E-Paper

কয়লাখনির ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য

কোলিয়ারির দৃশ্য মানুষকে অনেক গভীরে নিয়ে যায়, ভাবায়। সাধারণ মানুষ হয়তো কয়লাখনির বুকের কালো পাঁজরগুলি কখনও স্বচক্ষে দেখেননি। সেটিই অনন্য রূপে, সুন্দর করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন সুমন।

An image of an art

রুদ্ররূপ: সিমা গ্যালারিতে আয়োজিত সুমন চন্দ্রের প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম। ছবি সৌজন্য: সিমা গ্যালারি, কলকাতা।

শমিতা বসু

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ০৮:২৭
Share
Save

গত বছর সিমা পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুমন চন্দ্র মেদিনীপুরের ছেলে। তাঁর চিত্রকলার প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে। সিমা গ্যালারিতে শিল্পীর প্রদর্শনী ‘সাইলেন্ট ভিশন’ চলবে ১৯ অগস্ট পর্যন্ত। গ্যালারির ডিরেক্টর রাখি সরকার নিজে যত্ন সহকারে শিল্পীর কাজগুলি সাজিয়েছেন। তাঁর অনবদ্য ভাবে কিউরেট করা প্রদর্শনীটি প্রশংসার্হ।

সুমন পিতৃসূত্রে কয়লাখনির ব্যবসাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন ছোটবেলায়। খনির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য খুবই আকর্ষণ করত তাঁকে। সেই সৌন্দর্য রঙে-রেখায় ধরে রাখার ইচ্ছেটাও অল্প বয়সেই জেগেছিল তাঁর মনে। এ রাজ্য ছাড়াও বিহার এবং আরও অন্যান্য রাজ্যের একাধিক কয়লাখনি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন শিল্পী। ছোটবেলায় ছিল মুগ্ধতা, আর বড় হয়ে তিনি বুঝতে শুরু করলেন যে, এক-একটি খনি তার আশপাশের মানুষের উপরে আসলে ঠিক কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কী ভাবে খনি অঞ্চলের চারপাশের মানুষের জীবন ধীরে ধীরে বিষাক্ত হতে থাকে। আর কখনও কয়লাখনিতে আগুন লেগে গেলে আশপাশের জমি-জায়গা, পশুপাখি এবং মানুষের অবস্থা কতখানি অসহায় এবং মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে, তা-ও তিনি দেখেছেন। সে আগুন জ্বলেই চলে, ধীর গতিতে, বছরের পর বছর। ফুটিফাটা করে দেয় চারপাশটা আর গ্রাস করে নেয় মানুষের সব কিছু।

এই প্রদর্শনীতে সুমন চন্দ্র মূলত কয়লাখনির ছবিই এঁকেছেন। অনেক ছবিতেই আমরা দেখতে পাই, কয়লাখনির ভিতরের স্তরবিন্যাস। নিজে খনির নীচে নেমে সবটা দেখেছেন বলেই আঁকতে পেরেছেন এত বিশদে। শুধু খনিই নয়, তার চারপাশের জমিজমা, গ্রামগঞ্জে মানুষের জীবনযাত্রার ছবিও এঁকেছেন। কিন্তু এগুলি ঠিক সাধারণ ল্যান্ডস্কেপ বা ভূদৃশ্যের পর্যায়ে পড়ে না।

কোলিয়ারির এই সব দৃশ্য মানুষকে অনেক গভীরে নিয়ে যায়, ভাবায়। সাধারণ মানুষ হয়তো কয়লাখনির বুকের কালো পাঁজরগুলি কখনও স্বচক্ষে দেখেননি। সেটিই অনন্য রূপে, সুন্দর করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন সুমন। অনেক ছবিরই নেপথ্যে গোলাপি রঙের গ্রাফের গ্রিড, শিল্পীর হাতে করা। সেখানে লাভ-ক্ষতির সীমানা দেখানোর প্রয়াস। তার উপরে স্বাভাবিক খনিজ পদার্থের গুঁড়ো ব্যবহার করে (যেমন কয়লার গুঁড়ো, মাটি ও মাটির গুঁড়ো, ইটের গুঁড়ো) এবং অ্যাক্রিলিক রং, চারকোল এবং কালি-কলম অসম্ভব মৌলিক ভাবে ব্যবহার করে তিনি ছবিগুলি এঁকেছেন। এগুলির অপরূপ বর্ণচ্ছটা দর্শককে তাক লাগিয়ে দেয়। গত বছর যে ছবিটির জন্যে সুমন সিমা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন, সে ছবিটিও প্রদর্শনীতে আছে, যা একান্ত ভাবে দর্শনীয়। ছবিটির নাম, ‘নিয়মিত অবাধ্যতা’।

কয়লাখনিতে আগুন লেগে যাওয়ার কয়েকটি আলোকচিত্রও রাখা আছে প্রদর্শনীতে। ভয়ঙ্কর সুন্দর বলতে যা বোঝায়, এ যেন ঠিক তাই। শিল্পী অবশ্যই ওই আলোকচিত্রর উপরে নিজেও কাজ করেছেন কালিতুলিতে। সমস্তটা মিলে অদ্ভুত সৌন্দর্যময় হয়ে উঠেছে কোলিয়ারিতে আগুন লাগার সেই দৃশ্যগুলি। ছবিগুলির নাম দিয়েছেন, ‘কাজ চলছে ১’ এবং ‘২’। সুমন নিজের চোখে দেখেছেন, কতখানি ভয়ঙ্কর ওই আগুন লাগার পরিণতি। একটি ছবিতে কচি সবুজ গাছ ক্রমশ উত্তপ্ত হাওয়ায় ঝলসে যাচ্ছে এবং কালো পোড়া গাছে পরিণত হচ্ছে... সেটাও দেখিয়েছেন শিল্পী। এই কারণেই কয়লাখনির সৌন্দর্য এত ভয়ঙ্কর।

আরও একটি ছবিতে কাগজে কয়লার গুঁড়ো এবং জলরঙের মিশ্রণে খুব সহজ-সরল ভাবে খনির মূল কাঠামোটা দেখিয়েছেন শিল্পী। তার সঙ্গে রেখেছেন একটি কয়লার ভাস্কর্য। এই জোড়া ছবি এবং ভাস্কর্যটির নাম রেখেছেন ‘স্থায়ী’। এ ছাড়াও অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে, ‘পেলবতা’ বলে একটি ছবি। চারকোল, কয়লা, কালিতুলির ব্যবহার করেছেন কাগজে। এতে যেন আগুন নিভে যাওয়ার পরে খনির ধোঁয়া-ওঠা নিশ্চিন্ততার রূপটি ধরার প্রচেষ্টা চোখে পড়ে।

কয়লাখনির অপব্যবহার যে ভাবে পরিবেশ দূষণ করতে পারে এবং করেও থাকে, তার বেশ কিছুটা সংশোধন করা বা তাকে ত্রুটিমুক্ত করা সম্ভব বলে শিল্পীর ধারণা। সম্পূর্ণ ভাবে না হলেও বেশ কিছু অংশে তো বটেই। তাতে পরিবেশগত ভারসাম্য যেমন বজায় রাখা যাবে, তেমনই প্রকৃতি, পশুপাখি এবং কোলিয়ারিতে কাজ করা শ্রমিকরাও অনেকটাই নিরাপদে থাকতে পারবেন। তরুণ শিল্পী এই সমাজ সচেতনতাকে মূল মন্ত্র করে দর্শকের বোধ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তাঁর ছবিতে... সব রকমের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে। বয়সে তরুণ শিল্পী সুমনের কাজগুলি তো বটেই, পাশাপাশি এই সচেতনতাও প্রশংসনীয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CIMA Gallery Art artist Art exhibition Coal Mines

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।