অমরনাথের পথে উদ্ধার হওয়া টেলিস্কোপ লাগানো এম-২৪ রাইফেল। শুক্রবার শ্রীনগরে সেনা ও পুলিশের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: এপি।
চলার কথা ছিল ১৫ অগস্ট পর্যন্ত। তার ঢের আগে আচমকাই বন্ধ হয়ে গেল অমরনাথ যাত্রা। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা ‘প্রবল’ হয়ে ওঠায় পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়ার জন্য আজ ‘অ্যাডভাইজ়রি’ জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত দু’দিন স্থগিত রাখা হয়েছিল যাত্রা। পহেলগাম ও বালতাল— অমরনাথ যাওয়ার এই দুই পথ থেকেই যাত্রীদের জম্মুতে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু আজ তা বন্ধই হয়ে গেল জঙ্গি হানার আশঙ্কায়।
জম্মু-কাশ্মীরে বড় কিছু ঘটতে চলেছে, গত কিছু দিন ধরেই এ আশঙ্কা করছেন রাজ্যের মানুষ। ২৫ জুলাই বাড়তি ১০০ কোম্পানি অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার আধাসেনা আনায় সেই আশঙ্কাটা প্রবল হয়েছে আরও। অনেকে মনে করছেন, এই সব কিছুই সংবিধানের বিতর্কিত ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা নিয়ে বড় কোনও পদক্ষেপের প্রস্তুতি। প্রথমটি কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তি নিয়ে ও দ্বিতীয়টিতে রয়েছে কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হওয়ার শর্তগুলির কথা। যদিও নরেন্দ্র মোদীর সরকার একাধিক বারই জানিয়েছে। বাহিনী মোতায়েনের সঙ্গে ৩৭০ বা ৩৫-এ ধারার কোনও সম্পর্ক নেই। বাহিনী সরানোটা রুটিন বিষয়।
ছবিটা হঠাৎ পাল্টে যায় আজ। সামনে আসে পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধের প্রসঙ্গ। সেনাবাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ আজ এখানে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়, জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। পাক সেনার সাহায্যে বড়সড় হামলার ছক কষেছে তারা। গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর পেয়ে উপত্যকায় স্থলসেনা ও বায়ুসেনাকে চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে গত কালই। তারা তল্লাশি ও নজরদারি শুরু করেছে গোটা রাজ্যে। জায়গায় জায়গায় প্যারাট্রুপার নামিয়ে তা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আজ উদ্ধার হয় একটি ল্যান্ডমাইন ও টেলিস্কোপ লাগানো মার্কিন এম-২৪ রাইফেল। ল্যান্ডমাইনের ছাপ বলছে, সেটি পাকিস্তানে তৈরি। এগুলি পাওয়া গিয়েছে অমরনাথ যাত্রার পথে। যার ফলে পুরো যাত্রাপথ জঙ্গিমুক্ত ও নিরাপদ করতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে বলে সেনা ও পুলিশের তরফে জানানো হয় সাংবাদিক বৈঠকে। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জারি হয় রাজ্য প্রশাসনের ওই ‘অ্যাডভাইজ়রি’।
অতীতে অনেক বারই জঙ্গি হামলা হয়েছে অমরনাথ যাত্রায়। তার জন্য যাত্রা কখনও দিনকয়েক স্থগিত হয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র রাইফেল ও মাইন উদ্ধারের পরই যে ভাবে আচমকা যাত্রা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হল, সেটা ধন্দে ফেলেছে অনেককে।
বিষয়টি যদি শুধু অমরনাথ যাত্রায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নিয়ে হয়, তবে গোটা কাশ্মীর কেন পর্যটক-মুক্ত করা হচ্ছে, উঠেছে এই প্রশ্নও। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার প্রশ্ন, কেন গুলমার্গ, পহেলগাম থেকে বাসে চাপিয়ে, কিছু ক্ষেত্রে হেলিকপ্টারে পর্যটকদের ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে? তাঁর টুইট, ‘রাজ্যপাল কোথায়? তিনি কেন, সকলের সামনে এসে কিছু বলছেন না?’ বালাকোট অভিযানই হোক বা কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মুখে মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ— কেন্দ্রকে নিশানা করেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। আজ তাঁর অভিযোগ, ‘‘গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবরের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। একটা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করা হয়েছে। কাশ্মীরিদের মধ্যে এমন আতঙ্ক কখনও দেখিনি।’’ মেহবুবা, শাহ ফয়জল, সাজ্জাদ লোনের মতো নেতারা আজ দেখা করতে গেলে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক অবশ্য তাঁদের বলেন, স্রেফ নিরাপত্তার বিষয়টির সঙ্গে অন্যান্য প্রসঙ্গ মিশিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। ৩৫-এ ধারা না-তোলার বিষয়েও তাঁদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
সরকারি সূত্রের খবর, দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা ইতিমধ্যেই উপত্যকা ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন। সরকার শ্রীনগর থেকে অতিরিক্ত উড়ানের ব্যবস্থা করতে বলেছে। এয়ার ইন্ডিয়া টিকিট বাতিলের জন্য কোনও টাকা না-কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy