অমৃতা গাডগে।
ঘরের আগল বন্ধ করে রাখলেও মানুষ যে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে, তা প্রমাণ করলেন অমৃতা গাডগে। লকডাউনে ঘরবন্দি থেকেই তিনি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন গবেষণাগারে। এবং এ ভাবেই তৈরি করে ফেলেছেন পদার্থের পঞ্চম অবস্থা ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’।
জন্ম মুম্বইয়ে। পড়াশোনা মুম্বইয়ের সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজ ও পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাজ করেছেন মুম্বইয়ে টাটা ইনস্টিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে। বিয়ে করেছেন কলকাতার ছেলে অঞ্জন রায়কে। অমৃতা এখন ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোয়ান্টাম সিস্টেমস অ্যান্ড ডিভাইসেস ল্যাবরেটরি’-র ‘রিসার্চ স্টুডেন্ট’। তাঁর বর্তমান ঠিকানা থেকে যেটির দূরত্ব মাত্র দু’কিলোমিটার। কিন্তু নোভেল করোনাভাইরাসের দাপটে ঘরবন্দি হয়েও থামতে রাজি হননি এই কোয়ান্টাম-গবেষণার ছাত্রীটি। চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, গবেষণাগারে গিয়ে যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা ছিল, ঘরে বসেই কী ভাবে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। এবং অমৃতার সেই চেষ্টাই বিজ্ঞানের চর্চা ও প্রয়োগের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে মহাকাশ বা সাগরের অতলে, কিংবা পৌঁছনো অসম্ভব এমন জায়গাতেও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পরীক্ষার ক্ষেত্রে অমৃতার সাফল্য পথ দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কঠিন, তরল ও গ্যাস ছাড়াও পদার্থের চতুর্থ অবস্থাটি হল প্লাজ়মা। যেখানে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অণুতে আবদ্ধ না-থেকে ইলেকট্রন স্বাধীন ভাবে বইতে থাকে। ইলেকট্রন সমুদ্রে প্রোটন বা অন্য কণারা ভেসে থাকে। ১৯২৪-২৫ সালে পদার্থের পঞ্চম অবস্থাটি অনুমান করেন সত্যেন্দ্রনাথ বোস ও অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। তাঁরা জানান, চরম শূন্য তাপমাত্রা -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছলে পদার্থের কণাগুলি আলাদা চরিত্র হারিয়ে একটিই কণার মতো ব্যবহার করে। এটি বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থা বা ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’ হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: হিসেব আগে, না কথা আগে? করোনা মোকাবিলায় বিভক্ত বিজ্ঞান
পাক্কা সাত দশক পরে, ১৯৯৫ সালে গবেষণাগারে যার অস্তিত্ব প্রমাণ করে নোবেল পুরস্কার পান কলোরাডো ইউনিভার্সিটির এরিক কর্নেল এবং কার্ল ওয়েইম্যান। সে অর্থে অমৃতা যে নতুন কিছু আবিষ্কার বা প্রমাণ করেছেন, তা নয়। নিজেও স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন সে কথা। সাধারণ টিভি থেকে চাঁদে-মঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো রোভার রিমোট দিয়েই চালানো হয়। কিন্তু দূর থেকে, ঘরে বসে ল্যাবরেটরিতে কোয়ান্টাম-বিজ্ঞানের এমন জটিল পরীক্ষা চালানো! অমৃতার আসল কৃতিত্বটা এখানেই।
আরও পড়ুন: দেখা মিলল পৃথিবীর নিকটতম কৃষ্ণগহ্বরের
কী ভাবে করলেন এটা? অমৃতা জানাচ্ছেন, এগোতে হয়েছে ধীরে। কম্পিউটার দিয়েই গবেষণাগারের যন্ত্রের লেজ়ার বা রেডিয়ো তরঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। নিখুঁত হিসেব কষে এগোতে হয়েছে। ল্যবরেটরিতে যে ভাবে সব দিক সামলানো সম্ভব হয়, এ ক্ষেত্রে ব্যপারটা তত সহজ ছিল না। ১৪-১৫ মিনিট পরপরই থামতে হয়েছে, যন্ত্রকে ঠান্ডা করার জন্য।
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ক্রুগার বলছেন, “শুধু এই লকডাউনে কেন, ভবিষ্যতের যে কোনও লকডাউনে দূর থেকেই আমরা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারব, এটা ভেবেই রীতিমতো উত্তেজিত লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy