গুজরাতি ভাষায় ‘তেরভা না তৌকা’ কথার অর্থ হাতের কাজ। আঙুলের জাদুগরি। দি ইন্ডিয়া স্টোরি এমনই একটা মাধ্যম যেখানে শিল্পীর হাতের জাদু সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়, ছুঁয়ে দেখা যায়, ঘ্রাণ নেওয়া যায়। রাজকুটির চত্বর জুড়ে কোথাও জয়পুরের কারিগরি মুগ্ধ করে, তো কোথাও কচ্ছ থেকে আনা শিবোরি, আজরখ, বাঁধনি দেখে আন্দাজ করে নেওয়া যায় এর পিছনের পরিশ্রমের। এক দিকে লখনউয়ের শৈলী চোখ টেনে নেয়, তো অন্য দিকে ডেনিমের টপ-করসেট-ব্যাগের ট্রেন্ডি লুক চমকে দেয়।
গোটা দেশের শিল্পসংস্কৃতির সহাবস্থানই দি ইন্ডিয়া স্টোরির বৈশিষ্ট্য। ঠিক দশ বছর আগে নেওটিয়া আর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে যে জার্নি শুরু হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে তা যে এতটা বিস্তার করবে সেটা নিজেও ভাবেননি মধু নেওটিয়া। দশ বছরের চলার পথ ফিরে দেখতে গিয়ে তিনি নিজেও আবেগে আপ্লুত। “প্রতি বছর আমাদের কোলাবরেটরের সংখ্যা বেড়েছে। সারা দেশের সেরা জিনিস যেন আমাদের এখানে আসে, সেই দিকে বরাবর গুরুত্ব দিয়েছি।”
দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফ্যাশন ডিজ়াইনার অমিত অগরওয়ালের একটি শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল এ বার। এই প্রথম কলকাতায় শো করলেন অমিত। ভারতীয় ঐতিহ্যকে কেমন ভাবে আন্তর্জাতিক দরবারে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হয়, তার অনন্য উদাহরণ ছিল এই শো। মূলত বেনারসি, জামেবর, সিল্কের তৈরি পোশাক দিয়ে তাঁর মডেলদের সাজিয়েছিলেন তিনি। পোশাকশিল্পীর সিগনেচার তাঁর ড্রেপিং স্টাইল। গোটা বেনারসি এমন ভাবে স্টিচ করেছেন যে তাতে ওয়েস্টার্ন কাটের এক অনবদ্য স্টাইল ফুটে উঠেছে। নজর কেড়ে নেয় মডেলদের শিরোসাজ।

ছবি: দেবর্ষি সরকার।
রাসমঞ্চ, রঙ্গমঞ্চ, ড্রিপ লেন জুড়ে ফ্যাশন, লাইফস্টাইলের সম্ভার। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, জয়পুর, আমদাবাদ থেকে নিজেদের পসরা নিয়ে এসেছেন শিল্পীরা। এখানে খানিকক্ষণ সময় কাটালেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়, এখনকার ট্রেন্ড। আলাদা করে নজর কেড়ে নেয় ক্যাল ক্যালকাটার গয়নার আধুনিক প্যাটার্ন। এমবেলিশড বা রং দিয়ে কারুকাজ করা স্নিকার্স এখন বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই শাড়ির সঙ্গে স্নিকার্স পরতে পছন্দ করেন। দ্য শাড়ি স্নিকার্স-এর স্টোরে জুতোর সম্ভার চোখ টেনে নিতে বাধ্য।
প্রদর্শনীর আর এক দিকে ছিল ফুড কোর্ট। আফরা কিচেন, বার্মা বার্মা, শিকোরা, ওয়্যারহাউস কাফের মতো রেস্তরাঁ ছিল স্বাদসফরের সঙ্গী। দি ইন্ডিয়া স্টোরির আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে ফার্মার্স মার্কেট। দশ বছর উপলক্ষে এ বারের স্টলের সংখ্যা আরও বেশি। অর্গ্যানিক ফুড, হার্বস থেকে বিউটি প্রডাক্ট... কোনও স্টলে আবার ঘর সাজানোর সুন্দর সামগ্রী। আলাদা করে বলতে হয় আর্থ অ্যান্ড আস, গুমটির শৌখিন সামগ্রীর কথা।
হরেক পসরার মেলায় খেই হারিয়ে যায় শুরু আর শেষের। রেশ রেখে যায় দেশের শিল্পশৈলীর খণ্ডচিত্র।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)