Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Art Exhibition

অচেনা এই ভুবন মাঝে

২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি একক প্রদর্শনী করেছেন শিল্পী সুদীপ্ত অধিকারী। দলীয় প্রদর্শনী করেছেন প্রায় একুশটি।

An image of the art

কালিকলম: অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শিত সুদীপ্ত অধিকারীর কাজ —ফাইল চিত্র।

শমিতা বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৮:০৭
Share: Save:

সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে শিল্পী সুদীপ্ত অধিকারীর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি একক প্রদর্শনী করেছেন সুদীপ্ত। দলীয় প্রদর্শনী করেছেন প্রায় একুশটি। দিল্লি, মুম্বই, পুণে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্যালারিতেও তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত ‘ইঙ্ক হার্ট’ শীর্ষক প্রদর্শনীটিকে তিন ভাবে ভাগ করেছিলেন সুদীপ্ত। প্রথমে দেখা গেল চারকোলের বিভিন্ন ধরনের কাজ। তার পরে চারকোল এবং কালিতুলির মিশ্রমাধ্যমের নিসর্গ চিত্র। একেবারে শেষে মিশ্রমাধ্যমে অবয়বধর্মী কাজ।

প্রদর্শনীর প্রথম ছবিটিতেই দেখা গেল পিছনে উঁচু পাহাড়, তার পরে সমতলভূমি এবং সামনে জল। পুরোটাই চারকোলের কাজ। ছবিটির নাম ‘ইনফাইনাইট’। এই চারকোলটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি উইলো গাছের শুকনো ডাল পুড়িয়ে তৈরি। শিল্পী সাধারণত এই চারকোল দিয়েই প্রাথমিক স্কেচটা করেন। কেউ কেউ এতেই ছবির মূল বিন্যাসটিও এঁকে ফেলেন। তার পরে ওই ড্রয়িং ঝেড়ে বার করে বা মুছে ফেলে তার উপরে অন্য মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব। এখানে কিন্তু সুদীপ্ত ওই সরু চারকোলের কাঠি দিয়েই সম্পূর্ণ ছবিটি এঁকেছেন। বেশ কিছুটা গঠনবিন্যাস বা টেক্সচার পেতেও সক্ষম হয়েছেন।

আরও একটি চারকোলের কাজ এই প্রদর্শনীতে দেখা গেল, যেটি বেশ আকর্ষক। সেটির নাম ‘সলিটারি’। পাইন বনের মাঝে সরু খুঁটির উপরে তৈরি দু’টি ঘর দেখা যাচ্ছে, অনেকটা ওয়াচ টাওয়ারের মতো। এটি সাধারণ মোটা চারকোলে করা কাজ। এই ঘর দু’টি যেন জঙ্গলের মধ্যে ঘটে যাওয়া কত কিছুর সাক্ষ্য বহন করছে, নীরবে।

তৃতীয় ছবিটিতে শিল্পী ব্রাশ অ্যান্ড ইঙ্ক এবং চারকোলের মিশ্রমাধ্যমের কাজ রেখেছেন। কালিতুলির কাজের দক্ষতা এখানে লক্ষণীয়। কোথাও কাগজ ছেড়ে দিয়েছেন, আবার কোথাও হালকা হাতে তুলি চালিয়েছেন এবং তারপর গভীরতা আনতে বেশ গাঢ় কালো রঙের কাজ করেছেন। ছবিটির নাম ‘এনলাইটেনড’।

নিসর্গপ্রীতি খুব ছোটবেলা থেকেই জন্মেছিল সুদীপ্তর মধ্যে। বাড়ি ছিল বটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে। দীর্ঘ সময় ধরে ওখানে যাতায়াত করেছেন শুধু প্রকৃতির সঙ্গ করবেন বলে। এবং অবশ্যই স্কেচ করবেন বলে। স্কুল-কলেজ থেকে আঁকাআঁকি শুরু। শেষে ছবি আঁকার প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে বছর পাঁচেক আগে চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর শিল্পীর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলার শিক্ষা পাননি। কারও কাছে শিল্পশিক্ষা হয়নি বলেই হয়তো ওঁর ছবিতে বিশেষ কারও প্রভাব দেখা যায় না। প্রকৃতিপ্রেমিক এই শিল্পী নিসর্গের মধ্য দিয়েই যেন তাঁর কাজে অনেক কিছু তুলে আনতে পারেন, এক অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিতে।

বাঁকুড়া জেলার বিহারীনাথ পাহাড় শিল্পীর খুব প্রিয় জায়গা। তাঁর ‘বিহারীনাথ’ ছবিটি বেশ মনোরম। কালিতুলির কাজ। কিছুটা জলরঙের মতো কাগজ ছেড়ে করা। হালকা রং ধুয়ে দূরত্ব এনেছেন এবং সেখানেই ছেড়ে দিয়েছেন সাদা কাগজ, মন্দিরের শিখর দেখাতে গিয়ে। আর সামান্য লালের ছোঁয়া গাছের গোড়ায়।

এর পর আসা যাক ‘কিংশিপ’ নামের ছবিটিতে। সুদূর উত্তরাখণ্ডের মুন্সিয়ারির ছবি। বরফাবৃত পর্বতশিখর সব কিছু ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, যেন নিজের প্রাধান্যের অহঙ্কার প্রকাশ করছে। চতুর্দিকে বরফ এবং হিমেল হাওয়ার অনুভূতি শিল্পী যেন নিয়ে এসেছেন এই কালিতুলির সুন্দর কাজটিতে।

এ বারে দু’টি অবয়বধর্মী কাজের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমটি ‘ইনার সাইড’। সাধারণ মোটা সফ্ট চারকোলের কাজ। এক নগ্ন নারীকে পিছন দিক থেকে দেখা যাচ্ছে। খুব স্বল্প চারকোল স্ট্রোকে ভাবটি যথাযথ ফুটিয়েছেন শিল্পী। দ্বিতীয়টি কালিতুলির কাজ, নাম ‘ফেয়ারি টেল’। এখানেও এক নগ্ন নারী শায়িত অবস্থায় জেগে, যেন রূপকথার স্বপ্ন দেখছে। নিজেকে ভাবছে পরি। এই কাজে শিল্পী বিভিন্ন ঘনত্বে ব্যবহার করেছেন কালো রং এবং তার সঙ্গে সরু তুলির সামান্য ক’টি লাইন। কাজটি বেশ আকর্ষক। খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বক্তব্য বর্জন করে ছবির মূল কথা বা ভাবটি স্বল্প আয়াসেই প্রকাশ করা শিল্পী সুদীপ্ত অধিকারীর কাজের বিশেষত্ব। এই প্রদর্শনীর কাজগুলিতে এই সারমর্মই উঠে এসেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy