Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
‘জলের চেয়েও কম দরে’
Coronavirus

আগামী মাসে দ্বিতীয় পরীক্ষা কোভ্যাক্সিনের

বর্তমানে গোটা বিশ্বে তিনটি সংস্থার তৈরি করোনার টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা ‘কোভিশিল্ড’।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০৩:৫০
Share: Save:

ভারতে তৈরি করোনার প্রতিষেধক ‘কোভ্যাক্সিন’ প্রয়োগের প্রথম ধাপে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিকর প্রভাব দেখা না-দেওয়ায় আগামী মাসে টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নিল ভারত বায়োটেক। আজ হায়দরাবাদের জিনোম ভ্যালিতে টিকা সংক্রান্ত একটি আলোচনাচক্রে ভারত বায়োটেকের অধিকর্তা কৃষ্ণ এলা দাবি করেন, তাঁদের টিকার দাম পানীয় জলের বোতলের দামের চেয়েও কম হবে, যাতে সাধারণ মানুষের উপরে আর্থিক চাপ না-পড়ে। তবে কবে ওই টিকা বাজারে আসতে চলেছে, সেই দিন-ক্ষণ বলতে চাননি তিনি। সূত্রের মতে, এই বছরের শেষে বা নতুন বছরের গোড়ায় ওই টিকা বাজারে ছাড়তে চাইছে ভারত বায়োটেক।

বর্তমানে গোটা বিশ্বে তিনটি সংস্থার তৈরি করোনার টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা ‘কোভিশিল্ড’। ভারতে ওই টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার বিষয়ে সদ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া-র ছাড়পত্র পেয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ শেষ করে সিরামও এই বছরের শেষে ভারতের বাজারে ওই টিকা ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে। ইতিমধ্যেই সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁদের টিকার দাম হবে প্রায় হাজার টাকা। সেখানে বায়োটেকের টিকার দাম যদি কুড়ি টাকা হয়, সে ক্ষেত্রে মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা করছেন অনেকে। আজ যদিও সেই আশঙ্কা দূর করে বায়োটেক কর্তা বলেন, ‘‘আগাগোড়া ভারতে তৈরি হচ্ছে মানেই টিকার মান খারাপ হবে এবং তাই টিকার দাম কম রাখা হচ্ছে— এমন ভাবা ঠিক নয়। আমরা এখান থেকেই কম দামে বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি করব। যা ১০০ কোটি ভারতবাসীর চাহিদা মেটাবে।’’

আজকের আলোচনাচক্রটির সঞ্চালনা করেন তেলঙ্গানার শিল্পমন্ত্রী কে টি রাম রাও। কৃষ্ণ এলা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘বায়োলজিক্যাল ই’ সংস্থার অধিকর্তা মহিমা ডাটলা ও ‘ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যাল লিমিটেড’ সংস্থার অধিকর্তা আনন্দ কুমার। রাম রাও বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে অন্য সংস্থাগুলিও টিকা উৎপাদনে এগিয়ে আসুক। কারণ, কোনও সংস্থার পক্ষে একা গোটা দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই এক বার টিকা তৈরি হয়ে গেলে অন্য সংস্থাগুলিও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে টিকা তৈরিতে এগিয়ে আসবে বলেই আমাদের আশা। সে ক্ষেত্রে টিকার দ্রুত উৎপাদন সম্ভব হবে।’’ মন্ত্রী জানান, তেলঙ্গানায় প্রয়োজনে কিছু দিন অন্য টিকার উৎপাদন বন্ধ রেখে শুধুই করোনা টিকা তৈরি করা হবে। যাতে রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো যায়।

আরও পড়ুন: ফের লকডাউনে চিন্তায় অর্থনীতি

বর্তমানে গোটা দেশের ছ’টি কেন্দ্রে বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকার প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। প্রথম ধাপে ১৪ দিনের ব্যবধানে দু’বার টিকা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অধিকাংশ কেন্দ্রেই প্রথম টিকা প্রয়োগের পরে ১০ থেকে ১২ দিন কেটে গিয়েছে। কোথাও টিকার জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে বলে শোনা যায়নি। বস্তুত, সেই কারণেই আগামী মাসে এই টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ‘কোভ্যাক্সিন’ পরীক্ষার অন্যতম কেন্দ্র, নয়াদিল্লির এমসে স্বেচ্ছাসেবক হতে আবেদন করা প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে মিলেছে করোনার অ্যান্টিবডি। অর্থাৎ তাঁরা ইতিমধ্যেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। শরীরে আগে থেকে অ্যান্টিবডি থাকলে টিকার কার্যকারিতা বোঝা যায় না বলেই চিকিৎসকদের মত। শারীরিক পরীক্ষার পরে এমন অন্তত ২০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে অ্যান্টিবডি মিলেছে। এ ছাড়া যকৃত, কিডনি বা হৃ‌দ্‌যন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ায় অনেককে পরীক্ষায় শামিল করা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের যদিও মত, অনেককে বাতিল করতে হবে ধরে নিয়েই টিকা পরীক্ষার সময়ে স্বেচ্ছাসেবকদের বিপুল সংখ্যায় আবেদন করতে বলা হয়।

ভারত বায়োটেকের মতে, আগামী সাত-দশ দিনের মধ্যে প্রথম ধাপের পরীক্ষার দ্বিতীয় টিকাকরণ পর্ব শুরু হয়ে যাবে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে শুরু হবে টিকাকরণের দ্বিতীয় ধাপ। সে ক্ষেত্রে কবে ‘কোভ্যাক্সিন’ বাজারে আসবে, সেই প্রশ্ন হেসে এড়িয়ে গিয়েছেন কৃষ্ণ এলা। তবে বাকি দুই সংস্থার কর্ণধার জানিয়েছেন, নতুন বছরেই একাধিক টিকা বাজারে আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। ২০২১ সালের প্রথম তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই সেই সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শরীরে সেই টিকা কত দিন কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সকলেরই। তিন সংস্থার প্রধানই মনে করছেন, যে-হেতু ওই ভাইরাসটির চরিত্রে ক্রমশ পরিবর্তন ঘটছে, তার ফলে টিকা দেওয়ার পরে ফের বুস্টার ডোজ় দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ক’টি বুস্টার ডোজ লাগবে তা এখনই স্পষ্ট নয় কারও কাছে।

আরও পড়ুন: আধ মিনিটেই ইট গাঁথবেন মোদী

অন্য বিষয়গুলি:

CoronaVirus Health Covid-19 Covaxin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy