কলকাতার কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে পরিবেশিত হল ‘শ্যামার পরিশোধ: চিরবিরহের সাধনা’ শীর্ষক একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।
বাঙালির সাংস্কৃতিক উদ্যাপনের অন্যতম আশ্রয় রবীন্দ্রচর্চা, এবং সেই আয়োজনের প্রিয়তম উপচার কবি-বিরচিত নৃত্যনাট্যগুলি। সেই পরম্পরা অনুসরণ করে সম্প্রতি কলকাতার কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধার প্রথিতযশা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক প্রমিতা মল্লিকের আয়োজন ও পরিচালনায় পরিবেশিত হল ‘শ্যামার পরিশোধ: চিরবিরহের সাধনা’ শীর্ষক একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান।
রবিকবির রচনা বারংবার অনুপ্রাণিত হয়েছে বিভিন্ন বৌদ্ধজাতকের কাহিনির দ্বারা। শ্যামা নৃত্যনাট্য ও তার কবিপ্রদত্ত পূর্বতন রূপ ‘কথা ও কাহিনী’র অন্তর্গত ‘পরিশোধ’ কবিতা, উভয়েরই আখ্যান গৃহীত হয়েছে বৌদ্ধ জাতক ‘মহাবস্ত্ববদান’ থেকে। জাতকের কাহিনির প্রধান ঘটনাক্রমে থাকা নৈতিকতার প্রশ্ন কবিতায় ও নৃত্যনাট্যে অপরিবর্তিত থাকলেও কবি মানবমনের ভাবব্যঞ্জনাকে তাঁর সৃষ্টিতে মূর্ত করে তুলেছেন অসামান্য সহৃদয়তায়। এ দিনের উপস্থাপনায় পরিশোধের কাব্যরূপের সঙ্গে শ্যামার গীত ও নৃত্যের অন্তর্বয়ন শিল্পীদের চর্চা ও আন্তরিকতায় এক নতুন মাত্রা লাভ করে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে প্রায় শতাধিক শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে উপস্থাপিত হয় প্রেম পর্যায়ের ছয়টি নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত। শিল্পীদের পরিবেশনায় সুনিষ্ঠ অনুশীলনের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
অনুষ্ঠানের মূল পর্বের সূত্রধর রূপে ‘পরিশোধ’ কবিতার নির্বাচিত অংশ আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী সাম্য কার্ফা। শিল্পীরা ছিলেন নামভূমিকায় পূর্বিতা মুখোপাধ্যায়, কণ্ঠে প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ী, শ্রুতি নাহা সেন ও দূর্বা সিংহ রায়চৌধুরী, বজ্রসেনের চরিত্রে সৌরভ রায় ও কণ্ঠে শৌণক চট্টোপাধ্যায়, উত্তীয়র চরিত্রে সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ও কণ্ঠে অর্জুন রায় এবং নগর-কোটালের চরিত্রে রিন্টু দাশ ও কণ্ঠে প্রত্যুষ মুখোপাধ্যায়। প্রহরী ও বন্ধুর চরিত্রে ছিলেন দেবজিৎ পাল ও অভীক কর্মকার, কণ্ঠে ভাস্কর সরকার ও প্রিয়দর্শী বন্দ্যোপাধ্যায়।
শান্তিনিকেতনের নৃত্য-ইতিহাসে যেমন এই নৃত্যনাট্যের পরিবেশনাতেই চারটি শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীর সম্মিলন ঘটেছিল, এ দিনের অনুষ্ঠানেও তেমনই শ্যামা ও তার সখীরা মণিপুরী শৈলীতে, বজ্রসেন কত্থক শৈলীতে, উত্তীয় ভরতনাট্যম শৈলীতে ও কোটাল চরিত্রটি মূলত কথাকলি আঙ্গিকে নৃত্য পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানটির মনোগ্রাহিতা প্রশ্নাতীত। সখীর ভূমিকায় শ্রেষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহজ ও সাবলীল নৃত্য তথা অভিনয় দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উত্তীয় বধের দৃশ্যে রিন্টু দাশের মণিপুরী যুদ্ধ নৃত্যের আঙ্গিকে যন্ত্রানুষঙ্গে নৃত্য উপস্থাপন আলাদা ভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। সর্বোপরি প্রমিতা মল্লিকের গানে মণিপুরী নৃত্যশিল্পী প্রীতি পটেলের সংক্ষিপ্ত দ্বৈত উপস্থাপনা এ দিনের একটি বিশেষ প্রাপ্তি। এছাড়াও অনবদ্য প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ী ও দূর্বা সিংহ রায়চৌধুরীর সঙ্গীতের ভাবাভিনয়।
সঙ্গীত আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিতে প্রাণ সঞ্চালনা করেন সুব্রত বাবু মুখোপাধ্যায় ও বিপ্লব মন্ডল। অন্যান্য যন্ত্রশিল্পীরা ছিলেন সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, অভ্র চট্টোপাধ্যায়, সৌম্যজ্যোতি ঘোষ, প্রদ্যোৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের মঞ্চসজ্জায় ছিলেন সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, আলোকসজ্জায় দীনেশ পোদ্দার এবং শব্দ প্রক্ষেপণে ছিল অডিয়ো সেন্টার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুসঞ্চালিত করেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy