Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

নীরব মোদীদের মতোই পরিকল্পনা ছিল! টোপ দিয়ে দেশে আনা হয়েছিল রাণা কপূরকে

তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটের নিরাপত্তারক্ষীরা ইডি-কে জানান, রাণা কপুর ফের বিদেশে পালাতে পারেন, এমন একাধিক ইঙ্গিত পেয়েছেন তাঁরা।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ১৯:১৮
Share: Save:

নীরব মোদী, বিজয় মাল্য, ললিত মোদীদের মতো রাণা কপূরেরও কি বিদেশে পালনোর ছক ছিল? ইডি সিবিআই-এর একাধিক তদন্তকারী অফিসারের সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে নীরব মোদীদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা রাণা কপূরের ক্ষেত্রে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন ইডির গোয়েন্দারা। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দা সূত্রে এমনও খবর, দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা রাণা কপূরকে কার্যত টোপ দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আর দেশে ফিরতেই ছেঁকে ধরেছে সিবিআই, ইডি-সহ একাধিক তদন্তকারী সংস্থা। আর তার পরেই গ্রেফতার।

ইয়েস ব্যাঙ্কের সিইও পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা থেকে কখনওই নজর সরেনি রাণা কপূরের। বরং সংস্থায় ফেরার জন্য বরাবরই চেষ্টা করে গিয়েছেন। অন্য দিকে রাণা কপূরের অপসারণের পর থেকেই ইয়েস ব্যাঙ্কের গতিবিধি, আর্থিক অবস্থা-সহ গোটা পরিস্থিতির উপর উপর নজর রাখছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেই নজরদারিতেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্তারা জানতে পারেন, বেশ কয়েক বার ইয়েস ব্যাঙ্কে টাকা ঢালার চেষ্টা করেছেন একাধিক বিনিয়োগকারী। কিন্তু প্রতি বারই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার মুখে এসে এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ভেস্তে গিয়েছে।

কেন এমনটা হচ্ছে, তার কারণ খুঁজতে গিয়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজর পড়ে ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও রাণা কপূরের উপর। ইডির তদন্তকারী অফিসারদের একটি সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও শেষ মুহূর্তে ইয়েস ব্যাঙ্কের বিনিয়োগকারীদের চুক্তি বাতিল হওয়ার নেপথ্যে রয়েছেন রাণা কপূর। কারণ, তিনি চাইছিলেন, এমন একটি চুক্তি যাতে তিনি নিজে ফের ইয়েস ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে ফিরতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতিবারই মনে হত চুক্তি চূড়ান্ত। সম্ভবত রাণা কপূরের লোকজনই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দেখা করে ইয়েস ব্যাঙ্কে বিনিয়োগে নিষেধ করত।’’

আরও পড়ুন: ৬০০ কোটির ঘুষ! ইয়েস ব্যাঙ্ক দুর্নীতিকাণ্ডে রাণা কপূরের স্ত্রী-কন্যার নামও জুড়ল সিবিআই

এই ইঙ্গিত মিলতেই এ বার শুরু হয় রানা কপূরকে দেশে ফেরানোর ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরির প্রক্রিয়া। আরবিআই এমন জল্পনা ভাসিয়ে দেয় যে ইয়েস ব্যাঙ্কের জন্য নতুন বিনিয়োগকারী আহ্বান করা হচ্ছে। সেটা এমন ভাবে করা হয়, যাতে মনে হয়, ইয়েস ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে ফেরার ক্ষেত্রে রাণা কপূরের ফিরে আসার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা না থাকে। সেই ‘ফাঁদ’-এই পা দেন রাণা। ফিরে আসেন ভারতে।

কিন্তু ভারতে পা দিতেই তাঁর পিছনে নজর রাখতে শুরু করে সিবিআই, ইডি-সহ একাধিক গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থা। যা কার্যত আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল। রাণা কখন কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন, কোথায় থাকছেন, সবটাই গোয়েন্দারা নজরে রাখছিলেন।

আরও পড়ুন: ডুবন্ত শেয়ার বাজার, এক দিনে দশকের সবচেয়ে বড় পতন

মুম্বইয়ে রাণা কপূরের বাসভবনের নাম ‘সমুদ্র মহল’। ওরলি এলাকায় ‘সমুদ্রমুখী’ এই ফ্ল্যাটগুলি বাণিজ্যনগরী তথা দেশের সবচেয়ে দামি আবাসনগুলির মধ্যে অন্যতম। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিদেশে ফেরার হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীও এই রকম একটি ফ্ল্যাটেই থাকতেন। সেই ফ্ল্যাটেও গোয়েন্দারা প্রায় ২৪ ঘণ্টার নজরদারি শুরু করেছিলেন। অন্য দিকে রাণা কপূরও ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন যে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে ইয়েস ব্যাঙ্কের পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা করেছে, সেটা থেকে তাঁকে বাইরে রাখা হয়েছে।

এই আঁচ করেই ফের তাঁর লন্ডনের ঠিকানায় ফেরার চেষ্টা শুরু করেন রাণা। কিন্তু তাঁর ফ্ল্যাটের নিরাপত্তারক্ষীরাই ইডি-কে সেই খবর দেন। ইডির তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীরা ইডি-কে জানান, ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা ফের বিদেশে পালাতে পারেন, এমন একাধিক ইঙ্গিত পেয়েছেন তাঁরা। তার পরেই আরও তৎপর হয় ইডি। গ্রেফতার করতে আটঘাট বাঁধতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। অবশেষে গত কাল রবিবার দীর্ঘ জেরার পর গ্রেফতার। আপতত পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Yes Bank Rana Kapoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE