Advertisement
E-Paper

কিরণ-মাখা রঙ্গমঞ্চের ক্লান্ত নায়ক দ্বিজেন্দ্রলাল

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে হাজারো বিতর্ক। তবে তা ছাড়িয়ে রয়ে গিয়েছে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, মনন, বন্ধুত্ব।সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে বসন্তোৎসব। আবির বার করে রবিবাবুকে আচমকা মাখিয়ে দেন দ্বিজুবাবু।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share
Save

মজলিশ বসেছে তাঁর বাড়ির নীচে ইভনিং ক্লাবে। হাসিঠাট্টা, গল্পগাছা, পান-ভোজনে মত্ত সবাই। মত্ত তিনিও। বন্ধুরা তাঁকে একটু পরেই জোরাজুরি করতে শুরু করবেন গান গাওয়ার জন্য। দু’-একবার ঘাড় নাড়িয়ে ‘না’ বলার চেষ্টা করবেন তিনি এবং পরমুহূর্তে ধরবেন গান। মাঝেমধ্যে উঠে নেচে নেচেও গাইবেন। কী সেই গান? ‘মলয় আসিয়া কয়ে গেছে কানে প্রিয়তম তুমি আসিবে’? না, মোটেই নয়। তবে কি ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’? কখনওই নয়! তা হলে নিশ্চয়ই ‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই’? নাহ। মাঝেমধ্যে এ সব গান যে এ আসরে হয় না, তা নয়। যখন তিনি নতুন গান বাঁধেন, তখন শোনান বন্ধুদের। তার বাইরে সান্ধ্য আসরে এ সব গানের চাহিদা বেশ কমই। এখানে মূলত শুনতে চাওয়া হয় তাঁর হাসির গান। যেমন পরিহাসছলে ‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসি/ তুমি leisure মাফিক বাসিয়ো’। এ সব গানেই মেতে ওঠেন সবাই।

এখানে আরও একটি বিষয় ঘটে থাকে। কান ভাঙানো। আসরের কুশীলবেরা নিয়ম করে এঁর-ওঁর নামে নানা ‘শুদ্ধ সমাচার’ সরবরাহ করে থাকেন তাঁর কাছে। তিনি শোনেন এবং বাছবিচার না করে সবই বিশ্বাস করেন! কারণ, তাঁর চরিত্র-প্রকৃতি বিশ্বাস করাই। আর যাঁরা এই জরুরি কর্মটি সম্পাদন করে থাকেন ধারাবাহিক ভাবে, তাঁদের লাভ একটিই। তাঁর প্রতি বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠে এই আসরের খানাপিনার নিত্য ভাগ পাওয়া।

এই আসর-কর্ণ সূত্রেই তিনি কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে ফেলেছিলেন একদা তাঁর পরম সুহৃদের বিরুদ্ধে। শুধু বিরোধিতা করাই নয়, শুধু অশ্লীলতার অভিযোগ তোলাই নয়, বন্ধুকে ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন জীবনের শেষ প্রহসন ‘আনন্দ বিদায়’। সে নাটক অভিনয়ের সময়ে প্রবল দর্শক-প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল গোপনে রঙ্গমঞ্চের পিছন দিয়ে।

এই তিনিই একটি নাটকে লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত সংলাপ, ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকের নাম বাঙালি ভুলে গেলেও মনে রেখেছে প্রবচনে পরিণত হয়ে যাওয়া সংলাপটিকে, রচয়িতার নাম না মনে রেখেই— ‘সত্য সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ!’

প্রতিভা এবং অতঃপর

সেই উজ্জ্বল সময়কালে বহুমুখী প্রতিভা বাংলা বড় একটা কম দেখেনি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাদ দিলে দ্বিতীয় নামটি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বয়সে দু’বছরের ছোট দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। সেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ই রবীন্দ্রবিরোধী হয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরই কান-ভাঙানিয়া কৃৎকুশলতায়! পরে যার জন্য তাঁর জীবনীকার দেবকুমার রায়চৌধুরীর কাছে অনুশোচনাও করেছেন। বাবার অনুশোচনার কথা উঠে এসেছে ছেলে দিলীপকুমার রায়ের লেখাতেও।

এ লেখার শুরুতেই অনাকাঙ্ক্ষিত অথচ জরুরি সেই বিতর্ককে টেনে আনার কারণ একটিই। এই বিষয়টিকে নিয়েই একটা বড় সময় বাঙালির সাহিত্যলোক মুখর থেকেছে এবং শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টি ও তাঁর ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ বা ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’ গানের মতো কয়েকটিকে মনে রেখে তাঁকে বেমালুম ভুলে গিয়েছে! অথচ তাঁর রচনা, তাঁর পুত্রের লেখা কিংবা রবীন্দ্রনাথের রচনা এবং রবীন্দ্র-দিলীপ চিঠিপত্র ছত্রে ছত্রে এই দাবিই করে যে, তাঁকে বিস্মৃত হওয়ার অর্থ আত্মবিস্মরণই! এই সূত্রেই এ বিষয়ে আবারও ফিরতে হবে।

শ’পাঁচেক গান রচনা করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। প্রেমের, নাটকের, হাসির ও স্বদেশি গানই মুখ্য। এর মধ্যে সুর পাওয়া যায় মাত্র ১৩২টি গানের। নাটক লিখেছেন ২১টি। ইতিহাসাশ্রিত, প্রহসন, সামাজিক, পুরাণাশ্রিত। গান-কবিতা মিলিয়ে কিছু গ্রন্থ। ১৯০৫ সালে গড়ে তুলেছিলেন সাহিত্যসভা ‘পূর্ণিমা মিলন’ বা ‘সাহিত্যিকী পৌর্ণমাসী সম্মিলন’। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকা প্রকাশের ভাবনা আসে তাঁরই মাথায়।

এ সবের পাশাপাশি ছিল এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। যা তাঁকে বাঁচিয়েছে এবং মেরেওছে। বিলেত থেকে কৃষিবিদ্যার ডিগ্রি নিয়ে আসা দ্বিজেন্দ্রলাল হয়ে উঠলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে পদে পদে তাঁর স্বাধীনচেতা মন এমন এমন কাজ করতে শুরু করল যে, অচিরেই হয়ে উঠলেন কর্তৃপক্ষের চক্ষুশূল। মেদিনীপুরের সুজমুঠা পরগনার সেটলমেন্টের দায়িত্বে থাকাকালীন ঘটিয়ে বসলেন এক কাণ্ড। কৃষকদের খাজনা দিলেন কমিয়ে। রক্তচোখ দেখালেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। আর উল্টো দিকে কৃষকেরা তাঁকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বদলে ডাকতে শুরু করলেন ‘দয়াল রায়’ নামে। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হল। ছোটলাট এলেন পরিদর্শনে। বাঙালি কবি ছোটলাটকে কী বলেছিলেন? তাঁর ভাষায়— ‘আইন বিষয়ে তাঁহার অনভিজ্ঞতা বুঝাইয়ে দেই’। ফলে যা হওয়ার, তাই হল! বিষয় গড়াল আদালতে। কোনও ক্রমে চাকরি বাঁচলেও পদোন্নতি রুদ্ধ হল। আর দ্বিজেন্দ্রলাল খুশি রইলেন এই ভেবে যে, ‘নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করিলেও সমস্ত বঙ্গদেশব্যাপী একটি উপকার সাধিত’ হয়েছে। ইংরেজের চাকরি তাঁর ভাষায় ছিল ‘দাস্য’। শেষ দিকে মাথায় চেপে বসেছিল স্বেচ্ছাবসরের ভাবনা।

কিন্তু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটই কি হতে চেয়েছিলেন তিনি? সম্ভবত নিজেও জানতেন না, কী হতে চেয়েছিলেন। কৃষ্ণনগরে পড়াশোনার পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে এমএ। পরে ছাপরায় সামান্য কিছু দিনের শিক্ষকতা। তার পর মাথায় চাপল কৃষিবিদ্যা পড়ার নেশা। বাড়ির সঙ্গে তুলকালাম করে চলে গেলেন বিলেত। সেখানে অর্জন করলেন কৃষিবিদ্যায় তিনটি ডিগ্রি। কিন্তু ফিরে এসে দেখলেন, তাঁকে একঘরে করা হয়েছে কালাপানি পেরোনোর জন্য। তত দিনে মা-বাবা প্রয়াত। কাজেই, জীবিকার সন্ধান তাঁর জরুরি ছিল।

রক্তে পদাবলি, শোণিতে তরবারি

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় যখন জন্মালেন, ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই, তখন তাঁদের বাড়ি নবরত্নসভা। বাবা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের দেওয়ান এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নামকরা গায়ক, লেখক। মা প্রসন্নময়ী অদ্বৈত আচার্যের বংশধর। দাদা-বৌদিরাও সাহিত্যব্রতী। তাঁদের পরিবার বিদ্যাসাগর, রামতনু লাহিড়ী, দীনবন্ধু মিত্রের মতো মানুষের স্নেহধন্য। দীনবন্ধুর ‘সুরধনী’ কাব্যে দ্বিজেন্দ্রলালের বাবাকে ‘অমাত্য-প্রধান’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। দ্বিজেন্দ্রলালের ঠাকুরদা মদনগোপাল রায়ের নাম পাওয়া যায় ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে, যেখানে রায়গুণাকর মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার বর্ণনা দিচ্ছেন ‘রায় বকসী মদনগোপাল মহামতি’। এই মদনগোপাল রায় ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রের সেনাপতি। এই সব পরিচয় দু’টি ইঙ্গিত দেয়। দ্বিজেন্দ্রলালের পরিবার অভিজাত। আর তাঁর পূর্বসূরিরা বৈষ্ণবরস এবং রাজসিক রসে জারিত ছিলেন। হয়তো সেই কারণেই দ্বিজেন্দ্রলালের একই সঙ্গে কীর্তন শুনলে নাচতে-কাঁদতে ইচ্ছে করত এবং তরবারি-ঝঙ্কৃত ঐতিহাসিক নাট্যরচনার দিকেও টেনে নিয়ে যেত।

ক্ষাত্র রসকে পাশ কাটাতে অবশ্য শুরু করেছিলেন তাঁর বাবাই। জীবিকার বাইরে তাঁর মন নিবদ্ধ ছিল সুর-শব্দে। তাঁর রচিত ‘গীতমঞ্জরী’, বাংলা-হিন্দি গান, ‘আত্মজীবন-চরিত’ সেই আভাসই দেয়।

কোন পরিবেশে বড় হয়ে উঠছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল? ‘আমার পিতা একজন সুবিখ্যাত গায়ক ছিলেন। প্রতুষ্যে উঠিয়া তিনি যখন ভেঁরো, আশোয়ারি ইত্যাদির সুর ভাঁজতেন, আমি অন্তরালে থাকিয়া শুনিতাম।’ ছ’-সাত বছর বয়সে নিজের চেষ্টায় হারমোনিয়াম শিখে যাওয়া এবং ‘১২ বৎসর বয়ঃক্রম হইতে আমি গান রচনা করিতাম’। সুধীর চক্রবর্তীর গবেষণায় এটিও পাওয়া যায় যে, দাদার ফরমায়েশে ন’বছর বয়সেই তাঁর মৌলিক গান রচনায় হাতেখড়ি। এই গানগুলি তাঁর ‘আর্য্যগাথা’র প্রথম ভাগে প্রকাশিত হয়েছিল পরে।

পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা ও গান রচনা চলছিলই। এবং চলছিল মার্গসঙ্গীতে অবগাহন। বিলেতে থাকাকালীন ‘লিরিকস অব ইন্ড’ নামে ইংরেজিতে লিখে ফেললেন একখানা কাব্যগ্রন্থ। প্রথম প্রথম বিলেতি সঙ্গীত তাঁকে ধাক্কা দিলেও পরে তা চর্চা করতে শুরু করলেন। পাশাপাশি তাঁর আগ্রহ তৈরি হল স্কট-আইরিশ গানেও। সে সব গান অনুবাদ করতে শুরু করলেন মাতৃভাষায়। এক অদ্ভুত রসায়ন তৈরি হল, যা রবীন্দ্রনাথেও ঘটেছিল। দু’জনেই সংস্কৃতজ্ঞ, দু’জনেই সে বয়সে ভারতীয় সঙ্গীতের মায়ায় আবদ্ধ। দু’জনেরই টান মায়ের ভাষায়। আর দু’জনেই বিদেশি গানের প্রতি অনুরক্ত হয়ে হয় অনুবাদ, নয়তো প্রভাবিত গান রচনায় মেতে উঠলেন। ফলে যে নতুন ধারার পত্তন হল, সেটাই পরবর্তী বাংলা কাব্যগীতির কাঠামোকে বদলে দেবে।

এ কী মধুর ছন্দ

১৮৮৬-৮৭ সাল দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নানা কারণে। ১৮৮৬তে চাকরিজীবনে প্রবেশ আর পরের বছর হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে সুরবালা দেবীকে বিয়ে করা। সে বিয়েতে যদিও কৃষ্ণনাগরিকেরা যোগ দেননি দ্বিজেন্দ্রলালের কালাপানি-অতিক্রমণের কারণে। কিন্তু দাম্পত্য দ্বিজেন্দ্রলালের কবি এবং সাঙ্গীতিক জীবনে নতুন দরজা খুলে দিল। সরকারি চাকরি তাঁকে বহু বদলির সম্মুখীন করেছে। গোটা বাংলা চষে বেড়িয়েছেন। এবং নতুন নতুন জায়গার প্রকৃতি এসে ধরা দিয়েছে তাঁর গানে। অন্য দিকে, সামাজিক প্রতিরোধ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে প্রহসনে, হাসির গানে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয়, পত্নীপ্রেম তাঁকে গানের প্রেমিক করে তুলেছে সর্বার্থে। এরই মধ্যে তাঁর সখ্য তৈরি হয় আত্মীয় সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের সঙ্গে। ডাকসাইটে গায়ক সুরেন্দ্রনাথ খেয়ালে লাগাতেন টপ্পার দানা। সেই টপখেয়াল মনে ধরল দ্বিজেন্দ্রলালের। তবে এ সবই রসায়নাগারের উপকরণ মাত্র। যেমন হয় রসায়নাগারে, তেমনই হল। উপকরণ মিলেমিশে তৈরি করল নতুন বস্তু, যা সে সময়ে ‘দ্বিজুবাবু’র গান, পরবর্তী সময়ের ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’।

দাম্পত্যজীবন দ্বিজেন্দ্রলালকে প্রেমের গানের দ্বিজেন্দ্রলাল বানিয়ে তুলল। ষোলো বছরের দাম্পত্যে খুব বেশি গান যে লিখলেন প্রেমের, তা নয়। কিন্তু যা রচনা করলেন, তাতে গানের বিধাতা যেন নিজের হাতে স্বাক্ষর রেখে গেলেন। ওই সুজামুঠারই বাইশ-তেইশ বছরের সেটলমেন্ট কর্তা কাজে বেরোন আর তাঁর স্ত্রী বাড়িতে অপেক্ষায় মালা গেঁথে রাখেন প্রিয়তমের জন্য। আসামাত্র পরিয়ে দেন তাঁর গলায়। এমনই একদিন। দ্বিজেন্দ্রলাল লিখলেন— ‘আমি সারা সকালটি বসে বসে/ এই সাধের মালাটি গেঁথেছি/ আমি পরাব বলিয়ে তোমারই গলায়/ মালাটি আমার গেঁথেছি’। কিন্তু মালা তো গাঁথলেন সুরবালা। আর কম্পোজ়ার সেখানে ‘আমি’ শব্দটি বসিয়ে দিচ্ছেন অবলীলায়! হ্যাঁ, প্রণিধানযোগ্যই। বৈষ্ণব রসেরই উদ্রেক সম্ভবত। রাধাভাব! একই সঙ্গে এ গানের শেষের দিকে রয়েছে— ‘বঁধু, মালাটি আমার গাঁথা নহে শুধু/ বকুল কুসুম কুড়ায়ে/ আছে প্রভাতের প্রীতি, সমীরণ-গীতি/ কুসুমে কুসুমে জড়ায়ে’। এই গান প্রকৃতিকে প্রকৃতিতে মিলিয়ে দেয় যেন। নারীত্ব এখানে ফুল্লকুসুমিত দ্রুমদলশোভিত!

যুক্তধ্বনির ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। ‘আইল ঋতুরাজ সজনি’ গানের ওই অংশটির কথা ভাবা যাক — ‘মৃদুমন্দসুগন্ধপবনশিহরিত তব কুঞ্জভবন/কুহু কুহু কুহু ললিততানমুখরিত বনরাজি’। ধ্বনিমূর্ছনায় মাত করে দেওয়া গানকাঠামো। একই রকম ঝনঝন করে বেজে ওঠা গান টপখেয়ালে ‘এ কী মধুর ছন্দ’— ‘এ কী মধুর মুঞ্জরিত নিকুঞ্জ/ পত্রপুঞ্জ মর্মর’। এখানে ছান্দসিক দ্বিজেন্দ্রলালের হাতে বাণী উচ্চারিত হচ্ছে অনেকটা এই ভাবে— ‘মধুর মুঞ্জ/ রিত নিকুঞ্জ’ কিংবা ‘মধুর/ মুঞ্জ/ রিত নি/ কুঞ্জ’।

কিন্তু এই সব গান শুনলেই মনে হয় না যে, এখানে সুরের কাঠামোর উপরেই ধ্যান বেশি? সেটাই স্বাভাবিক। এখানেই রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলালের গানের ভিত্তিগত পার্থক্য। রবীন্দ্রনাথের কথা-সুর একসঙ্গে গান তৈরি করত। ভাবই সেখানে বাকি দুই রথীর সারথি। দ্বিজেন্দ্রলাল সুরের কাঠামো তৈরি করে তাতে কথা বসাতেন। এমনও হয়েছে, নাটকে গানের জায়গা ফাঁকা রেখে দিয়েছেন, কিন্তু সুরের কাঠামোটিকে নাটকের ধাঁচের সঙ্গে মানানসই করে গড়ে তুলে, তার পরে কথা বসিয়েছেন। ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। দু’জনের ক্ষেত্রেই।

দ্বিজেন্দ্রলালের গানের আরও একটি বৈশিষ্ট্য, শূন্যে স্বপ্নজগৎ তৈরি করা। ‘ভীষ্ম’ নাটকে অম্বিকা-অম্বালিকা যেখানে গাইছে— ‘আমরা মলয়-বাতাসে ভেসে যাব/ শুধু কুসুমের মধু করিব পান/ ঘুমাব কেতকী-সুবাস-শয়নে/ চাঁদের কিরণে করিব স্নান/...তারায় করিব কর্ণের দুল/ জড়াব গায়েতে অন্ধকার/ বাষ্পের সনে আকাশে উঠিব/ বৃষ্টির সনে ধরায় লুটিব/ সিন্ধুর সনে সাগরে ছুটিব/ঝঞ্ঝার সনে গাহিব গান’। গ্রিক পুরাণকথার মতো, টেনিসনের সেই স্পেনের পর্বত দেখে এসে লেখা কবিতার মতো লোটোস বা লোটাস-খেকো মানুষের চরাচরের বাইরের মনতরঙ্গ যেন চিরবন্দি রয়ে গেল এ গানে।

একটি মৃত্যু এবং...

দ্বিজেন্দ্রলাল বাড়ি ছিলেন না। সন্তানসম্ভবা সুরবালা রক্তক্ষরণে দেহ রাখলেন। একাধিক সন্তানের মধ্যে বেঁচে ছেলে দিলীপকুমার, মেয়ে মায়া। তাঁদের জড়িয়ে বাঁচতে চাইলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। আগে বিলেতে থাকাকালীন এক ইংরেজ মেয়ের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল দ্বিজেন্দ্রলালের। বিয়ে করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু হয়নি। সে সব স্মৃতিপর্ব ভেসে গিয়েছিল সুরবালার সঙ্গে দাম্পত্যে।

১৯০৩ সালে দাম্পত্য নিভে যাওয়ায় অন্য মানুষ হয়ে উঠলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। একই সঙ্গে চলছে কর্মক্ষেত্রে বিরুদ্ধতা। পানাসক্ত হয়ে পড়লেন দ্বিজুবাবু। আড্ডায় ভাসিয়ে দিলেন নিজেকে। এবং প্রেমের গানের বদলে নাটক তাঁর হাত ধরল শক্ত করে। সে নাটক মূলত ইতিহাসাশ্রিত, স্বদেশচেতনায় জারিত। এরই মধ্যে আরও একটি সংযোগ। বঙ্গভঙ্গ-রোধী আন্দোলন। এক দিকে রবীন্দ্রনাথ পথে নামছেন, স্বদেশি গান বাঁধছেন। অন্য দিকে, দ্বিজেন্দ্রলালের স্বদেশি নাটকে মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন দেশাত্মবোধ। ১৯০৫ সালে যার শুরু ‘প্রতাপ’ দিয়ে। তাঁর নাটকে একের পর এক সংযোজিত হতে থাকল স্বদেশি গান। ‘মেবার পাহাড়’ শুনে জগদীশচন্দ্র বসু অনুরোধ করলেন বাঙালির আবেগ নিয়েও

কোনও গান লিখতে। মনে ধরল দ্বিজেন্দ্রলালের। কিছু দিনের মধ্যেই ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’। তাঁর জীবনীকার দেবকুমারের ভাষায়, ‘তীব্র হতাশার জীবনেও তিনি... হাততালি দিতে-দিতে, সারাটা ঘরময় ঘুরিয়া ঘুরিয়া, নাচিয়া-নাচিয়া... গাহিতে লাগিলেন— কীসের

দুঃখ কীসের দৈন্য কীসের লজ্জা কীসের ক্লেশ’। ‘ও গানটা গায়িতে গেলে আমার কেন জানি না, ভয়ানক মাথা গরম হয়ে উঠে।’ লিখছেন দ্বিজেন্দ্রলাল। এ গান গাইতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপে বহু বার অসুস্থও হয়েছেন তিনি।

রঙ্গমঞ্চ আর কোলাহল

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল সমসময়ে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বিখ্যাত। রবিবাবু নাটক লিখলেও দ্বিজুবাবুর নাটকে কাঁপছে রঙ্গমঞ্চ। একটি ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটে চলেছে। মঞ্চের কলাকুশলীদের কণ্ঠে চিৎকৃত-বিকৃত হয়ে উঠছে দ্বিজেন্দ্র-সুর। কেউ খেয়াল করছেন না। কবি নিজে তো ননই। পুত্রের স্মৃতিতে যেটুকু ছিল, পরে সেটুকুই ভরসা হয়ে উঠেছে তাই। তাঁর সঙ্কলিত গ্রন্থটি তাই বাঙালির পরম এক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। আরও কিছু চেষ্টাও ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা দ্বিজেন্দ্রলালের সুর সমসময়ে সংরক্ষিত না হওয়া। স্বরলিপি তৈরির আকর্ষণ বোধ করেননি স্রষ্টা। তাঁর পুত্র নিজেও কিংবদন্তি সঙ্গীতপ্রতিভা। তিনি যখন বাবার গান গেয়েছেন, অল্পবিস্তর নিজের ভাবনারও অনুপ্রবেশ ঘটেছে সেখানে। তাই দ্বিজেন্দ্রগীতির শুদ্ধ কাঠামো পাওয়া কঠিনই।

তিনি খ্যাতি পেলেন তাঁর হাসির গানে। অবশ্যই সে সব গানে প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য নয়। তাঁর শেষজীবনে গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁর গাওয়া গান রেকর্ড করেছিল। হাসির গানই। কিন্তু হাসির গানই কি দ্বিজেন্দ্রগীতির অভিজ্ঞান? মনে হয় না! এখানে গায়কির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। হাসির গান গাইবেন কে? তাঁর ‘নন্দলাল’ গানটির কথা ভাবা যেতে পারে। প্রবাসী বাঙালি সম্মেলনে দিলীপকুমার গানটি গেয়ে প্রশংসা কুড়োলেন। আর রবীন্দ্রনাথ বললেন— ‘দিলীপ, গাইলে বটে, হাততালিও পেলে। কিন্তু তোমার পিতৃদেবের মতো হল না। তিনি যখন এ-গানটি গাইতেন, লোকে হেসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ত।’ তাই বোধ হয়, সাড়াজাগানো তাঁর হাসির গানের সঙ্গে বাঙালির সখ্য স্রষ্টার প্রয়াণের কিছু দিনের মধ্যেই ছিন্ন হয়ে গেল।

যবনিকার আড়ালে

নিতান্ত প্রয়োজনীয় কারণেই এ লেখাকে ফিরে যেতে হচ্ছে দ্বিজেন্দ্র-রবীন্দ্র সম্পর্কে। তা না হলে দ্বিজেন্দ্রলাল-রবীন্দ্রনাথ পরস্পরকে আদতে কী চোখে দেখতেন, তা কুয়াশাচ্ছন্ন থেকে যায়।

রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাসের প্রশংসায় উদ্বেল হয়ে উঠে দ্বিজেন্দ্রলাল বলেছিলেন ‘ধর্মগ্রন্থ’। দ্বিজেন্দ্রলালের ‘আর্য্যগাথা’র দ্বিতীয় ভাগ, ‘মন্দ্র’ কাব্য এবং আরও অনেক রচনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ রবীন্দ্রনাথ। কলকাতায় দ্বিজেন্দ্রলালের আবগারি বিভাগের বজরার আড্ডায় দ্বিজুবাবুর সঙ্গে গানে মগ্ন হতেন রবিবাবু। দুই বাড়ির মধ্যে সখ্য ছিল। দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর ‘বিরহ’ প্রহসনটি উৎসর্গ করেন রবীন্দ্রনাথকে। কিন্তু পরের দিকে ছবিটা ঘুরে গেল। ঘুরে গেল কান-ভাঙানোয়। কারণ হিংসা বা প্রতিযোগিতার অবকাশ ছিল না। তখনও রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাননি। রঙ্গমঞ্চ তখন দ্বিজু-আশ্রয়ী। কিন্তু ‘সোনার তরী’ কাব্যের সমালোচনা করে বসলেন দ্বিজেন্দ্রলাল, সে কাব্য প্রকাশের ১২ বছর পরে! আচমকাই যেন তাঁর কৃষিবিদ পরিচয়টি তাঁকে আচ্ছন্ন করল! কৃষক কেন বর্ষাকালে ধান রোপণ না করে কাটছেন, ক্ষেত্রখানি যদি দ্বীপ বা চর হয়, তবে তো সে জমিতে ধান চাষ হয় না। কারণ, শ্রাবণ-ভাদ্রে এ সব জমি ডুবে থাকে। এমনই সব যুক্তি সাজালেন। ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না’ গানটিকে তাঁর মনে হল ‘অভিসারিকা’র গান। আর ‘আনন্দ বিদায়’ প্রহসনটি তো বটেই।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কার্যত কোনও কথা বলছেন না। বরং দ্বিজেন্দ্রলালের ইংরেজি লেখাকে পাঠ্য করার অনুরোধ করছেন ক্ষিতিমোহন সেনকে। ১৯০৫ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল প্রতিষ্ঠিত ‘পূর্ণিমা মিলন’-এর প্রথম অধিবেশনে দ্বিজুবাবুরই ৫ নম্বর সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। সে দিন বসন্তোৎসব। পকেট থেকে আবির বার করে রবিবাবুকে আচমকা মাখিয়ে দেন দ্বিজুবাবু। যে স্মৃতির রোমন্থন করেছেন দিলীপকুমার— ‘রবীন্দ্রনাথ সেদিন আমাদের সুকিয়া স্ট্রিটের বাসায় এসে ‘সে যে আমার জননী রে’ গানটি গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। গানের শেষে পিতৃদেব তাঁকে আবিরে রাঙিয়ে দেন। তখন কবিগুরু হেসে বলেছিলেন: আজ দ্বিজেন্দ্রবাবু শুধু আমাদের মনোরঞ্জন করেছেন, তাই নয়— আমাদের সর্বাঙ্গ রঞ্জন করলেন।’ রবীন্দ্রনাথ সচেষ্ট ছিলেন সম্পর্ক ঠিক করে নেওয়ায়।

এবং জীবনের শেষ লগ্নে দ্বিজেন্দ্রলালের অবস্থান কী? অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের সঙ্গে ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর স্বপ্নের পত্রিকাটিকে চোখে দেখে যেতে পারেননি। প্রথম ফর্মার প্রুফ দেখতে দেখতেই প্রয়াত হন। মতান্তরে, ক্ষীরোদপ্রসাদের নাটক দেখতে যাওয়ার আগে নিজের ‘সিংহল বিজয়’-এর পাণ্ডুলিপি দেখার সময়ে অচৈতন্য হয়ে যান। চার ঘণ্টা পরে প্রয়াণ।

‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার আখ্যাপত্রে ছাপা হয়েছিল ‘দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রতিষ্ঠিত’। প্রথম সংখ্যার ‘সূচনা’ আগেই লিখে গিয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। লিখেছিলেন— ‘আমাদের শাসন-কর্ত্তারা যদি বঙ্গসাহিত্যের আদর জানিতেন, তাহা হইলে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র ও মাইকেল পিয়ারেজ পাইতেন ও রবীন্দ্রনাথ নাইট উপাধিতে ভূষিত হইতেন’।

ঘটনা হল, রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড পান ১৯১৫ সালে, দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পরে। আর রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েছিলেন ১৯১৩ সালের নভেম্বরে। তারই কয়েক মাস আগে, ১৯১৩ সালের ১৭ মে প্রয়াত হন দ্বিজেন্দ্রলাল। ‘ভারতবর্ষ’ প্রকাশিত হয় একই বছরের জুন মাসে।

দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনী লেখেন তাঁর বন্ধু দেবকুমার রায়চৌধুরী। সে গ্রন্থের ভূমিকা লিখতে অনুরোধ করেন রবীন্দ্রনাথকে। বিস্তৃত সেই ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ যা লেখেন, তার সারকথা— ‘দ্বিজেন্দ্রলালের সম্বন্ধে আমার যে পরিচয় স্মরণ করিয়া রাখিবার যোগ্য তাহা এই যে আমি অন্তরের সহিত তাঁহার প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করিয়াছি এবং আমার লেখায় বা আচরণে কখনও তাঁহার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করি নাই... আর যাহা-কিছু অঘটন ঘটিয়াছে তাহা মায়া মাত্র।’

পরিশেষ

রবীন্দ্রনাথ আর দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতিভার তুলনা চলে না। কোনও অর্থেই নয়। রবীন্দ্রনাথ বিস্ময়-মাধুর্য। কিন্তু সুরের ক্ষেত্রে মধুবাতাস দ্বিজেন্দ্রলালও।

আর ফারাক যা রয়েছে, তা প্রধানত ভাবনার, স্থিতধী মানসিকতার, প্রকাশভঙ্গির। যেমন দেশের মাটিকে আঁকড়ে ধরছেন দু’জনেই। কিন্তু ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’র মতো অবিস্মরণীয় গানে দ্বিজেন্দ্রলাল বলেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’। আর রবীন্দ্রনাথ দেশমাটিতে বিশ্বমায়ের, বিশ্বময়ীর আঁচল দেখেন বলেই হয়তো ‘সার্থক জনম আমার জন্মে ছি এই দেশে’ গানে প্রতিতুলনার দাবি না তুলে বলেন, ‘জানি নে তোর ধনরতন আছে কি না রাণীর মতন/ শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে’। একই সঙ্গে দু’জনেই আবার দেশের মাটিতেই জীবনের নির্বাপণ আকাঙ্ক্ষা করেন। একজন বলেন, ‘এই দেশেতেই জন্ম, যেন এই দেশেতেই মরি’। আর একজন— ‘ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে’।

এ সব কিছুর পরেও মনে হয়, প্রতিভার অপচয়ের নাম যদি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় হয়, তবে আত্মবিস্মৃতির নাম বাঙালি।

(উদ্ধৃতির পুরনো বানান ও যতিচিহ্ন অপরিবর্তিত)

ঋণ: সুধীর চক্রবর্তী

Dwijendralal Ray Rabindranath Tagore Poet

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।