ছবি সংগৃহীত।
সাম্প্রতিক কালে বাক্স্বাধীনতার অধিকারের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। সংবাদমাধ্যমের একাংশে তবলিগি জামাতের সম্মেলন সংক্রান্ত খবর নিয়ে একটি মামলায় এই মন্তব্য করেছে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। সেইসঙ্গে এই মামলায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে বেঞ্চ। বিচারপতিদের মতে, কেন্দ্র যে হলফনামা পেশ করেছে তাতে মূল বিষয়টিকে নির্লজ্জের মতো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
মার্চ মাসে দিল্লিতে তবলিগি জামাতের সম্মেলনের ফলে গোটা দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ওঠে, ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরে তবলিগের সদস্যেরা দেশের নানা প্রান্তে যাওয়ায় সংক্রমণ আরও বেশি ছড়িয়েছে।
জমিয়ত উলেমা ই হিন্দ সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা এক আবেদনে জানায়, এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ব্যবহার করে গোটা মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশে এই ধরনের খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারির আর্জি জানায় তারা।
আরও পড়ুন: মোদীকে নিশালা রাহুলের
সেই মামলায় পেশ করা হলফনামায় কেন্দ্র জানায়, তবলিগি জামাতের সম্মেলন সম্পর্কে সব খবরে নিষেধাজ্ঞা জারির চেষ্টা হলে সমাজের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে নাগরিকের জানার অধিকার ও সাংবাদিকের সমাজকে জানানোর অধিকার নষ্ট হবে। নির্দিষ্ট কোনও চ্যানল বা সংবাদ সংস্থায় আপত্তিকর খবর নিয়ে তথ্য না থাকলে কেবল টিভি নেটওয়ার্ক বিধির অধীনে একতরফা ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারির সাংবিধানিক অধিকার কেন্দ্রের নেই।
আরও পড়ুন: হাথরস কাণ্ড: নয়া দাবি অভিযুক্তের
এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা ‘সংবাদমাধ্যমের একাংশ’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। কোনও নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের কথা বলেননি। কিছু নির্দিষ্ট খবরের কথা বলেছেন। কোন খবর তা বলেননি। কিছু ‘তথ্যসন্ধানী প্রতিবেদন’-এর উপরে নির্ভর করে তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, সব সংবাদমাধ্যমই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। তাই গোটা সংবাদমাধ্যমকে চুপ করানো প্রয়োজন।
আজ জমিয়তের আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে বলেন, ‘‘কেন্দ্র হলফনামায় জানিয়েছে আবেদনকারীরা বাক্স্বাধীনতাকে খর্ব করার চেষ্টা করছেন।’’ জবাবে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘তাঁরা হলফনামায় যা খুশি বলতে পারেন। যেমন আপনি সওয়ালে যা ইচ্ছে বলতে পারেন।সাম্প্রতিক কালে বাক্স্বাধীনতার অধিকারের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে।’’ এর পরেই কেন্দ্রের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আপনারা এই আদালতের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারেন না।’’ বিচারপতিরা জানান, তথ্য ও সম্প্রচার সচিবের বদলে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এক অফিসার হলফনামা পেশ করেছেন। তাতে নির্লজ্জের মতো মূল অভিযোগকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বোধের মতো কথাও বলা হয়েছে।
দুষ্মন্ত দাভে কেবল টেলিভিশন আইনে বর্ণিত সরকারের ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা সংশ্লিষ্ট আইন খতিয়ে দেখেছি। সরকারি অধিকার নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। চ্যানেলের ব্রডকাস্টিং সিগন্যালের ক্ষেত্রে নয়। সরকার জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তারা পরামর্শ-নির্দেশিকা জারি করেছে।’’
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার রুখতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা তথ্য ও সম্প্রচার সচিবকে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। দু’সপ্তাহ পরে ফের এই মামলার শুনানি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy