Advertisement
E-Paper

পরোটা-মাংস খেয়ে লিখলেন ‘আমার গানের স্বরলিপি’

একের পর এক হিট বাংলা ছবির পিছনে ছিল কালজয়ী গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার-এর কলমের জোরও। তাঁকে নিয়ে লিখছেন ঊর্মি নাথপাবনার গোপালনগর গ্রামে জন্ম গৌরীপ্রসন্নের। ১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। বাবা প্রেসিডেন্সি কলেজের খ্যাতনামা অধ্যাপক উদ্ভিদবিদ গিরিজাপ্রসন্ন মজুমদার।

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share
Save

বাড়িতে বিলিতি গ্রামোফোনে দিনরাত বেজে চলেছে আব্বাসউদ্দিন, শচীন দেববর্মণ... ছোট্ট ছেলেটি দেখত, সেই গানের সুরে সুর মিলিয়ে তাঁর মা গুনগুন করে চলেছেন। দেখাদেখি ছেলেটিও গুনগুন করত। কিন্তু কান থাকত সুরে নয়, গানের কথায়। মাথায় গেঁথে যেত গানের শব্দ, ছন্দ। গান শুনতে শুনতে কবিতা লিখতে শুরু করলেন ছোট্ট বাচ্চু ওরফে বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম স্রষ্টা গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।

পাবনার গোপালনগর গ্রামে জন্ম গৌরীপ্রসন্নের। ১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। বাবা প্রেসিডেন্সি কলেজের খ্যাতনামা অধ্যাপক উদ্ভিদবিদ গিরিজাপ্রসন্ন মজুমদার। তাঁর সহপাঠীদের তালিকায় ছিলেন সি ভি রমন, ডক্টর রাধাকৃষ্ণন। প্রাচীন ভারতে উদ্ভিদবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যা নিয়ে গবেষণার জন্য সংস্কৃত পুঁথি থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। ছোটদের পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতেন। মা সুধা মজুমদার ছিলেন স্নাতক। কবিতা ও প্রবন্ধ লেখার প্রতি ছিল তাঁর অসীম আগ্রহ। ছোট থেকেই গৌরীপ্রসন্নের হাতের কাছে দেশি-বিদেশি বই। বাড়িতে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত ভাষার চর্চা। ছাত্র জীবনের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেললেন কালীদাসের ‘মেঘদূতম’। ইংরেজি ও বাংলা দু’টিতেই স্নাতকোত্তর হয়েছিলেন তিনি।

কলকাতার মজরুহ্ সুলতানপুরী

বিলেত থেকে কাকার এনে দেওয়া গ্রামোফোনে শোনা যাঁর কণ্ঠ-সুর তাঁকে সবচেয়ে বেশি মোহিত করেছিল, তিনি শচীন দেববর্মণ। গৌরীপ্রসন্ন তখন কলেজের ছাত্র। একটি গান লিখে সটান চলে গেলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজির ছাত্র শুনে শচীনকর্তা একটা ইংরেজি বই এনে তার থেকে একটা লাইন বার করে দেখালেন, ‘ইটস আই, ইটস আই, ইট ক্যান নট বি সিন।’ এই লাইনটা মাথায় রেখে গান লিখতে বললেন। গৌরীপ্রসন্নের লেখা পছন্দ হওয়ায় তিনি তাঁকে বললেন গানটা যেন আকাশবাণীতে দিয়ে আসেন। তিনি গাইবেন। গৌরীপ্রসন্নের কাছে এটা ছিল স্বপ্নাতীত। রেডিয়োয় তাঁর লেখা গান শচীনকর্তা গাওয়ার পরে সাহস কিছুটা বাড়ল। এ বার আবদার করলেন রেকর্ডিংয়ের জন্য। শচীনকর্তা রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত দিলেন, গৌরীপ্রসন্নকে স্নাতক হতে হবে। স্নাতক হওয়ার পরে খবর গেল তাঁর কাছে। গৌরীপ্রসন্নকে তলব করলেন শচীন। বাড়িতে গিয়ে গৌরীপ্রসন্ন জানতে পারলেন, শচীন ছ’খানা গান রেকর্ড করবেন। ছ’খানাই তাঁকে লিখতে হবে! সদ্য কলেজ পাশ করা ছেলেটি এতটা প্রত্যাশা করেননি। সারা রাত জেগে গান লিখলেন। পরের দিন গানের কথা দেখেই নাকচ করে দিলেন শচীন। কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা গৌরীপ্রসন্নের। সারারাতের পরিশ্রম জলে। তাঁর অবস্থা বুঝতে পেরে শচীনকর্তা একটা সুর শুনিয়ে বললেন, এর উপরে কথা বসাতে। ভয়, দুঃখ ভুলে গৌরীপ্রসন্নের কলম দিয়ে বেরিয়ে এল, ‘যেন আলেয়ারে বন্ধু ভাবিয়া হায়, সহেলী গো যে কাছে গেলে দূরে সরে যায়।’ পছন্দ হল শচীনের। কিন্তু একটা উতরে গেলেও বাকিগুলোর কী হবে। মাথায় তো সেই রাত জেগে লেখা শব্দগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ দিকে হাতে সময় কম। শচীন দেববর্মণ তাঁকে বিকেলে আবার আসতে বললেন। বাড়িতে ফিরে আসার আগে একটা চালাকি করলেন গৌরীপ্রসন্ন। যে গানগুলো বাতিল হয়েছিল, তার একটি শচীনের অলক্ষ্যে তাঁর হারমোনিয়ামের ডালার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। যদি মিরাকল ঘটে! বিকেলে এসে দেখলেন সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ওই গানে সুর করছেন শচীনকর্তা। আনন্দে নিজের চালাকির কথা ভুলে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ফেললেন, ‘‘এই গানটা তো সকালে বাতিল করেছিলেন।’’ হেসে বললেন, ‘‘তুই চলে যাওয়ার পরে তোর বৌদি (মীরা বর্মণ) এসে গানটা পড়ে বলল ভাল লেখা। তখন আবার পড়ে দেখলাম। সকালে খেয়াল করিনি।’’

এর বেশ ক’বছর পরে গৌরীপ্রসন্নকে নিয়ে বম্বেতে একটি নামী রেস্তরাঁয় গিয়েছেন শচীন। সুরকার জয়কিষণ দেখতে পেয়ে উঠে এসে শচীনের সঙ্গে কথা বললেন। কিন্তু গৌরীপ্রসন্নকে সে ভাবে পাত্তা না দেওয়ায় শচীনদেব কিছুক্ষণ পরে গৌরীপ্রসন্নকে দেখিয়ে জয়কিষণকে বলেছিলেন, ‘‘জানতা হ্যায়, কৌন হ্যায়। ইয়ে হ্যায় কলকাত্তা কা মজরুহ্ সুলতানপুরী!’’ কথাটা শুনে গৌরীপ্রসন্নও চমকে গিয়েছিলেন। তখন তিনি প্রফেশনালি গান লেখা শুরু করলেও জয়কিষণ নক্ষত্র। রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে জানতে চেয়েছিলেন এই উক্তির কারণ। শচীনকর্তা বলেছিলেন, ‘‘এরা আমাকে মূল্য দেবে আর আমার সঙ্গে তুই রয়েছিস, তোকে মূল্য দেবে না? মনে মনে জেদ করবি না-ই বা কেন, তুই ও একদিন মজরুহ্ সুলতানপুরী হবি, কি তার চেয়েও বড় হবি।’’ আজীবন শচীন দেববর্মণের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ছিল গৌরীপ্রসন্নের। ‘মেঘ কালো আঁধার কালো’, ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে,’ ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’... গৌরীপ্রসন্নের কথায় ও শচীন দেববর্মণের সুরে সৃষ্টি হয়েছিল এমন অসংখ্য কিংবদন্তি গান!

আমি আর নচি ইংরেজির ইউ আর কিউ-এর মতো

সত্যি কি তিনি মজরুহ্ সুলতানপুরী হতে পেরেছিলেন? প্রশ্ন শুনে পাল্টা প্রশ্ন করলেন সুরকার নচিকেতা ঘোষের পুত্র সুপর্ণকান্তি ঘোষ, ‘‘সেই সময়ে ভারতের এমন এক জন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীর নাম বলতে পারবেন, যিনি গৌরীপ্রসন্নের গান গাননি?’’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন, ‘‘শচীন দেববর্মণ, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোরকুমার, রাহুল দেববর্মণ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়... নাম বলে শেষ করতে পারব না। এঁদের পাঁচটা সেরা গানের মধ্যে একটা গান গৌরীকাকার হবেই। আর বাবারও প্রায় ৭০ শতাংশ গানই তো গৌরীকাকার লেখা।’’

নচিকেতা ঘোষের সঙ্গে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের বন্ধুত্ব কলেজজীবন থেকেই। ঘোষ পরিবারের বড় থেকে ছোট— সকলের সঙ্গে গৌরীপ্রসন্নের সম্পর্ক ছিল মধুর। এমনকি মধুর সম্পর্ক ছিল বাড়ির পরিচারকদের সঙ্গেও। ঢোলা পাজামা আর লম্বা পাঞ্জাবি পরে প্রায় প্রত্যেক দিন সকালে শ্যামবাজারে ঘোষবাড়িতে চলে আসতেন তিনি। তার পরে চলত গান লেখা, সুর দেওয়ার কাজ। তারই ফাঁকে আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া। কিন্তু সব সময়ে যে সঙ্গীতসৃষ্টি চার দেওয়ালে মধ্যে হত, তা নয়। অতি পুরনো পরিচারক, যাঁর কোলে পিঠে চড়ে নচিকেতা মানুষ হয়েছিলেন, সেই মন্দকের পুরনো লিলি বার্লির কৌটোয় জমানো পয়সা চুরি করে দুই বন্ধু প্রায়শই চপ কাটলেট খেতেন। এমনই এক দিন পয়সা চুরি করে গোলবাড়ির পরোটা আর কষা মাংস খেতে খেতে গৌরীপ্রসন্ন এক টুকরো কাগজে লিখলেন, ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে’। নচিকেতা সুর করে ফেললেন। গাইলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তৈরি হয়ে গেল আরও একটি কালজয়ী গান। এই জুটি বাংলা গানকে এতটাই তরঙ্গায়িত করে যে, ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গৌরীপ্রসন্নের লেখা আর নচিকেতা ঘোষের সুরে ‘না, না, না আজ রাতে আর যাত্রা শুনতে যাব না’ গানটির জন্য গল্পে পরিবর্তন এনেছিলেন পরিচালক! এমন নজির অবশ্য একাধিক।

‘‘এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই সেই সব দিন,’’ সুপর্ণকান্তি বলছেন, ‘‘আমি পাঁচ কি ছয়। এক দিন ওই ঢ্যাঙা ছ’ফুটের উপর লোকটা আমার কোলে মাথা রেখে সটান পা তুলে দিলেন খড়খড়ি দেওয়া জানালায়। আমাকে বললেন, ‘পাকা চুল তোল দেখি, প্রতি পাকা চুল পাঁচ পয়সা।’ তখন গৌরীকাকার মাথায় সবে শুভ্রকেশের আর্বিভাব হচ্ছে, আমি মন দিলাম পয়সার লোভে। উনি ওই ভাবেই আধশোয়া হয়ে গান লিখতে শুরু করলেন। সে দিন পাঁচটা পাকা চুল তুলেছিলাম। সেই পয়সা আজও আদায় হয়নি!’’

স্মৃতির সাগরে ফের ডুব দিলেন সুপর্ণকান্তি, ‘‘উনি নিঃসন্তান ছিলেন। ছেলের মতো স্নেহ, ভালবাসা পেয়েছি ওঁর কাছ থেকে। মাঝেমধ্যে কত কী উপহার দিতেন! একবার বম্বে থেকে দুটো জাপানি কিমোনো এনে দিলেন। আবার একদিন লেক মার্কেটের কাছে রাধুবাবুর দোকানে নিয়ে গিয়ে চিংড়ির কাটলেট খাওয়ালেন। খাওয়ার পরে দেখা গেল গৌরীকাকার কাছে টাকা নেই। কলমের দোকানে গিয়ে দামি কলম কিনে দেখলেন পকেট ফাঁকা! দোকানদাররা কাকাকে চিনতেন তাই রক্ষে। কত দিন দেখেছি, পেন থেকে কালি লিক করে বুক-পকেট ভিজে গিয়েছে, ওঁর খেয়ালই নেই। এমনই আনমনা থাকতেন। দুটো কলম আর কিছু খুচরো পয়সা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। টাকা না থাকলে হেঁটেই চলে যেতেন গন্তব্যে। হাজরা থেকে গড়িয়া হাঁটা ছিল ওঁর রোজকার ব্যাপার। কিন্তু ওঁর এই ভুলো মনের সুযোগও নিয়েছে অনেকে। কলকাতায় ওঁকে দিয়ে কাজ করিয়ে অনেকেই ঠিক মতো টাকা দিত না। বম্বেতে গেলে অন্তত কিছু টাকা পেতেন। আসলে গৌরীকাকার চলন বলন, চিন্তা, শরীরী ভাষা... সব কিছুই ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা।’’

নচিকেতা ঘোষের মৃত্যুর পরে একটি স্মরণসভায় তাঁর সঙ্গে প্রিয় বন্ধুর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গৌরীপ্রসন্ন বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ইংরেজির ‘ইউ’ আর ‘কিউ’-এর মতো। হরিহর আত্মা হলেও এই বন্ধুর সঙ্গে গান তৈরি নিয়ে মাঝেমধ্যেই বেজায় তর্ক-ঝগড়া হত। বর্ষণ হত গালিগালাজ। কিন্তু সেই সব বিবাদ থেকে জন্ম নিয়েছিল এক-একটি অনবদ্য গান। গৌরীপ্রসন্ন ছাড়াও সেই সময়ে পুলক বন্দ্যোপাধ্যয়, শ্যামল গুপ্তের সঙ্গেও কাজ করছেন নচিকেতা। শোনা যায়, অন্য গীতিকারদের সঙ্গে সমস্যা না থাকলেও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গৌরীপ্রসন্নের সম্পর্ক মোটেও মধুর ছিল না। আর সুযোগটা নিতেন নচিকেতা। তিনি দু’জনকেই এক সময়ে ডাকতেন। কোনও গানের মুখড়া লিখে ধরিয়ে দিতেন দু’জনকে। বলে দিতেন, যে ভাল লিখবে তাঁরটাই নেবেন। প্রতিযোগিতা শুরু হত গৌরী-পুলকের। এই লড়াই থেকে সোনার ফসলই পেতেন নচিকেতা।

সুপর্ণকান্তি বলছেন, ‘‘জীবনের প্রথম সুর করেছিলাম, ‘সে আমার ছোট বোন...’ পুলককাকুর লেখা। এতে মোটেও খুশি হননি গৌরীকাকা। অভিমানও করেছিলেন। একদিন দেরি করে বাড়িতে ঢুকছি দেখে বলেছিলেন, ‘কী, বাইরে আড্ডা মেরে সময় কাটাচ্ছ?’ উত্তরে আড্ডা, বিশেষ করে কফি হাউসের আড্ডা নিয়ে গান লেখার চ্যালেঞ্জ করেছিলাম ওঁকে। শুরু হল তর্কাতর্কি। তার মধ্যেই গৌরীকাকা দু’লাইন লিখে ফেললেন, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই/ কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই।’ পরদিন সকালে কাকিমা অর্থাৎ ওঁর স্ত্রী ফোন করে বলেছিলেন, ‘কী গান লিখতে দিয়েছিস রে? সারারাত ধরে লিখছেন।’ কিন্তু তিনি আমার কথা রেখেছিলেন।’’ গানের শেষ স্তবক নিয়ে নাকি বিস্তর ঝামেলা শুরু হয় গৌরীপ্রসন্ন-সুপর্ণকান্তির। ‘‘তখন প্রায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ। সেই সময়ে তিনি খুব অসুস্থ। চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পথে হাওড়া স্টেশনে বসে একটি সিগারেটের প্যাকেটের উল্টো পিঠে লিখে ফেললেন ‘সেই সাতজন নেই আজ টেবিলটা তবু আছে সাতটা পেয়ালা আজও খালি নেই...’ তার পরে এক চেনা লোকের হাতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমার কাছে। পরে মান্না দে-র কণ্ঠে তৈরি হয় আর এক ইতিহাস,’’ চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে সুপর্ণকান্তির।

চায়ের আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধের গান

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। রামগড়ের একটি চায়ের দোকানে দীনেন চৌধুরী, অংশুমান রায়ের সঙ্গে আড্ডায় বসে গৌরীপ্রসন্ন। সেই সময়ে আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা শ্রীতরফদার তাঁর রেকর্ড প্লেয়ারে শোনাচ্ছিলেন ৭ মার্চের মুজিবরের বক্তৃতা। শুনতে শুনতে সিগারেটের প্যাকেটের সাদা কাগজে গৌরীপ্রসন্ন লিখে ফেললেন ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/ আকাশে-বাতাসে ওঠে রণি।’ সুর করলেন অংশুমান, গাইলেনও তিনি। গানটা ইংরেজিতে অনুবাদও হয়, ‘আ মিলিয়ন মুজিবর সিঙ্গিং’। ১৯৭১-এ মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বাজানো হয় সেই গান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২-এর ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন গৌরীপ্রসন্ন। বাংলাদেশ রেডিয়োর জন্য লিখেছিলেন ‘মাগো ভাবনা কেন/ আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে’। হেমন্তের কণ্ঠে বিপ্লব এনেছিল সে গান।

হেমন্ত-গৌরীপ্রসন্ন জুটিও সার্থক

‘‘হেমন্তবাবু হচ্ছেন চমৎকার মানুষ। যেমন চেহারা তেমনই ব্যবহার। ওঁর পাশে দাঁড়ালে মনে হয়, আমার পাশে হিমালয়ের মতো একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন।’’ গৌরীপ্রসন্নের এই বক্তব্য বুঝিয়ে দেয়, তাঁর কতটা কাছের মানুষ ছিলেন হেমন্ত। ‘সলিল চৌধুরী না থাকলে হেমন্ত কিংবদন্তি শিল্পী হতেন না’— প্রকাশ্যে এই কথার প্রতিবাদ করেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সলিল চৌধুরী ইজ় আ ক্রিয়েশন অব হেমন্তকুমার... মনুমেন্টের তলায় দাঁড়িয়ে যদি ঘোষণা করেও বলতে হয়, তা হলেও বলব, আমার লেখা আর নচিকেতা ঘোষের সুরে হেমন্তবাবুর গাওয়া ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে’ ওঁর জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ গান।’’ তিনি জোর দিয়ে বলতেন, উইদাউট গৌরীপ্রসন্ন হেমন্তবাবুর সুরকার ও গায়ক জীবন অসম্পূর্ণ। হেমন্তের কাছ থেকে ভালবাসাও পেয়েছেন তিনি। বিপদের সময়েও পাশে পেয়েছিলেন। এইচএমভি-র অধিকর্তা পি কে সেনের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় এইচএমভি গৌরীপ্রসন্নকে বয়কট করে। তখন কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই হেমন্ত তাঁকে দিয়ে গান লিখিয়েছিলেন। একে একে তৈরি হয়েছিল, ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘নীল আকাশের নীচে এই পৃথিবী’ (‘নীল আকাশের নীচে’), ‘তারে বলে দিও’ (‘দুই ভাই’), ‘আজ দু’জনার দু’টি পথ’, ‘ওগো তুমি যে আমার’ (‘হারানো সুর’), ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’ (‘লুকোচুরি’), ‘এই রাত তোমার আমার’ (‘দীপ জ্বেলে যাই’), ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ (‘মরুতীর্থ হিংলাজ’), ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ (‘সপ্তপদী’)-এর মতো অসংখ্য হিট গান। যা বাংলা ছবির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখল। ফ্লপ ছবিকেও শুধু মাত্র গানের জোরে সুপারহিট করে দিতে পারত গৌরী-হেমন্ত জুটি। একবার ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির প্রযোজক এসে ধরলেন গৌরীপ্রসন্নকে। বললেন, ‘আমার সব ছবি ফ্লপ করছে। এ বার আপনাকে আর হেমন্তদাকে নিয়েছি। এ ছবি হিট না করলে আমি পথে বসে যাব।’ গৌরীপ্রসন্ন লিখেছিলেন, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’, ‘কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো’, ‘এই বালুকাবেলায় আমি লিখেছিনু’... ছবি সুপারহিট।

এক বার অমল মুখোপাধ্যায় সঙ্গীত পরিচালনার সুযোগ পেয়ে ছুটে এলেন গৌরীপ্রসন্নের কাছে। বললেন, ‘গৌরীদা, এমন একটা গান লিখে দিন, যেন আমি চিরদিন থেকে যেতে পারি বাংলা গানে।’ উনি লিখে দিয়েছিলেন ‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু’!

কিন্তু এত কিছুর পরেও শেষ জীবনের সাক্ষাৎকারে গৌরীপ্রসন্নের একটা চাপা অভিমান প্রকাশ পায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রতি। বলেছিলেন, এইচএমভি আয়োজিত হেমন্তের অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে অন্যান্যদের সম্পর্কের কথা বলা হলেও গৌরীপ্রসন্নের কথা কখনও বলা হয়নি। হেমন্তও নিজে কোনও অনুষ্ঠানে তাঁর কথা উল্লেখ করেননি!

পুরস্কার হল ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো

বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম এই রূপকারের ঝুলি ভরে ছিল পুরস্কারে। পুরস্কারই কি তাঁকে অনুপ্রাণিত করে? জীবনের সায়াহ্নে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘নোবেল পুরস্কার গ্রহণের সময়ে বায়রন পুরস্কারকে ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো ধরার সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রথম জীবনে ভাল লাগত। এখন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, গান লেখার জগতে পুরস্কারের কোনও প্রভাব নেই। নিজের আনন্দ, বেদনা, হতাশা, দুঃখকেই ফুটিয়ে তুলি গানের মধ্য দিয়ে।’’ ১৯৮৫ সালে আরও একটি সাক্ষাৎকারে গৌরীপ্রসন্ন অভিমান নিয়েই বলেছিলেন, ‘‘কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে গীতিকারদের স্থান দেওয়া হয় না। এ বড় ক্ষোভের কথা। অজয় ভট্টাচার্য, শৈলেন রায়, মোহিনী চৌধুরী প্রমুখ গীতিকারদের কবি প্রতিভা সম্বন্ধে কারও কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তবু কবি সম্মেলনে কোনও গীতিকারকে ডাকা হয় না। কবিতায় সুর দিলেই গান হয় না। গানের ভাষা সম্পূর্ণ আলাদা। তা না হলে রবীন্দ্রনাথ কবিতা ছাড়াও অত গান লিখতেন না। তিনি যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তা একটি গানের বইয়ের জন্য।’’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি। তাঁর মতে, হেমন্তকুমার, উত্তরকুমারের মতো শিল্পীদের জাতীয় স্তরে সম্মান না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।

বাংলায় গান করার উৎসাহ দিয়েছিলেন মান্না দে-কে

হেমন্তের পরে যে দু’জন শিল্পী তাঁর সবচেয়ে বেশি মন কেড়েছিল, তাঁরা হলেন মান্না দে এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ভি শান্তারামের ‘অমর ভূপালী’ ছবিতে প্লেব্যাক করবেন জগন্ময় মিত্র। তার জন্য বম্বেতে এসেছেন তিনি। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কে গাইবেন গান? সমস্যায় পড়লেন শান্তারাম। তখন মান্না দে-র নাম প্রস্তাব করেন গৌরীপ্রসন্ন। সেই থেকে বন্ধুত্ব। সেই সময়ে হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করছেন। গৌরীপ্রসন্ন তাঁকে উৎসাহ দিতেন বাংলা গান গাওয়ার জন্য। তাঁর জন্য প্রথম বাংলা গান লিখেছিলেন ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়’। এর পরে ‘হাজার টাকার ঝাড়বাতিটা’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘এমন বন্ধু আর কে আছে’, ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’... একটার পর একটা গান। হিসেব করলে দেখা যায়, মান্না দেরও অধিকাংশ সুপারহিট গানের গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন।

‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু,’ ‘ঘুমঘুম চাঁদ,’ ‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া,’ ‘আকাশের অস্তরাগে’... এমন অসংখ্য সুপারহিট গানে খ্যাতির মুকুট পরিয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। বয়সে ছোট হলেও সন্ধ্যাকে ‘দিদিভাই’ বলে ডাকতেন গৌরীপ্রসন্ন। প্রকাশ্যে বলতেন, সুচিত্রা সেন-সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের যে জুটি, তাঁদের কেউ টপকাতে পারবে না। গৌরীপ্রসন্নের মৃত্যুর পরে একটি সাক্ষাৎকারে সন্ধ্যা বলেছিলেন, ‘‘রাখি পূর্ণিমার দিন তাঁকে দেখতে বড় ইচ্ছে হত। কারণ গৌরীদা আমার জন্য প্রথম লিখেছিলেন ‘রাখী পূর্ণিমার রাতে’। আমার স্বামী শ্যামল গুপ্তও সুরকার ছিলেন। কিন্তু এক পেশায় থাকলেও কখনও সম্পর্কে চিড় ধরেনি।’’

সেরা গানগুলোই তৈরি হয়েছে সুরের উপরে কথা বসিয়ে

গৌরীপ্রসন্ন গান লিখে দিতেন সুরকারদের, কখনও আবার উল্টোটাও হয়েছে। সুরের উপরে কথা বসিয়েছেন তিনি। যে কাজটা তাঁর মতে ছিল কঠিন। ‘‘আমার সবচেয়ে সুপারহিট গানগুলোই তৈরি হয়েছে সুরের উপরে কথা বসিয়ে। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ আমার টার্নিং পয়েন্ট, সেটাও সুরের উপরে কথা বসানো। এই গানে অনুপমদা (ঘটক) সুর দিয়েছিলেন। ...পাঠশালার পণ্ডিতমশাইরা যে ভাবে পড়ান, সে ভাবে আমাকে দিনের পর দিন শিখিয়ে গিয়েছেন কী ভাবে সুরের উপরে কথা বসাতে হয়,’’ একদা বলেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন। সুরকার অনুপম ঘটককে গুরু মানতেন তিনি। শক্তি সামন্তের ‘আরাধনা’য় ‘মেরে সপনো কী রানি’ বা ‘গুনগুনা রহে হ্যায় ভঁবরে’ বাংলা করেছিলেন ‘মোর স্বপ্নের সাথী’ বা ‘গুঞ্জনে দোলে যে ভ্রমর।’ লিখেছিলেন অদ্ভুত ভাবে। এক দিকে এর জন্য গৌরীপ্রসন্নকে রাজেশ খন্না এবং শর্মিলা ঠাকুরের লিপ মাথায় রাখতে হয়েছিল, অন্য দিকে হিন্দি গানের কথা। এমন শব্দ বাংলায় প্রয়োগ করতে হবে, যা হিন্দি শব্দের অর্থকে বোঝায়, আবার অভিনেতার ঠোঁট নাড়ানোর সঙ্গেও মেলে!

উচ্চারণের ব্যাপারেও ভীষণ খুঁতখুঁতে

‘একটা দেশলাই কাঠি জ্বালো’, ‘আমি কি আর ভাল হব না ডাক্তারবাবু’ বা ‘যদি হিমালয় আল্পসের সমস্ত জমাট বরফ একদিন গলেও যায়, তবুও তুমি আমার’ গানগুলো বলে দেয় গৌরীপ্রসন্ন তাঁর লেখা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতেন। কথার সূত্র ধরে সঙ্গীতশিল্পী শ্যামল মিত্রের ছেলে সৈকত মিত্র বললেন, ‘‘গৌরীকাকুর স্পেশ্যালিটি ছিল শব্দপ্রয়োগে। ওঁর মতো শব্দ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে আমি খুব কম লোককেই দেখেছি। আধুনিক বাংলার সঙ্গে মৈথিলী ভাষা, সাধুভাষা সব মিলেমিশে যেত। যেমন ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’র গানগুলো। রূপক ব্যবহার করেছিলেন ‘তোমার ওই ধূপছায়া রং শাড়ির পাড়ে’ বা ‘চাঁদ তুমি চির সুন্দর’ গানগুলিতে। দুটোই বাবার সুরে।’’ গান লেখার ডাক পেলে নিজের রামগড়ের বাড়ি থেকে হেঁটেই চলে আসতেন লেক ভিউ রোডের শ্যামল মিত্রের বাড়ি। ‘‘আমার সামনে তৈরি হওয়া প্রথম গান ‘ঝিরিঝিরি বাতাস কাঁপে...’ তখন আমার পাঁচ কি ছ’বছর বয়স। কখনও বাবা আগে সুর করতেন, কখনও কাকু আগে গান লিখতেন। ওঁদের ছিল দাদা আর ভাইয়ের মতো সম্পর্ক। বাবার প্রায় ৯০ শতাংশ গান কাকু লিখেছেন। তবে গান তৈরির ব্যাপারে কোনও দিন দেখিনি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে। বড়জোর বারো-চোদ্দো মিনিট! কঠিনতম গানও তৈরি হয়ে যেত ১৫ থেকে ১৬ মিনিটে। বাবাকে মুখড়া করে দিয়ে বলতেন, ‘নে আর একটা সুপারহিট গান!’ বাবা সেটার সুর করছেন, তার মধ্যেই অন্তরা লিখে ফেলতেন কাকু। আমার প্রথম গাওয়া দুটো গানের কথা লিখেছিলেন তিনি। সুন্দর হাতের লেখা ছিল। সাধারণ সাদা কাগজে লিখতেন বটে, কিন্তু শখ ছিল কলম আর ঘড়ির। এক বার এমন একটা ঘড়ি পরেছিলেন, যার কাঁটাই বোঝা দায়। জিজ্ঞেস করেছিলাম, এমন ঘড়ি কেন পরেছেন। বলেছিলেন, ‘দেখে ভাল লাগল, তাই পরে ফেললাম!’ এমনই ছিলেন তিনি। অন্যদের চেয়ে একেবারে আলাদা। কোনও দিন দেখিনি গৌরীকাকু সোজা হয়ে বসে লিখছেন। সোফা হোক বা মাটিতে,

মুখশুদ্ধি চিবোতে চিবোতে কাত হয়ে শুয়ে লিখতেন তিনি,’’ স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন সৈকত মিত্র।

উচ্চারণের ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন। গান রেকর্ডিংয়ের সময়ে চলে যেতেন স্টুডিয়োয়। যতক্ষণ না শিল্পী উচ্চারণ ঠিক করতেন, ততক্ষণ তিনি রেকর্ডিংয়ের অনুমতি দিতেন না। আপনার বাবার সঙ্গে গান নিয়ে মতান্তর হত না? গলায় হাসির রেশ সৈকতের, ‘‘এক বার ‘অজস্র ধন্যবাদ’ ছবির জন্য ‘এই জীবনটা হাউই করে’ গানটা বাবার কিছুতেই পছন্দ হচ্ছিল না। দু’জনের মধ্যে সে কী ঝামেলা শুরু হল।’’ শুধু গান নয়, ‘দেয়া নেয়া’, ‘সূর্যতোরণ’, ‘সূর্যতপা’, ‘শুধু একটি বছর’ ছবির কাহিনিকার ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন। ‘‘আমার দাদু ছিলেন ডাক্তার। তাঁর ইচ্ছে ছিল বাবাও ডাক্তার হবে। বাবা পালিয়ে এসে মেসে থাকতেন। ঠাকুমার শরীর খারাপ হলে লুকিয়ে দেখা করতেন। অবশেষে বাবা গানে সফল হলেন এবং দাদুও মেনে নিলেন। বাবার এই জীবনকাহিনি নিয়ে লিখে ফেলেছিলেন সুপারহিট ছবি ‘দেয়া নেয়া’র গল্প,’’ বললেন সৈকত। ১৯৮৬ সালের মে মাসে, অসুস্থ শরীর নিয়ে শ্যামল মিত্রের জন্য গান লিখলেন গৌরীপ্রসন্ন— ‘এবারে যাওয়াই ভাল/ তুমি থাকো, আমি যাই’। এইচএমভির স্টুডিয়োয় গানটা রেকর্ডিংয়ের পরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। হয়তো গৌরীপ্রসন্ন বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর চলে যাওয়ার সময় আসন্ন!

ক্যানসার ধরা পড়ার পরে শরীর ভাঙতে থাকে তাঁর। চিকিৎসার জন্য ২৫ জুন ১৯৮৬ সালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল বম্বেতে। শেষ বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে লিখেছিলেন ‘যেতে দাও আমায় ডেকো না, কবে কি আমি বলেছি মনে রেখো না’। তাঁর মৃত্যুর পরে আশা ভোঁসলের কণ্ঠে রেকর্ড করা হয় গানটি। হাসপাতালে শুয়ে লিখেছিলেন শেষ গান, ‘এবার তাহলে আমি যাই, সুখে থাক ভালো থাক, মন থেকে এই চাই।’ ২০ অগস্ট, মাত্র ৬২ বছর বয়সে চলে গেলেন গৌরীপ্রসন্ন। বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল বাংলা গানের স্বর্ণালী এক অধ্যায়।

ঋণস্বীকার:

‘অনুভবে তোমারে যে পাই’:

হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়

সুপর্ণকান্তি ঘোষ

সৈকত মিত্র

Gauri Prasanna Mazumder Lyricist Bengali Songs

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।