নির্মলা সীতারামনকে ‘ভগবানের দূত’ বলে পাল্টা কটাক্ষ পি চিদম্বরমের। —ফাইল চিত্র
অর্থনীতির দুর্দশা ও জিএসটি আদায়ের হাল বোঝাতে নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, ‘ভগবানের মার’ বা ‘অ্যাক্ট অব গড’। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি দেশের অর্থমন্ত্রীকে। তাঁর সেই মন্তব্যকেই হাতিয়ার করে এ বার দেশের অর্থমন্ত্রীকে ‘ভগবানের দূত’ (মেসেঞ্জার অব গড) বলে কটাক্ষ করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। 'ভগবানের মার' বলতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে বোঝাতে চেয়েছিলেন নির্মলা। কিন্তু ইউপিএ জমানার অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন, কোভিড সংক্রমণের আগে যে আর্থিক বৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নমুখী ছিল, সেটার দায় কার উপর চাপাবেন অর্থমন্ত্রী?
করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে জিএসটি আদায়ে রাজ্যগুলি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা কেন্দ্রকে পূরণ করতে হবে বলে দাবি উঠেছে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি থেকে। কিন্তু কেন্দ্র তার বদলে রাজ্যগুলিকেই ধার-দেনা করার পরামর্শ দিয়েছে। এই প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, ‘‘কোভিডে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা অ্যাক্ট অব গড।’’
নির্মলার সেই মন্তব্যের সূত্রেই এ দিন পি চিদম্বরম তাঁকে পাল্টা কটাক্ষে বিঁধেছেন টুইটারে। কোভিডের আগে অর্থনীতির ‘অব্যবস্থা’-র অভিযোগ তুলে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘অতিমারি যদি ভগবানের মার হয়, তা হলে ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে অতিমারির প্রকোপের আগের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? ভগবানের দূত হিসেবে অর্থমন্ত্রী কি তার উত্তর দিতে পারবেন?’’
করোনাভাইরাসের আগে থেকে দেশের অর্থনীতিতে ঝিমুনি চলছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.১ শতাংশ। ২০১৯-'২০ অর্থবর্ষের আর্থিক বছরের মার্চে শেষ হওয়া চতুর্থ ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেশে শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সেই হার নামতে নামতে পৌঁছে যায় ৩.১ শতাংশে। আর কোভিড-১৯ এবং লকডাউনের জেরে দেশের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ঋণাত্মক বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে জিএসটি আদায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজ্যগুলিতেও সেই জিএসটি আদায় তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় তাদের ভাঁড়ারও ফাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, করোনার জেরে জিএসটি আদায় ঘাটতি হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান অর্থমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন, রাজ্যগুলি প্রয়োজনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ধার নিতে পারে। এ নিয়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে রাজ্যগুলিকে আরবিআই থেকে ধার নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এটাও বাজার থেকে ধার নেওয়ারই নামান্তর। ফের রাজ্যের ঘাড়ের পুরো দেনার বোঝা চাপানো হচ্ছে।’’
নির্মলা সীতারামনের এই ‘দৈবদুর্বিপাক’ মন্তব্য নিয়ে শুধু চিদম্বরমই নয়, কংগ্রেসের অন্য নেতারাও কটাক্ষ করেছেন। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি ও সাংসদ রাহুল গাঁধী শুক্রবার বলেছিলেন, সরকারের তিন ভুল— নোটবন্দি, ভ্রান্ত জিএসটি এবং ব্যর্থ লকডাউনের জেরেই অর্থনীতির এই হাল। কোভিড-লকডাউনের ক্ষত সামলাতে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ প্রকল্পে ২০ লক্ষ টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশের কটাক্ষ ছিল-- দেশের অর্থনীতি ‘পরমাত্মা নির্ভর’। আবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও কার্যত ট্রোলড হয়েছেন নির্মলা। কেউ বলেছেন, 'বিমা সংস্থার এজেন্টের মতো কথা বলছেন অর্থমন্ত্রী।' কারও সরস মন্তব্য, ‘ভগবানের দোহাই দিয়ে এ বছর কি আয়কর না মেটালে চলবে?' সেই তালিকায় এ বার তীব্র কটাক্ষ জুডে় দিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: কিডনির অবস্থার উন্নতি, চলছে ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিৎসা, এখনও কোমায় আচ্ছন্ন প্রণব
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৪৭২ নতুন আক্রান্ত, সংক্রমণ হার আটকে আট শতাংশে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy