Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বেদী কা ললিত শুন লিয়া, অব গোঁসাইকা ললিত শুনো

আসরে অবাঙালি উস্তাদদের পরোয়া করতেন না জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী। লিখছেন বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য । বাঁকুড়া জেলার চকশ্যামপুরে তাঁর পারিবারিক জমি, বাগান ছিল। সেখানে তাঁর স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে চকশ্যামপুর জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ জুনিয়র হাইস্কুল। রয়েছে তাঁর নামাঙ্কিত সেতু। বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া শহরে রয়েছে তাঁর মর্মর মূর্তি। রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডির যুগ পেরিয়ে আজও হারিয়ে যাননি জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। ধর্মতলা স্ট্রিট কিংবা শিয়ালদহের চোরাবাজারের পুরনো রেকর্ডের দোকানে এখনও জ্ঞান গোঁসাইয়ের রেকর্ডের খোঁজ করেন বহু সঙ্গীতরসিক।

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী।

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

তাঁর কণ্ঠে এমনই এক জাদু ছিল, যা চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। বাংলা রাগাশ্রয়ী গানে তিনি নতুন এক ধারার প্রবর্তন করেন, যার মধ্যে খেয়ালের ভঙ্গিতে তান বিস্তার ও টপ্পার সুললিত ধারা মুগ্ধ করত। সে দিন বিডন স্ট্রিটে জে সি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসেছিল এক ঘরোয়া সঙ্গীতের আসর। ইমন কল্যাণে বিলম্বিত খেয়াল গাইছিলেন তরুণ এক শিল্পী। শ্রোতারাও বেশ উপভোগ করছিলেন। হঠাৎই আসরে শোনা গেল মৃদু কোলাহল। কৌতূহলী শ্রোতারা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, আসরে প্রবেশ করছেন সুদর্শন, স্বাস্থ্যবান এক পুরুষ। মাথায় সুবিন্যস্ত কেশ, পরনে পাটভাঙা সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। তিনি সোজা গিয়ে বসলেন তরুণ সেই গায়কের পাশে। কিছুক্ষণ তাঁর গান শুনে গায়ককে সবিনয় বললেন, ‘‘আমিও তোমার সঙ্গে গাই গানটা। আমারও গাইতে ইচ্ছে করছে।’’

কথা শেষ করার আগেই তিনি গান ধরে নিলেন। মুহূর্তেই বদলে গেল আসরের মেজাজটা। দরাজ অথচ মধুর সেই কণ্ঠস্বর শ্রোতাদেরও যেন সম্মোহিত করে ফেলল। ইতিমধ্যেই সঙ্কোচে গান বন্ধ করে তরুণ সেই শিল্পী অবাক হয়ে তাঁর গান শুনতে লাগলেন। এমনটা দেখে তিনি সেই তরুণকে আহ্বান করলেন তাঁর সঙ্গে গলা মেলাতে। এক সময় গান শেষ হল। শ্রোতাদের প্রশংসার মাঝেই মৃদু কোলাহলে শোনা গেল একটি নাম! জ্ঞানবাবু, জ্ঞানবাবু!

রাগাশ্রয়ী বাংলা গানে নতুন ধারার প্রবর্তন করেন

তিনি জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী। বাঙালির জ্ঞান গোঁসাই। বিষ্ণুপুর ঘরানার এক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী। এমন কণ্ঠস্বর বাঙালি শিল্পীদের মধ্যে বড় একটা শোনা যায়নি। তিনি গান ধরলেই যেন আসরে এক আনন্দ তরঙ্গ খেলে যেত। সহজ সরল নিরহঙ্কার জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ সে দিন তরুণ শিল্পীর গান শুনে এতটাই আপ্লুত হয়েছিলেন যে, তাঁর সঙ্গে নির্দ্বিধায় গলা মিলিয়েছিলেন।

সে দিনের তরুণ সেই শিল্পীর নাম ধীরেন্দ্রনাথ ঘটক। এর আগে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের নাম শুনেছেন ধীরেন্দ্রনাথ, রেকর্ডে গানও শুনেছেন। তবু জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। তিনি অবাক হয়েই জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের দিকে চেয়ে ছিলেন। এমন সময় জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ বললেন, ‘‘তোমার গলাটি তো বেশ ভাই, আর এমন হিন্দুস্থানি উচ্চারণ করলে কী করে? সে দিনের এই ঘটনায় ধীরেন্দ্রনাথ যতটা না অবাক হন, তাঁর চেয়েও বেশি মুগ্ধ হন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের স্নেহপ্রবণ আন্তরিকতায়। এর পরে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আমার কাছে গান শিখবে?’’ উত্তরে ধীরেন্দ্রনাথ আপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, ‘‘যদি দয়া করে শেখান।’’ এর পরে তিনি জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের একান্ত অনুগত শিষ্য হয়ে গিয়েছিলেন।

রাগাশ্রয়ী বাংলা গানে সম্পূর্ণ এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেছিলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। তিনি ভাল ধ্রুপদী গায়ক ছিলেন। কিন্তু আসরে ধ্রুপদকে অবলম্বন না করে তিনি খেয়ালকে অবলম্বন করেছিলেন। আবার যখন বাংলা গান গাইতেন, তখন তার মধ্যে থাকত খেয়ালের ভঙ্গিতে তান বিস্তার এবং টপ্পার কাজ। সাধারণত ধ্রুপদ এবং খেয়াল গাওয়া হত হিন্দুস্থানি প্রথায়। কিন্তু বাংলা গানে এই খেয়ালের রং পরিবর্তিত হত বাঙালি মানসিকতার আদর্শে। এই ধরনের রাগাশ্রয়ী বাংলা গানে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ছিলেন অনন্য।

১৯০২ সালের ২৫ ডিসেম্বর জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের জন্ম বিষ্ণুপুরের শাঁখাির বাজারের কাছে গোস্বামী পাড়ায়। তাঁর পরিবারে সঙ্গীতচর্চার ঐতিহ্য ছিলই। তিনি শ্রীনিবাস আচার্যের বংশধর। শ্রীচৈতন্যের তিরোধানের পরে তাঁর যে তিনজন নিকট পার্ষদ বাংলার বৈষ্ণব সমাজে বিশেষ সমাদৃত, তাঁদের মধ্যে শ্রীনিবাস আচার্য অন্যতম। বিষ্ণুপুরের রাজা বীর হাম্বীর তাঁর কাছেই বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। রাজার অনুরোধে শ্রীনিবাস পরবর্তী কালে বিষ্ণুপুরে বসবাস শুরু করেন। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের পিতামহ জগৎচাঁদ গোস্বামী ছিলেন বিষ্ণুপুরের স্বনামধন্য পাখোয়াজি। জগৎচাঁদের পাঁচ পুত্র। তাঁরা সকলেই যন্ত্র এবং কণ্ঠসঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। জগৎচাঁদের দ্বিতীয় সন্তান বিপিনচন্দ্রের পুত্র জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ।

বাড়িতে এক সাঙ্গীতিক পরিবেশে লালিত হন তিনি। ছোট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে পারিবারিক উদ্যোগে শুরু হয় সঙ্গীত চর্চা। মাত্র ছ’বছর বয়স থেকেই যা শুরু হয় তাঁর পিতৃতুল্য লোকনাথের কাছে। সাত বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের কাকা রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী সে সময়ে সঙ্গীত জগতে এক নক্ষত্র। তিনি বহরমপুরে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি পিতৃহীন জ্ঞানেন্দ্রকে তাঁর কাছে বহরমপুরে নিয়ে গিয়ে সঙ্গীতের তালিম দিতে শুরু করেন। রাধিকাপ্রসাদ তাঁকে ধ্রুপদ, খেয়াল শিখিয়ে তাঁর উপযুক্ত উত্তরসূরি তৈরি করেছিলেন।

সঙ্গীত সাধনায় মগ্ন হলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। স্কুল-কলেজে প্রথাগত বিদ্যাশিক্ষা তাঁর হয়নি। রাধিকাপ্রসাদ কলকাতা কিংবা বিষ্ণুপুরে গেলে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদও তাঁর সঙ্গী হতেন। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যেতেন। বহরমপুরে রাধিকাপ্রসাদ প্রায় পনেরো বছর ছিলেন। ১৯১৯-২০ নাগাদ বহরমপুর সঙ্গীত বিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পরে জ্ঞানেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় আসেন। সেখানে সঙ্গীতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ঘোষের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন।

চৌকাঠে মাথা পেতে দিনের পর দিন গান শোনার চেষ্টা

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের জীবনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। ভূপেন্দ্রকৃষ্ণের জহুরির চোখ তাঁকে চিনতে ভুল করেনি। এখানেই জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ প্রবাদপ্রতিম বিষ্ণুদিগম্বর পালুস্করের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। সে সময়ে তিনি ভূপেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়িতে কিছু দিন ছিলেন। যদিও তখন বিষ্ণুদিগম্বর জনসমক্ষে গান গাওয়া বা অনুষ্ঠান করা ছেড়ে দিয়েছেন। চোখেও দেখতে পেতেন না। তবে রোজ ব্রাহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে তিনি গলা সাধতেন। ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ সেই ঘরের চৌকাঠে মাথা পেতে দিনের পর দিন গান শোনার চেষ্টা করতেন। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ তাঁর সংস্পর্শে এসে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন।

ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁকে ‘গেনু’ বলে ডাকতেন। মাঝেমধ্যেই অবসর সময়ে ডাক পড়ত গান শোনানোর। এমনকি সে কালে অন্দরমহলের মহিলারাও তাঁর গানের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে কথা আজও অমলিন ভূপেন্দ্রকৃষ্ণের কনিষ্ঠ পুত্র প্রবীণ জয়ন্তনাথ ঘোষের স্মৃতিতে। তিনি বললেন, ‘‘এক সকালে মা জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের গান শুনতে চাইলেন। তিনি খাটের উপরে হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে পরপর গান শোনালেন। ছেলেবেলায় শোনা সেই গান আজও কানে বাজে।’’

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের বয়স যখন ২১, তখন রাধিকাপ্রসাদ পরলোক গমন করেন। ইতিমধ্যেই জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের নামডাক চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ঘোষের ইচ্ছেতেই জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ নিখিল বঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলেন। এই সম্মেলনে ধ্রুপদ গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন। এক বার ওই সম্মেলনের উস্তাদ আব্দুল করিম খান জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের কণ্ঠে ‘বাগেশ্রী’ শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। তখন আব্দুল করিম যত দিন কলকাতায় ছিলেন, জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ তাঁর কাছে কিছু গান শেখার সুযোগ পান।

১৯২৬ সালে বিষ্ণুপুরের অভয়পদ মল্লিকের কন্যা গৌরীদেবীর সঙ্গে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের বিয়ে হয়। পাথুরিয়াঘাটায় ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ঘোষের বাড়িতে কয়েক বছর বসবাস করার পরে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। পরে আমহার্স্ট স্ট্রিট, মহাকালী পাঠশালা, বিবেকানন্দ রোড এবং হেমন্তকুমারী স্ট্রিটে বসবাস করেন।

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ছিলেন রসিক এবং শৌখিন মানুষ। আসরে নানা রকম হাসি-ঠাট্টা করতেন শ্রোতাদের সঙ্গে। রোজ ভোরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোতেন। কলকাতায় থাকাকালীন বিকেলে সময় পেলে গঙ্গার ধারে হাঁটতেন। ছিলেন ভোজনরসিক। রোজ স্ত্রীকে বলে যেতেন কী খাবেন। তাঁর পছন্দ ছিল নানা মাছের পদ।

প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই পেশাগত জীবনে তাঁর জয়যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩২ সালে এইচ এম ভি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম রেকর্ড। গান দু’টি ‘বরষ বরষ থাকি চাহিয়া’ এবং ‘একি তন্দ্রা বিজড়িত আঁখিপাতে’। মেগাফোন কোম্পানি থেকে প্রকাশিত ‘অনিমেষ আঁখি আমার’ এবং ‘মুরলীর ধনী কার বাজে’। ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত ‘আমায় বোলো না ভুলিতে’ (বেহাগ) ও ‘আজি নিঝুম রাতে কে বাঁশি বাজায়’ (দরবারী কানাড়া) সাড়া ফেলেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলতেন, তিনি সর্বক্ষণ সুরে বিভোর হয়ে থাকতেন। তেমনই আসরে মাতিয়ে রাখতেন শ্রোতাদের। ধ্রুপদের গাম্ভীর্য তিনি মিশিয়েছিলেন তাঁর খেয়ালে। ঠিক যেন ওজস্বিতার সঙ্গে মাধুর্য। সেই মাধুর্য তিনি ছড়িয়ে দিতেন তাঁর গানে। শ্রোতারাও আসর থেকে পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরতেন।

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের গানের আসরের কত স্মৃতি আজও অমলিন। তাঁর কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ ও জোরালো ছিল। আসরে তাই মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে চাইতেন না। একবার গানের আসর বসেছে থিয়েটার রোড ও রডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলের এক বাড়িতে। সেই আসরে নিমন্ত্রিত ছিলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ও ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ তানপুরার সুর বাঁধতে গিয়ে হঠাৎই লক্ষ করলেন, তার সঙ্গে সুর মেলানোর মতো কোনও জুড়ি শাগরেদ আসেনি। যদিও তিনি তাঁর এক শিষ্যকে আসতে বলেছিলেন। ভীষ্মদেবকে লক্ষ করে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ আবার বললেন, ‘‘কি গাইব বুঝতে পারছি না। সঙ্গে পোঁ ধরার লোকও নেই।’’ ভীষ্মদেবের নির্দেশে সে দিন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের সঙ্গে সুর ধরলেন সুরেশ চক্রবর্তী। প্রথমে দ্বিধা ছিল। কিন্তু কণ্ঠ ও হারমোনিয়ামে সুরেশবাবুর যোগ্য সহায়তা পেয়ে তিনি সাগ্রহ বললেন, ‘‘বেশ সুন্দর গান করেছিস। এখন থেকে রোজ আমার সঙ্গে যাবি।’’ সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর।

কলকাতার আসর থেকে বাংলার নানা প্রান্তে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। আসরে শ্রোতার মন না ভরা পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পেতেন না। চট্টগ্রােম এক গানের আসরে অনেক শিল্পী থাকায় গাওয়ার জন্য তাঁকে উপযুক্ত সময় দেওয়া হয়নি। কম সময় গান শুনে শ্রোতাদেরও মন ভরেনি। গান শেষে শ্রোতারা অনুরোধ করলেন যে, তাঁরা একদিন শুধু জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের গান শুনবেন। সেই মতো ব্যবস্থাও হল। সে আসরে প্রায় তিন ঘণ্টা একের পর এক গান গেয়েছিলেন তিনি। দিলীপকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘‘জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের গানের সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল তার ওজস। ...জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের অলোকসামান্য গীতপ্রতিভা ও ওজঃশক্তি শ্রোতার মনকে পুলকিত করে তুলত মুহূর্তে। গান শুরু করার আগে উদাত্ত কণ্ঠে তিনি যখন ‘সা’তে দাঁড়াতেন, তখন মনে শিহরণ জাগতো সত্যিই।’’

একবার ভবানীপুর সঙ্গীত সম্মেলনে গান গাইতে এসেছিলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। তাঁরই এক শিষ্য হারমোনিয়ামে সঙ্গত করতে বসেছেন। বাজাতে গিয়ে হঠাৎই তাঁর ‘প ম প’-তে আঙুল ছুঁয়ে গেল। অমনি জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের মনে কেদারার আভাস জেগে উঠেছিল। তিনি ঠিক করে এসেছিলেন, অন্য একটি রাগ গাইবেন। তবে কেদারার ছোঁয়া লাগতেই ধরে নিলেন রাগটি। আসর জমে উঠল। বিরাট সঙ্গীত কক্ষ সে দিন শ্রোতায় পরিপূর্ণ, এমনকি জানালা দিয়ে গান শুনতে বারান্দায় পর্যন্ত লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

বাংলা গান গাইতে তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। এক বার ক্রাউন সিনেমা হলে সারা রাত্রিব্যাপী সঙ্গীতের আসরে কেশর বাই কেরকর-সহ নানা বিখ্যাত শিল্পীর গান ছিল। ভোরবেলা জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ মঞ্চে উঠে বললেন, সারা রাত খেয়াল, ঠুমরি, গজলের পরে এ বার কিছু বাংলা গান শুনবেন? এতক্ষণ শ্রোতারা যেন সেই অপেক্ষাই করছিলেন। শুরু হল গান। প্রায় চার ঘণ্টা গেয়েছিলেন তিনি!

গানের আসরে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ অবাঙালি উস্তাদদের কোনও রকম পরোয়াই করতেন না। এক বার এক অনুষ্ঠানে দিলীপচন্দ্র বেদী তাঁর সৃষ্ট ‘বেদী কা ললিত’ জাহির করে শোনাচ্ছিলেন। পরবর্তী শিল্পী ছিলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। তিনি গান শুরু করার আগে ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘‘বেদী কা ললিত শুন লিয়া অব গোঁসাইকা ললিত শুনো।’’

এক সময়ে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ও নজরুল তন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন

কাজী নজরুলের বেশ কিছু গানের জনপ্রিয়তার নেপথ্যে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৩২ সালে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের সঙ্গে নজরুলের আলাপ হয়েছিল মেগাফোন কোম্পানির অফিসে। রবীন্দ্রনাথের ‘অল্প লইয়া থাকি তাই’ গানটি জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের খুব প্রিয় ছিল। শোনা যায়, ওই গানটি রেকর্ড করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও তার অনুমতি মেলেনি। এর পরে ভারাক্রান্ত মনে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ যখন এইচএমভির রিহার্সাল রুমে গেলেন, তখন সেখানে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম ও জমিরুদ্দিন খান। ঘটনাটি শুনে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন কাজী নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের গানটি শুনতে চান। কাগজে একটি গান লিখে বললেন, ঠিক ওই সুরে এই গানটা করো তো! জ্ঞানবাবু ধীরে ধীরে গাইলেন ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর’। গানটি রেকর্ড করা হলে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। যদিও পরবর্তী কালে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ রেকর্ড করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের একটি গান, ‘বিমল আনন্দে জাগো রে’।

কাজী নজরুলের বেশ কিছু গান রেকর্ড করেছিলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। তার মধ্যে ছিল রাগাশ্রয়ী থেকে শ্যামাসঙ্গীত। গানগুলির মধ্যে ‘স্বপনে এসেছিল মৃদুভাষিণী’, ‘আয় মা উমা রাখব এ বার’, ‘মধুর মিনতি শুনো’, ‘আজি নন্দলাল মুখচন্দ্র,’ ‘মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়’, ‘পিউ পিউ বিরহী পাপিয়া’, ‘মেঘে মেঘে অন্ধ’ ইত্যাদি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল।

শোনা যায় মানসিক টানাপড়েনের সময়ে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ও নজরুল দু’জনেই তন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। জনশ্রুতি, লালগোলার প্রসিদ্ধ তন্ত্রসাধক বরদা মজুমদারের কাছে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদকে নিয়ে গিয়েছিলেন নজরুল। অনেকে মনে করেন এর ফলস্বরূপ কালজয়ী কিছু শ্যামাসঙ্গীত সৃষ্টি হয়েছিল। এই গানগুলির মধ্যে ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’, ‘মা মা বলে ডাকি কালী’, ‘শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে’ উল্লেখ্য।

জীবনের প্রথম দিকে ফৈয়াজ খানের গায়কির প্রতি তিনি আকৃষ্ট না হলেও ১৯৩৩-৩৪ সাল নাগাদ ফৈয়াজের কাছে ধ্রুপদ, খেয়ালের তালিম নিতে শুরু করেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। ফৈয়াজ খান তখন মহিষাদল রাজবাড়িতে ছিলেন। সেখানেই তাঁর কাছে নাড়া বেঁধে তালিম নিয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। তৎকালীন রাজমাতার বিশেষ অনুরোধে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র দেবপ্রসাদ গর্গকে সঙ্গীতের তালিম দিতেন। প্রতি মাসে একবার সেখানে গিয়ে কিছু দিন থাকতেন জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ।

টপ্পাতেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তিনি। শোনা যায়, ঘরোয়া আসরে টপ্পা গাইতে পছন্দ করতেন। কলকাতার টপ্পাশিল্পী কালীপদ পাঠক ও বিজয়লাল মুখোপাধ্যায় তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করতেন। সে কালের সঙ্গীত জগতে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের স্থান ছিল সুউচ্চ। তিনি খেয়ালাঙ্গের অলঙ্কার প্রয়োগ করেছেন খেয়ালিদের মতোই। আবার ধ্রুপদ গাইতেন ধ্রুপদীদের মতোই। এখানেই তাঁর সার্থকতা। আসরে তিনি যেন মিছরির দানা ছড়িয়ে দিতেন তাঁর গানে।

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রবীণ শিল্পী অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘উত্তর কলকাতার বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিটে আমাদের বাড়িতে ছিল তাঁর আনাগোনা। আমার বাবা সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘গেনু’ বলে ডাকতেন। আমরা ডাকতাম ‘গেনুকাকা’। প্রতি সোমবার বসত ঘরোয়া গানের আসর। মনে পড়ছে, এমনই এক আসরে তিনি গেয়েছিলেন মালকোষে ‘নীর ভরণ মৈ তা চলি জাত হুঁ।’ আজও মনে পড়ে তাঁর সৌম্যকান্তি চেহারা, কণ্ঠের সেই জৌলুস আর গানের সেই মেজাজ।’’

তাঁর শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন ধীরেন ঘটক, জয়কৃষ্ণ সান্যাল, সত্যেন ঘোষাল প্রমুখ। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ অত্যন্ত ছাত্রবৎসল ছিলেন, একটি ঘটনা থেকে সে কথা আরও স্পষ্ট হয়। তাঁর উপার্জিত যাবতীয় অর্থ এক ছাত্রের কাছে গচ্ছিত রাখতেন। ছাত্রটি অত্যন্ত দরিদ্র বলে তাকে বিনা পয়সায় গানও শেখাতেন। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ এক দিন লক্ষ করলেন ছাত্রের মুখটি শুকনো। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তার খাওয়া হয়েছে কি না?’’ উত্তরে ছাত্রটি বলেছিল, তার ঘরে কিছু না থাকায় সে কিছু খায়নি। এতে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বলেছি না, যখনই দরকার পড়বে ওই টাকা থেকে নিবি।’’ তিনি আরও বলেছিলেন এর পরে এমনটা হলে তিনি গান শেখানোই বন্ধ করে দেবেন!

জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ছিলেন সাদাসিধে প্রকৃতির মানুষ। অনেক সময়ে ঠিকঠাক খোঁজ না নিয়েই চলে যেতেন অনুষ্ঠানে। একবার আলমবাজার মোড়ের কাছে একটি দোকানের হালখাতা উৎসবে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেই আসরে সঙ্গে ছিলেন সুরেশ চক্রবর্তী। আসরে গিয়ে তাঁরা দেখেন, চারপাশে চালের বস্তা, তেলের পিপে, মশলাপাতি রয়েছে। বড়জোর দশ-বারোজন শ্রোতা সেই আসরে বসতে পারেন। জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ করুণ মুখে সুরেশবাবুকে বলেছিলেন, ‘‘এখানে তো গলা দিয়ে গানই বেরোবে না।’’ এমন অবস্থায় সুরেশবাবু কাছাকাছি বসবাসকারী তাঁর কিছু ছাত্রকে ডেকে আনায় জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ আশ্বস্ত হয়ে সেই আসরে গেয়েছিলেন। এর পর থেকে অবশ্য জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ খোঁজখবর নিয়েই অনুষ্ঠানে যেতেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবিভাগে দড়ি ও বাঁশ সরবরাহের ব্যবসা শুরু

তিরিশের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কলকাতায় ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসরে ভাটা পড়তে থাকে। তবে ধ্রুপদের আসরে ডাক পেলে তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত গেয়েছেন।

শেষ দিকে তাঁর আর্থিক প্রয়োজন বেড়ে যাওয়ায় গানের পাশাপাশি শুরু করেন ব্যবসা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবিভাগে দড়ি ও বাঁশ সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এক অজানা কারণে তিনি মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল কলকাতায়। গানবাজনার আসরও ক্ষীণ হতে লাগল। এ অবস্থায় জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ ফিরে যান বিষ্ণুপুরে। সিমলাপাল রাজপরিবারের রাজা শ্যামসুন্দর সিংহ তাঁর শিষ্য ছিলেন। তাঁর অনুরোধে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ সিমলাপাল রাজবাড়িতে কিছু দিন ছিলেন। সেখানে নিয়মিত গানের আসর বসত। রাজার ছোট ভাই হরসুন্দর সিংহ ঠাকুর তাঁর কাছে সঙ্গীতের তালিম নেন। সিমলাপাল থেকে মাঝেমধ্যে বিষ্ণুপুরে এসেও তিনি গানের আসরে যোগ দিতেন। তবে রাজা শ্যামসুন্দর সিংহের অকালমৃত্যুর পরে তিনি ফিরে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে।

কলকাতার সঙ্গে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদের যোগাযোগ কখনও ছিন্ন হয়নি। নিয়মিত অনুষ্ঠান ছাড়াও গান রেকর্ড করার জন্য মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসতেন। শেষ জীবনে তিনি অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছিলেন। শোনা যায়, ফার্ন রোডে এক অনুষ্ঠানে গান করতে এসে একটি রকে বসে তাঁকে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল। ঘনিষ্ঠরা কারণ জানতে চাইলে জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ বলেছিলেন, এত দিন ধরে তিনি যা গেয়ে এসেছেন, তা সব ভুল। আসল সুর অন্য কিছু, তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন! আসল সুরই তিনি খুঁজছেন।

১৯৪৫ সালের ২৯ অক্টোবর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই কণ্ঠস্বর। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা জল্পনা শোনা যায়। প্রচলিত মত অনুসারে তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। আবার শোনা যায়, মানসিক অবসাদে বিষ পান করেন।

বাঁকুড়া জেলার চকশ্যামপুরে তাঁর পারিবারিক জমি, বাগান ছিল। সেখানে তাঁর স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে চকশ্যামপুর জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ জুনিয়র হাইস্কুল। রয়েছে তাঁর নামাঙ্কিত সেতু। বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া শহরে রয়েছে তাঁর মর্মর মূর্তি। রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডির যুগ পেরিয়ে আজও হারিয়ে যাননি জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ। ধর্মতলা স্ট্রিট কিংবা শিয়ালদহের চোরাবাজারের পুরনো রেকর্ডের দোকানে এখনও জ্ঞান গোঁসাইয়ের রেকর্ডের খোঁজ করেন বহু সঙ্গীতরসিক। নিঝুম দুপুরে পথচলতি কোনও সঙ্গীতরসিক একটি গান শুনে হঠাৎই দাঁড়িয়ে পড়েন। পুরনো রেকর্ডের দোকানে সেকেলে কলের গানে তখন বেজে চলেছে, ‘‘আয় মা উমা রাখব এ বার...’’

ঋণ: ভারতের সঙ্গীতগুণী, তৃতীয় খণ্ড, দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়

সুরের সাধনায় বিষ্ণুপুর: মণীন্দ্রনাথ সান্যাল; জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী বিশেষ সংখ্যা; তাঁতঘর একুশ শতক; শিল্পীর পোর্ট্রেট: পাথুরিয়াঘাটা ঘোষ পরিবারের সৌজন্যে

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy