বিকিরণে এতটাই ক্ষতবিক্ষত চাঁদের পিঠ। ছবি সৌজন্যে: নাসা।
পৃথিবীতে আমাদের যে পরিমাণ সৌর বিকিরণের ঝাপ্টা সইতে হয় তার ২০০ থেকে ১ হাজার গুণ বেশি বিকিরণ প্রতি মুহূর্তেই আছড়ে পড়ছে চাঁদের বুকে। তার ফলে, চাঁদে কিছু ক্ষণ থাকলেই মহাকাশচারীদের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রবল।
এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে চিনা মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পাঠানো ল্যান্ডার ‘শাঙ্গে-৪’। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। শুক্রবার।
১৯৬৯ সালে প্রথম পদার্পণের ৫৫ বছর পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ফের ২০২৪-এ এক মহিলা-সহ দুই মহাকাশচারীকে চাঁদের বুকে হাঁটাবে বলে ঘোষণা করেছে। গত সপ্তাহেই নাসার চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, ওই দুই মহাকাশচারী এ বার খুব অল্প সময়ের জন্য নামবেন না চাঁদের মাটিতে। নুড়ি, পাথর কুড়োনো, জ্বালানি তৈরি, খনিজের সন্ধানের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালানোর জন্য এ বার চাঁদে দুই মার্কিন মহাকাশচারীকে কাটাতে হবে প্রায় একটা সপ্তাহ। ফলে, কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তার পথ দেখাতে চিনা ল্যান্ডারের দেওয়া তথ্য খুবই সহায়ক হয়ে উঠতে চলেছে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বায়ুমণ্ডল বলতে কিছই নেই। তাই প্রতি মুহূর্তেই চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর সৌর বিকিরণ। চাঁদকে সইতে হচ্ছে মহাজাগতিক রশ্মির ছোবল।
জার্মানির মহাকাশ গবেষণা সংস্থার মেডিসিন ইনস্টিটিউটের পদার্থবিজ্ঞানী থমাস বার্জার বলেছেন, ‘‘এখন যে মহাকাশচারীরা পৃথিবীর ৩৭০ কিলোমিটার উপরে থাকা কক্ষপথে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান, তাঁদেরও প্রতি মুহূর্তেই সইতে হয় ভয়ঙ্কর সৌর বিকিরণ ও বিষাক্ত মহাজাগতিক রশ্মির ছোবল। কিন্তু শাঙ্গে যে তথ্য দিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এরও দু’ থেকে তিন গুণ বেশি বিকিরণের ঝাপ্টা চাঁদে মহাকাশচারীদের সইতে হবে।’’
এত বেশি পরিমাণে এই সব ভয়ঙ্কর বিকিরণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য চাঁদের মহাকাশচারীদের স্পেস-স্যুটকে আরও আধুনিক মানের করে তুলতে হবে। তাঁদের থাকার জায়গাগুলির দেওয়ালও হতে হবে অনেক বেশি পুরু। না হলে সেই সব ভয়ঙ্কর সৌর বিকিরণ ও মহাজাগতিক রশ্মি সেই দেওয়াল ফুঁড়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে মহাকাশচারীদের প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে যদি তাঁদের সেখানে অনেক দিন কাটাতে হয়।
জার্মনির কিয়েলে ক্রিশ্চান অ্যালব্রেখট্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট ভিমার-শ্যুইনগ্রাবার বলেছেন, ‘‘আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে যে বিমানগুলি যাতায়াত করে তাদের যাত্রীদের যতটা বিকিরণের ঝাপ্টা সইতে হয় চাঁদে মহাকাশচারীদের তার ১০ গুণেরও বেশি বিকিরণের ছোবল সামলাতে হবে। আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে যাতায়াত করা বিমানগুলির যাত্রীদের বেশি ক্ষণ সেই ঝাপ্টা সইতে হয় না। মহাসাগর পেরতে শুধু যতটা সময় লাগে, ততটাই। কিন্তু চাঁদে গিয়ে সপ্তাহখানেক থাকতে হলে তো অনেক দিন ধরে অত বেশি পরিমাণে বিকিরণের ঝাপ্টা সামলাতে হবে। এটা যথেষ্টই উদ্বেগজনক।’’
রবার্ট এও জানিয়েছেন, চাঁদের গহ্বরগুলির (‘ক্রেটার’) দেওয়ালের কাছটুকু ছাড়া এই পরিমাণ বিকিরণ প্রতি মুহূর্তেই আছড়ে পড়ছে চাঁদের সর্বত্র। কোথাও তার খামতি নেই। পরিমাণও কম নয়। এর ফলে, চাঁদে যাওয়া মহাকাশচারীদের ভয়ঙ্কর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আরও জোরালো হল। এর আগে বিভিন্ন ম়ডেলের যা পূর্বাভাস ছিল চাঁদের বিকিরণের পরিমাণ সম্পর্কে, চিনা ল্যান্ডার শ্যাঙ্গে-৪-এর পাঠানো তথ্যাদি তার সঙ্গে হুবুহু মিলে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর ফলে, চাঁদে আমাদের থাকার জন্য আগামী দিনে যে আস্তানাগুলি বানাতে হবে তাদের দেওয়াল অনেক পুরু করতে হবে। না হলে সেই বিকিরণ দেওয়াল ফুঁড়ে ঢুকে আস্তানাগুলির ভিতরে থাকা মহাকাশচারীদের জীবন বিপন্ন করে তুলবে। সেই দেওয়ালগুলি অন্তত ৮০ সেন্টিমিটার বা আড়াই ফুট পুরু হতেই হবে।
ছবি সৌজন্যে: নাসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy