতে চায় কি না! না চাইলে ওকে ওর মতো থাকতে দিন।
সন্তানকে উত্তর দিতে দিন
‘তোমার নাম কী?’ বা ‘তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?’ এই ধরনের প্রশ্ন সকলেই বাচ্চাদের করে থাকে। কিন্তু অনেক মা বাচ্চাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই উত্তর দিয়ে দেন। এতে সন্তানের আত্মবিশ্বাসে তো আঘাত লাগেই। আর সে ভেবে বসে যে, উত্তর দেওয়াটা তার কাজ নয়। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ জানালেন, ‘‘সন্তানকেই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিন। একটু অপেক্ষা করে দেখুন, সে উত্তর দেয় কি না। যদি উত্তর না দেয়, তাকে আপনি সাহায্য করতে পারেন। ‘তুমি তো জানো তোমার নাম, কী নাম বলো তো?’ এ রকম হাল্কা ভাবে তার কাছ থেকে উত্তরটা জেনে নিন। এতে সে-ও বুঝবে যে, তার প্রশ্নের উত্তর তাকেই দিতে হবে।’’
খেলতে দিন
সারা দিনে সকালে বা বিকেলে সন্তানের জন্য একটু সময় বার করতে হবে। তাকে সামনের মাঠে বা কোনও প্লে গ্রাউন্ডে নিয়ে আর পাঁচটা বাচ্চার মাঝে ছেড়ে দিন। দেখুন সে কী করে। প্রথম প্রথম হয়তো সে এক পাশে একাই দাঁড়িয়ে থাকবে। পছন্দের স্লিপের ধারেকাছেও যাবে না। কিন্তু কয়েকটা দিন গেলে সে নিজেই এগিয়ে যাবে খেলতে। ছুটির দিনে বন্ধুবান্ধব বা প্রতিবেশীদের বাচ্চাদের বাড়িতে ডাকতে পারেন। তাদের সঙ্গেও সখ্য তৈরি হবে।
আই কনট্যাক্ট জরুরি
বাচ্চার সঙ্গে কথা বলার সময়ে সে যাতে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে, সেটা অভ্যেস করান। এর জন্য তার পুতুলদের দিয়ে অভ্যেস শুরু করাতে পারেন। অপরিচিত কেউ বাড়িতে এলেও তখন ওর ভীতি কেটে যাবে।
সন্তানকে মিশতে দিন
অনেক বাবা-মা-ই সন্তানকে কাছছাড়া করেন না। হয়তো অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়েছেন। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে থাকলেন। ট্রেনে চড়ে ঘুরতে যাওয়ার সময়েও সন্তানকে মুঠোফোনে বন্দি করে নিজের চোখের সামনে বসিয়ে রাখেন। এতে ওর সোশ্যালাইজ় করার ইচ্ছেটাই তৈরি হয় না। বরং ওর সঙ্গে কেউ কথা বলতে এলে তাকে কথা বলতে দিন। তার কথার উত্তর দেওয়ার জন্য সন্তানকে সাহায্য করুন। আপনার চোখের সামনেই রাখুন। কিন্তু সকলের সঙ্গে মিশতে দিন।
মা-বাবাই উদাহরণ
সব বাচ্চার কাছেই তার মা-বাবাই উদাহরণ। সন্তান আপনাকে যেমন দেখবে, তেমনই শিখবে। তাই নিজেরাও একটু সোশ্যালাইজ় করুন। রাস্তাঘাটে, দোকানে আর পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলুন, সন্তানকেও এগিয়ে দিন। দেখবেন, সন্তানও ধীরে ধীরে মিশতে শিখবে।
এ রকম ছোট ছোট পদক্ষেপই সন্তানের বহির্জগতের ভীতি কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়; লোকেশন: হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy