যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই।
লোককথা বলে, রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন।
সোমবার বুলন্দশহর যখন জ্বলছিল, তখন লেজ়ার-শো দেখছিলেন যোগী আদিত্যনাথ!
দু’দিন আগেই খবরের শিরোনামে এসেছিল বুলন্দশহর। সংখ্যালঘুদের তিন দিনের ধার্মিক অনুষ্ঠান ‘ইজ্তেমা’র জন্য লক্ষ লোকের ভিড় হয়েছে শহরে। আর নমাজের জন্য শনি মন্দির খুলে দিয়েছেন হিন্দুরা। আর গত কালের শিরোনাম, গো-তাণ্ডবে হত পুলিশ-সহ দু’জন। পুড়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। আগুন লাগানো হয়েছে পুলিশের ভ্যানে।
এই যখন অবস্থা, যোগী তখন গোরক্ষপুরে। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সঙ্গে লেজ়ার শো দেখছেন, কবাডি খেলায় মাতছেন। বেগতিক দেখে অবশ্য আজ রাতে বৈঠক ডেকেছেন তিনি। যদিও তার আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে আসর গরম করে ফেলেছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: সাক্ষী-মৃত্যুতে ধাক্কা আখলাক মামলায়
গত কালের তাণ্ডবের জন্য অভিযোগের আঙুল উঠছে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিজেপির দিকে। অভিযোগ, তাণ্ডবের পাণ্ডা বজরং দলের যোগেশ রাজ। কিন্তু এফআইআর-এ কোনও সংগঠনের নাম নেই। উত্তরপ্রদেশের এডিজি আনন্দ কুমারও অভিযুক্তদের সঙ্গে কোনও সংগঠনের যোগ মানেননি।
গ্রামবাসীরা বলছেন, ক’দিন আগে সম্প্রীতির নজির গড়া বুলন্দশহরে আচমকাই গবাদি পশুর মৃতদেহ ঘিরে হাঙ্গামা শুরু হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিষয় থিতিয়েও গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পরে হঠাৎ গ্রামের বাইরে থেকে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা এসে তাণ্ডব শুরু করে। তাতেই প্রাণ হারান পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমার সিংহ।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী টুইটারে পুলিশ খুনের নিন্দা করে বলেছেন, ‘‘মোদী-যোগী রাজ্যে পুলিশেরই যখন এই হাল, তখন সাধারণ মানুষের কী অবস্থা!’’ আর এক কংগ্রেস নেতা নেতা কপিল সিব্বলের কথায়, ‘‘যোগী ভোটে বিষ ছড়াচ্ছেন, আর ভিড়ের হাতে আইনের ভার তুলে দিয়েছেন। ভি়ড় আখলাকের তদন্তকারী অফিসারকে মেরে দিল!’’ মায়াবতী বলেন, ‘‘বিজেপির মদতেই উত্তরপ্রদেশে এখন জঙ্গলরাজ চলছে।’’ অখিলেশেরও এক কথা। যোগীর মন্ত্রী, শরিক দলের নেতা ওম প্রকাশ রাজভর বলেন, ‘‘এ সব বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএসের কাণ্ড। এখন তো পুলিশ বিজেপি নেতাদেরও নাম নিচ্ছে।’’
বজরং দল নেতা শৈলেন্দ্র জৈনের পাল্টা দাবি, ‘‘গোটাটাই প্রশাসনের ব্যর্থতা। তিন দিন ধরে যে বক্তৃতা দেওয়া হয়েছে, তাতে হিন্দুদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি। তবু প্রশাসন পদক্ষেপ করেনি।’’
বিজেপির সর্বভারতীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি মুখ খুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা মানবতার পরাজয়। রাজ্য সরকার দোষীদের শাস্তি দিক।’’ মোদী-সহ তাঁর দলের অন্যরা অবশ্য রা কাড়েননি। বিরোধীদের ক্ষোভ, পুলিশ খুন নিয়ে মুখ খুললেন না মোদী, অথচ প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার বিয়েতে চলে গেলেন! এই আচরণই গোরক্ষকদের লাগাতার মদত দিচ্ছে!
‘সাহিত্য সমালোচনা’য় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের হিন্দু-সমাজে গোহত্যা পাপ বলে গণ্য, অথচ সেই উপলক্ষে মানুষ-হত্যা তত দূর পাপ বলে মনে করি না।’’ নব্বই বছরেও কি একচিলতে বদল হল ছবিটার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy