ইসরোর মিশন মনিটরিং রুম। ছবি: টুইটার
ভারতের চন্দ্রযান-২ এর অবতরণ ঘিরে গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হল । নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চাঁদের কক্ষপথে থাকা অরবিটারের কাছে কোনও তথ্য দিচ্ছে না চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রম। বিচ্ছিন্ন হয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সমস্ত সংযোগ।যদিও এখনই হাল না ছেড়ে সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ২ কিলোমিটার ১০০মিটার দূরত্বে শেষ সঙ্কেত পাওয়া গিয়েছিল ল্যান্ডার বিক্রমের থেকে।
বিক্রমের পরিণতি যাই হোক, বিজ্ঞানীদের কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন বিজ্ঞানীদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। বিজ্ঞানের সেবার মধ্যে দিয়ে আপনারা মানবজাতির সেবা করেছেন।’’ ইসরো সূত্রে খবর, শনিবার সকাল ৮টায় ভারতের চন্দ্রাভিযান বিষয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার রাত ১ টা ৪০। ১৩৩ কোটি ভারতবাসী প্রবল উত্তেজনা বুকে নিয়ে অপেক্ষা করছে। ঠিক সময়েই কক্ষ ছেড়ে চাঁদে নামতে শুরু করে ল্যান্ডার বিক্রম। ইসরো সূত্রে আগেই বলা হয়েছিল, সব ঠিক থাকলে রাত ১টা ৫৩ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে ভারতের চন্দ্রযান। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এ দিন কোনও সঙ্কেত পৌঁছয়নি গ্রাউন্ড স্টেশনে।
বেঙ্গালুরুতে ইসরোর কন্ট্রোল রুমে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে গোটা ঘটনাটি দেখতে উপস্থিত ছিলেন । তাঁর সঙ্গে ছিল ৭০ জন স্কুল পড়ুয়া। ইসরো আয়োজিত কুইজ কম্পিটিশনের ফলাফলের ভিত্তিতে সারা দেশ থেকে এই ৭০ জন স্কুল পড়ুয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এ দিন বিক্রমের সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও বিজ্ঞানীদের আশ্বস্ত করে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘‘ভারতবর্ষ তার বিজ্ঞানীদের নিয়ে গর্বিত। তাঁরা নিজেদের শ্রেষ্ঠটুকুই দিয়েছেন। এখন সময় সাহস অবলম্বন করার। আমরা আস্থা হারাব না।’’
ইসরোর টুইট
This is Mission Control Centre. #VikramLander descent was as planned and normal performance was observed up to an altitude of 2.1 km. Subsequently, communication from Lander to the ground stations was lost. Data is being analyzed.#ISRO
— ISRO (@isro) September 6, 2019
প্রধানমন্ত্রীর টুইট:
India is proud of our scientists! They’ve given their best and have always made India proud. These are moments to be courageous, and courageous we will be!
— Narendra Modi (@narendramodi) September 6, 2019
Chairman @isro gave updates on Chandrayaan-2. We remain hopeful and will continue working hard on our space programme.
আরও পড়ুন:আর কয়েক ঘণ্টা, চাঁদ ছোঁয়ার অপেক্ষায় গোটা দেশ
ভারতের চন্দ্রাভিযানের সাফল্য কামনা করে এ দিন সারা পৃথিবী থেকে এসেছে শুভেচ্ছাবার্তাও। কিন্তু এই অভিযান কি শেষমেষ ব্যর্থ হল, বিক্রমের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও এখনই নিরাশ না হয়ে সব দিক খতিয়ে দেখছেন ইসরোর বিজ্ঞানী-সহ গোটা দেশ।
ইসরোর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৪০০ মিটার উঁচু ছবি তুলে অবতরণের স্থান নির্বাচন করার কথা ছিল বিক্রমের। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৭০.৯° অক্ষাংশে ‘মানজিনাস-সি’ ও ‘সিম্পেলিয়াস-এন’ ক্রেটার বা গহ্বরের মাঝামাঝি কোনও একটি সমতল এলাকায় বিক্রমের অবতরণের পরিকল্পনা করা হয়। এই স্থানে অবতরণ সম্ভব না হলে, বিকল্প হিসেবে বাছা হয়েছিল ৬৭.৭° অক্ষাংশ। ইসরোর তরফে জানানো হয়, সব ঠিক থাকলে শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বিক্রমের শরীর থেকে বেরিয়ে এসে চাঁদের মাটিতে ঘোরাফেরা শুরু করবে প্রজ্ঞান। কিন্তু গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে চন্দ্রযানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অবতরণ পরবর্তী সমস্ত পর্যায়গুলি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। যদিও আশা ছাড়তে রাজি নন তাঁরা।
আরও পড়ুন:আর কয়েক ঘণ্টা, চাঁদ ছোঁয়ার অপেক্ষায় গোটা দেশ
আরও পড়ুন:ফিল্মস্টার, ক্রিকেটার নন, এ বার নতুন হিরো ইসরো
গত ১১ এপ্রিল চাঁদে নামতে গিয়ে ইজরায়েলের মহাকাশযান ভেঙে পড়েছিল। সেই পরিণতির কথা মাথায় রেখেই বিক্রমের অবতরণের পরিকল্পনা করেছিল ইসরো। বিজ্ঞানীরা এই ল্যান্ডারের নিয়ন্ত্রিত অবতরণ নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্ত নেন, চাঁদের পৃষ্ঠের কাছাকাছি আসতেই পাঁচটি অনবোর্ড ইঞ্জিন গতিবেগ কমানোর জন্যে উল্টো দিকে ধাক্কা দেবে ল্যান্ডার বিক্রমকে। ধাপে ধাপে গতি কমিয়ে চাঁদের পৃ্ষ্ঠতলে পা রাখবে বিক্রম। চাঁদের পিঠ থেকে ১০ মিটার উঁচুতে থাকার সময়ে এই ল্যান্ডারের গতিবেগ (ভার্টিক্যাল ভেলোসিটি) হবে শূন্য। বিজ্ঞানীদের একাংশের অনুমান, চাঁদের পৃষ্ঠতলের কাছাকাছি এসে গতিবেগ (ভার্টিক্যাল ভেলোসিটি) নিয়ন্ত্রণ জনিত সমস্যায় পড়তে পারে বিক্রম।
ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর অধ্যাপক সুজন সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘চাঁদের মাটিতে ধুলোঝড়ের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেছে। সমস্ত ঝুঁকি এড়াতে বিক্রমের ক্ষেত্রে গতি ধাপে ধাপে কমিয়ে পালকের মতো করে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ফ্রি ফল বা অনিয়ন্ত্রিত অবতরণের আশঙ্কাও ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy