Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Art exhibition

প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের ড্রয়িং

ছোটবেলায় টেলিগ্রাফে রথীন মিত্রের দ্বিমাত্রিক ড্রয়িং ভাল লাগত সন্দীপের। তারপর আফ্রিকান আমেরিকান আলফন্সো ডান তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন।

Painting Exhibition of Sandeep Chatterjee

কালিকলম: অ্যাকাডেমিতে সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

শমিতা বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫১
Share: Save:

অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের প্রদর্শনী ‘হেরিটেজ অব ইন্ডিয়া’ আয়োজিত হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালবাসতেন শিল্পী, কিন্তু প্রথাগতভাবে আঁকা শেখার সুযোগ হয়নি। সন্দীপ একজন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। অবসর নেওয়ার পরে ফিরে গিয়েছেন তাঁর পুরনো ভালবাসার কাছে।

ছোটবেলায় টেলিগ্রাফে রথীন মিত্রের দ্বিমাত্রিক ড্রয়িং ভাল লাগত সন্দীপের। তারপর আফ্রিকান আমেরিকান আলফন্সো ডান তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন।

Painting Exhibition of Sandeep Chatterjee.

কালিকলম: অ্যাকাডেমিতে সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

প্রচলিত দ্বিমাত্রিক অঙ্কনপ্রণালীকে অতিক্রম করে তাঁর সৃষ্টিগুলি ক্রমশ ত্রিমাত্রিক হয়ে উঠেছে। সন্দীপ তাঁর ছবির বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রাচীন ভারতবর্ষের বিস্ময়কর স্থাপত্য শিল্পগুলিকে। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের সাসেক্সে প্রদর্শিত হয় তাঁর চিত্রকলা। ২০১৯-এর নভেম্বর মাসে রামকৃষ্ণ ইনস্টিটিউট অফ কালচারে তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও গ্যালারি গোল্ড, আইসিসিআর এবং অ্যাকাডেমির বহু প্রদর্শনীতেই অংশগ্রহণ করেছেন।

অ্যাকাডেমিতে সন্দীপের প্রদর্শনীতে দেখা গেল বেশ কিছু পুরনো মন্দির, দুর্গ, গুরুদ্বার ইত্যাদির পেন অ্যান্ড ইঙ্ক ড্রয়িং। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের ছবির সামনে জলাশয়টিও যোগ করেছেন সন্দীপ। জলের উপরে মন্দিরের প্রতিচ্ছায়াটি দেখলে বেশ একটু সমাহিত হয় মন। এই ড্রয়িং নেহাতই একেবারে কালি কলমের ড্রয়িং নয়, আলোছায়ার ব্যাপারটিও বেশ রপ্ত করেছেন সন্দীপ এবং আলোছায়ার মাধ্যমে একটা মেজাজ নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন ওই গোল্ডেন টেম্পল-এর ছবিটিতে।

এরপর দেখা গেল পুরনো উত্তর কলকাতার একটি রাস্তার ছবি। কিন্তু ওই গলি রাস্তায় একদিকে যেমন হাতেটানা রিকশা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তার সঙ্গে ওই জায়গার যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তার‌ও প্রমাণ বহন করছে বাড়ির বাইরে এয়ারকন্ডিশনারের বহিরাংশ। শিল্পীর হাতে পার্সপেক্টিভের দক্ষতা লক্ষণীয়।

কিছু সংখ্যক দেবদেবীর মূর্তির ড্রয়িংও করেছেন সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একটি নৃত্যরত গণেশ মূর্তি। খুবই জীবন্ত এটি। নিখুঁত অধ্যবসায় লক্ষ করা যায় এই মূর্তির ড্রয়িংয়ের নেপথ্যে। তিনি যে এক একটি ড্রয়িং করতে ৩০-৪০ ঘণ্টা সময় বিনিয়োগ করেন, সেটার কারণ বুঝতে অসুবিধে হয় না। মহাবলীপুরমের ছবিটিতে কড়া রোদের ভাবটা ভাল ফুটেছে। সম্পূর্ণ বাস্তববাদী কাজ, কিন্তু তাকেও এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সন্দীপ যে, সামনে বাঁ-দিকের একটি বড় পাথরের টুকরো, যেটি হতে পারে শিবলিঙ্গ, সেটির একটি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে।

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ছবিটিতে সন্দীপ চাঁদের আলোয় আলোকিত মন্দিরের চূড়া এবং উপরের অংশটি এঁকেছেন। আলোছায়ায় একট নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে বটে কিন্তু একেবারে সামনের গাছগুলিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখতে গিয়ে একটু ফ্ল্যাট কালো কালি ব্যবহার করেছেন শিল্পী, যেটা হয়তো অন্য ভাবে করা যেতে পারত।

রাজস্থানের রামগড় শেখাওয়াতীর ছবিটি একটু অন্য ভাবে করার চেষ্টা করেছেন সন্দীপ। সরু সরু পেনের লাইনে না করে কলমের আঁচড়ে সম্পন্ন করেছেন। অন্য স্বাদের ছবি। ওই রকম কলমের আঁচড়ে করা আরও অন্য ছবিও প্রদর্শনীতে ছিল।

অবসরপ্রাপ্ত সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় অশীতিপর শিল্পী। দিনে তিন ঘণ্টা ছবি আঁকেন। ছবির মূল কাঠামো এবং পারস্পেক্টিভ ওই স্পটেই করে থাকেন এবং পরে নিজের স্টুডিয়োয় প্রায় ৩০-৪০ ঘণ্টা কাজ করেন সেই ড্রয়িংয়ের উপরে। তবেই যে তাঁর ছবিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়, তা এই প্রদর্শনীতেই স্পষ্ট।

অন্য বিষয়গুলি:

Art exhibition Art
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy