স্পেসওয়াকে ক্রিস্টিনা ও জেসিকা। নাসার প্রকাশিত ছবি
ঘন অন্ধকার চারপাশে। মহাকাশচারীর পোশাকে থাকা বিশেষ আলোতে দেখা যাচ্ছে, স্পেস স্টেশনের গায়ে লাগানো রয়েছে বিশেষ হ্যান্ডল। সেটা ধরে মহাশূন্যে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে ক্রিস্টিনা কোখ ও জেসিকা মেয়ার— নাসার দুই নভশ্চর।
শুক্রবার ইতিহাস গড়লেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা-র এই দুই কন্যা। এই প্রথম ‘স্পেসওয়াক’ করল মহিলা-দল। সেই দৃশ্য লাইভ-স্ট্রিমিং করল নাসা। মিশন কন্ট্রোল রুম থেকে নভশ্চরদের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায় আরও এক মহিলাকে। অনেকেই জানতে চান, তিনি কে। পরে নাসা টুইট করে, মহিলা কণ্ঠটি মহাকাশচারী স্টেফানি উইলসনের। ৪২ দিন মহাকাশে কাটিয়ে এসেছেন তিনি।
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা বাসযোগ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’-এ কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে, সেখানে থাকা গবেষকেরাই তা মেরামত করেন। মহাকাশচারীর পোশাক পরে স্পেস স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে মহাশূন্যে নেমে যন্ত্রপাতি সারাতে হয়। মহাশূন্যে এই হাঁটাকেই বলে ‘স্পেসওয়াক’। গত অর্ধশতকে এমন অন্তত ৪২০টি স্পেসওয়াক হয়েছে। কিন্তু সব অভিযাত্রীদলেই থেকেছেন কোনও না কোনও পুরুষ। বদল ঘটল ৪২১তম স্পেসওয়াকে।
কেপ ক্যানাভেরালের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ মহাশূন্যে বেরোন ক্রিস্টিনা ও জেসিকা। মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের ব্যাটারি চার্জার বা বিসিডিইউ-এর একাংশ বিকল হয়ে গিয়েছিল। স্টেশনের সৌর প্যানেল থেকে কতটা বিদ্যুৎ ব্যাটারি ইউনিটে যাবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করে এই অংশটি। বিকল অংশ সারাতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছে দু’জনের। এর আগে এই ইউনিটে গোলমাল হলে ‘রোবোটিক আর্ম’-এর সাহায্যে সারানো হয়েছে। কিন্তু এ বারে যেখানে ত্রুটি ধরা পড়েছিল, সেটি এমন জায়গায় যে যন্ত্রের সাহায্যে সারানো সম্ভব হয়নি।
গত সপ্তাহে ক্রিস্টিনা ও তাঁর এক পুরুষ সহকর্মী ওই ইউনিটেই নতুন ব্যাটারি লাগান। কিন্তু আরও কিছু বদলের প্রয়োজন ছিল। তখনই নাসা সিদ্ধান্ত নেয়, পূর্বপরিকল্পিত মহিলা-দলের স্পেসওয়াক শুক্রবারই হবে। এই মুহূর্তে স্পেস স্টেশনের বাসিন্দা চার পুরুষ বিজ্ঞানী কেন্দ্রের ভিতরে থাকবেন। ব্যাটারি চার্জার ইউনিট সারাতে স্পেসওয়াক করবেন দুই মহিলা। ক্রিস্টিনার এটি চতুর্থ স্পেসওয়াক, আর জেসিকার প্রথম।
সাত মাস আগে মহিলা-দলের স্পেসওয়াকের পরিকল্পনা করেছিল নাসা। তারা ঘোষণাও করে দিয়েছিল। সংবাদপত্রে ‘ফার্স্ট অল-ওম্যান স্পেসওয়াক’ শিরোনামে খবরও প্রকাশিত হয়ে যায়— ‘উইমেন’স হিস্ট্রি মান্থ’-এ নজির গড়বেন ক্রিস্টিনা কোখ ও অ্যান ম্যাক্লেন। কিন্তু এর পরেই নাসার ঘোষণা, ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ মহিলা নভশ্চরের পোশাক কম পড়েছে। দু’জনেরই ‘মিডিয়াম’ মাপের পোশাক প্রয়োজন। এ সময়ে হিলারি ক্লিন্টন টুইট করেছিলেন, ‘‘তা হলে পোশাক তৈরি করা হোক।’’ প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি ও ডেমোক্র্যাট নেত্রীর কথাই রেখেছে নাসা। মহিলা নভশ্চরদের উপযোগী পোশাক তৈরি করেছে তারা।
এর আগে ৪২০ বার স্পেসওয়াক হয়েছে। ৫৬০ জনেরও বেশি মানুষ মহাকাশে গিয়েছেন। কিন্তু মহিলার সংখ্যা মাত্র ৬৫। কেন? অর্ধ শতক ধরে স্পেসওয়াক হচ্ছে। কেন এত বছরে এই প্রথম কোনও মহিলা-দল স্পেসওয়াক করল? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পুরুষ ও মহিলাদের ঘাম হওয়ার তফাত রয়েছে। কোনও সুস্থ মহিলার তুলনায় পুরুষেরা ঘামেন বেশি। মহাশূন্যে নভশ্চরদের দেহ ঠান্ডা রাখতে পোশাকে ‘ভেন্টিলেশন’ ও ‘কুলিং সিস্টেম’ থাকে। এই পোশাকগুলো পুরুষদের দেহের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়। তাই মহিলা নভশ্চরের পোশাক কম পড়েছিল। আর সেই কারণেই সাত মাসের বিলম্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy