সূর্যগ্রহণ। প্রতীকী ছবি।
এ যেন প্রকৃতিসৃষ্ট এক অনির্বচনীয় দৃশ্য। বিরাট বড় যে সূর্য তাকে আড়াল করে ফেলে অনেকটাই ছোট এক চাঁদ। কিন্তু একেবারে চাকতিতে-চাকতিতে মিলে যায় না। তাই সূর্যের একেবারে বাইরের অনাবৃত অংশ উজ্জ্বল বলয়ের মতো দেখায়। আজ, রবিবার উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানার একাংশ থেকে সেই দৃশ্য দেখা যাবে। তবে শুধু দৃশ্যই নয়, সূর্যগ্রহণের মহাজাগতিক ঘটনা বহু বিজ্ঞান গবেষণারও সাক্ষী। একশো বছর আগের এক গ্রহণের মাধ্যমেই পরীক্ষিত হয়েছিল আইনস্টাইনের বিখ্যাত আপেক্ষিকতাবাদ বা ‘থিয়োরি অব জেনারেল রিলেটিভিটি’ তত্ত্ব।
গত ২৬ ডিসেম্বর একটি বলয়গ্রাস হয়েছিল। দক্ষিণ ভারত থেকে দেখা গিয়েছিল। আজ, দেখা যাবে উত্তর ভারত থেকে। সূর্যের সর্বোচ্চ ৯৮.৬ শতাংশ ঢাকা পড়বে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসেব বলছে, আগামী ১০০ বছরে ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাত্র পাঁচ বার এই ঘটনা থেকে দেখা যাবে। এর পরে ২০৩১ সালের মে মাসে বলয়গ্রাস। তার পরে ২০৩৪ সালে মার্চ মাসে। তার পরে যথাক্রমে ২০৬৪, ২০৮৫ এবং ২১১৪ সালে ফের এই মহাজাগতিক ঘটনা দেখা যাবে। অঙ্ক কষে দেখা যায়, পৃথিবীর কোনও একটি নির্দিষ্ট ছোট্ট এলাকা থেকে ৩০০-৪০০ বছর পরে হয় তো এমন ঘটনা চোখে পড়ে। তাই প্রাচীন কাল থেকে সূর্যের পূর্ণগ্রাস ‘বিরল’ ঘটনা বলে চিহ্নিত। তাই জনমানসেও এর প্রভাব সুদূর। এমন মহাজাগতিক ঘটনা অথচ তার কোনও সরাসরি কুপ্রভাব নেই! তাই এই ঘটনা নিয়ে হাজারো কুসংস্কারের ছড়াছড়ি। এ বারও যেমন করোনাভাইরাসের সঙ্গে গ্রহণ নিয়ে কুসংস্কারের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল করোনাভাইরাসের সঙ্গে গ্রহণের সম্পর্ক নেই।
তবে সূর্যের মুকুট বা ‘করোনা’ অংশের গবেষণায় কিন্তু গ্রহণের প্রভাব রয়েছে। সূর্যের ‘করোনা’ অংশের তাপমাত্রা কয়েক হাজার কোটি সেলসিয়াস। তার ঔজ্জ্বল্য নেই, কিন্তু সেখান থেকেই এক্স-রে এবং অন্যান্য তড়িহাদত কণা প্রতিনিয়ত বেরোচ্ছে। যে সৌরঝড়ের চরিত্র বিশ্লেষণ নিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা সদা তৎপর তারও উৎস সূর্যের ‘করোনা’ অংশ। গ্রহণের সময় সূর্যের মূল অংশটি ঢাকা পড়লে তার ‘করোনা’ চোখে পড়ে। জ্যোতির্পদার্থবিদেরা সেই সময়েই করোনা সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করেন। যা বিজ্ঞানসাধনা এবং মানব সমাজের অগ্রগতির সহায়ক হয়ে ওঠে।
লেখক পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স-এর অধিকর্তা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy