Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘বুড়ো হতে’ হুড়োহুড়ি, অ্যাপে কি লুকিয়ে বিপদও

আদতে ওই অ্যাপ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা দিয়ে চলে। কারও ছবি সেখানে দিলে প্রযুক্তির কল্যাণে বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে, এমনকি পুরুষের বদলে স্ত্রী হলেও কেমন দেখতে লাগবে, তা ফুটে উঠছে। এ নিয়েই চলছে রসিকতা।

পরিবর্তন: ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের ‘বার্ধক্যের’ ছবির এই কোলাজ ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

পরিবর্তন: ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের ‘বার্ধক্যের’ ছবির এই কোলাজ ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০১:১৯
Share: Save:

বার্ধক্য, জরাকে হারিয়ে যৌবন ফিরে পাওয়া নিয়ে হুলস্থুল বেধেছিল ‘৮০তে আসিও না’ সিনেমায়। গত ক’দিন ধরে অবশ্য ফেসবুকে নব্য প্রজন্ম ‘বার্ধক্যে’ মেতেছে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপ) দৌলতে ফেসবুক জুড়ে নতুন প্রজন্মের নাগরিকেরা নিজেদের ভবিষ্যতের ছবি প্রকাশ করছেন।

আদতে ওই অ্যাপ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা দিয়ে চলে। কারও ছবি সেখানে দিলে প্রযুক্তির কল্যাণে বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে, এমনকি পুরুষের বদলে স্ত্রী হলেও কেমন দেখতে লাগবে, তা ফুটে উঠছে। এ নিয়েই চলছে রসিকতা। কিন্তু পাশাপাশি নেট-দুনিয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্কও। অনেকেই বলছেন, নির্মল আনন্দের ‘ফাঁদে’ ওই অ্যাপ প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে ব্যবহারকারীর ছবি ও তথ্য চলে যাচ্ছে। রাশিয়ার একটি সংস্থার তৈরি ওই অ্যাপ তথ্য নিয়ে কী করতে পারে, তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তের মতে, অ্যাপে বহু মানুষ নিজের ছবি দিয়েছেন। সেগুলি সংস্থার সার্ভারে রয়েছে। এখন বহু ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মুখের ছবি দিয়ে খোলে (ফেস রেকগনিশন পাসওয়ার্ড)। ফলে ওই সংস্থার কাছে কিন্তু পাসওয়ার্ডও চলে যেতে পারে। তা ছাড়া, এমন অ্যাপগুলিকে বহু ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এত ব্যবহারকারীর ছবি এবং তথ্য ওই অ্যাপের সার্ভারে জমা রয়েছে। তা দিয়ে তাঁদের গতিবিধি এবং মনোভাবে নজর রাখা সম্ভব। সন্দীপবাবুর কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয় খোদ মার্ক জ়ুকারবার্গেরও রয়েছে। তাঁর নিজের ল্যাপটপের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন বন্ধ করে রাখার ছবি তো নেট-দুনিয়ায় ভাইরাল!’’ সন্দীপের মতে, সরকারি এবং বেসরকারি দু’দিক থেকেই তথ্য সংগ্রহের প্রতিযোগিতা চলছে। আগামী দিনে যা আরও বড় আকার নেবে।

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই অ্যাপ ব্যবহারের আগে অনেকেই শর্তাবলী খুঁটিয়ে পড়েন না। তার ফলে অজান্তেই সেই সব শর্তাবলী মেনে নেন। শর্ত অনুযায়ী, ওই অ্যাপ বিনামূল্যে ব্যবহারের বিনিময়ে ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুকে তাঁর বন্ধুদের তথ্যও তুলে দিচ্ছেন সংস্থার সার্ভারে। ওই অ্যাপে তিনি যত ছবি ব্যবহার করছেন, সেগুলিও সংস্থার কাছে চলে যাচ্ছে। বস্তুত, ২০১৭ সালে এক বার এই অ্যাপ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছিল। ফের নতুন ভাবে অ্যাপটি জনপ্রিয় হওয়ায় আবার বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এই সব অ্যাপ সাময়িক আনন্দ দেয়। কিন্তু তার বিনিময়ে ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। পরবর্তীকালে এই তথ্য কী ভাবে কাজে লাগানো হবে, তা কিন্তু কেউ জানেন না। বিভাসবাবুর কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিল পাশ হওয়ার পরে এই ধরনের তথ্য ব্যবহার কিন্তু আইনি এক্তিয়ারে চলে আসবে। তথ্যের অবৈধ ব্যবহার হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাদের জেল ও জরিমানা হতে পারে।’’ যদিও প্রশ্ন উঠছে, বিদেশি সংস্থার কাছে এই তথ্য চলে যাওয়ার পরে তথ্য ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা দেখার উপায় কী?

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শুধু এই একটি অ্যাপ নয়, তথ্য সংগ্রহের ফাঁদ পেতে নেট-দুনিয়ায় আরও হাজার হাজার অ্যাপ রয়েছে। না-জেনে সেই অ্যাপের ফাঁদে নিরন্তর পা দিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।

নির্মল আনন্দের আগে এ বার কি একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?

প্রশ্নটা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Tech Facebook Artificial Intelligence Face App
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy