শিল্পী তৌসিফ হকের একটি একক প্রদর্শনী ছবি ও ঘর গ্যালারিতে হয়ে গেল সম্প্রতি। নাম, ‘মেমোরিজ় অব আ রিভার’।
বর্ধমান জেলার ছেলে তৌসিফ হক। ছোটবেলায় তাঁকে দামোদর পেরিয়ে গ্রামে পৌঁছতে হত বা ফিরতে হত। মানুষ, জীবজন্তু, মালপত্র... দামোদর পেরিয়ে যাতায়াত করতে দেখেছেন অনেক কিছুই। এ ভাবেই জল এবং নদের পারের বালি ঘাঁটতে ঘাঁটতে দামোদরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, ক্রমশ ভালবাসায় পরিণত হয়। প্রদর্শনীতে তৌসিফ হকের ৪৯টি ছবি আছে।এই সব ক’টি ছবিতেই দামোদরের আশপাশের গ্রামের ছবি, সেখানকার লাল ফড়িং, নদী পেরিয়ে চলে যাওয়া একটি নৌকোয় একলা মাঝি এবং নানা মরসুমে দামোদরের অভাবনীয় সব রূপ তুলে ধরেছেন শিল্পী।
‘মেমোরিজ় অব আ রিভার’ প্রদর্শনীতে শিল্পীর ছেলেবেলার স্মৃতি থেকে উঠে আসা বর্ষার দামোদরের ভয়ঙ্কর রূপ, আকাশ কালো করা মেঘের সারি, শরৎ কালের মিষ্টি আলো আর মাঠজোড়া কাশফুল, হেমন্তে সবুজ-নীলে প্রকৃতির মাতোয়ারা অবস্থা ছাড়াও নানা ঋতুতে দামোদরের রূপ পরিবর্তন খুব ভাল ভাবে ধরা পড়েছে। শুধু দামোদরের রূপই নয়, দামোদরের পার্শ্ববর্তী দু’দিকের জমিতে কত স্বপ্ন, কত মানুষ, তাঁদের জীবনযাত্রা, বকের দলের মাছ শিকার, কোনও সময়ে ধ্বংসের বীভৎস চেহারা... ইত্যাদি সবই অগাধ মমতা দিয়ে এঁকেছেন তৌসিফ হক। প্রত্যেকটি ছবির ফ্রেমেই তৌসিফের নিসর্গ, প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা, দামোদরের সঙ্গে অগাধ সৌহার্দ্য স্পষ্ট ভাবে লক্ষ করা যায়।

শিল্পী তৌসিফ হকের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।
প্রদর্শনীতে সাদাকালোয় করা বেশ কিছু ছবি আছে। এ ছাড়া রঙিন ছবিও দেখা গেল। কাগজে কখনও জলরঙের ব্যবহার, কখনও কালির ব্যবহার এবং তার উপরে গোয়াশের কাজ লক্ষণীয়। বাংলায় শরৎ কালের ছবিগুলোয় জলরঙের উপরে কাশফুল গোয়াশে করেছেন শিল্পী। জলরং, কালি এবং গোয়াশের কাজে তৌসিফ হকের পারদর্শিতা চোখে পড়ে এই প্রদর্শনীতে।
শিল্পীর কথায় জীবন যে রকম বহমান, নদীও ঠিক একই ভাবে বয়ে চলে। কখনও থামে না। দামোদরকে ‘বাংলার দুঃখ’ নাম দেওয়া হয়েছিল এক সময়ে। সে বহু পুরনো গল্প। দামোদরের সেই প্রাচুর্য নেই, রূপও হয়তো আর নেই। এখন সে অতি সাধারণ এক নদ। কিন্তু তৌসিফ হক যেহেতু ওই জলধারা ঘিরেই বড় হয়েছেন, তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখেছেন, খানিকটা সেই জন্যই দামোদর নদের প্রতি তাঁর অগাধ প্রেম দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন নিজের ছবিগুলি। তাঁর প্রদর্শনীর ছবিগুলি এই কারণেই এত জীবন্ত বলেমনে হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)