স্বাধীনতা দিবসের আগে সেজে উঠেছে লালকেল্লা। ছবি: পিটিআই।
এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লার ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন, আগামী পাঁচ বছরে ভারত ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হবে। তখনই অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, এর পিছনে সরকারের কোনও কৃতিত্ব থাকবে না, বৃদ্ধির স্বাভাবিক নিয়মেই ওই আকার হবে ভারতীয় অর্থনীতির।
কিন্তু এক বছর পরে সেই ‘স্বাভাবিক’ ঘটনাকেই সুদূর পরাহত বলে মনে হচ্ছে। বাজারের ঝিমুনি ও লকডাউনের ধাক্কায় অর্থনীতির বহর কমছে। বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, ভারতের জিডিপি ৩.২% কমবে। আইএমএফ-এর মতে, সঙ্কোচন হবে ৪.৫% হারে। আইসিআরএ-র মতে ৯.৫% পর্যন্ত জিডিপি-র সঙ্কোচন হতে পারে। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ নিয়ে পূর্বাভাস করাই বন্ধ করে দিয়েছে।
উল্টো দিকে, বাজারদর দিনে দিনে মাত্রাছাড়া হচ্ছে। জুলাই মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৭% ছুঁইছুঁই। চাল-গম থেকে দুধ, ডাল থেকে আনাজ— সব রকম খাদ্যপণ্যের দামই চড়ছে। ফলে ক্রমশ বাড়ছে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর আশঙ্কা। অর্থাৎ যখন আর্থিক বৃদ্ধি হয় না, আয় বাড়ে না, কিন্তু জিনিসের দাম বাড়ে। বাড়ে বেকারত্ব।
আরও পড়ুন: আস্থা জয়েও সচিন-অশোক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
এই পরিস্থিতিতে সরকারের ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, শনিবার ১৫ অগস্ট লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির প্রসঙ্গ ছেড়ে ফের ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর উপরেই জোর দেবেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, লকডাউনের কারণে চাকরি খোয়ানোয়, রোজগার কমে যাওয়ায় আমজনতার মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে সবার আগে সেই আতঙ্ক দূর করতে হবে।
লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে মোদী সরকার ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছিল। সরকারি সূত্র বলছে, এর অঙ্গ হিসেবেই গরিব মানুষকে সুরাহা দিতে আরও কিছু ঘোষণা হতে পারে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্র যে ১০২ লক্ষ কোটি টাকার জাতীয় পরিকাঠামো প্রকল্পের তালিকা তৈরি করেছে, তার অর্থ জোগাতে পৃথক আর্থিক সংস্থা তৈরির ঘোষণাও লালকেল্লা থেকেই হতে পারে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর লক্ষ্যে মোদী সরকার ইলেকট্রনিক্স থেকে চামড়া, বস্ত্র থেকে ইস্পাতের মতো ২০টি ক্ষেত্রে দেশীয় পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে। এ বিষয়ে নতুন পদক্ষেপের সঙ্গে রেল, প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের নতুন নীতিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে
আসতে পারে।
কিছু দিন আগেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এ বছর লালকেল্লা থেকে আত্মনির্ভর ভারতের নতুন রূপরেখা তুলে ধরবেন। আত্মনির্ভর ভারতের নামে বিজেপি-আরএসএসের বহু সংগঠন চিনা
পণ্য বয়কট আন্দোলনে নেমেছে। ফলে চিন থেকে আমদানি করা কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল শিল্পমহল আতঙ্কিত। কিন্তু সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত মনে করিয়ে দিয়েছেন, আত্মনির্ভরের অর্থ এই নয় যে ভারত বিদেশি পণ্য কিনবে না। কিনবে, প্রয়োজন মতো, নিজের শর্তে। রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন, মোদী কি সরসঙ্ঘচালকের আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনার রূপরেখাই স্পষ্ট করবেন?
স্বাধীনতা দিবসের ১০ দিন আগে রামমন্দিরের শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা আন্দোলন ও রামমন্দিরের আন্দোলনকে একই পঙক্তিতে বসিয়েছিলেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মতে, “একটা নতুন জাতীয় ভাষ্য তৈরি করা হচ্ছে। এই ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৯-এর ৫ অগস্ট ৩৭০ রদ করে, এ বছরের ৫ অগস্ট রামমন্দির তৈরি শুরু করে দেশ আসল স্বাধীনতা পেল।” তাঁর মতে, এই ভাষ্য স্বাধীনতা আন্দোলনকেই গুরুত্বহীন করে দিতে চাইছে। যা আসলে আরএসএসের হিন্দুরাষ্ট্রের ভাবনা।
মোদী সরকার আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর ভারতের মন্ত্র জপলেও ইয়েচুরির অভিযোগ, গত ছ’বছরে কেন্দ্র অর্থনীতির ভিতটাই ভেঙে চলেছে। একই সুরে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মত, এক দিকে আর্থিক বৃদ্ধি কমছে। অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে। অর্থনীতিতে এর একটাই অর্থ, স্ট্যাগফ্লেশন। কংগ্রেসের আর এক নেতা শশী তারুরের মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীর যে অর্থনীতির বিষয়ে দিশাহীন অবস্থা, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, তাঁর এক জন আর্থিক উপদেষ্টা বলছেন, এ বছর ১ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে। আর এক জন বলছেন, ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে আর্থিক সঙ্কোচন হতে পারে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy